somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

জীবনে হাসি আর কান্না.....

১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবনে হাসি আর কান্না.....

কবি সুনির্মল বসু তার "হবুচন্দ্রের আইন" কবিতায় হবুচন্দ্র রাজা আইন করে কান্না নিষিদ্ধ করেছিলেন। অথচ এখন সেই কল্পিত কবিতার রাজা হবুচন্দ্রের মতো আইন করে কান্না নিষিদ্ধ করতে হচ্ছেনা বরং আমজনতার হাসিমুখ হারিয়ে গিয়ে এখন কান্নাই জীবনের শান্তনা। আসুন, হবুচন্দের আইন কবিতাটা একবার মনে করি:-

হবুচন্দ্র রাজা বলেন গবুচন্দ্রে ডেকে,
‘আইন জারি করে দিও রাজ্যেতে আজ থেকে,
মোর রাজ্যের ভিতর,
হোক না ধনী, হোক না গরিব, ভদ্র কিংবা ইতর,
কাঁদতে কেহ পারবে না কো, যতই মরুক শোকে।
হাসবে আমার যতেক প্রজা, হাসবে যত লোকে।

বলে গবু, ‘হুজুর,
'ভয় যদি কেউ পায় কখনো দৈত্য, দানা জুজুর,
..........
সত্যিকারের বিপন্ন হয় যদি,
তবুও কি সবাই তারা হাসবে নিরবধি?’

রাজা বলেন, ‘গবু,
আমার আইন সকল প্রজার মানতে হবে তবু।
...........
কাঁদতে কেহ পারবে না কো বিশ্রী বিকট সুরে।
হবুচন্দ্রের দেশে
মরতে যদি হয় কখনো, মরতে হবে হেসে।’
রাজার আদেশ কেউ যদি যায় ভুলে,
চড়তে হবে শূলে।’

সেদিন হতে হবুর দেশে উল্টে গেল রীতি,
.........
কান্না ভুলে শিশুর দলে হাসছে অনায়াসে।
...........
গবুচন্দ্র বল্লে হেসে চেয়ে রাজার মুখে,
‘কাঁদতে পারে এমন মানুষ নাই যে এ মুল্লুকে;
............
কিন্তু একি, আমিও যে কাঁদতে গেছি ভুলে,
কেমন করে চড়ব তবে শূলে?’

রাজা বলেন, ‘তোমার মতো মূর্খ দেখি না যে,
কাঁদতে তুমি ভুলে গেলে এই ক’দিনের মাঝে।
এই দ্যাখো না কাঁদে কেমন করে।’
এই না বলে হবু রাজা কেঁদে ফেল্লেন জোরে।

মন্ত্রী গবু বল্লে তখন, ‘এবার তবে রাজা
নিজের আইন পালন করুন গ্রহণ করুন সাজা।’
বলেন হবু, ‘আমার হুকুম নড়বে না এক চুল,
আমার সাজা আমিই নেব তৈরি করো শূল।’

কান্না ভুলে এবার একটা হাসির কবিতা মনে করা যাক:-
"হাসছি মোরা হাসছি দেখ,
হাসছি মোরা আহ্লাদী,
তিনজনেতে জটলা করে ফোকলা
হাসির পাল্লা দি
হাসতে হাসতে আসছে দাদা,আসছি আমি
আসছে ভাই,
হাসছি কেন কেউ জানে না,
পাচ্ছে হাসি হাসছি তাই।"- এটা হচ্ছে সুকুমার রায়ের আহ্লাদী কবিতা।

আসলে, জীবনে সবচেয়ে বড় ওষুধ বোধহয় হাসি। কিন্তু জীবনের প্রতিটি জায়গায় লড়তে লড়তে বোধহয় একটা সময় হাসি শুকিয়ে যায়। এখন দেশ বিদেশে শরীর মন সুস্থ রাখতে 'লাফিং ক্লাব' সৃষ্টি হয়েছে- যেখানে দলবদ্ধ হয়ে সবাই থেমে থেমে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নানান রকমের হাসি (অট্টহাসি, মুচকি হাসি ইত্যাদি) হাসে।

