somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোয়ান্টাম কালচার এবং বিজ্ঞান ও ইসলাম ‌॥ পর্ব ৮

১২ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোয়ান্টাম কালচার এবং বিজ্ঞান ও ইসলাম ‌॥ পর্ব ১
কোয়ান্টাম কালচার এবং বিজ্ঞান ও ইসলাম ‌॥ পর্ব ২
কোয়ান্টাম কালচার এবং বিজ্ঞান ও ইসলাম ‌॥ পর্ব ৩
কোয়ান্টাম কালচার এবং বিজ্ঞান ও ইসলাম ‌॥ পর্ব ৪
কোয়ান্টাম কালচার এবং বিজ্ঞান ও ইসলাম ‌॥ পর্ব ৫
কোয়ান্টাম কালচার এবং বিজ্ঞান ও ইসলাম ‌॥ পর্ব ৬
কোয়ান্টাম কালচার এবং বিজ্ঞান ও ইসলাম ‌॥ পর্ব ৭

মাটির ব্যাংক

আগের আলোচনায় আমরা দেখেছিলাম যে মাটির ব্যাংককে আসলে কল্যান পাবার শর্টকাট একটা মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে - যেমন, ফাইল হারিয়ে গেছে তো মাটির ব্যাংকে টাকা রাখুন হারানো ফাইল চলে আসবে, ব্যবসায় উন্নতি দরকার তো মাটির ব্যাংকে টাকা রাখুন দ্রুত সাফল্য আসবে, বাড়ীঘর বিক্রি করতে চান তো মাটির ব্যাংকে টাকা রাখুন অধিক দামে বিক্রি হয়ে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। অর্থাৎ এখানে ধরে নেয়া হচ্ছে মাটির ব্যাংকে টাকা রাখলে মানুষের কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পারে, অথচ ইসলামী শিক্ষা হল কল্যাণ একমাত্র আল্লাহ পাকের কাছ থেকেই আসে, আর কারও জন্য কোন ক্ষতি নির্ধারিত হলে সেটাও একমাত্র আল্লাহ তা’আলার নিয়ন্ত্রণে, আল্লাহর সাথে এতে কোন অংশীদার নেই। তাই মাটির ব্যাংকে টাকা দিলে জীবনে কল্যান-উন্নতি আসে এমনটা ধারণা করলে অর্থাৎ মাটির ব্যাংককে আল্লাহর গুণে গুণান্বিত করলে তা শিরক হবে।

আর যদি দাবী করা হয় যে মাটির ব্যাংকে টাকা রাখার কারণে কল্যাণ ত্বরান্বিত হয়, অর্থাৎ মাটির ব্যাংকে টাকা দিলে নিমিষেই আল্লাহ আপনার মনোবাসনা পূরণ করবেন তবে কোন ঘটনার উপকরণ বা “সাবাব” হিসেবে এমন কিছুকে নির্ধারণ করা হল, যাকে আল্লাহ পাক সেই ঘটনার উপকরণ বা সাবাব হিসেবে নির্ধারণ করেননি। অবস্থাভেদে এটা বড় বা ছোট শিরক হতে পারে। এই কারণেই তাবিজ এর ব্যবহার ইসলামে নিষিদ্ধ।

এখানে আরো কিছু ব্যাপার আছে। যেমন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন মানত ও দানকে একই কাতারে ফেলে দিয়েছে।[১১৬] অথচ দান ও মানত সম্পূর্ণ দুটি ভিন্ন জিনিস। দান হতে হবে নিঃশর্ত এবং তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, নিজের স্বার্থের জন্য নয়। অর্থাৎ দান করার সময় আপনি কোন শর্ত আরোপ করে দেবেননা - যদি আমার অমুক ইচ্ছা পূরণ হয় তবেই আমি দান করব – এরকম কোন কিছু হলে সেটা দান হয়না বরং সেটা মানত হয়ে যায়। মানত এ নিজের স্বার্থ জড়িত থাকে এবং তা হয় শর্তযুক্ত। সোজা কথায়, কোনো বিষয় অর্জিত হওয়ার শর্তে কোনো কিছু করার ওয়াদাকে সাধারণত আমরা মানত বলে থাকি। যেমন আমরা কখনো কখনো বলি, যদি আমি পরীক্ষায় পাশ করি তাহলে মাদ্রাসায় একটি ছাগল জবাই করব। এটি একটি মানত।

