যেদিন থেকে পিকনিকের ঘোষণা এল সেদিন থেকেই জানতাম পিকনিক হবে। আমিও মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম পিকনিকে যাব। কিন্তু ধার্যকৃত তারিখের ৪/৫ দিন আগে থেকে কিছু কাজে কর্মে আটকে গেলাম, ঝুলে গেল আমারা যাওয়াটা। এর উপর পারিবারিক কিছু ঝামেলা পিকনিকের আগের দিন আমার না যাওয়াটা পুরোপুরি নিশ্চিত করে দেয়। আগের দিন রাতে ফেবুতে অনেক কাহিনী করে রাত তিনটায় ঘুমাতে গেলাম, যেহেতু সকালে ওঠার ঝামেলা নাই।
কিন্তু, সকাল থেকে বদ পুলাপাইনের দল এমনভাবে ফোন আর মেসেজ দেয়া শুরু করল যে লেপের নিচে মরা মানুষরেও ওরা জাগাইয়া দিতে পারত। অগত্যা ঘুম থেকে উঠলাম ঠিকই, কিন্তু সব কিছু ১৫ মিনিটের মধ্যে ম্যানেজ করে কিভাবে যাব ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। যাহোক অবশেষে সব কিছুর মাথায় গুল্লি মেরে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম।
বের হয়ে শাহবাগে পৌঁছেই দেখলাম সবাই রেডি। সকাল ৯:০০ এ বাস ছাড়ল। বাসে আমরা জনা চল্লিশেক ব্লগার ও তাদের পরিবারবর্গ উপস্থিত ছিলাম। রুট নিয়ে সবাই একটু দ্বিধা দ্বন্দ্বে ছিলেন যেহেতু ইজতেমা শুরুর দিন ছিল গতকাল। যাইহোক, মোটামুটি নির্বিঘ্নে পিকনিক স্পট গাজীপুর জাতীয় উদ্যানে পৌছালাম। সেখানে আমাদের জন্য নির্দিষ্ট স্পটটা একটু কোনার দিকে ছিল, নিরিবিলি তো বটেই।
স্পটে পৌঁছেই সংক্ষিপ্ত পরিচয় পর্ব শুরুর প্রাক্কালে ছুডু মির্জা নামক এক ডেস্টিনি ব্লগার (!) এক ঐতিহাসিক রাজনৈতিক বক্তৃতা দেন জাতির উদ্দেশ্যে থুক্কু ব্লগারদের উদ্দেশ্যে। এর পর জিসান মামা তার মতামত দেন। এর পর সবাই একে একে নিজের পরিচয় প্রদান করেন। এইখানে উল্লেখ্য, অনেকের মাল্টি নিক, সদ্য ব্যান/জেনারেল হওয়া, পারিবারিক গোপন তথ্য (ব্লগ সম্পর্কিত) ফাঁস হতে শুরু করে উপস্থিত ব্লগারদের অব্যাহত চাপে।
এর পরই ব্লগারদের আচরন কেমন জানি বদলে যেতে শুরু করে, এমন বন পেয়ে সবাই নানান ভঙ্গিমায় ফডুক তোলা শুরু করে দেন। কেউ কেউ গার্লফ্রেন্ডকে আনতে না পারার দুখে একা একা উদাস হয়ে ঘুরে বেড়ান। কেউ কেউ আবার মনের দুখে ক্রিকেট খেলা শুরু করে দেন।
এই ক্রিকেট খেলা চলতে থাকে প্রায় দুপুর পর্যন্ত। মাঝখানে অবশ্য বাচ্চাদের বিস্কুট দৌড় অনুষ্ঠিত হয়। একটা জিনিস মাথার ভিত্রে কিছুতেই ঢুকল না, জাতির জ্যাডা এবং আশকারি কুন দুখে এই ইভেন্টে অংশ নিল। বড়ই আজিব দুনিয়া।
ক্রিকেট খেলা শেষ হলে সবাই "কাচ্চি" খাওয়া শুরু করে। বলাই বাহুল্য সেটা কিসের কাচ্চি ছিল খাওয়াটা যা ছিল না দাদা, একবারে গোটা দেড় প্লেট মেরে দিলুম।
কাচ্চির পর গোআ'র জেল গমন উপলক্ষ্যে মিষ্টি বিতরন করা হয়। আহা মিষ্টিটা কতই না মধুর আছিল। অবশ্য অনেকে মিষ্টি নেয়ার সময় কাচ্চিতে গোটা একটা ডিম দেয়ার তীব্র প্রতিবাদ করেন। বাজারে নাকি এম্নিতেই ডিমের সংকট।
