বিগত আম্লিক সরকারের আমলে যে কুখ্যাত আইনের অপব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই আটক করে গায়েব করার চেষ্টা চলতো তা হলো ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন। এই আইন ব্যবহার করে শত শত মানুষকে আটক করে গুম করে দেয়া হতো। ভাগ্য ভালো থাকলে পরে গ্রেফতার দেখানো হতো। তখন পরিবার অন্তত হাফ ছেড়ে বাচতো যে যাক গুম হয় নি। কি আছে এই আইনে আগে সেটা দেখা যাক !
১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩ ধারা অনুযায়ী, ক্ষতিকর কাজ থেকে নিবৃত্ত রাখার জন্য সরকার যেকোনো ব্যক্তিকে আটক রাখার আদেশ দিতে পারবেন। আবার এই আইনের ৩(২) ধারা অনুযায়ী, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট যদি সন্তুষ্ট হন যে এই আইনের নির্দিষ্ট ধারার ক্ষতিকর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কেউ জড়িত, তাহলে ওই ব্যক্তিকে আটক রাখার আদেশ দেবেন। বিশেষ ক্ষমতা আইনের যেসব ক্ষতিকর কাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিকে আটকাদেশ দেওয়া যায়, সেগুলো হচ্ছে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বা প্রতিরক্ষার ক্ষতি করা, বাংলাদেশের সঙ্গে বিদেশি রাষ্ট্রের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সংরক্ষণের ক্ষতি করা, বাংলাদেশের নিরাপত্তা বা জননিরাপত্তা বা জনশৃঙ্খলার ক্ষতি করা, বিভিন্ন সম্প্রদায়, শ্রেণি বা গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণাবোধ বা উত্তেজনা সৃষ্টি করা, আইনের শাসন বা আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করা বা উৎসাহ প্রদান করা বা উত্তেজিত করা। ক্ষতিকর আরও কাজ হচ্ছে জনসাধারণের জন্য অত্যাবশ্যক সেবা বা অত্যাবশ্যক দ্রব্যাদি সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করা, জনসাধারণ বা কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে ভীতি বা আতঙ্ক সৃষ্টি করা এবং রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বা আর্থিক ক্ষতি করা।
এই আইনের অনেক শব্দ অস্পষ্ট এবং রাজনৈতিক দলগুলো খুব সহজেই শব্দের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে যে কাউকে মামলা ছাড়াই আটক করতে পারে। প্রায় একই ধরণের আরেকটি আইন হচ্ছে ডিজিটাল সিকিউরিটি আ্যাক্ট ! এসব আইনের কারণে রাষ্ট্রে বসবাসরত নাগরিকের ন্যায় বিচার পাওয়ার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়ে আসছে বহুদিন ধরে।
সম্প্রতি মিস আর্থ নামে খ্যাত মেঘনা আলম কে বিশেষ আইনে গ্রেফতার করেছে ইন্টেরিম সরকার। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে তিনি নাকি বাংলাদেশের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র করছেন। তিনি দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধনে লিপ্ত আছেন। তাই কোনো প্রকার মামলা ছাড়াই বিশেষ আইনে তাকে গ্রেফতার করে সিএমএম কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ত্রিশ দিনের জন্য তাকে জেলে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়।
মেঘনা আলমের সাথে অত্যন্ত পাওয়ারফুল একটি দেশ সৌদি আরবের রানিং রাষ্ট্রদূতের বাগদান হয়েছিলো। কিন্তু মেঘনা পরে জানতে পারেন যে রাষ্ট্রদূতের আরেকজন স্ত্রী রয়েছে। মেঘনা আলম তার ভুল বুঝতে পেরে রাষ্ট্রদূতের স্ত্রীকে ফোন দিয়ে ক্ষমা চায় এবং বাগদান ভেঙে দেয়। বোঝাই যাচ্ছে সৌদি রাষ্ট্রদূতের প্রভাবে সরকার বিশেষ আইন ব্যবহার করে মেঘনা আলম কে গ্রেফতার করেছে।
দেশে নির্বাচনের আলাপ যখনই জনপ্রিয় উঠে ইন্টেরিম সরকার সংস্কারের অজুহাতে নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চায়। এতদিন হয়ে গেছে শেখ হাসিনার পতনের তবু এই কুখ্যাত আইন এখনো বাতিল হয় নি। অনির্বাচিত সরকারের কোনো পিছুটান নেই যে তারা এই কুখ্যাত আইন বাতিল করতে পারবে না রাজনৈতিক দলগুলোর মতো। তাদের তো অন্য কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই। তাহলে এই আইন বাতিল করতে এত গড়িমসি কেন ?
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০৫