যদি কেউ আপেল কাটার মতো করে
সুচারু শব্দের চাকু দিয়ে তোমার হৃদয়কে টুকরো টুকরো করে, ফুঁ দিয়ে সূর্যের মোম নিভিয়ে ঘর অন্ধকার করে ফেলে, ইচ্ছে করে বেহালার কোমল গান্ধারে আচ্ছন্ন করে শিরা উপশিরা
তাকে কখনো কবি বলোনা, সে জল্লাদ, সে নি:শব্দ আততায়ী।
সে বুকে লুকিয়ে রাখে ছুরি, সে জেনে গিয়েছে
তুমি কাঁদতে ভালবাসো, আর সেজন্যই
চালিয়াতি করে মেঘলা আকাশ ও বৃষ্টির উপমা দেয় যাতে তুমি মন ভার করে রাখ,
প্রেমের বিচ্ছেদটাকে মনে করিয়ে দিতে থাকে যেন চোখে অশ্রু চেপে দুহাতে মুখ লুকাও।
যে কবি বিষন্নতার পাথর ছুঁড়ে তোমার অন্তর রক্তাক্ত করে,
ধারালো শব্দের চাবুকে তোমার হৃদয় ক্ষতবিক্ষত করে
তারপর সংজ্ঞাহীন তোমাকে ফেলে গোপন মনের সিন্দুক ভেঙে পালিয়ে যায় - সে তস্কর, সে ধুর্ত কিন্তু কবি নয়।
যতই মায়াবী হোক, তাকে তোমরা বিশ্বাস কোর না।
যদিই বা সে সভাসমিতিতে কাব্যের আঙুলে দেখিয়ে দেয়
তোমার রিফু করা আস্তিন, দারিদ্র্য, জুতোহীন পা এবং নানাবিধ দুর্বলতা - তার বলে দেয়া উচিত ছিল আর একটু পয়সা জমলেই একদিন তুমি সুখ পাবে, কিন্তু সে ইচ্ছে করেই বলে না ।
সে কখনোই বলবেনা, পুরনো দোকানে কেনা পোষাকের ময়লাটা আলগা,
আঙুলের সশব্দ টোকায় ঝেড়ে ফেললেই তুমি ফের সুখী হতে পার।
তুমি তখন সান্ত্বনার নিজস্ব হাসপাতালে, দারিদ্রে, বিরহে আহত হয়ে মৃত্যু কাতর, রাতের পর রাত জেগে উপশম চেয়ে, মুক্ত বাতাসের
অপেক্ষায় থেকে ক্লান্ত এবং হতাশ,
তখন সেই পিশাচটা কবিতার বই বিতরণ করেই চলে গেছে, শল্যচিকিত্সকের মতো ধারালো কবিতার ছুরিতে তোমাকে সারাতে চায়নি।
ইতিমধ্যে শূন্যতার মোহনীয় বিজ্ঞাপনে তুমি বোকার মত বিক্রিত হয়েছ!
তোমার মৃত্যু বা কষ্টে তার কী আসে যায়?
যে তোমাকে শুধু পতন দেখায়, কখনো বাঁচাতে জানেনা - সে কবি নয়,
যার মুখস্ত থাকে আগুনের বর্ণনা, কিন্তু স্বর্গের সামান্য আশায় একটুকু স্বস্তি দেয় না - সে কবি নয়।
যে জানে তোমার সংসারে বহ্নিশিখা জ্বলছে, আর তোমাকে ভাঙা সংসারের একটা কিছু বললেই তুমি একটু আশ্রয় নিতে চাইবে, অথবা,
তুমি সেই দুর্ভাগা ভোজন রসিক, চন্দ্রমার পলান্ন ভালবাসো,
সেজন্য পুর্ণিমারাতের মাংসে, শিশিরের শব্দের মসলায়
তোমাকে মিথ্যে খাবারের কাব্য শোনায় তার কিছু আয় হবে বলে - সেও কবি নয়, সে দক্ষ শব্দের পাচক, সে কাব্যের ধূর্ত ব্যবসায়ী,
সে শুধু জানে কী করে কাল্পনিক খাদ্যের ধোঁয়া ছড়ালেই তুমি চোখ বুঁজে কাব্য কিনে ফেল।
আমরা যে কবি চাই তাকে চিনিয়ে দিতে হবে পথ,
আশার কপাট খুলে পবিত্র ইচ্ছেগুলোর কথা বলতে হবে
বিচ্ছেদের উল্টো পিঠে মানুষের ফিরে আসা বলে দিতে হবে,
ইস্পাতের শব্দ যদি সে জানে, শিকারের বল্লম করে তুলে দিতে হবে পাঠকের হাতে
যেমন সেই নেতা একদিন কবি হয়ে গিয়েছিল
কবিতা না লিখতে চেয়েও যখন বিশাল ময়দানে লক্ষ মানুষকে তাদের দু:খ গুলোকে উদাত্ত কণ্ঠে চিনিয়ে দিয়েছিল
কিন্তু বলেছিল অন্ধকারের আড়ালে আলো থাকে, তার পর বাতাসে
নির্বাচিত শব্দ ছড়িয়ে উপস্থিত শ্রোতার মিছিলকে কে
আবেগ দিয়ে বিপ্লবের পথে ডেকে নিয়েছিল - সে কবিতা লেখেনি,
কিন্তু অনেক বছর ধরে অপ্রকাশিত প্রতিটি অক্ষর কবিতা হয়েছিল
গ্রন্থাগারের আলমারীতে একটি কাব্যগ্রন্থ খুঁজে না পেলেও তাকে তোমরা কবি বলো।