খাওয়া দাওয়া শেষ হলে ক্রিকেট ম্যাচের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়। ম্যাচে বিজয় অর্জন করেন সবাই, এদিকে অবশ্য আব্দুল্লাহ আল মনসুর নামক এক ব্যক্তি খেলায় স্থূল কার্চুপির অভিযোগ করেন। যদিও উনি নিজেকে বিজয়ী দাবি করে পরে পুরস্কার নিয়েছিলেন।
সবচেয়ে মজার বিষয় ছিল, নিজ হাতে কফি বানিয়ে কফি পানের সেশনটা। এক্কেবারে সত্যিকারের বনভোজন/চড়ুইভাতির একটা রিয়েল ফ্লেভার পিকনিকটাকে অবিস্মরনীয় করে তোলে। অবশ্য কতিপয় দুর্নিতীবাজ ব্লগার দুই প্যাকেট কফি এক কাপ পানিতে গুলিয়েছেন। ধিক তাদের
এর মাঝেই মহিলাদের পিলো পাসিং খেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রানবন্ত এই খেলাটা সত্যিই প্রানবন্ত ছিল।
এর পর বিদায় বেলায় র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ছ'টি পুরস্কারের মধ্যে ৪টিই এক পরিবারে যায়। { মনে হয় গুরুজির কার্চুপি }
র্যাফেল ড্র এর পর পুরস্কার ছিনতাই হয় থুক্কু বিতরন করা হয়, অবশ্য যার যার পুরস্কার সে নিজে গিয়ে নিয়ে এসেছে। এর পর ক্লিক ক্লিক, মানে ফটো সেশন। পরে গার্ডের তাড়াহুড়ার কারনে সবাই তাড়াতাড়ি বাসে উঠে বাড়ির পথ ধরলাম সবাই।
একটা দিন, একটা পিকনিক, সারা জীবন মনে রাখব আমি। এই অসাধারন দিনটা আর এই অসাধারন মানুষগুলোর সান্নিধ্য আজীবন মনে রাখতে হবে আমাকে, অবশ্য এই স্মৃতি থেকে পালানোর কোন উপায়ও নাই।
========================================================
এক নজরে - ফাস্ট ফ্যাক্টস
# সকাল ৯:০০ এ যাত্রা শুরু শাহবাগ থেকে। সকালের নাস্তা ছিল - বিস্কুট, কমলা, পানি, হাওয়াই মিঠাই।
----- সবাই ময়লাগুলো বাসে বা বাসের বাহিরে না ফেলে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলেছেন - ধন্যবাদ।
# সকাল ১১:৩০ এর দিকে আমরা স্পটে পৌঁছাই।
----- পথিমধ্যে আমাদের সাথে অনেক( মোটামুটি ১০ জনের কাছাকাছি) ব্লগার স্বতস্ফূর্তভাবে যোগদান করেন।
------ বাসের হেল্পার ছোট মির্জা বাস ভাড়া আদায় করেন প্রায় ৬০০ টাকা (!!!)
# বনভোজনের স্থানে পৌঁছে সবাই নিজেদের অতি সংক্ষিপ্ত পরিচয় পর্ব প্রদান করেন।
------- অনেকের মাল্টি এবং পারিবারিক অভ্যন্তরীন তথ্য ফাঁস হয়
# এর পর পরই শিপু ভাই ও জিসান মামা খাবার আনতে চলে যান এবং উপস্থিত সমাবেশের একাংশ নানানরকম কায়দায় ছবি তুলেন এবং বাকি অংশ ক্রিকেট খেলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
---------কতিপয় লোক উদাসী হয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন।
# ক্রিকেট খেলা বেশ অনেক্ষণ চলে এবং এর মাঝেই উপস্থিত বাচ্চাদের মাঝে দুই দফা বিস্কুট দৌড় অনুষ্ঠিত হয়।
------ আশকারি এবং আবদুল্লাহ আল মনসুর এই খেলায় কেন অংশ নেয় তা উপস্থিত কেউই বলতে পারে নাই।
# খাবার এলে সবাই গো গ্রাসে খাবার গিলেছে।
------ ব্লগাররা খুবই আনন্দের সাথে চিবিয়ে চিবিয়ে কাচ্চি বিরিয়ানি খান। এর সাথে উত্তেজক পানীয় হিসেবে ছিল পেপসি ও সেভেন আপ।
------- খাবারটা বেশ মজাদার ছিল।
--------- এর আগে খিদার চোটে কতিপয় লোককে কামরাঙ্গা ও ঝাল মুড়ি খেতে দেখা গিয়েছে।