আসলে মানত করা ঠিক নয়। রাসুল (স) মানত করতে নিষেধ করেছেন। তিনি এ ব্যাপারে সব সময় উম্মতদের নিরুৎসাহিত করেছেন। বিষয়টি আমরা অনেকেই জানি না। বরং মনে করি মানত করা খুব সওয়াবের কাজ। আসলে এটি কোনো সওয়াবের কাজ নয়। মানত প্রসঙ্গে হাদীসে আছে -

আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাদের মানত করতে নিষেধ করেছেন। আর বলেছেন: মানত কোনো কিছুকে ফেরাতে পারে না। তবে মানতের মাধ্যমে কৃপণ ব্যক্তির সম্পদ বের করা হয়।[১১৭]
সাহবি আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যেই বস্তু মহান আল্লাহ আদম সন্তানের জন্য নির্ধারণ করেননি মানত সেটি তার নিকটবর্তী করে না। বরং তাকদীরে যা আছে মানত সেটাই নিয়ে আসে। এর মাধ্যমে কৃপণ ব্যক্তির সম্পদ বের করা হয় যা সে খরচ করতে চায়নি।[১১৮]

উপরের হাদীস দুটোর সারমর্ম হচ্ছে যে রাসূল (স) তাঁর উম্মতদের মানত করতে নিষেধ করেছেন। তাই আমাদের উচিত হবে কোনো অবস্থায় মানত না করা। অবশ্য মানত করে ফেললে তা পালন করতেই হবে কারণ মানত করলে তা পূর্ণ করা ওয়াজিব হয়ে যায়। এ ব্যাপারে আমরা একটু পরই দেখছি। মানত করার মাধ্যমে কৃপণ ব্যক্তির সম্পদ বের করা হয় - এ কথা বলে রাসূল (স) বুঝিয়েছেন, মানত করা একটি অনর্থক কাজ। সাধারণত কৃপণ স্বভাবের লোকেরা মানত করে থাকে। তারা সুস্থ ও নিরাপদ থাকা কালে দান-সদকা করে না। কিন্তু বিপদে পড়লে আল্লাহর পথে খরচ বা দান সদকা করার বড় বড় মানত করে। তাকদীরে যা লেখা আছে তা হবেই। মানত করার মাধ্যমে তাকদীরের লেখা পরিবর্তন করা যায় না। তাকদীরের প্রতি যাদের যথাযথ ঈমান নেই সাধারণত তারাই মানত করে থাকে। অর্থাৎ মানত করা হোক বা না হোক - ফলাফল একই হবে।

তবে হ্যাঁ - মানত করলে তা আদায় করতেই হবে। কেউ যদি কোনো ভাল কাজ করার মানত করে তাহলে তাকে তা পালন করতেই হবে। যাকে আমরা বলি মানত পুরো করা। মানত পুরো করা ওয়াজিব, না করলে গুনাহ হবে[১১৯]। মানত সম্পর্কে আল্লাহ তা'লা বলেন -

তারা যেন তাদের মানতসমূহ পূরণ করে।[১২০]
তোমরা যা কিছু ব্যয় কর অথবা যে কোনো মানত কর তা অবশ্যই আল্লাহ জানেন।[১২১]

আল্লাহ তাআলা সৎকর্মশীল ঈমানদারদের প্রশংসায় বলেন-

তারা মানত পূরণ করে।[১২২]

অর্থাৎ মানত করলে তা পূরণ করতেই হবে। আল্লাহ তাআলা মানত পূরণ করতে হুকুম করেছেন। তবে কুরআনের কোথাও আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানত করতে আদেশ করেননি বা উৎসাহ দেননি (যেমনটি তিনি দিয়েছেন দানের ব্যাপারে) কিংবা অন্য কোনো আয়াতেও দিয়েছেন এমনটি পাওয়া যায়নি। কেউ মানত করলে কিংবা কোনো খরচ করলে আল্লাহ তা ভালভাবেই জানেন। তাই কেউ যদি মানত করে তবে মানত পূরণ না করে কোনো উপায় নেই।

