somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোয়ান্টাম কালচার এবং বিজ্ঞান ও ইসলাম ‌॥ পর্ব ৫

০৪ ঠা জুন, ২০১৩ সকাল ১০:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোয়ান্টাম কালচার এবং বিজ্ঞান ও ইসলাম ‌॥ পর্ব ১
কোয়ান্টাম কালচার এবং বিজ্ঞান ও ইসলাম ‌॥ পর্ব ২
কোয়ান্টাম কালচার এবং বিজ্ঞান ও ইসলাম ‌॥ পর্ব ৩
কোয়ান্টাম কালচার এবং বিজ্ঞান ও ইসলাম ‌॥ পর্ব ৪


কোয়ান্টাম মেথড – শূন্য কথা

কোয়ান্টাম মেথড বলতে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন কি বোঝাচ্ছে সেটা আমাদের জানা দরকার। এই লেখাটিরই “বিজ্ঞান” পর্বে আমরা কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন নিয়ে হালকাপাতলা পরিচিতিপর্ব সেরে ফেলেছিলাম। এই পর্বে আমরা আরো বিশদভাবে পরিচিত হব এই ফাউন্ডেশনের সাথে - একেবারে শূন্য লেভেল থেকে।

মেডিটেশন বা ধ্যানচর্চা

সবার মাঝে ধ্যানচর্চা ছড়িয়ে দেবার উদ্দেশ্যে নব্বইয়ের দশকে যোগ ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু হয়। কালপরিক্রমায় সেটাই কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন নাম নিয়ে বর্তমানে পথ চলছে। দেশে বিদেশে প্রচুর শাখা খুলে বসেছে এই কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মূলমন্ত্রই হল ধ্যান বা মেডিটেশন করা, ধ্যান বা মেডিটেশন করে অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার অধিকারী হওয়া। আর সেই ক্ষমতাবলে আপনি দূর করবেন আপনার সকল সীমাবদ্ধতা। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন বলে-

মানুষের অসীম শক্তি ও সম্ভাবনাকে সবসময় শৃঙ্খলিত ও পঙ্গু করে রাখে সংস্কার ও ভ্রান্ত বিশ্বাস। ... এই ভ্রান্ত ধারণার শিকল ভেঙে মুক্ত বিশ্বাসে উপনীত হওয়াটাই হচ্ছে মানুষের আসল স্বাধীনতা। কারণ মুক্ত বিশ্বাস হচ্ছে সকল সাফল্য, সকল অর্জনের ভিত্তি। বিশ্বাসই রোগ নিরাময় করে, ব্যর্থতাকে সাফল্যে আর অশান্তিকে প্রশান্তিতে রূপান্তরিত করে। বিশ্বাসই মেধাকে বিকশিত করে, যোগ্যতাকে কাজে লাগায়, দক্ষতা সৃষ্টি করে। বিশ্বাসই অভাব দূর করে, প্রাচুর্য সৃষ্টি করে। ...ভ্রান্ত ধারণা ও সংস্কারের শৃঙ্খল মুক্তির পথ হচ্ছে মেডিটেশন। ... তখন প্রতিবারের প্রার্থনাতেই আপনি পুলকিত হবেন, প্রতিটি সেজদাই পরিণত হবে মেরাজে। ... মেডিটেশনের মাধ্যমেই আপনি সংযোগ সাধন করতে পারেন আপনার ‘অন্তরের আমি’র সাথে, আপনার শক্তির মূল উৎসের সাথে। … মেডিটেশনের পথ ধরেই আপনি লাভ করবেন পারিপার্শ্বিক দুষ্টচক্রের শৃঙ্খল ভাঙার অন্তর্গত শক্তি। ... আপনি অতিক্রম করবেন আপনার জৈবিক অস্তিত্বের সীমাবদ্ধতা। [৫৩]

মেডিটেশনের কথা বলতে গিয়ে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন বলছে যে হযরত ইউসুফ (আ) ধ্যান করতেন এবং ধ্যান করেই তিনি সকল সাফল্য লাভ করেন -

বরং কারাগারে নিজের অন্তর্নিহিত শক্তিকে জাগ্রত করার সাধনায় নিজেকে নিয়োগ করেন। বন্দী জীবনকে তিনি ধ্যানের মাধ্যমে আত্মশক্তিতে বিকশিত করার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেন।[৫৪]

