somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোয়ান্টাম কালচার এবং বিজ্ঞান ও ইসলাম ‌॥ পর্ব ৯

১২ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোয়ান্টাম কালচার এবং বিজ্ঞান ও ইসলাম ‌॥ পর্ব ১
কোয়ান্টাম কালচার এবং বিজ্ঞান ও ইসলাম ‌॥ পর্ব ২
কোয়ান্টাম কালচার এবং বিজ্ঞান ও ইসলাম ‌॥ পর্ব ৩
কোয়ান্টাম কালচার এবং বিজ্ঞান ও ইসলাম ‌॥ পর্ব ৪
কোয়ান্টাম কালচার এবং বিজ্ঞান ও ইসলাম ‌॥ পর্ব ৫
কোয়ান্টাম কালচার এবং বিজ্ঞান ও ইসলাম ‌॥ পর্ব ৬
কোয়ান্টাম কালচার এবং বিজ্ঞান ও ইসলাম ‌॥ পর্ব ৭
কোয়ান্টাম কালচার এবং বিজ্ঞান ও ইসলাম ‌॥ পর্ব ৮


কমান্ড সেন্টার

আগের অংশেই আমরা গায়েব বা ভবিষ্যৎ জ্ঞান নিয়ে আলোচনা করেছি এবং কুরআন ও হাদীসের কথানুযায়ী দেখেছি যে যে তে আল্লাহ ছাড়া আর কারো অংশীদার নেই। আমরা এও দেখেছি যে, কীভাবে কুরআনের আয়াতের মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে এই জঘন্য বিষয়টিকে ইসলামে অনুমোদিত হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সেই সাথে আমরা এও আলোচনা করেছি যে আমাদের সবকিছুর নিয়ন্ত্রণকারী মহান আল্লাহতা'লা, তাঁর আদেশ ছাড়া গাছের পাতাও পড়েনা। তাই ভবিষ্যৎ জেনে আগে থেকেই ভবিষ্যৎ ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ কেবলমাত্র আল্লাহ তা'লার এখতিয়ারে রয়েছে। কিন্তু কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে কমাণ্ডসেন্টারের প্রয়োগের যে নমুনা (টেন্ডারের ভবিষ্যৎ সর্বনিম্ন মূল্য জেনে যাওয়া বা ভিসা বোর্ডে কী রকম পরিস্থিতি হবে তা আগে ভাগেই নিয়ন্ত্রণ করা) আমরা দেখেছিলাম, তাতে মানুষকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার দাবী করছে যখন সে গায়েবের জ্ঞানের অধিকারী হয় এবং নিজের ও অন্যের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।[১৩৩] আর এ রকম ধারণা পোষণ করা যে কাউকেই সরাসরি শিরকের মধ্যে নিমজ্জিত করে ফেলে।

অন্তর্গুরু

ইসলামের কোন পুরোহিততন্ত্র (Priesthood[১৩৪]) নেই – যা এর একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। পীরের মুরিদ হওয়ার কোন সুযোগ ইসলামে নেই বরং তা যে কিভাবে মানুষকে শিরকের দিকে ডাকে আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে তা বোঝা মোটেও কঠিন নয়। কোয়ান্টাম মেথডের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি আরও ভয়ংকর এই কারণে যে এখানে অন্তর্গুরু কল্যাণ বা অকল্যাণ করার ক্ষমতা রাখেন যা শিরক হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশ রাখেনি। এ ব্যাপারে কোয়ান্টম মেথড বলে-

কমান্ড সেন্টার নির্মাণ করে সবকিছু ঠিকমত সাজানোর পর ধ্যানের বিশেষ স্তরে অন্তর্গুরুর আগমন ঘটে। অন্তর্গুরু প্রথমে সকল অদৃশ্য অশুভ প্রভাব থেকে মুক্তির জন্যে ‘সাইকিক বর্ম’ প্রদান করেন। এই সাইকিক বর্ম অতীতের সকল অশুভ প্রভাবকে নিষ্ক্রিয় করে দেয় এবং ভবিষ্যতের এ ধরনের প্রভাব থেকে তাকে পুরোপুরি নিরাপদ রাখে।[১৩৫]

