somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সারজিস আলম : শূন্য থেকে কোটিপতি বনে যাওয়া একজন স্বপ্নবাজ তরুণ

২৫ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জুলাই অভ্যুত্থান বাংলাদেশের তরুণদের জন্য একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বাংলাদেশের অগণিত তরুণ তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের উদ্দেশ্যে রাস্তায় নামলে সৃষ্টি হয় নতুন উপাখ্যান। বিগত সরকারের আমলের ঘুষ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির বলি হয়েছিল লাখো তরুণ। বেকারত্বের অভিশাপে যখন তরুন সমাজ হাহাকার করছে তখন বিগত সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কোটাপ্রথা ফিরিয়ে আনার ! এতে তরুণেরা প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন। তারা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ কে ক্ষমতাচ্যুত করে বাসায় ফিরে আসে। শিক্ষিত বেকার তরুণদের চাওয়া ছিলো এতটুকুই যে, সকল নিয়োগ পরীক্ষা ফেয়ারভাবে হবে এবং কোটা প্রথার বিলোপ ঘটবে। মেজোরিটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে পলিটিক্স করবে এমন কোনো আশা আকাঙ্খা ছিলো না। সমস্যা শুরু হয় যখন দেখা যায় উপদেষ্টামন্ডলীতে তরুণদের মধ্য থেকে তিনজন প্রতিনিধি দায়িত্ব পান। জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখ সারির নেতারা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় রাজনৈতিক দল গঠন করে। তাদের এই প্রচেষ্টা কে স্বাগত জানায় একশ্রেনীর মানুষ যার হয়তো দেশের করাপ্টেড প্রশাসন ও রাজনীতি নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা না। তাদের প্রেস্ক্রিপশনে তরুণেরা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। সরকারের মধ্য থেকে কতিপয় ব্যক্তি বাতেলা বক্তব্য দিয়ে নতুন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাদের হাইপ আরো উপরে তুলে দিয়েছেন । এর ফলে তরুণদের নেতাদের নৈতিক বিচ্যুতি ঘটতে থাকে।

জুলাই অভ্যুত্থানে মূলত যারা অংশ নিয়েছিলো তাদের বেশিরভাগের বয়স ২২-৩০ বছরের মধ্যে। বাংলাদেশের তরুণদের জন্য সময়টা খুবই কঠিন। গ্রাজুয়েশন শেষ করে একটি সম্মানজনক চাকুরির জন্য দিনান্ত পরিশ্রম করতে হয় এই সময়গুলোতে । পারিবারিক অবহেলা, সমাজের চোখে বেকারসহ নানা জটিলতায় বিষন্নতায় ভোগে বেশি তরুণ। প্রায়শই দেখা যায় এই বয়সের তরুণেরা আত্নহত্যা করছে। দেশের ইন্টারনেট অবকাঠামো উন্নত হওয়ায় অনেকেই প্রচলিত পেশায় প্রবেশ না করে ভিন্ন পেশা গ্রহণ করছেন। এতে অনেকে সফলতার মুখ দেখছেন। এর মধ্যে কনটেন্ট ক্রিয়েট অন্যতম। কিন্তু কনটেন্ট ক্রিয়েটর হতে গেলে বিশেষ প্রতিভা থাকা লাগবে। ক্রিয়েটিভ ভাবনা চিন্তা করা লাগবে। আবার ছেচড়ামো ও ছেবলামো করেও অনেকে বড়ো কনটেন্ট ক্রিয়েটর বনে যাচ্ছেন। যে যেভাবেই পারুক টাকা ইনকাম করছে, লাক্সারি লাইফ লিড করছে, শপিং বিএফ-জিএফ সব কিছু মেইনটেন করতে পারছে। কিন্তু যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়া তেমন কোনো ক্রিয়েটিভি নেই অথবা পড়াশোনায় ভালো না, ধর্মীয় কারণে, সমাজ কি ভাবতে পারে এসব ভেবে কনটেন্ট মেকিং করতে চান না তারা সবাই চেষ্টা করে কোনো মতে একটি সরকারি চাকুরি জোগাড় করে ভালো ফ্যামিলিতে বিয়ে করে ঝামেলা মুক্ত লাইফ লিড করতে। দেশের কর্মসংস্থানের বেহাল দশায় তাও সম্ভব হচ্ছে না। তাদের জন্য সারজিস আলম হতে পারেন একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত !

সারজিস আলম জুলাই অভ্যুত্থানের একজন সম্মুখ সারির যোদ্ধা। তার দেশের বাড়ি পঞ্চগড়ে। ঢাবিতে লেখাপড়া করেছেন এবং থাকতেন অমর একুশে হলে। ছাত্রলীগের সাথে তার দহরম মহরম সম্পর্ক ছিলো আসলে লোক দেখানো। কিন্তু ছাত্রলীগের অনেক আদর্শ তার মধ্যে মাঝে মধ্যে দেখা যায়। জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাকি শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরে গেলেও সারজিস চিন্তা করতে লাগলেন কিভাবে নিজের আয় উন্নতি বাড়ানো যায়। ইন্টেরিম সরকার যেহেতু অনির্বাচিত সরকার তাই এর কোনো আলাদা ফোর্স ছিলো না। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনের লুকিয়ে থাকা দালালেরা সরকার কে তেমন গুরুত্ব দিতো না। তাদের জোর করে পদত্যাগ করানো ছিলো সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জিং। সরকার তখন সারজিস আলমদের একটি গ্রুপ কে দায়িত্ব দেয় দোসরদের সরাতে। তারা মব ক্রিয়েট করে অথবা হাঙ্গামা করে অনেক দালাল কে অপসারণ করে। যারা একটু বুদ্ধিমান তারা সারজিস দের উপহার দেয়ার প্রলোভন দেখায়। সারজিসদের গ্রুপ কোন কাজ কাম না করায় সারাদিন পান্ডাগিরি করে বেড়ালেও দিনশেষে তারা বাসায় খালি হাতে ফিরতে হত। তাই সারজিস আলম গং উপহার গ্রহণ করা শুরু করে।এভাবে করে দেশ- বিদেশ থেকে উপহার আসতে থাকে আর সারজিসদের ম্যানিবাগ ভারী হতে থাকে।