এই ধ্যানচর্চা জিনিসটা কি সেটা বোঝানোর জন্য একটা ব্রেন ওয়েভ প্যাটার্ণ সারণী দেয়া হয়েছে[৫৫], যেখানে থিটা লেভেল সম্পর্কে বলা হয়েছে মেডিটেশনকালে সাধকরা এই স্তরে প্রবেশ করেই মহাচৈতন্যের (super consciousness) সাথে সংযোগ স্থাপন করতেন। এর পরবর্তী লেভেল ডেল্টাতে বলা হয়েছে যে দরবেশ ঋষিরা এই স্তরেও সজাগ থাকেন আবার মহাচৈতন্যে লীনও হতে পারেন। তবে এই মহাচৈতন্যে জিনিসটির সুস্পষ্ট বা অস্পষ্ট কোন ধরণের সংজ্ঞাই বইটির কোথাও দেয়া নেই।

মেডিটেশনের প্রথম ধাপ হচ্ছে ‘শিথিলায়ন’ যার মাধ্যমে ব্রেন ওয়েভকে আলফা লেভেলে নিয়ে মনের ধ্যানাবস্থা সৃষ্টি করা হয়। শিথিলায়নের মধ্য দিয়েই ধ্যানাবস্থায় যেতে হয়। ধ্যানাবস্থায় মানুষজন যা খুশি তাই ঘটিয়ে ফেলার এবং সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করার এক ঐশ্বরিক ক্ষমতা বা ঈশ্বরসমান ক্ষমতা লাভ করে। এই ক্ষমতা সম্পর্কে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন বলে -

শিথিলায়ন পুরোপুরি আয়ত্ত হলেই আপনি মনের শক্তিবলয় নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি হাতে পাবেন। ধ্যানাবস্থায় মন হয় ত্রিকালদর্শী, চেতনা অতিক্রম করে সকল বস্তুগত সীমা। মনের এই ধ্যানাবস্থার শক্তিকে প্রয়োগ করেই প্রাচ্যের সাধক দরবেশ ঋষিরা একদিন আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। ইচ্ছা করেছেন – ঘটনা ঘটেছে। ইচ্ছা করেছেন – মানুষ রোগমুক্ত হয়েছে। আপনিও এ চাবিকাঠিকে কাজে লাগিয়ে অর্জন করতে পারেন অতিচেতনা। এই চাবিকাঠি দিয়েই দৃশ্যমান সব কিছুর পেছনে যে নেপথ্য স্পন্দন ও নিয়ম কাজ করছে তার সবটাকেই আপনি নিজের ও মানবতার কল্যাণে সক্রিয় করে তুলতে পারবেন।[৫৬]

তো মোটামুটি এই হচ্ছে মেডিটেশন – যার মাধ্যমে একজন মানুষ অতিমানবীয় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে সাধু-ঋষিদির মত প্রকৃতির নেপথ্য স্পন্দনকে নিয়ন্ত্রণ করে নিজের ও অপরের ভাগ্য গড়ে নেয়।

মনছবি

শিথিলায়ন প্রক্রিয়ায় মানুষের মাঝে এমন এক ক্ষমতা তৈরি হয় যার ফলে সে তার কল্পনা শক্তি দ্বারাই নিজের চাওয়া পাওয়া পূরণ করে ফেলতে পারে, নিজের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটিই হচ্ছে মনছবি। মনছবি ব্যবহার করে ঘটিয়ে ফেলা কয়েকটি ঘটনার বর্ণনা কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মধ্যমেই জানতে পারা যায় -

এক তরুণী। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাস করে ভাবছে কি করবে। সে মনছবি দেখল একটি চাকরির। এমন চাকরি যেখানে কাজ কম কিন্তু বেতন বেশি। সে নিয়মিত মনছবি দেখতে লাগল আর এ ধরনের কাজ যে সব প্রতিষ্ঠানে পাওয়া যেতে পারে সেখানে ডাকযোগে বায়োডাটা পাঠিয়ে দিল। দেড় মাসের মধ্যে একটি বিদেশী দূতাবাসে চাকরি হয়ে গেল তার।[৫৭]
এক ইঞ্জিনিয়ার। সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করার মনছবি দেখতে লাগল। ডিভি ভিসা পেয়ে গেল। ভিসা পাওয়ার পর মনছবি দেখতে লাগল সমমানের চাকরির, যাতে নিজের প্রকৌশল জ্ঞানকে কাজে লাগাতে পারেন। দেশে তিনি কাজ করতেন বিদেশি প্রতিষ্ঠানে। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার দেড় মাসের মধ্যে একই প্রতিষ্ঠানে আগের চেয়েও দায়িত্বপূর্ণ পদে চাকরি হয়ে গেল তার।[৫৭]