অর্থাৎ অন্তর্গুরু আপনাকে অকল্যান থেকে মুক্ত রাখবেন। অথচ আমরা জানি আমাদের অকল্যান ও অশুভ শক্তি থেকে মুক্ত রাখার একমাত্র মালিক হচ্ছেন আল্লাহতা'লা। যে কোন সমস্যায় আমরা তাঁর কাছেই মুক্তি চাই। আল্লাহতা'লা বলেন -

১। আপনি বলুন, আমি ঊষার প্রভুর নিকট আশ্রয় চাই।
২। তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট হতে।
৩। এবং (রাত্রির) অন্ধকারের অনিষ্ট হতে যখন তা (সবকিছু) ঢেকে ফেলে।
৪। এবং গ্রন্থিসমূহে যে সকল নারীগণ (যাদু করে) ফূৎকার দেয় তাদের অনিষ্ট হতে।
৫। আর হিংসুক যখন হিংসা করে তার অনিষ্ট হইতে।[১৩৬]

সূরা আননাস এর মূল কথাও একই। অথচ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন আল্লাহ তা'লাকে বাদ দিয়ে একজন অন্তর্গুরুর উপর নিজেকে অশুভ শক্তি হতে মুক্ত রাখার জন্য নির্ভর করছে। কত বড় মাপের শিরক এটি চিন্তা করুন?
এবার চলুন আমরা দেখি যে কে হতে পারবে অন্তর্গুরু? কাকে আপনি অন্তর্গুরু হিসেবে মেনে নেবেন? এ ব্যাপারেও কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের দিকনির্দেশনা রয়েছে -

অন্তর্গুরু বা মুর্শিদ কে হতে পারেন? আপনি যাকে মনে করেন যে, তিনি আপনাকে জীবনের পথে সঠিক দিক-নির্দেশনা দিতে পারবেন, তাকেই আপনি অন্তর্গুরু হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন। তবে যে ধ্যান বা মেডিটেশন পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া আপনি অনুসরণ করবেন, সে প্রক্রিয়ার উদ্ভাবক বা প্রশিক্ষককে অন্তর্গুরু হিসেবে গ্রহণ করা সবসময়ই বেশি কার্যকরী। বাস্তব জীবনে আপনার বিষয় সম্পর্কে গুরুর কোনো জ্ঞান না-ও থাকতে পারে কিন্তু ওই স্তরে তিনি সে বিষয়ে আপনার চেয়ে গভীর জ্ঞানের অধিকারী। [১৩৫]

এ নির্দেশনা অনুযায়ী কোয়ান্টাম মেথডের প্রচলনকারী মহাজাতক সাহেবই হবেন অন্তর্গুরু। তাই যদি হয় তবে অন্তর্গুরুর বৈশিষ্ট্যানুযায়ী মহাজাতক সাহেবের এমন ক্ষমতা রয়েছে যাতে করে তিনি তার শিষ্যদের সকল অশুভ শক্তি থেকে মুক্ত রাখতে পারেন! যে গুণ আল্লাহর থাকার কথা, সেই গুণ কোয়ান্টামের সদস্যরা তাদের গুরুজী মহাজাতকের হাতে অর্পণ করছেন - কী নির্মম ধরণের শিরক এটি!

কোয়ান্টাভঙ্গি

কোয়ান্টাভঙ্গি নিয়ে আমরা আগেই আলোচনা করেছিলাম যে, এটির উৎপত্তিস্হল মোটেই ইসলাম নয়। হিন্দু বৌদ্ধ ধর্ম থেকে আগত এই উপাসনার ভঙ্গির সাথে ইসলামের কোনই সম্পর্ক নেই। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন অবশ্য এর জ্যোতিষশাস্ত্রীয় ব্যখ্যা দিতে সমর্থ হলেও কুরআন-সুন্নাহ'র আলোকে ইসলামী কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। যদিও একটা মনগড়া ব্যাখ্যা তারা দিয়েছে যে, এই ভঙ্গি করলে হাতের মাঝে আরবীতে “আল্লাহু” লেখা হয়ে যায়। কিন্তু কুরআন বা হাদীসানুযায়ী এর কোন সত্যতা নেই, আল্লাহতা'লা আমাদের এই ভঙ্গিতে কোন ইবাদত করতে আদেশ/উৎসাহ দেননি, রাসুল (স) ও এই ভঙ্গিতে কোন ইবাদত করেননি কিংবা তাঁর সাহাবীদের করতে বলেননি। এটা পুরোপুরি কুফর ধর্ম থেকে আসা একটা উপাসনা/তপস্যা পদ্ধতি। মুসলমানদের জন্য ইবাদত করার ভঙ্গি কি হবে তা নিয়ে প্রচুর হাদীস রয়েছে। এরকম একটি হাদীস হচ্ছে -

আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করলেন। তখন এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সালাত আদায় করল। অতঃপর রাসূলের নিকটে এসে তাকে সালাম করলে রাসূল তার সালামের উত্তর দিলেন এবং বললেন— তুমি ফিরে যাও, এবং পুনরায় সালাত আদায় কর, কারণ, তোমার সালাত হয়নি। অতঃপর লোকটি সালাত আদায় করল। সালাত শেষে রাসূলের কাছে এসে তাকে সালাম জানাল। রাসূল সা. এবারও বললেন, তুমি আবার ফিরে যাও, এবং সালাত আদায় কর, কারণ, তোমার সালাত হয়নি। এভাবে তিনি তিনবার বললেন। লোকটি বলল, যে সত্তা আপনাকে সত্য দিয়ে প্রেরণ করেছেন, তার শপথ ! আমি এর চেয়ে উত্তমরূপে আদায় করতে সক্ষম নই। সুতরাং আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন। তিনি এরশাদ করলেন, যখন তুমি সালাতে দণ্ডায়মান হবে, প্রথমে তাকবীর দেবে। অতঃপর কোরআন থেকে তোমার জন্য সহজ—এমন কিছু পাঠ করবে। এরপর ধীরস্থিরভাবে রুকু করবে, এবং সোজা হয়ে দণ্ডায়মান হবে। তারপর সেজদারত হবে মগ্ন হয়ে, এবং সোজা হয়ে বসবে। পুনরায় সেজদায় গমন করবে, পূর্বের মত ধীরস্থিরভাবে। এভাবে তুমি তোমার সালাত সমাপ্ত করবে।[১৩৭]

ইসলামের কোথাও এই কোয়ান্টাভঙ্গি বা কোয়ান্টাসংকেত বা কোয়ান্টাধ্বনি নিয়ে কিছু বলা নেই, এমনকি এগুলোকে সমর্থন করে এরকম কিছুও কুরআন-হাদীসে উল্লেখ নেই। তবে অন্যান্য ধর্মে (বিশেষ করে হিন্দুধর্ম ও বৌদ্ধধর্ম) এই মুদ্রার ব্যাপক প্রচলন দেখা যায়, মূলত সেসব ধর্মের ধ্যান, উপাসনা, তপস্যা ইত্যাদি কাজেই এই মুদ্রা ব্যবহৃত হয়।[১৩৮]

যাকাত ফান্ড

কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন যাকাত ফান্ডের মাধ্যমে যাকাতের অর্থ সংগ্রহ করে তা বিতরণ করে। এক্ষেত্রে তারা অমুসলিমদের মাঝেও যাকাত বিতরণ করে। এটা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত? ইসলামে যাকাতের আটটি খাত সম্পর্কে আল্লাহতা'লা সুরা আততাওবা'র ৬০তম আয়াতে বলেন-

সাদকা (এখানে যাকাত) তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও তৎসংশ্লিষ্ট (যাকাত আদায় ও বিতরণের সাথে যুক্ত) কর্মচারীদের জন্যে, যাদের অন্তর (ইসলামের জন্য) আকর্ষণ করা হয় তাদের জন্যে, দাসমুক্তির জন্যে, ঋণ ভারাক্রান্তদের জন্য, আল্লাহর পথে ও মুসাফিরদের জন্যে। এটা আল্লাহর বিধান। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞামায়।

এ সম্পর্কে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে বলা আছে -

>> ভিন্নধর্মী, পাহাড়ি, ধর্মহীন কাউকে যাকাত দেয়া যাবে কি-না?
>> মহান আল্লাহ যাকাত ব্যয়ের যে ৮টি খাত নির্দিষ্ট করেছেন তাতে ফকির-মিসকিন বলা আছে। ঈমানদার ফকির-মিসকিন বলা হয় নি। [১৩৯]

