১
তোমার বাচ্চাটা কিছু পারে না বলে প্রতিবেশীর সঙ্গে সুর মিলিও না -
সে পারবে।
কচি আঙুলটা শ্লেটে ঘুরবে আরো কিছুক্ষণ - তাকে বকো না
অজগরের মতো বঙ্কিম রেখা, ক্রমাগত প্যাচিয়ে যাওয়া বহুভুজ
আর ছড়ানো উলসুতো আঁকতে আঁকতে সে ঘুমিয়ে যাবে
আমি জানি সে অনেকগুলো ক্রেয়ন ভেঙেছে। নতুন দেয়ালের চুনায় অবাধ্য দাগগুলো পানি দিয়ে উঠবে না।
কিন্তু তার একটা লাইন ঘুরে আদিম বিন্দুতে মিলে গেছে।
হাত তালি দাও, এভাবেই বাচ্চারা সফল হয়। তুমি ভাবছো এটা বৃত্ত। ও বলছে এটা বলের ছবি।
ততক্ষণে ক্রমাগত নানান আকৃতির জন্ম হয়ে যাচ্ছে। অন্তর্গত ছোট বৃত্ত গুলোর কে সে বলছে মুখ এবং চোখ। খাড়া রেখাটা বোচা নাকের মতো দেখাতেই বাচ্চাটা আনন্দে লাফাচ্ছে
তার ড্রইং এর খাতায় প্রথম আদম সন্তান ভূমিষ্ট হয়েছে অথচ তুমি আজান দাওনি।
মেঝেতে অজস্র কাগজ পড়ে আছে। সে ফুল এঁকে গাছের কান্ড বসাচ্ছে, পেঁপে, তালা, কাঁচি, আম, বিড়াল ক্রমাগত বিবর্তন ঘটেই যাচ্ছে। যদিও রেখাগুলো নষ্টই হচ্ছে অনেক বেশী।
তোমার বাচ্চাটা অনেকটা ঈশ্বরের মতো, সে কাগজের বিশ্বটাকে অনেক কায়দা করে নিখুঁত করতে চাইছে। এখনো ময়লা ছবিগুলোই বেশি, প্ল্যান করেও আঁকছেনা। তবে প্রতিভা দেখে মনে হচ্ছে সে একদিন পেরে যাবে।
২
বাচ্চাটার রঙ শেষ হয়ে গেলে সে অন্য কিছু চাইবে। তাকে এক ডজন ৪বি পেন্সিল দিতে হবে। দেয়ালে লিখে ফেলতে পারে তাও একটা কলম কিনে দাও
সে ব লিখেছে অ লিখছে। লাইন সোজা হচ্ছে না। কিন্তু তার সুন্দর হাতের লেখাটা প্রশংসা করনি কেন? সে বাক্য লিখেছে ভুল বানানে। এক বার লিখছে গরু একবার গোরু। এসব ভুল শুধরাতে তাকে আরও ভুল করতে দিতে হবে।
আর মেঝে থেকে উঠে ডেস্কে বসে অংকের বদলে কবিতা লিখতে থাকলে তুমি বিরক্ত হয়ো না। আমি জানি তুমি তাকে কবি নয় ব্যরিস্টার বানাতে চাও ।
একদিন আমাকে বাচ্চাটার কাগজের ঝুড়ি দেখাতে নিয়ে গেলে। লেখার খাতায় হাজারো কাটাকুটি দেখালে।
আর অন্য বাচ্চারা তখন ড্রইং থামিয়ে বল খেলছে। ঘোড়ায় চড়ছে। কেউ ঘুমাচ্ছে অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে । কেউ বড়দের মতো অনেক কথা বললেও কাজে নেই
বেঁচে থাকলে দেখতে তোমার বাচ্চাটা অনেক অনেক লিখে ফেলছে। নিখুঁত আর বিশাল হচ্ছে সে। তার লেখার প্রতিটি অক্ষর অন্ধকারে আলো দিয়ে ফেলছে।
রং চড়াতে গিয়ে আসল কথা বলা হয়নি
এই অক্লান্ত শিশুটার নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
-------------------------------
(ড্রাফট ১ । পোস্ট নং : দুই অংকের বৃহত্তম সংখ্যা)