২২ বছর ধরে একচ্ছত্র ক্ষমতা, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দখল, বিরোধীদের দমন—এরদোয়ানের শাসনযন্ত্র এতদিন অপ্রতিরোধ্য মনে হতো। কিন্তু এবার রাজপথের তরুণরা সেই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। তুরস্ক এখন বিদ্রোহের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। ইস্তাম্বুলের জনপ্রিয় মেয়র একরেম ইমামোগলুকে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তারের পরই পরিস্থিতি বদলে যায়। গ্রেপ্তারের রাত থেকেই শহর জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়।পুলিশের নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন আর জনসমাগম নিষিদ্ধের বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে তরুণেরা রাস্তায় নেমেছে। পোস্টার হাতে তাদের ঘোষণা ফিচ্ছে : "আমরা যদি পুড়ি, তবে তোমরাও আমাদের সঙ্গে পুড়বে ! এই প্রতিবাদ শুধু ইমামোগলুর মুক্তির জন্য নয়; এটি এরদোয়ানের শাসনের বিরুদ্ধে এক বৃহত্তর গণ-অভ্যুত্থানের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এরদোয়ানের ভয় আর ইমামোগলুর উত্থান : ইমামোগলু কেবল একজন মেয়র নন, তিনি এরদোয়ানের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী। ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার প্রার্থী হওয়ার ঘোষণার ঠিক আগেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সরকারের পরিকল্পনা ছিল তার ভাবমূর্তি নষ্ট করা। কিন্তু ফল হয়েছে উল্টো। তুরস্কজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভে তরুণেরা নেতৃত্ব দিচ্ছে। বিরোধী দলও এবার তাদের শক্তিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। ভোটের মাধ্যমে ইমামোগলুকে সরকার-বিরোধী প্রার্থী হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে। প্রায় দেড় কোটি মানুষ তার পক্ষে ভোট দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে গণরায় দিয়েছে।
তরুণদের শক্তি : রাজনীতির নতুন ভাষা : এই আন্দোলন শুধু তুরস্কের জন্য নয়, গোটা বিশ্বের জন্য এক শিক্ষা। গত দশকে আমরা দেখেছি, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যপন্থী বিরোধী দলগুলো জনগণের ক্ষোভ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে। তুরস্কে যা ঘটছে, তা প্রমাণ করছে— তরুণদের বিদ্রোহী শক্তি মৃতপ্রায় রাজনৈতিক কাঠামোতে নতুন প্রাণসঞ্চার করতে পারে। প্রচলিত বিরোধী দলগুলোর মৃত্যু ঘটেনি, তবে তারা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তরুণদের শক্তি এখন এই ধ্বংসস্তূপের চারপাশে জড়ো হচ্ছে, এটিকে ধ্বংস হওয়া জাহাজ থেকে জীবন্ত প্রবালপ্রাচীরে রূপান্তরিত করছে। বিরোধী দল বাধ্য হচ্ছে তাদের গতানুগতিক রাজনীতির ধরন বদলাতে। আর তরুণেরা শিখছে, কীভাবে শক্তিশালী রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে ঢুকে বিপ্লব ঘটানো যায়।
এই বিদ্রোহ কি কেবল ক্ষণস্থায়ী ? নাকি এটি তুরস্কের ভবিষ্যৎ বদলে দেবে ? এ প্রশ্নের উত্তর সময় দেবে। তবে এটি স্পষ্ট—গণতন্ত্রকে কর্তৃত্ববাদের কবল থেকে বাঁচাতে শুধু প্রচলিত বিরোধী দল যথেষ্ট নয়। দরকার তরুণদের উপস্থিতি, তাদের বিপ্লবী চিন্তা, তাদের ক্ষোভ। তুরস্কের তরুণরা এখন ইতিহাসের মোড়ে দাঁড়িয়ে। যদি তারা সফল হয়, তবে শুধু তুরস্ক নয়, সারা বিশ্বের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের জন্য এটি হবে এক নতুন আশার আলো।