প্রতিকী ছবি
বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে এক সংকটময় সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। মূল্যস্ফীতি লাগামছাড়া, বিনিয়োগকারীদের মনে অনিশ্চয়তার ছায়া, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস এবং রাজস্ব ঘাটতি যেন অর্থনীতির জন্য এক ধাঁধার মতো হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে, আসন্ন বাজেট যেন এক পরীক্ষার মঞ্চ, যেখানে নীতিনির্ধারকদের বাস্তবমুখী সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে দেশের অর্থনৈতিক গতিপথ।
একজন কমার্সের ছাত্র হিসেবে, আমি বাজেটকে শুধুমাত্র আয়-ব্যয়ের হিসাব নয়, বরং দেশের ভবিষ্যতের নীলনকশা হিসেবে দেখি। বিনিয়োগকারীরা এখন দ্বিধান্বিত—তারা কি নতুন বিনিয়োগ করবেন, নাকি অপেক্ষায় থাকবেন আরও প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য? কর কাঠামোর জটিলতা, প্রশাসনিক বাধা এবং দীর্ঘমেয়াদী নীতির অভাব তাদের পিছিয়ে দিচ্ছে। ব্যবসার সম্প্রসারণ তখনই সম্ভব, যখন সরকার বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করবে।
আলোচনায় এসেছে, এবারের বাজেটে মেগা প্রকল্পের পরিবর্তে ছোট ও কার্যকর প্রকল্পে জোর দেওয়া হবে। এটি একদিকে ইতিবাচক, কারণ অবাস্তব ও দীর্ঘসূত্রতা-বহুল প্রকল্প অর্থনীতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। তবে, বড় প্রশ্ন হলো—বাস্তবায়নের দক্ষতা কি আগের চেয়ে উন্নত হবে? বাজেটে বরাদ্দ থাকলেই কি তা সঠিকভাবে কাজে লাগানো সম্ভব? অতীতের অভিজ্ঞতা বলছে, বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পরিকল্পনার অভাব প্রকল্পগুলোর কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়।
স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়ানোর ঘোষণা স্বাগত জানানো হলেও, এটি কতটা ফলপ্রসূ হবে তা নির্ভর করছে ব্যয় ব্যবস্থাপনার দক্ষতার ওপর। শিক্ষা খাতে শুধু বরাদ্দ বাড়িয়ে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়, দরকার দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন। একইভাবে, হাসপাতালের সংখ্যা বাড়ানোর পরিবর্তে বিদ্যমান হাসপাতালগুলোর কার্যকারিতা নিশ্চিত করাই বেশি জরুরি।
কর ব্যবস্থায় পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি থাকলেও, বাস্তবে তা কতটা সহজতর হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। করদাতাদের হয়রানি কমিয়ে বিনিয়োগবান্ধব নীতি তৈরি না করলে, ব্যবসায়ীরা কর প্রদানে আগ্রহী হবেন না। এনবিআর অগ্রিম আয়করের বিষয়ে এখনও সুস্পষ্ট নীতিমালা উপস্থাপন করতে পারেনি, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।
বাজেট বক্তৃতা সংক্ষিপ্ত ও বাস্তবমুখী করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যা ইতিবাচক। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—এবার কি কেবল আশ্বাস দেওয়া হবে, নাকি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হবে? আগের অভিজ্ঞতা বলছে, প্রতিশ্রুতির চেয়ে বাস্তবায়ন গুরুত্বপূর্ণ।
এই বাজেট বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এক মোড় পরিবর্তনের সুযোগ এনে দিতে পারে, তবে এটি তখনই কার্যকর হবে, যখন বিনিয়োগবান্ধব নীতি গ্রহণ করা হবে, রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনা হবে এবং বরাদ্দকৃত অর্থ যথাযথভাবে কাজে লাগানো হবে। সাময়িক রাজনৈতিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে নীতিনির্ধারকদের উচিত হবে দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে মনোযোগ দেওয়া। দেশের ভবিষ্যৎ এখন তাদের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:৩১