সম্প্রতি সারজিস আলম নিজ জেলায় গিয়েছিলেন নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে। তিনি ঢাকা থেকে প্লেনে সৈয়দপুর পৌছান ও সেখানে থেকে শতাধিক গাড়িবহর নিয়ে গ্রামে পৌছান জনসংযোগ করতে । ইতিমধ্যে সারজিস আলমের শো-ডাউন নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছে । যে ছেলে টিউশান করে জীবিকা নির্বাহ করতো আজ তার পিছে গাড়ির এত বহর কেন ? সারজিস আলম কি এমন আলাদীনের চেরাগ হাতে পেল যার কারণে এত আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারছেন ? সারজিস এর আগেও শো-ডাউন করে পঞ্চগড়ে গিয়েছিল তবে সেটা ছাত্রলীগের গণসংযোগ কার্যক্রমে। ঢাবির সূর্যসেন হলের সিয়াম নামে একজন ছাত্রনেতার প্রটোকল দিতে সারজিস আলম শো-ডাউনে অংশ নিয়েছিলেন। এগুলো তার জন্য কোনো বড়ো বিষয় নয়। কিন্তু সাধারণ মানুষ পড়েছে বিপাকে । নয়া রাজনৈতিক বন্দোবস্তের নামে এই কোন বন্দোবস্ত তাদের দেখতে হচ্ছে !

সারজিস আলম কে নিয়ে যারা কটাক্ষ করছেন তাদের নিজেদের চিন্তা করা উচিত অভ্যুত্থানের পর পলিটিক্স করা ছাড়া তার কোনো বিকল্প ছিলো না। অতি বিপ্লবী হওয়ায় মানুষ তাদের চাকুরি দিতে ভয় করে । একমাত্র রাজনীতি পারে সারজিস দের বেকারত্ব দূর করতে। তাই নতুন দল এনসিপি ভোটারদের বয়স ষোলো চায় এবং প্রার্থীর বয়স তেইশ করতে সুপারিশ করেছে। বেকারত্ব দূরীকরণের জন্য কি দুর্দান্ত ভাবনা চিন্তা। ভোটার হও দ্রুত, টাকা নেও আর লাইনে দাঁড়িয়ে ছাপ্পা মেরে আসো। আবার পড়াশোনা শেষ করেই রাজনীতিতে ঢুকে এমপি ইলেকশন করো ; তারপর হাগার হাগার টাকা কামাও। চাকুরির পিছনে ছোটা বাদ দেও এবং আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হও। বাবা-মা রাজি না হলে সারজিস আলমের উদাহরণ দেখিয়ে দিলেই আশা করি ঠান্ডা হয়ে যাবেন !

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:১৬
৪৩টি মন্তব্য ৪২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনে হাসি আর কান্না.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৫

জীবনে হাসি আর কান্না.....

কবি সুনির্মল বসু তার "হবুচন্দ্রের আইন" কবিতায় হবুচন্দ্র রাজা আইন করে কান্না নিষিদ্ধ করেছিলেন। অথচ এখন সেই কল্পিত কবিতার রাজা হবুচন্দ্রের মতো আইন করে কান্না নিষিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

'৭৪ সালের কুখ্যাত বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল এখন সময়ের দাবী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৫


বিগত আম্লিক সরকারের আমলে যে কুখ্যাত আইনের অপব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই আটক করে গায়েব করার চেষ্টা চলতো তা হলো ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন। এই আইন ব্যবহার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণচোখ

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৬:৩৮


(ষড়ঋপু সিরিজের তৃতীয় কাহিনি — লোভ)

⸻ সতর্কীকরণ: ছায়া পড়লে আলোও কাঁপে ⸻

এই কাহিনি কেবল একটি গল্প নয়। এটি এক মানসিক প্রতিচ্ছবি, যেখানে লুকিয়ে আছে মানব আত্মার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এসব লুটপাটের শেষ কোথায়!

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:১৮

আধা লিটারের পানির বোতল দোকানদার কেনে সর্বোচ্চ ১২.৫০ টাকায় আর ভোক্তার কাছে বিক্রি করে ২০ টাকা। এগুলো কি ডাকাতি না?

গোপন সূত্রে যতটুকু জানা যায়,
প্রাণ ৮.৫ টাকা কেনা
ফ্রেশ ১০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। চারুকলায় আগুনে পুড়ে গেল ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ ও ‘শান্তির পায়রা’ মোটিফ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৪৭

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে নববর্ষের শোভাযাত্রা উদ্‌যাপনের জন্য বানানো দুটি মোটিফ আগুনে পুড়ে গেছে। এর মধ্যে একটি ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি ও আরেকটি শান্তির পায়রা।



আজ শনিবার সকালে চারুকলা অনুষদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×