# খাবার এর পর গোআ'র জেলে গমন উপলক্ষ্যে মিষ্টি বিতরন করা হয়।
# এর পর মহিলাদের পিলো পাসিং অনুষ্ঠিত হয়।
--------শিপু ভাই, নিজের পরিবারের জন্য লবিং করার চেস্টা করতে গিয়ে ধরা খাইছে।
# এর পর ক্রিকেট ম্যাচের ফাইনাল সেশন অনুষ্ঠিত হয়।
------ক্রিকেট ম্যাচে স্থূল কার্চুপি হয়েছে বলে জানিয়েছেন আবদুল্লাহ আল মনসুর।
# এর পাশা পাশি নীলা আপুর তত্ত্বাবধায়নে কফি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়, সহযোগিতায় ছিলেন পানকৌড়ি ভাই।
------ অনেকেই এক কাপে দুই প্যাকেট কফি মিক্স ঢেলেছেন। সূক্ষ্ম কার্চুপি।
# এর পরে কফি পানের পর অনুষ্ঠিত হয় মজাদার র্যাফেল ড্র।
----- র্যাফেল ড্রতে এক পরিবারে ৪ টি পুরস্কার যায় ( ৬টি'র মধ্যে)
------- প্রথম পুরস্কার ছিল ১০০০০ পয়সা।
# এর পরে চলে অবিরাম ক্লিক ক্লিক।
----ফটোসেশনটা অনুষ্ঠানের পূর্নতা এনে দেয়।
# এরপর সবাই বাড়ির পথ ধরেন।
-----বাসে আবার ব্লগারগন চিপস এবং উত্তেজক পানীয় গ্রহন করেন।
-------- ফেরার পথটা অনেক দীর্ঘ এবং ক্লান্তিময় ছিল।
# আমরা প্রায় ৬৩ জন এ বনভোজনে অংশ নেই।
# প্রায় পুরো সময়টুকু গিটার বাজিয়ে এবং গান শুনিয়ে অনুষ্ঠানকে প্রানবন্ত করে তোলেন আমাদের শাহেদ ভাই। (কৃতজ্ঞতা)
=======================================================
জিসান মামা এবং শিপু ভাইকে বিশেষ কৃতজ্ঞতা
======================================================
স্মৃতিগুলো জমে থাক আমাদের মাঝে, আজীবন না হোক, যতদিন আমরা আমাদেরকে শুদ্ধ ভাবি ততদিন।
আমার খুবই ভাল লেগেছে, অনেক ঝামেলা আর টেনশন নিয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু বিশ্বাস করেন একটা সেকেন্ডের জন্যেও সেই টেনশন আর ঝামেলাগুলোর চিন্তা আমাকে স্পর্শ করেনি।
আবারো বলতে বাধ্য হচ্ছি - আমরা আসলেই একটা পরিবার।
শুভেচ্ছা ও ভালবাসা সবার জন্য।
=======================================================
এইবার ছবি দেখেন কিছু
###
কতিপয় বড় বাচ্চার হাওয়াই মিঠাই ভক্ষন।
####
নীরব দর্শক ভাই বেশ সরব ছিলেন।
###
চলছে পরিচয় পর্ব।
###
বক্তৃতা শুনছে ব্লগারা।
###
পুরো অনুষ্ঠান তিনি গান গেয়ে আর গিটার বাজিয়ে আমাদের মুগ্ধ করেছেন। শাহেদ ভাইকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।
###
কাচ্চি খাচ্ছেন শিপু ভাই।
###
ডিমটা কার জন্য? গো আ?
###
নয়নাভিরাম জায়গা। অবশেষে আমরা বন পেয়েছিলাম।
###
ফেরার পথে সবই কেমন জানি ঝাপসা হয়ে আসছিল।
###
নষ্ট কবির নষ্টামিতে স্বর্ন মৃগের বাধা।
###
ক্যাটরিনা স্টাইলে ফডুক তোলা।
###
ধোঁয়া...
###
প্রতিকী হত্যা। হুমকি দিবেন আর??
###
যাওয়ার আগে সবাই মিলে স্মৃতিখানি ধরে রাখার প্রয়াস।
###
আন্তরিক মানব বন্ধন।
###
ব্লগার নীলা আপুকে সব শেষে হাড়ি-পাতিল বিজয়ী ঘোষনা করা হয়। পুরস্কার দিচ্ছেন গুরুজি।
=======================================================
একটু দৌড়ের উপ্রে আছিলাম বলে তেমন কোন ছবি আর ভিডিও নাই...যা আছে দিলাম...