অর্থাৎ কেবলমাত্র মনে মনে কল্পনা করেই যেকোন জিনিস ঘটিয়ে ফেলা যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা আছে নেলসন ম্যান্ডেলা, মাওসেতুং, মালয়শিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ, উড়োজাহাজের আবিষ্কর্তা রাইট ভ্রাতৃদ্বয়, উপমহাদেশের প্রখ্যাত অভিনেতা দিলীপকুমার, মুষ্টিযোদ্ধা জর্জ ফোরম্যান কিংবা ফিলিস্তীনের হাজার হাজার জনতা - যারা (কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের ভাষ্যমতে) মনছবি দেখে দেখে নিজের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করে আজকের এই পর্যায়ে এসেছে।[৫৮] অবশ্য যারা এটাকে ফ্যান্টাসি মনে করছেন, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মতে তারা মূর্খ[৫৯]।

স্বপ্ন চর্চা ও আইচিং এর মাধ্যমে ভবিষ্যৎগণনা

কোয়ান্টাম মেথডের আরেকটি উল্লেখযোগ্য প্রয়োগ হচ্ছে স্বপ্নচর্চা বা স্বপ্নব্যাখ্যার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ গণনা বা ভবিষ্যৎ দর্শন করা। স্বপ্নের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ দেখে নেয়া বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার, কারণ মহামতি বুদ্ধের মা মায়াদেবী, শ্রী রাম কৃষ্ণ পরম হংসদেবের পিতা ক্ষুদিরাম, জুলিয়াস সিজার, প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন, ইংরেজ কবি শেলী, কবি টেনিসন প্রমুখ স্বপ্নের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ দেখেছিলেন। তাছাড়া বিজ্ঞানী ফ্রেডরিক ভন কাকুল, সেলাই মেশিন আবিষ্কারক ইলিয়াস হাওয়ে, বল বিয়ারিং-এর আবিষ্কর্তা জেমস ওয়াট সহ অনেক বিজ্ঞানীরা তাদের সমস্যার সমাধান স্বপ্নেই পেয়ে গেছেন।[৬০] এ ছাড়াও স্বপ্ন চর্চার ও ব্যাখ্যার অনুশীলন বলতে গিয়ে হয়রত ইউসুফ (আ) এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেই সাথে এও বলা হয়েছে যে হিন্দুদের স্বপ্ন চর্চার গুরুত্বপূর্ণ দলিল অথর্ববেদ বা বৌদ্ধভিক্ষুদের স্বপ্নচর্চাকারী সম্প্রদায় স্বপ্নযোগীর মত ইসলাম ধর্মেও আলেমদের অনেকে যে ‘ইস্তেখারা’ করে ভালমন্দ বলেন, তা-ও স্বপ্নচর্চা ও স্বপ্নের সৃজনশীল প্রয়োগেরই একটি বিশেষ মাত্রা।[৬০] অর্থাৎ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মতে স্বপ্নচর্চার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ জানার প্রয়াস থেকেই বিভিন্ন আলেমগণ ইসলাম ধর্মে স্বপ্নচর্চা করে থাকেন এবং স্বপ্নচর্চার জন্য তারা ‘ইস্তেখারা’ সালাত আদায় করেন! শুধু স্বপ্নচর্চা নয় বরং “আইচিং” এর মাধ্যমেও ভবিষ্যৎ গণনার উপর শিক্ষা দেয়া হয় কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে।[৬১] আইচিং হচ্ছে ভবিষ্যৎগণনার জন্য চীনদেশীয় একটা পদ্ধতি, যাতে মাটিতে কাঠি বা পয়সা ফেলে ভাগ্যগণনা করা হয়।[৬২]

কোয়ান্টাম নিরাময়

রোগের মূল কারণকে মানসিক আখ্যায়িত করে এখানে মেডিটেশনের মাধ্যমে সকল রোগ ব্যাধি উপশমের পদ্ধতি ব্যাখ্যা করা হয়েছে[৬৩]। মনছবি বা ইমেজ থেরাপি ছাড়াও রয়েছে ‘দেহের ভিতরে ভ্রমণ’ নামক পদ্ধতি যেখানে রোগীকে প্রথমে শিথিলায়ন করতে বলা হয়, তারপর শরীরের নানা অঙ্গের মধ্য দিয়ে কাল্পনিক ভ্রমণ করতে বলা হয়। এতে সে তার সমস্যার স্বরূপ সম্পর্কে অন্তদৃষ্টি লাভ করে এবং নিজেই কমান্ড সেন্টারের মাধ্যমে সমাধান করতে পারে। যেমন-

