বছর বছর ধরে স্মৃতির শহরে ফিরে আসবো বলে
ক্যালেন্ডারে লিখে রাখতাম, ছু্টি চাইতাম কর্মপ্রভুদের কাছে
ইচ্ছে ছিল পুরনো মানুষগুলোকে
একবার দেখি
কুড়ি বছর পর জীবনানন্দের মতো সত্যি ছুটি পেলাম
অনেক কষ্টে খুঁজে পেয়েছি ইস্কুলের সাইনবোর্ড
পাউরুটি সদৃশ সাদা চুনের দালানে নতুন শিশুরা ঢুকে যাচ্ছে,
জম্পেস দোকান হয়েছে,
যেখানে ফেরিওয়ালা রঙিন পানির আইসক্রিম বিক্রি করতো কাঠের বাক্সে, যেখানে মাঠে দাড়িয়ে শুনতাম, "কুলফি মালাই..."
ধানক্ষেত, জলাভূমি মুছে গিয়ে অপরিচিত ঘর সাইনবোর্ডে ভরে গিয়েছে, বিদ্যুতের লম্বা খুঁটি, টেলিফোন কেবল সবই অচেনা
যে টিনশেডে থাকতাম, সেখানে দালান উঠেছে
উপরে ঝকঝকে এন্টেনা, পাখিরা কমে গিয়ে উড়ছে কাক
যে জামগাছের নিচে পোকারা বাতি জ্বেলে চলতো,
পকেটে বাতি ভরে অন্ধকারে পথ চলেছি
ভরা গ্রীস্মে - "বুলবুলি বুলবুলি
দে একটা জাম ফেলি" করে
কর্কশ গান গেয়েছি খালি গা হাফ প্যান্টে,
সেই গাছের কান্ডটা করাতে কাটা, নগ্ন, বুনো জঙ্গলটা বদলে চওড়া
পীচের পথ, মিশকালো এবং মসৃণ
সে সময় পথ বলতে একটাই সড়ক ছিল,
ঘাস, মাটি, কাদা,বৃষ্টিতে পায়ে হেটে চলে যাওয়া, সাইকেল, কখনো রিকশারা টুংটাং ঘন্টা
বাজিয়ে দিলে মেজাজ খারাপ হয়ে পথ ছেড়ে দিতে হতো
দুপাশের আগাছা কাঁচ পোকা উধাও, শুধু
ঘন্টায় ঘন্টায় আন্তনগরের বাসের ইঞ্জিন ধুয়া ছেড়ে যায়
তন্ন তন্ন করে
পথের মানুষদের মুখে চেয়ে মিল পাইনি
রফিক চাচা নেই, চাচী নেই, আসমত ফকির চলে গেছে,
নেই স্কুলের দপ্তরী মফিজ মামা,
মানুষগুলো পাড়া ছেড়ে গোরস্তানে ভীড় করেছে বেশ আগেই,
মাটি চেলেছে খোদকেরা, হাত জোড় করে কেঁদে দেবার চিহ্নটুকুও পেলাম না।
প্রথম প্রেমের মেয়েটিকে দেখতে চেয়েছি
হয়তো সে ভাল আছে,
ছিপছিপে শরীরের বেড়েছে বয়স
আয়েশা বিয়ে হয়েছিল কাছেই, যদি বাড়ি চিনি
হয়তো অবাক হবে, চোখ কপালে তুলে বলবে "আরে, শহর ভাই না? আপনি? এত বছর পর? ঠিকানা পেলেন কী করে?"।
অনেকই এখন ঢাকায়,
খুঁজে খুঁজে দোস্তদের একদুইজন পেলে
হাত বাড়াই, বুক বাড়ে না,
সন্দেহে বলেই ফেলে, "আপনাকে চেনা চেনা লাগে",
শফিক মিন্ত্রী, কাঠের গুদাম চালায়, মিথ্যে চেনার ভান করে
বলে, "ও ..আগে বলবেন তো আপনি জহির তরফদারের বড় ছেলে। বসেন চা খান, দুপুরে না খেয়ে যাবেন না"।
চোখ নিচে নেমে আসে, শফিক্যারে, তুই আমারে আপনি কস?
অথচ তুই তুই হতো বলেই খুঁজে এসেছি..মাইল মাইল দুরে
আপনি হয়েছে শুধু শফিক নয়, পাড়া নয়,
সম্পুর্ণ গ্রাম, পুরো এই স্মৃতির শহর