অর্থাৎ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন বলছে যে যেহেতু কোথাও ঈমানদার ফকির মিসকিনের কথা বলা হয়নি তাই ভিন্নধর্মী বা ধর্মহীনদের যাকাত দেয়া যায়। কুরআনের বিভিন্ন আয়াত ও বিভিন্ন হাদীস পর্যালোচনা করে ইসলামিক পন্ডিতগণের দেয়া মতামত অবশ্য কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সাথে একেবারেই মিলেনা। তাঁদের মতে - যাকাত একটি ফরজ ইবাদত এবং একজন মুসলিম আরেকজন মুসলিমকে যাকাত দিবে। যদি আপনার আশপাশে বা পরিচিত কোন মুসলিমদের মাঝে যাকাত গ্রহনের মত কেউ না থাকে তবে সেক্ষেত্রে অমুসলিমদের যাকাত দেয়া যেতে পারে। অর্থাৎ একজন মুসলিমের যাকাত পাবার হক সবচেয়ে বেশি এবং সে-ই যাকাত পাবার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে।[১৪০][১৪১][১৪২] এবং এরকম যাকাত পাবার মত মুসলমান আমাদের চারপাশেই প্রচুর পরিমানে রয়েছে। তার মানে এই নয় যে অমুসলিমদের দান করা যাবেনা। ইসলাম শান্তির ধর্ম এবং সবাইকে সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে থাকার জন্য ইসলামে বিভিন্নভাবে দান করাকে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। এরকমই একটা ব্যবস্থা হচ্ছে সাদকা। যাকাত হচ্ছে সবচেয়ে কম পরিমানের একটা দান যেটা করা আল্লাহতা'লা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন এবং এটা কেবল মুসলিমদের জন্যই। আর সাদকা হচ্ছে ঐচ্ছিক দান যা সবাইকেই দেয়া যায়। অমুসলিমদের সাদকা দেয়া যেতে পারে।[১৪৩][১৪৪]

অতএব আপনি যদি আপনার মুসলিম কোন ভাইকে বঞ্চিত করে ভিন্নধর্মী বা ধর্মহীন কাউকে যাকাত দিয়ে ফেলেন, ইসলামিক বিদ্বানদের মতানুযায়ী সেক্ষেত্রে আপনার যাকাত আদৌ আদায় হবেনা। তাই যাকাত দেবার ক্ষেত্রে আমাদের আগে আমাদের মুসলিম ভাই-বোনদের বিবেচনা করতে হবে, এবং আমাদের মত গরীব দেশে এরকম মুসলিম ভাই-বোন এতবেশি পাওয়া যায় যে যাকাত দিয়ে কূল পাবার কথা না। একটু চোখ মেলে তাকান, আপনার আশপাশেই এরকম প্রচুর দরিদ্র মুসলিম যাকাত গ্রহীতা পেয়ে যাবেন।

সকল ধর্মই এক

কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন ইসলাম নিয়ে খুব কথা বললেও তারা মনে করে যে সকল ধর্মই এক। যে কারণে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন আল্লাহ'র কাছে শুক্রিয়া আদায় করা আর হিন্দুদের হরি ওম বলার মাঝে কোন পার্থক্য দেখেনা -

সকালে ঘুম ভাঙতেই বলুন, ‘শোকর আলহামদুলিল্লাহ/ হরি ওম!/ থ্যাংকস গড বা প্রভু আমি কৃতজ্ঞ নতুন একটি দিনের জন্যে’। [১৪৫]

তাদের কাছে যে সকল ধর্মই সমান এটা অবশ্য তাদের বিভিন্ন কাজ কর্মেও বোঝা যায়। যেমন তারা অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের বাণীও প্রচার করে থাকে। তারা কুরআন ও হাদীসের পাশাপাশি বেদ[১৪৬], গীতা[১৪৭], ধম্মপদ[১৪৮] ও বাইবেলের[১৪৯] বাণীও প্রচার করে। অর্থাৎ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন বিশ্বাস করে যে শুধু কুরআন-হাদীসই একজনের জন্য যথেষ্ট নয়, অন্যান্য ধর্ম থেকেও আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। এইখানেই মূল সমস্যা, কারণ ইসলাম আসার পর বাকী সব ধর্ম বাতিল হয়ে গেছে। ইসলামই যে একমাত্র জীবনব্যবস্থা তা জানাবার জন্য আল্লাহতা'লা বিদায় হজ্জ্বের মাঠে নিচের দুটি আয়াত নাযিল করেন-

আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম। [১৫০]

আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন চায় তবে তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। [১৫১]

অর্থাৎ ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মের কোন কিছু নেয়া যাবেনা বা অনুসরণ করা যাবেনা, যদি এরকম কেউ করেও থাকে তবে তাতে ক্ষতিগ্রস্থ হতে হবে। এই চিন্তাটা “আপাতঃ দৃষ্টিতে” খুব সাম্প্রদায়িক এবং অসহিষ্ণু মনে হলেও করার কিছু নেই। কারণ ইসলামের এই ‘Salvific Exclusivity’ (পরলৌকিক মুক্তি শুধুই ইসলামের প্রকৃত অনুসারীদের জন্য) তে বিশ্বাস করা আমাদের ঈমানের একটি অংশ।

“আসলে সকল ধর্মের মর্মকথা একই – পার্থক্য শুধু অভিব্যক্তিতে বা বাহ্যিক প্রকাশে বা rituals-এ” – এই কথা যদি সত্যি হত, তবে মুহাম্মদ (স)-এঁর মিশনের কোন প্রয়োজনই ছিল না । মক্কার পৌত্তলিকরা সবাই আল্লাহ মানতো – আবু জাহেল, আবু লাহাব সবাই আল্লাহয় বিশ্বাস করতো – কথায় কথায় আল্লাহকে নিয়ে শপথ করতো ৷ কিন্তু তবু আমরা তাদের কাফির ও মুশরিক বলে থাকি এবং কাফির ও মুশরিকের সাথে কিছুতেই মুসলিমদের প্রেম-প্রীতি, সহ-অবস্থান, সামাজিকতা বা নির্বিচার মেলামেশা যে সম্ভব নয়, সে কথা পবিত্র কুর’আনের বহু আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে। রাসূল (স)- এঁর বহু হাদীসেও মুসলিমদের সাবধান করে দেওয়া হয়েছে। কোন মতবাদ যদি তাকে এই দৃষ্টিভঙ্গী গ্রহণ করতে বলে যে, সকল ধর্মই এক বা কোন কাজ করতে বলে যা অন্য কোন ধর্মের ইবাদাতের অংশ হিসেবে প্রমাণিত বা কোন কাজ যে অনুমোদিত তা বোঝানোর জন্য অন্য কোন ধর্মগ্রন্থ থেকে রেফারেন্স দেয়া হয় বা অন্য কোন ধর্মের প্রবাদপুরুষ কাউকে উদাহরণ হিসেবে দেখানো হয়, তবে তা নিঃসন্দেহে আপনাকে পথভ্রষ্টতার দিকে ডাকছে। হযরত উমর (রা) একবার তাওরাত কিতাবের কিছু পৃষ্ঠা সঙ্গে নিয়ে ঘুরছিলেন, সেটা দেখে রাসুল (স) তাঁকে তিরস্কার করেন আর বলেন যে, মূসা (আ) বেঁচে থাকলে, তাঁরও মুহাম্মদ (স) কে অনুসরণ করা ছাড়া কোন উপায় থাকতো না -

It was reported that the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) became angry when he saw that ‘Umar had a page with something from the Tawraat written on it, and he (peace and blessings of Allaah be upon him) said: “Are you in doubt, O son of al-Khattaab? Have I not brought you something shining and pure? If my brother Moosa were alive, he would have no choice but to follow me.” (Narrated by Ahmad and al-Daarimi, and others).[১৫২]