একজন ক্যান্সারের রোগী তার ক্যান্সারের কোষগুলোকে কল্পনা করে সর্ষের দানারূপে।আর দেখে অসংখ্য ছোট ছোট পাখি ওই সর্ষে দানাগুলো খাচ্ছে। আর সর্ষের দানার পরিমাণ ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। আস্তে আস্তে সর্ষের দানা নিঃশেষ হয়ে আসছে। সর্ষের দানাও শেষ, নিরাময়ও সম্পন্ন। [৬৪]

শিথিলায়ন প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা সম্পর্কে এতে বলা হয়েছে -

শিথিলায়নের মাধ্যমে ব্যথা উপশম করার জন্য আপনাকে সাধু সন্ন্যাসী বা ভিক্ষু হবার প্রয়োজন নেই। এজন্য নির্বাণ বা ফানাফিল্লাহর স্তরেও আপনাকে যেতে হবেনা।[৬৫]

এখানে যে নির্বাণ[৬৬] ও ফানাফিল্লাহ[৬৭] এর কথা বলা হচ্ছে তা হল যথাক্রমে বৌদ্ধধর্ম ও সুফিবাদ থেকে আগত ধ্যানের দুটি অবস্থা।

মাটির ব্যাংক

মাটির ব্যাংক হচ্ছে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে মানত করে টাকা জমা করার একটি মাধ্যম। পরে জমাকৃত টাকাসহ মাটির ব্যাংকটি কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের অফিসে জমা দিতে হয়। এটি শুধু টাকা জমা রাখার পাত্র হিসেবেই ব্যবহৃত হয়না বরং এটা দাতার জন্য কল্যানকর অনেক কিছু বয়েও আনে। এ ব্যাপারে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের বক্তব্য হচ্ছে-
দাতা এর মাধ্যমে শুধু পারলৌকিক পুণ্য অর্জনের সুযোগই পান না, দৈনন্দিন জীবনেও পাচ্ছেন প্রাচুর্য, দুরারোগ্য ব্যধি থেকে মুক্তি এবং বালা-মুসিবত মুক্তি।[৬৮]

কল্যাণকর এরকম কিছু কাহিনী নিচে উল্লেখ করা হল-

ম্যানেজারের অসততার কারণে দুবাইতে আমার প্রথম চাকরিটি হারাতে হয়। কিন্তু হতাশ না হয়ে বিভিন্ন কোম্পানিতে সিভি ও ইন্টারভিউ দিতে থাকলাম। এর সাথে মাটির ব্যাংকে ১০০০ টাকা পাঠালাম ও মনছবি দেখতে লাগলাম সর্বনিম্ন ৩০০০ থেকে ৩৫০০ দিরহাম (৬০-৭০ হাজার টাকা) এর মধ্যে একটি চাকরি পাচ্ছি। এর মধ্যে ৫০ হাজার টাকার অর্থাৎ ২৫০০ দিরহামের কয়েকটি অফার এলো। আমি অফারগুলো ফিরিয়ে দিয়ে নিয়মিত মেডিটেশন ও মনছবি দেখতে লাগলাম। অবশেষে একটি গ্রুপ অফ কোম্পানিতে একাউনটেন্ট জেনারেল হিসেবে ৩০০০ দিরহাম বেতনে ১ মাসের মধ্যে চাকরি হয়ে গেল।[৬৯]

হোঁচট খেয়ে আমার ডান পায়ের হাঁটু ফুলে গেল। ব্যথার জায়গায় রক্ত জমে কালচে রং ধারণ করেছে। ঘুমানোর আগে ব্যথানাশক ওষুধ খেলাম। মাঝরাতে প্রচন্ড ব্যথায় ঘুম ভেঙে গেল। সবাই তখন ঘুমিয়ে আর আমি বিছানায় বসে হাঁটু ধরে কাঁদছি। ব্যথা উপশমের উপায় খুঁজতে খুঁজতে মাটির ব্যাংকের কথা মনে হলো। নিয়ত করে টাকা ফেলবো বলে বিছানা থেকে নামছি, অনুভব করলাম পুরো ডান পায়ে ব্যথা ছড়িয়ে গেছে, পা ফেলতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। পরদিন সকালে ঘুম ভাঙলে ভয়ে ভয়ে একটু হাঁটলাম। অথচ পায়ে আর কোনো ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করলাম না। এমনকি রক্ত জমাটের স্থানেও কালচে দাগ নেই। সেই থেকে আমি সবাইকে মাটির ব্যাংকে দানের কথা বলি।[৭০]