তাছাড়া কোন কিছু চাইবার জন্য আল্লাহতা'লার কাছে মানত করারই বা দরকার কি? আল্লাহতা'লা আমাদের একমাত্র রব, তাঁর কাছে আমরা নিঃসংকোচে যেকোন কিছু চাইতে পারি। কোন কিছু পাবার জন্য তাঁকে শর্ত আরোপ করারই বা কি দরকার। শর্তারোপের ব্যাপারটা যেন কেমন হয়ে গেলনা? আমি আল্লাহতা'লাকে বললাম যে হে আল্লাহ আমাকে চাকরি দিয়ে দাও তাহলে আমি মাটির ব্যাংকে চাকরির প্রথম মাসের টাকা দিয়ে দেব। ব্যাপারটা অনেকটা ব্যবসায়িক চুক্তির মত হয়ে গেল, অর্থাৎ আল্লাহতা'লা যদি তাঁর কাজ সম্পাদন করেন তবে আমি আমারটা সম্পাদন করব। অথচ আল্লাহতা'লাকে এভাবে শর্ত দেবার আমি কে? আমি তো নগন্য একজন বান্দা, তাঁর উপর শর্তারোপ করার ক্ষমতা আমার আছেই বা কতটুকু?

এ কারণেই রাসুল (স) মানত করতে নিষেধ করেছেন, আর তিনি যা নিষেধ করেছেন তা করা কতটুকু সমীচীন একজন মুসলিম হিসেবে নিশ্চয়ই আপনাকে বলে দিতে হবেনা। অথচ দেখা যাচ্ছে যে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন সবাইকে মানত করতে এবং মানতের টাকা মাটির ব্যাংকে রাখতে নানাভাবে (একবারে মানতের টাকা যোগাড় করতে না পারলেও সমস্যা নেই, কিস্তিতে তা দেয়া যাবে) উৎসাহিত করে যাচ্ছে।[১২৩] আমাদের রাসুল (স) যা করতে নিষেধ করেছেন তাই-ই করতে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন উৎসাহ যোগাচ্ছে - ব্যাপারটা একটু কেমনতর হয়ে গেলনা?

ভবিষ্যৎ জানা ও জ্যোতিষশাস্ত্র

দান ও মানতের মতোই বিভ্রান্তিকর দুটো শব্দ হচ্ছে জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিষশাস্ত্র – একটি বিজ্ঞান আরেকটি শাস্ত্র যাতে কোন বিজ্ঞান নেই। জ্যোতির্বিজ্ঞান (Astronomy) ও জ্যোতিষশাস্ত্র (Astrology) বিষয় দুটি নিয়ে আগেই আলোচনা করেছি আমরা এবং সেখানে দেখেছিলাম যে ইসলামে জ্যোতিষশাস্ত্রের কোন স্থান নেই। কারণ একজন মুসলিম বিশ্বাস করে ভবিষ্যৎ বা গায়েব কেবলমাত্র আল্লাহ তা'লা জানেন, আর কেউ তা জানেনা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা'লা বলেন -
আপনি বলুনঃ আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ভান্ডার রয়েছে। তাছাড়া আমি অদৃশ্য বিষয় অবগতও নই। আমি এমন বলি না যে, আমি ফেরেশতা। আমি তো শুধু ঐ ওহীর অনুসরণ করি, যা আমার কাছে আসে। আপনি বলে দিনঃ অন্ধ ও চক্ষুমান কি সমান হতে পারে? তোমরা কি চিন্তা কর না ?[১২৪]

তাঁর কাছেই অদৃশ্য জগতের চাবি রয়েছে। এ গুলো তিনি ব্যতীত কেউ জানে না। স্থলে ও জলে যা আছে, তিনিই জানেন। কোন পাতা ঝরে না; কিন্তু তিনি তা জানেন। কোন শস্য কণা মৃত্তিকার অন্ধকার অংশে পতিত হয় না এবং কোন আর্দ্র ও শুস্ক দ্রব্য পতিত হয় না; কিন্তু তা সব প্রকাশ্য গ্রন্থে রয়েছে।[১২৫]

অথচ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন দাবী করছে যে ইচ্ছা করলে যে কেউ ভবিষ্যৎ বা গায়েব জানতে পারে এবং সে অনুযায়ী নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে। এ প্রসঙ্গে তারা কুরআনের একটি আয়াতের নিচের মত ব্যাখ্যা দিয়েছে -
পবিত্র কোরআনের সূরা জ্বীনের ২৬-২৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘গায়েব বা ভবিষ্যৎ শুধুমাত্র তিনিই জানেন, যদি না তিনি কাউকে জানান, যেমন তিনি রসুলদের জানিয়েছেন।’ অর্থাৎ জানার পথ খোলা আছে। তিনি যে কাউকে ইচ্ছা ভবিষ্যৎ জানাতে পারেন, যে কাউকে ইচ্ছা গায়েব জানাতে পারেন, এটা ওনার এখতিয়ারে। আর এটা আল্লাহর একটি আশ্বাসই যে, যে যা জানতে চায়, আল্লাহ সেই বিষয়ে তাকে জ্ঞান দান করেন।[১২৬]

