আমি এসে বসছি
নরম বালুর উপর,
সামনে বিশাল সমুদ্র,
ঢেউগুলা আমারে কিছু একটা বলতে চাইতেছে,
কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না।
আমার মাথার উপর বিশাল আকাশ,
আকাশের নিচে শুধু পানি আর পানি,
আমি একলা,
আমার সামনে সমুদ্রের একলা বিশালতা,
আমাদের মাঝে বোঝাপড়ার অভাব।
একটা ঢেউ ধীরে ধীরে এসে
আমার পায়ের আঙুল ছুঁয়ে গেলো।
একটা ঠান্ডা অনুভূতি,
ঠিক যেন পুরান কথা মনে পড়ে
আর সাথে সাথে আবার ভুলে যাই।
একটা নৌকা দুরে যাইতেছে,
একটা জাহাজ পানির উপর থেমে আছে,
আমি ভাবছি,
বালির উপর আমার পায়ের ছাপ ছিলো,
কিন্তু এখন নাই।
সমুদ্র সব মুছে দেয়,
আমার স্মৃতির মতো,
আমার প্রশ্নগুলার মতো।
এত ঢেউ,
কিন্তু আমার ভাঙা মন ঠিক করতে পারে না।
আমি দাঁড়াইলাম,
জল একটু উষ্ণ,
কিন্তু কিছুদূর গিয়ে ঠান্ডা হয়ে গেলো,
ঠিক তোমার পুরাতন কথা দিয়া বানানো
সেই পুরোনো না রাখা কথার মতো।
কয়েকজন মাছ ধরে ফিরতেছে,
কেউ নারকেল গাছের নিচে ঘুমিয়ে গিয়েছে,
কেউ বালুর উপর নাম লিখতেছে,
আমিও লিখছিলাম, মনে আছে?
সেই নাম ঢেউ মুছিয়ে দিয়েছে,
ঠিক যেমন তুমি মুছে দিয়েছিলা
আমারে তোমার গল্প থেকে।
তারপর?
তারপর আমি হেঁটে আসতে থাকলাম,
পায়ের ছাপ রইলো কিছুক্ষণ,
তারপর সেগুলাও মুছে গেলো।
আমার রাখবার কিছু নাই,
আমার ভুলবারও কিছু নাই।
সমুদ্রের কাছে
আমি আর কিছু মনে করতে পারি না।
ঢেউ আসে, ঢেউ যায়,
বালুর উপর আমার নাম লিখি,
আরেকটা ঢেউ এসে সেই নাম মুছে দ্যায়।
আমি আবার লিখি,
আবার ঢেউ আসে,
আমি হাল ছেড়ে দেই।
সমুদ্রের বাতাসে মুখ বদলে যায় মানুষের।
তবু মনে হয়, এই লোকটারে আমি আগে দেখেছি,
সমুদ্রের এই রঙটারে আমি আগে দেখেছি,
কিন্তু কই? কবে?
আমি মনে করতে পারি না।
দূরে এক জেলে ট্রলারে আলো জ্বালতেছে,
কেউ একজন সমুদ্রে পা দিয়া দৌড় দিতেছে,
কেউ হাত ধরে টানতেছে পিছনে,
বালুর উপর ছেড়ে আসা স্যান্ডেল
ঢেউয়ে ডুবে যায়।
আমি বালুতে বসে থাকি,
বাতাস বইতে থাকে,
সমুদ্রের গর্জনের ভিতর
সমুদ্রের বাতাসের ভিতর
আমি বসেই থাকি,
কিসের অপেক্ষা করতেছি,
আমি জানি না।
বৃষ্টি নামবে কিনা
সমুদ্রের জলে ভেজা হাতের রেখা
কখনো কি শুকাবে?
কে জানে!
আমি ঢেউয়ের শব্দের ভিতরে বসে থাকি,
আমি চোখ বন্ধ করি,
আমি ভাবি,
সমুদ্রের ভিতরে আমি হারিয়ে গেলে কেমন লাগবে?
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৫৭