সদ্য কেনা জমির নামজারি ও মালিকানা সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে আলোচনা করতে সেখানকার ভূমি অফিসে যেতে হলো। মেইন রোড থেকে ১০ মিনিটের পথ পেরিয়ে গ্রামের ভেতরে ছিলো সে অফিস। কাঁচা রাস্তা বলে হেঁটে রওনা দিলাম। অফিসে পৌঁছে খেয়াল হলো হাতে ফাইল নেই, ওটার ভেতরেই দলিল ছিলো। দলিল না পেলে জমি হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া এর কোনো ফটোকপিও আমার কাছে নেই। সাথে সাথে খুঁজতে বেরুলাম। রাস্তার আশপাশে তন্নতন্ন করে খুঁজছি, সামনে যাকে পাচ্ছি তাকেই জিজ্ঞেস করছি। কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারলো না। দলিলের আশা ছেড়ে দেবো কি না ভাবতে ভাবতেই মাটির ব্যাংকে দান করার নিয়ত করলাম। ১০/১৫ মিনিটের মধ্যেই এক কিশোর আমাদেরকে বলাবলি করতে দেখে স্থানীয় এক স্কুলঘরে নিয়ে গেল। সেখানে দেখলাম দলিলটি টেবিলে রাখা, কেউ একজন তা কুড়িয়ে পেয়ে দিয়ে গিয়েছিলো।[৭১]

২০০৮ সালের রমজান মাস। ওযু করার পর মনে হলো কানের হিয়ারিং এইড তো খুলি নি। এই যন্ত্রের প্রধান শত্রু হলো পানি। যে কারণে এর কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেল। নিজেকে খুব অসহায় লাগছিলো। কেননা জন্ম থেকে শ্রবণ প্রতিবন্ধী হওয়ায় শোনার জন্যে এ যন্ত্রের ওপর নির্ভর করা ছাড়া আমার কোনো উপায় ছিলো না। মন খারাপ নিয়ে ইফতার করলাম। মাগরিবের নামাজ শেষে মাটির ব্যাংকে টাকা ফেলার নিয়ত করলাম এবং প্রার্থনা করলাম যাতে হিয়ারিং এইডটি ঠিক হয়ে যায়। এর ঠিক আধঘণ্টা পর খেয়াল করলাম শুনতে আর কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সব শব্দই আমি স্বাভাবিকভাবে শুনতে পাচ্ছি।[৭২]

এরকম আরো বেশ কিছু উদাহরণ রয়েছে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সাইটে [৭৩]। উপরের এসব উদাহরণ থেকে আমরা মাটির ব্যাংকের কার্যকারিতা সম্পর্কে এই ধারণা পাচ্ছি যে মাটির ব্যাংকে টাকা রাখার মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই আপনার মনোবাসনা পূরণ বা কল্যান সাধন কিংবা কল্যান ত্বরান্বিত করতে পারবেন।

কোয়ান্টা সংকেত

কোয়ান্টা সংকেতকে দুটো ভাগে ভাগ করা যায় – কোয়ান্টা ধ্বনি আর কোয়ান্টা ভঙ্গি।[৭৪] কোয়ান্টা সংকেত সম্পর্কে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের বক্তব্য হচ্ছে -

কথিত আছে অলৌকিক শক্তি বলে দরবেশ ও ঋষিরা সব অসাধ্য সাধন করতেন। ইসম বা মন্ত্র উচ্চারণ করতেন আর জাদুর মত সব ঘটনা ঘটে যেত। ... দরবেশদের এই ইসমগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘আল্লাহ’, ‘ইয়া হু’, ‘ইয়া হক’ সহ নানা জিকির। ঋষিদের মন্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘ওম’ সহ নানা জপ মন্ত্র। খ্রিষ্টান ও ইহুদীদের রয়েছে ‘আমেন’। জাপানী বুদ্ধদের ‘নামো আমিদা বাৎসু’ প্রভৃতি মন্ত্র। পাশ্চাত্যে ধর্মহীন ধ্যানীরা অবশ্য পুরোপুরি ধর্ম নিরপেক্ষ ধ্বনি যেমন ‘শান্তি’, ‘প্রেম’, ‘ওয়ান’, ‘পেন’ বা কোন অর্থহীন ধ্বনিকেও মন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন। দরবেশ-ঋষিরা সাধনায় যেমন লক্ষ লক্ষ বার তাদের মন্ত্র জপ করতেন, তেমনি এই বিশেষ ধর্ম বহির্ভূত ধ্যনীরা নিজেদের পছন্দমত কোন শব্দ লক্ষ লক্ষ বার উচ্চারণ করেন। তাদের বিশ্বাস এইভাবে অগণিত বার উচ্চারণের ফলে এই ধ্বনি এমন একটা মনোদৈহিক স্পন্দন সৃষ্টিতে সহায়ক হয় যা একজন মানুষকে মুহূর্তে তার মনোদৈহিক সামর্থ্য ও শক্তি পুরোপুরি একাগ্রভাবে ব্যবহার করতে সক্ষম করে। মন ও দেহ চলে যায় শক্তির স্তরে। ব্যক্তিমন ও চেতনা সংযুক্ত হয় মহাচেতনা বা কসমিক কনশাসনেসের সাথে। তখন অর্জিত হয় দৃশ্যমান সবকিছুর পেছনে প্রকৃতির যে নেপথ্য স্পন্দন ও নিয়ম ক্রিয়াশীল তাকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা।[৭৪]