অথচ সূরা জ্বিনের ২৬, ২৭ এবং ২৮ নম্বর আয়াত তিনটি হচ্ছে -

২৬। তিনি অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা, তিনি তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান কারো নিকট প্রকাশ করেন না,
২৭। তাঁর মনোনীত রাসূল ব্যতীত। সে ক্ষেত্রে তিনি রাসূলের সামনে এবং পেছনে প্রহরী নিয়োজিত করেন
২৮। রাসূলগণ তাদের প্রতিপালকের বাণী পৌঁছে দিয়েছেন কি না জানবার জন্য। রাসূলগণের নিকট যা আছে তা তাঁর জানা রয়েছে এবং তিনি সমস্ত কিছুর বিস্তারিত হিসাব রাখেন। [১২৭]

অর্থাৎ রাসুল ব্যতীত আল্লাহতা'লা কাউকে তাঁর গায়েবের জ্ঞান দেননা। এবং তাঁদের গায়েবের জ্ঞান দেবার পর ফেরেশতা দ্বারা তাঁদের পরিবেষ্টিত করে দেন। তাই জানার পথ খোলা আছে, যে কেউ আল্লাহতা'লার গায়েবী জ্ঞান জেনে নিতে পারবেন – ব্যাপারাটা মোটেও সত্যি নয়। আল্লাহপা'ক বলেন -

আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ সাধনের এবং অকল্যাণ সাধনের মালিক নই, কিন্তু যা আল্লাহ চান। আর আমি যদি গায়বের কথা জেনে নিতে পারতাম, তাহলে বহু মঙ্গল অর্জন করে নিতে পারতাম, ফলে আমার কোন অমঙ্গল কখনও হতে পারত না। আমি তো শুধুমাত্র একজন ভীতি প্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা ঈমানদারদের জন্য।[১২৮]

অর্থাৎ নবী রাসুলগণও গায়েব জানেননা, শুধুমাত্র আল্লাহ তাদেরকে যতটুকু জানান তাঁরা ততটুকুই জানেন। যেখানে আল্লাহতা'লা নিজেই ঘোষনা করেছেন যে মনোনীত রাসুল ব্যাতীত আর কাউকে তিনি অদৃশ্যের জ্ঞান জানান না সেখানে আমার আপনার মত নগন্য মানুষকে সেই জ্ঞান দিয়ে দেবেন – এমন চিন্তা করাটাইতো গুনাহ। অথচ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন সূরা জিনের এই আয়াতটির ভুল ব্যাখ্যা করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।

সমস্যা আরো আছে, ইসলামের দৃষ্টিতে জ্যোতিষশাস্ত্র হারাম কিনা - এমন প্রশ্নের[১২৯] জবাবে ইসলামে যে জ্যোতিষশাস্ত্র হালাল তা বোঝানোর জন্য কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞান আর জ্যোতিষশাস্ত্রকে এক করে একটি জগাখিচুড়ী ধরণের জবাব দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, সেই জবাবে বলা হয়েছে যে পবিত্র কুরআনে জ্যোতিষশাস্ত্র তথা রাশিচক্রকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে -

পবিত্র কোরআনের ৮৫ নং সূরাটির নাম ‘বুরুজ’, যার মানে রাশিচক্র। আরবি ভাষায় রাশিকে বুরুজ বলা হয়।[১২৬]

