শিরোনাম দেখে চলে গেলে কি আর করা
আমার তো নেই সুসজ্জিত ব্যাটেলিয়ান
রকেট লাঞ্চার, একে৪৭, নিদেনপক্ষে কিছু কাঁদানে পুলিশ যে
তোমাকে এই লেখাটা পড়তে বাধ্য করি
লিখেছিলাম দরিদ্র কৃষকের কষ্টের কাহিনী,
কষ্ট পেতে ভাল লাগেনা বলে
সুখের শীতাতপের ঘরে পর্দা টেনে
টিভির চড়া ভলিউমে উদরনৃত্য দেখলে।
আর যেদিন ভালবাসা নিয়ে
লিখেছি, তোমার ভাল লাগবে বলে, মিলন বা বিরহ, হাতে রেখে হাত জীবনের জয়যাত্রা -
ন্যাকামির অজুহাতে ছুড়ে দিলে কাগজের ঝুড়িতে
অত:পর ইউরেনাসের জ্ঞানের তত্ত্ব
নিয়ে তথ্য ঘেঁটে লিখেছিলাম প্রিয় গদ্য,
সেটাও "বুদ্ধিজীবির জ্ঞান বিতরণ" বলে ব্যঙ্গ হয়ে চোখ বুলায়নি কেউ
ইতিহাস অপ্রয়োজনীয় আর জীবনী পুরাতন লোকের বস্তাপঁচা কাহিনী বলে আর পড়নি
দোষটা কি সময়ের?
দোষটা কি স্বাধীনতার?
বাড়ির লাইব্রেরীগুলোর বইয়ের ক্রয়বিক্রয় তো ট্যাক্স অফিসে যায়না, কেন সব মুড়িমুড়কির ডিভিডিতে মজে রয় কে জানে
দেয়ালে রবীন্দ্রনাথ ঝুললেও ঠাকুরের বই ধুলো-উইয়ে কুড়ে খায়, সুনীল অথবা মিল্টনের
বেছে বেছে দুচারটে পুস্তকের কভার ড্রইংরূমে উঁকি দেয়, অথবা বিখ্যাত লোকের জীবনী।
আর বনলতা, বড় জোর "বোধ"-এর কয়েকছত্র মুখস্ত
যাতে সমঝদার মহল, পণ্ডিত বলে স্যালুট দেয়
বঙ্কিমের অমৃত শব্দাবলীর বদলে তরল থেকে অতিতরল চলিত ভাষাতে সবাই মগ্ন।
আমার তো আর পোষা মাস্তান নেই, টিকটিকি নেই, ফোনসন্ত্রাসী নেই,
অথবা পথে ঘাটে সালাম দিয়ে সতর্ক করে দেয়া বখাটে
থাকলে
আবালবৃদ্ধবণিতা জন্মদাতার নাম নিয়ে লুইপা-কাহ্নুপার বয়ান পড়তো
উটপাখীর মতো, বুকে ধরে থাকতো সাহিত্যের পাতার অণুপরমাণু
নিয়মিত জল মিশিয়ে দুধ খেতে খেতে
চিনিগোলা ভিটামিনের অষুধ ছাড়া
পাকস্থলীতে কিছু সয়না। আধুনিক লেখকেরাও নতজানু, পাঠকের জিহ্বার রং মেপে শব্দ বের করে, চোখ কে নয়ন বলতেও ভয় পায়। সেই পথ্য খেতে খেতে
সাহিত্য কি একদিন হয়ে যাবে দেয়ালের লিখন?
আমার বইয়ের মলাটে তো নগ্নিকা নেই যে মলাট বড়শী দিয়ে পকেট থেকে তুলে আনবে টাকার থলেটা
অথবা লোপামুদ্রায় ছুড়ে দেবে বাঈজীর ইনাম, নিষিদ্ধ মাদকের ধুয়া, কলেজ থেকে
বিছানার তলায়
লুকিয়ে লুকিয়ে অন্ধকার ছড়াবে ।
এই আধুনিক যুগেও শিশুদের স্বাধীনতা থাকে না। বেত্রাঘাতে অথবা নিয়মের কড়াকড়িতে
পুষ্টিকর খাবার আর সুশ্রাব্য সঙ্গীত শোনাতে হয় ।
পাঠকেরাও শৈশবপার না হতেই পাঠকের লাইসেন্স পেয়ে যায়
আর পথে সামান্য জ্যাম দেখলে ভয়ে দরজা এটে ঘুমায়।
হাতে দেশের ক্ষমতা থাকলে
সংসদে বিল আসতো
প্রাপ্ত বয়স্ক মানেই সাহিত্য পড়া বাধ্যতামূলক।
তাহলে এই পালিয়ে যাওয়া ধাড়ি বুড়ো লোকও আনন্দের সঙ্গে বাসে ট্রেনে উড়োজাহাজে পড়তে বসে যেত।