অর্থাৎ এর মাধ্যমে সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা অর্জিত হয়। কোয়ান্টা ধ্বনি আর কোয়ান্টা ভঙ্গির উপকারিতা সম্পর্কে বলা হয়েছে -

কোয়ান্টা ধ্বনি উচ্চারণ এবং কোয়ান্টা ভঙ্গি করা মাত্রই মেডিটেশন লেভেলে পৌঁছে যেতে এবং পরিকল্পিত কাজকে সহজতর করতে পারেন। [৭৫]

কোয়ান্টা ভঙ্গি সম্পর্কে বলা হয়েছে -

দরবেশ ও ঋষিরা যেমন মন্ত্র বা ইসম এবং অভয় মুদ্রা বা জ্ঞান মুদ্রাকে ব্যবহার করেছেন, আপনিও ব্যবহার করতে পারেন কোয়ান্টা ধ্বনি এবং কোয়ান্টা ভঙ্গি। আপনি মহামতি বুদ্ধ সহ প্রাচীন ঋষিদের যে ভাস্কর্য দেখতে পান, তার বেশির ভাগই অভয় মুদ্রা বা জ্ঞান মুদ্রা করে পদ্মাসন বা সিদ্ধাসনে বসা।[৭৬]

অর্থাৎ আমরা হিন্দুধর্মের বিভিন্ন সিদ্ধপুরুষ ও দেবতাদের উপাসনারত যে ছবিগুলো দেখি বা গৌতম বুদ্ধের ধ্যানরত যে ছবিগুলো দেখি - সেসব ছবিতে তারা ধ্যান বা তপস্যা করার জন্য যেভাবে বসে থাকেন সেটাকেই কোয়ান্টাভঙ্গি বলা হচ্ছে। এই কোয়ান্টাভঙ্গির কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পাওয়া না গেলেও অবশ্য এর জ্যোতিষশাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা পাওয়া যায় কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন থেকেই -

প্রশ্ন করতে পারেন কোয়ান্টা ভঙ্গি বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনীর সমন্বয়ে শুধুমাত্র ২ আঙুলে করতে হবে কেন, এটা তো ৩ আঙুল মিশিয়ে করা যেতে পারে। প্রাচীন ঋষি দরবেশরা কেন ২ আঙুলে করেছেন। এর পুরোপুরি ব্যাখ্যা প্রায় বিস্মৃতির অতলে অপসৃত। কিন্তু এর জ্যোতিষ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আমাদের জানা। আমরা জানি, হাতের বুড়ো আঙুলের ক্ষেত্র হচ্ছে শুক্র বা ভেনাসের ক্ষেত্র। তর্জনীর ক্ষেত্র হচ্ছে বৃহস্পতির ক্ষেত্র। জ্যোতিষ বিজ্ঞানে শুক্র ও বৃহস্পতি এ দুটো গ্রহই প্রবৃদ্ধি, কল্যাণ ও সাফল্যের প্রতীকরূপে গণ্য। আর মধ্যমার ক্ষেত্র শনির ক্ষেত্র রূপে বিবেচিত। আর শনি বিলম্ব ও বাধার প্রতীক। প্রাচীন সাধকরা এ কারণেই ভেনাস ও জুপিটারের প্রবৃদ্ধিকেই সংযুক্ত করেছেন। এর সাথে শনির প্রভাবকে যুক্ত করতে চান নি। অতীতের সাধকরা কোয়ান্টা ভঙ্গি ২ আঙুলেই করেছেন। আর অধুনা সফল ব্যক্তিরাও সঙ্কট উত্তরণে এভাবেই কোয়ান্টা ভঙ্গি করছেন। [৭৪]