যারা তাফসীরের মূলনীতিগুলো জানেন, তাদের একথা জানা যে এটি একটি ভুল অনুবাদ। আসলে বুরুজ শব্দের অর্থ বড় প্রাসাদ ও দূর্গ। অধিকাংশ তাফসীরবিদদের মতে বুরুজ অর্থ বড় বড় নক্ষত্র। কয়েকজন তাফসীরবিদ এ স্থলে অর্থ নিয়েছেন প্রাসাদ; অর্থাৎ সেইসব গৃহ যা আকাশে প্রহরী ও ফেরেশতাদের জন্য নির্ধারিত। পরবর্তীকালে কোন কোন তাফসীরবিদ দার্শনিকদের পরিভাষায় বলেছেন যে সমগ্র আকাশমন্ডলীকে বার ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। এর প্রত্যেক ভাগকে বুরুজ বলে। তাদের ধারণা, স্থিতিশীল গ্রহ-নক্ষত্রসমূহ এসব বুরুজের মাঝেই অবস্থান করে। কিন্তু এটা সম্পূর্ন ভুল। কুরআন বলে না যে গ্রহগুলো আকাশে স্থির বরং কুরআনের মতে প্রত্যেক গ্রহ নিজস্ব গতিতে গতিশীল।[১৩০] তাই সূরা বুরুজ মানে রাশিচক্র – কথাটি সম্পূর্ণ ভুল।

তাছাড়া বলা আছে যে -

ইসলামের স্বর্ণযুগে যত বড় বড় আরব পণ্ডিত ছিলেন – আল বেরুনী থেকে শুরু করে আল বাত্তানী, আল কিন্দি, আল জারকানি, ইবনে বাজ্জা, ইবনে তোফায়েল, ইবনে আরাবী, ইব্রাহীম আল ফাযারি, আল ফারগানি, আল খারেজমি, আল তারাবি, ওমর খৈয়াম, ইবনে ইউনুস, নাসিরুদ্দিন আল তুসী প্রমুখ ইসলামি মনীষীগণ এস্ট্রলজি চর্চা করেছেন। কারণ তাদের অনুপ্রেরণা ছিলো পবিত্র কোরআনের বাণী, “নিশ্চয়ই আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিন-রাত্রির আবর্তনে জ্ঞানীদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে। তারা দাঁড়িয়ে, বসে বা শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে। তারা আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিরহস্য নিয়ে ধ্যানে নিমগ্ন হয় এবং বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি কর নি।”[১২৬]

সুরা আল ইমরানের ১৯০-১৯১ আয়াত দুটোর অর্থ আমরা এর আগেও বিস্তারিতভাবে দেখেছিলাম। আয়াত দুটোর সম্পূর্ণরূপ হচ্ছে -

১৯০। নিশ্চয়ই আকাশমন্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিন-রাত্রির পরিবর্তনে নিদর্শনাবলী রয়েছে বোধশক্তি সম্পন্ন লোকের জন্য
১৯১। যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশমন্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে ও বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এটা নিরর্থক সৃষ্টি করনি, তুমি পবিত্র, তুমি আমাদেরকে দোজখের শাস্তি হতে রক্ষা কর।

অর্থ্যাৎ আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি নিবিড় পর্বেক্ষণ তাকে উদ্বুদ্ধ করে আল্লাহর কাছে জাহান্নামের শাস্তি থেকে মাফ চাইতে যা মুসলিমের অন্যতম অন্যতম বিশ্বাস মৃত্যুর পর পুনরুত্থান ও বিচারদিনের বিষয়টিকেই প্রতিফলিত করে। এখানে জ্যোতিষশাস্ত্র নিয়ে কিছুই বলা হয়নি। এ ব্যাপারেও কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন পবিত্র কুরআনের আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা করেছে।

তাছাড়া কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন যে ইস্তিখারাহ সালাতকে স্বপ্নচর্চা বা স্বপ্নে ভবিষ্যৎ দেখার একটি মাধ্যম বলে আসছে[৬০] সেটাও সম্পূর্ণ ভুল। ইস্তিখারাহ সালাতের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ দেখা যায়না। “ইস্তিখারাহ” এর অর্থ হল আল্লাহতা'লা'র কাছ থেকে কল্যাণ চেয়ে নেওয়া। এর উদ্দেশ্য হল দুটি বস্তু থেকে ভালটি কামনা করা। যেমন ধরুণ আপনি দুটো ভালো কোম্পানিতে চাকরির অফার পেয়েছেন, আপনি বুঝতে পারছেননা যে কোনটি আপনার জন্য ভাল হবে। আপনি ইস্তিখারার সালাত আদায় করে আল্লাহতা'লা'র কাছে দোয়া চাইবেন যে যেটা আপনার জন্য ভাল হবে আল্লাহতা'লা যাতে আপনাকে সেটার পথেই পরিচালিত করেন। সবসময় যে স্বপ্ন মাধ্যমেই সব জেনে যাবেন এমন কোন কথা নেই, আরো অনেকভাবেই আল্লাহতা'লা আপনাকে সাহায্য করবেন, যেমন – যে চাকরিটা আপনার জন্য ভালো হবে সেটাতে জয়েন করা আপনার জন্য সুগম হয়ে যাবে আর অন্যটা হয়ে যাবে খুব কঠিন। কিংবা আরো অনেকভাবেই আল্লাহতা'লা আপনাকে সাহায্য করতে পারেন।