বাচ্চাদের বিস্কুট দৌড়... (আশকারি আর মনসুর ভাই এইখানে কি করে? )
গান শুধু গান...শাহেদ ভাই দারুন গিটার বাজায়...আমাকে শেখাবে বলেছেন ...
=====================================================
:::::::আনকাট : : : :
আমাদের টাউটবিডি২৪ডটকম এর এক অবিশ্বস্ত সাংবাদিক চরমভাবে অসমর্থিত সূত্রের বরাত দিয়ে কিছু ব্রেকিং নিউজ দেন - ( জনস্বার্থে পোস্টে তুলে দিলাম )
### যাত্রা পথে গাজীপুর চৌরাস্তায় ব্লগারদের ব্যপকহারে "ইয়ে" করতে দেখা গেছে। { মান-ইজ্জত ডুবাইছে সবাই }
### ব্লগার নীরব দর্শক (বিবাহিত কিংবা মৃত) আলাদা গাড়িতে যেতে যেতে বোর হয়েছেন, বেশ কয়েকবার গাড়ি থেকে বাসে স্থা্নান্তরিত হতে চেয়েছেন, কিন্তু অদৃশ্য শক্তি তাকে বাসে উঠতে দেয় নি শেষ পর্যন্ত।
### বাসে অনেকেই বিড়ি টানার জন্য আঁকু-পাঁকু করেছেন
### ক্রিকেট খেলায় শাহেদ ভাই ব্যাট করেই পাগার-পার, ফিল্ডিং এ আর নামেন নাই। এমন আন্তর্জাতিক মানের খেলায় এইধরনের ঘটনা ঘটায় বাইসিসি বিরক্তি প্রকাশ করেছে
### ক্রিকেট ম্যাচে একটি দল সর্বোচ্চ ৫ রান করে অল আউট হয়েছে, প্রথম রানটি ফাউ ছিল এবং পরের চার রান প্রতিপক্ষ সৌজন্যতা বশত দিয়েছে। { নিমচাঁদ ভাই এ সময় বলেন, একটা দল শূন্য রানে অল আউট হবে, এইটা হয় নাকি ? }
### ছোট মির্জা কোন দলে খেলেছেন তিনি নিজেই খেলা শেষে ভুলে গেছেন, অগত্যা কোন প্রকার পুরস্কার না নিয়েই ফিরে এসেছেন।
### পিকনিক স্পট থেকে পালিয়ে গোপনে চা পান করেছেন এবং মিনি চিড়িয়াখানা পরিদর্শন করেছেন মাহি এবং নীরব দর্শক ।
### পিকনিকে অনুপ্রানিত হয়ে পানকৌড়ি ভাই ১৮ টি বিয়ে করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
### পিকনিকে কোন ছাগু না থাকলেও কাচ্চি খাওয়ার সময় ব্লগাররা অতিরিক্ত চিবিয়ে চিবিয়ে কাচ্চি গলধকরন করেছেন।
### ফেরার পথে বাস থেকে ছুডু মির্জা আর নষ্ট কবি "লুল" উপাধি নিয়া নামেন। কারনটা জানা যায় নি অবশ্য। ধারনা করা হয় কতিপয় ব্যাক বেঞ্চার ব্লগারদের ষড়যন্ত্র।
### ফেরার সময় লুলদের আসর বসে বাসের পেছন দিকটায়। এসময় জাতির উন্নতির কথা বিবেচনা করে আশকারিকে তার বাবার কোলে বসিয়ে রেখে আসা হয়। তবে বেচারা এই আসরে যোগ দেবার বেশ চেস্টা করেছে।
### ফেরার পর ফার্মগেটে রাত ১০ টার দিকে আর এক দফা পিকনিক পালিত হয়, এই পিকনিকের উদ্যোক্তা ছিলেন ছুডু মির্জা, পিকনিকে গল্প কবিতা ছাড়াও বিস্বাদ চা পরিবেশন করা হয়।
### পিকনিকে কোন এক নারী ব্লগার শিপু ভাইয়ের চুলের প্রশংসা করার প্রেক্ষিতে আজকে চুল বিসর্জন দিতে হল উনাকে।
=================================================
সংবাদ পরিবেশিত হল -
টাউটবিডি২৪ডটকম
কারো সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী নহে।