অবশ্য কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন জ্যোতিষশাস্ত্রে ব্যবহৃত এই ভঙ্গিটির একটা ইসলামী ব্যাখ্যা দিয়েছে -

কোয়ান্টা ভঙ্গি বা সংকেতের আর একটি মজার দিক আছে। আপনি ডান হাতে কোয়ান্টা ভঙ্গি করে হাত সামনে আনুন। ভাল করে দেখুন হাতে কিছু দেখছেন কি না। খেয়াল করলে দেখবেন হাতে আরবী ‘আলিফ’ ‘লাম’ ও ‘হে‘ অর্থাৎ আল্লাহু হয়ে আছে। অর্থাৎ কোয়ান্টা ভঙ্গি করার সাথে সাথে আপনি প্রকারান্তরে স্রষ্টাকে স্মরণ করছেন।[৭৪]

তবে ইসলামের দৃষ্টিতে এই ব্যাখ্যাটি কোত্থেকে এসেছে কিংবা কুরআন-হাদীসের সাপেক্ষে তা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত সেসব ব্যাপারে অবশ্য কোন রেফারেন্স দেয়া হয়নি।

কমান্ড সেন্টার

কমান্ডসেন্টার হচ্ছে শক্তি কেন্দ্র। ধ্যান করে আপনার মধ্যে অতিচেতনার উন্মেষ ঘটলে সেটাকে কাজে লাগিয়ে অন্যান্য কাজ করার জন্যই কমান্ড সেন্টার বানাতে হয়। কমান্ডসেন্টার থেকে আপনি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। কমান্ড সেন্টার সম্পর্কে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের বক্তব্য হচ্ছে -

কমান্ড সেন্টারকে এক কথায় বলা যায়, মনের বাড়ির শক্তি ও কল্যাণ কেন্দ্র। মানব অস্তিত্বের যে অংশ স্থান-কালে (Time and space) আবদ্ধ নয়, সে অংশ এই কমান্ড লেভেলে প্রকৃতির নেপথ্য স্পন্দন ও নিয়মের সাথে সহজেই যোগাযোগ স্থাপন করে। আর আপনি জানেন, দৃশ্যমান সবকিছুর পেছনেই সক্রিয় রয়েছে প্রকৃতির এই নেপথ্য স্পন্দন ও নিয়ম। স্থান-কালের সীমানা অতিক্রম করে যোগাযোগ, তথ্যানুসন্ধান এবং নিজের ও মানবতার কল্যাণের সকল প্রক্রিয়া সম্পাদনের প্রয়োজনীয় সব উপাদানই রয়েছে এখানে। আর সবকিছুই থাকে সদা প্রস্ত্তত অবস্থায়। [৭৭]

কমান্ডসেন্টার কি রকম হবে সে ব্যাপারে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের বর্ণনা হচ্ছে -

এটি একটি বিশাল হল কক্ষ। এখানে আপনার জন্যে একটি বিশেষ কমান্ড চেয়ার, অন্তর্গুরুর জন্যে বিশেষ চেয়ার, তিনটি মনিটরিং স্ক্রিন, ডান দিকের কোনায় ‘রহম বলয়’ বা আশীর্বাদ বলয় বা ‘প্লেস অব ব্লিস’, ডানে একটা সোনার বাথ টাব, একটি টাইম মেশিন, যোগাযোগ, তথ্য সংগ্রহ, মনিটরিং নিরাময় ও সার্বিক কল্যাণ সাধনের প্রয়োজনীয় সব কিছুই আপনি প্রথমবার ঠিকঠাক করে নেবেন। [৭৭]

কমান্ডসেন্টারে গিয়ে স্থান-কালের উর্ধ্বে চলে গিয়ে যেকোন তথ্যানুসন্ধান কিংবা নিজের ও অন্যের কল্যাণ করা সম্ভব হয়। যেহেতু আপনি কালের অর্থাৎ সময়ের উর্ধ্বে তাই এখান থেকে সহজেই অতীত বা ভবিষ্যৎ দেখা সম্ভব হয়। অতীত-ভবিষ্যৎ দেখার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কমান্ডসেন্টারেই স্থাপন করতে হয় -