It is not necessary that you get a dream or even a "feeling." Rather, the istikhara is a prayer that Allah guide you towards that which is best (khayr) for you. If you do the prayer of guidance (istikhara) with the proper manners, the most important of which is to truly consign the matter to Allah and suspend your own inclinations, then Allah will make events unfold in the direction that is the best for your worldly and next-worldly affairs.[১৩১]

অর্থাৎ কোন কাজে আল্লাহতা'লার নির্দেশনা চাইবার জন্য ইস্তিখারা সালাত আদায় করা হয়, ভবিষ্যৎ দেখার জন্য নয়। তাহলে বুঝতেই পারছেন যে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন যে অ্যাস্ট্রলজি বা জ্যোতিষশাস্ত্র ও ভবিষ্যৎ জানার পক্ষে সাফাই গাইছে সেটা আসলে কত বড় গুনাহ'র কাজ। জ্যোতিষী বা ভবিষ্যৎ দ্রষ্টাদের নিয়ে রাসুল (স) বলেছেন -

যদি কেউ কোন গায়েবী বিষয়ের সংবাদদাতা বা ভবিষ্যদ্বক্তা'র কাছে যায় এবং তাকে কিছু জিজ্ঞেস করে, তবে ৪০ দিন পর্যন্ত তার কোন নামায কবুল হবে না। [১৩২]

চলবে...

রেফারেসন্সসমূহঃ
১১৬। কোয়ান্টাম হাজারো প্রশ্নের জবাব - পর্ব ২ ।। মেডিটেশন - মহাজাতক; প্রথম প্রকাশ – ২৭ জুলাই, ২০১২। পৃষ্ঠা - ২৬৯ থেকে ২৮৫।
১১৭। সহিহ মুসলিম। হাদীস নং ৪৩২৫।
১১৮। সহিহ মুসলিম। হাদীস নং ৪৩৩১।
১১৯। মানত সম্পর্কে আমরা কি জানি? - আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রাহমান, ইসলাম হাউজ ডট কম, ২০১০।
১২০। সূরা আলহজ্জ্ব, আয়াত ২৯
১২১। সূরা আল বাকারাহ, আয়াত ২৭০
১২২। সূরা আল ইনসান, আয়াত ৭
১২৩। কোয়ান্টাম হাজারো প্রশ্নের জবাব - পর্ব ২ ।। মেডিটেশন - মহাজাতক; প্রথম প্রকাশ – ২৭ জুলাই, ২০১২। পৃষ্ঠা - ২৭৮।
১২৪। সূরা আনআম, আয়াত ৫৯
১২৫। সূরা আনআম, আয়াত ৫০
১২৬। কোয়ান্টাম হাজারো প্রশ্নের জবাব - পর্ব ১ ।। মেডিটেশন - মহাজাতক; প্রথম প্রকাশ - ১৫ জুন, ২০১২। পৃষ্ঠা - ৪২৫।
১২৭। http://www.quran.gov.bd
১২৮। সূরা আ'রাফ, আয়াত ১৮৮
১২৯। কোয়ান্টাম হাজারো প্রশ্নের জবাব - পর্ব ১ ।। মেডিটেশন - মহাজাতক; প্রথম প্রকাশ - ১৫ জুন, ২০১২। পৃষ্ঠা - ৪২৪।
১৩০। আল কুরআন, মুদ্রণস্বত্ব খাদেমুল হারামাইন শরীফাইন বাদশাহ ফাহদ কোরআন মুদ্রণ প্রকল্প কর্তৃক সংরক্ষিত, পোঃ বক্স নং-৩৫৬১ মদীনা মোনাওয়ার।
১৩১। Istikhara: The Guidance Prayer - Shaykh Faraz Rabbani, http://qa.sunnipath.com/issue_view.asp?ID=1056
১৩২। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং - ৫৫৪০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×