তাই অন্য কোন ধর্মের রীতি-নীতি কিংবা ধর্মগ্রন্থের বাণী আমাদের কাছে যত সুন্দরই লাগুক না কেন, সেগুলো গ্রহণ করার কোন উপায় নেই। যেখানে হযরত উমর (রা) এর মত শ্রেষ্ঠ মুসলিমদের একজনেরও আহলে কিতাবদের তাওরাতে কিছু খোঁজ করার অধিকার নেই – সেখানে “ভগবত গীতা” বা “বেদ”-এর তো প্রশ্নই ওঠে না! কাফির ধর্মে আমাদের জন্য কিছুই নেই। আর যে কাফিরদের কাফির মনে করেনা সে নিজেই কাফিরদের দলগত হয়ে যায়।[১৫৩] কারণ রাসূল (সা) বলে গেছেন যে, কোন গোষ্ঠীর অনুকরণ করবে, সে তাদেরই একজন বলে গণ্য হবে -

It was narrated that ‘Abd-Allaah ibn ‘Umar said: The Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) said: “Whoever imitates a people is one of them.” [১৫৪]

তাহলেই বলুন কোন ন্যূনতম মুসলিমও কি হিন্দু/বৌদ্ধ ঋষি বা সাধুদের অনুকরণ করতে পারে? চিন্তা করে দেখুন তো আন্তঃধর্ম মেলবন্ধন কিংবা সকল ধর্ম একই – এই ব্যাপারটা আপাতঃদৃষ্টিতে নিরীহ মনে হলেও তা কুরআন-হাদীসে বর্ণিত সাবধানবাণী অনুযায়ী আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়ে ফেলতে পারে? নিশ্চয়ই কুফরের অন্ধকারে।

চলবে...

রেফারেন্সসমূহঃ
১৩৩। সাফল্যের চাবিকাঠি কোয়ান্টাম মেথড - মহাজাতক; পরিবর্ধিত নতুন সংস্করণ - জানুয়ারী, ২০০০। পৃষ্ঠা - ২৩৭।
১৩৪। https://en.wikipedia.org/wiki/Priesthood
১৩৫। সাফল্যের চাবিকাঠি কোয়ান্টাম মেথড - মহাজাতক; পরিবর্ধিত নতুন সংস্করণ - জানুয়ারী, ২০০০। পৃষ্ঠা - ২৪৭।
১৩৬। সূরা ফালাক
১৩৭। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং - ৩৯৭। সহীহ বুখারী, হাদীস নং - ৭৫৭।
১৩৮। http://en.wikipedia.org/wiki/Mudra
১৩৯। http://quantummethod.org.bd/zakat
১৪০। http://islamqa.info/en/ref/3238
১৪১। Click This Link
১৪২। Click This Link
১৪৩। http://islamqa.info/en/ref/3854
১৪৪। Click This Link
১৪৫। কোয়ান্টাম হাজারো প্রশ্নের জবাব - পর্ব ১ ।। মেডিটেশন - মহাজাতক; প্রথম প্রকাশ - ১৫ জুন, ২০১২। পৃষ্ঠা - ১৫৬।
১৪৬। আলোকিত জীবনের হাজার সূত্র কোয়ান্টাম কণিকা - মহাজাতক; পরিবর্ধিত সংস্করণ – ১৯ জানুয়ারি ২০১১। পৃষ্ঠা - ২৯৩।
১৪৭। আলোকিত জীবনের হাজার সূত্র কোয়ান্টাম কণিকা - মহাজাতক; পরিবর্ধিত সংস্করণ – ১৯ জানুয়ারি ২০১১। পৃষ্ঠা - ৩০১।
১৪৮। আলোকিত জীবনের হাজার সূত্র কোয়ান্টাম কণিকা - মহাজাতক; পরিবর্ধিত সংস্করণ – ১৯ জানুয়ারি ২০১১। পৃষ্ঠা - ৩০৯।
১৪৯। আলোকিত জীবনের হাজার সূত্র কোয়ান্টাম কণিকা - মহাজাতক; পরিবর্ধিত সংস্করণ – ১৯ জানুয়ারি ২০১১। পৃষ্ঠা - ৩১৬।
১৫০। সূরা আল মায়িদা, আয়াত ৩
১৫১। সূরা আল ইমরান, আয়াত ৮৫
১৫২। http://www.islamqa.com/en/ref/10213/
১৫৩। http://www.islam-qa.com/en/ref/6688/nullifiers
১৫৪। Narrated by Abu Dawood, 3512; classed as saheeh by al-Albaani in Irwa’ al-Ghaleel, 2691.
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×