অথচ বাংলা সাহিত্যের দিকে তাকিয়ে দেখুন কতো অমর সৃষ্টি আছে হাস্যরস নিয়ে। কতো বিখ্যাত লেখক, ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়, কেদারনাথ বন্দ্যোপধ্যায়, সুকুমার রায়, পরিমল গোস্বামী, পরশুরাম, মুজতবা আলী, শিব্রাম চক্রবর্তী, প্রেমেন্দ্র মিত্র....তাঁদের শক্তিশালী কলম দিয়ে কী সব অসামান্য লেখা লিখে গেছেন। রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের কথা আর না-ই বললাম।

আমার দৃষ্টিতে, বাংলা সিনেমার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নায়ক উত্তমকুমার। তার সব রোমান্টিক সিনেমাগুলো আমাদের অসম্ভব প্রিয়। কিন্তু ভুলতে পারিবা- "শুধু একটি বছর" বা "ধন্যিমেয়ে" বা "মৌচাক"? প্রায় কাছাকাছি জনপ্রিয় অথচ আদ্যন্ত সিরিয়াস সৌমিত্র চট্টোপধ্যায়ের "ছুটির ফাঁদে" বা "বসন্ত বিলাপ"। সেই "সাড়ে চুয়াত্তর" থেকে "শ্রীমান পৃথ্বীরাজ" (বিশেষ করে উৎপল দত্তের অভিনয় ভুলবার না), "যমালয়ে জীবন্ত মানুষ "বা "আশিতে আসিও না"- তে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিনয়। যেমন ভুলবো না মনোজ মিত্রের "বাঞ্ছারামের বাগান" এর অভিনয়।

হিন্দি সিনেমায় "শোলে" একটা মাইলফলক। কিন্তু জয়, বীরু, ঠাকুর সাহেব, বাসন্তী বা গব্বরের সাথে সবাই মনে রেখেছি সুরমা ভূপালী বা আংরেজের জামানার জেলার সাহেবকেও। "পড়োশন"- এ কিশোরকুমার আর মেহমুদ? সঙ্গে কিশোরকুমার আর মান্না দের সেই অবিস্মরণীয় ডুয়েল! গোলমালে উৎপল দত্তের অভিনয়! থ্রি ইডিয়েটস এ আমির খানদের সেই কলেজের ঘটনাগুলো?
চার্লি চ্যাপলিনের কথা উল্লেখ না করলেই না। ওনার প্রতিটি সিনেমাতে এক একটি অন্তর্নিহিত অর্থ আছে। কিন্ত "মঁসিয়ে ভর্দু" আর "দ্য গ্রেট ডিক্টেটর" বাদ দিলে সব সিনেমাই পরিবেশন করা হয়েছে হাস্যরসের মাধ্যমেই- অথচ কী গভীর অর্থবহ!
আসলে, ইচ্ছে না করলেও হাসতে চাই....

অনেককিছু বাদ পড়ে গেল। বাদ পড়ে গেল স্কুল-কলেজ জীবনে বন্ধুদের নানা রকম হাস্যকর অভিব্যক্তি। সবাই বোধহয় নিজের মনের স্মৃতিতে আসা অভিজ্ঞতা মনে করে ঠোঁটের কোণে একটু হাসি রেখেছেন।

সব শেষে একটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলি। বাংলা সিরিয়ালে তিনটি ধারাবাহিক আমার অত্যন্ত প্রিয়। তিনটিই সাহিত্যনির্ভর। "আদর্শ হিন্দু হোটেল, "সুবর্ণলতা" এবং বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের গণশার বিয়ে অবলম্বনে "বিবাহ অভিযান"। প্রায় বছর যাবত উল্লেখিত ধারাবাহিক দেখে দেখে এই লেখার উপক্রমণিকা।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৫
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×