চেয়ারের হাতলে বা চেয়ারের সামনে সব রিমোট কন্ট্রোল সুইচ। চেয়ারের সামনে ৩টি মনিটরিং স্ক্রিন। বামেরটি অতীতের সবকিছু দেখার জন্য। মাঝেরটি বর্তমান আর ডানেরি ভবিষ্যৎ দেখার জন্য। [৭৮]

কমান্ডসেন্টারের বিভিন্নরকম প্রয়োগ আছে। এখানে বসে আপনি অন্যের অসুখ সারিয়ে তুলতে পারবেন কিংবা ভবিষ্যৎ জেনে সে অনুযায়ী কাজ করতে পারবেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন ঘটনাবলী নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। এ নিয়ে অনেকগুলো উদাহরণ থেকে দুটি নিচে দেয়া হল-

ব্যবসায়িক টেন্ডার দাখিলের জন্যেও কমান্ড সেন্টার ব্যবহার করা যায়। আপনি টেন্ডারের সর্বনিম্ন দর কি হবে এটা জানার জন্যে মাঝের মনিটর (২ নম্বর মনিটর) বা টিভির ওপর বাম দিকে একটি লাল বাতি এবং ডান দিকে একটি সবুজ বাতি স্থাপন করুন। ধরুন আপনি একটি জিনিসের দর দিতে চাচ্ছেন ৪৮০ টাকা। ৪৮০ টাকার কথা চিন্তা করে মনিটরের দিকে তাকান। লাল বাতি জ্বলে উঠলে বুঝবেন এই দর সর্বনিম্ন নয়। তাহলে আস্তে আস্তে দর নিচের দিকে নামাতে থাকুন। ৪৭০ টাকা- আবার লাল বাতি জ্বলে উঠল। বোঝা গেল এতেও চলবে না। নামাতে নামাতে ৪৪৫ টাকায় যখন এলেন সবুজ বাতি জ্বলে উঠল। অর্থাৎ ৪৪৫ টাকা সর্বনিম্ন দর হবে। একজন কোয়ান্টাম গ্রাজুয়েট মন্ত্রী ছিলেন। মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেয়ার পর ঠিকাদারি ব্যবসায় মনোনিবেশ করলেন। একটা বড় অঙ্কের টেন্ডার দাখিল করবেন। ইঞ্জিনিয়াররা বলল একটি নির্দিষ্ট অঙ্ক। এতে কাজ পাওয়া যাবে কিন্তু কোন লাভ হবে না। তিনি মেডিটেশন করলেন এক ঘণ্টা। এক ঘণ্টা পর মেডিটেশন থেকে উঠে বললেন দরপত্রের অঙ্ক আরও এক কোটি বাড়াতে। ইঞ্জিনিয়াররা হা হা করে উঠল, তাহলে আমরা টেন্ডার পাব না। তিনি বললেন, আমরাই পাব। ইঞ্জিনিয়াররা দরপত্র পুনর্বিন্যাস করল সেভাবে। তিনিই সর্বনিম্ন হয়ে টেন্ডার পেলেন। এক কোটি টাকাই লাভ।[৭৯]

প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা একটি পশ্চিমা দেশের ভিসা নিতে যাবেন। রাতে কমান্ড সেন্টারে দেখলেন, লাইনে দাঁড়িয়েছেন। কাউন্টারে একজন পুরুষ ও একজন মহিলা। তাকে কোন প্রশ্ন ছাড়াই ভিসা দিয়ে দিচ্ছে। পরদিন সকালে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। কাউন্টারে দেখেন অন্য পুরুষ, অন্য মহিলা কাজ করছেন। তিনি একটু বিব্রতবোধ করলেন। লাইন এগুচ্ছে। শিক্ষিকার সামনে এখন মাত্র একজন। এ সময় পালা বদল হলো। যারা কাজ করছিলেন তাদের বদলে অন্য ২ জন এসে কাউন্টারে বসলেন। শিক্ষিকা বিস্মিত হয়ে দেখলেন কমান্ড সেন্টারে যাদের দেখেছিলেন, এরা তারাই। শিক্ষিকা কাউন্টারে পৌঁছার পর এরা শুধু পাসপোর্ট দেখলেন, মৃদু হাসলেন। পাসপোর্ট রেখে বললেন, বিকেলে ভিসা নিয়ে যাবেন।[৮০]

কমান্ডসেন্টারে বসে কোয়ান্টামের সদস্যরা অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী হয়ে যান। যার ফলে মাদকাসক্তি দূরীকরণ, ইন্টারভিউ বা প্রমোশন সহজ করা, ভাইভা বোর্ডের মুখোমুখি সফল করা, দেনাদার থেকে টাকা আদায়, পারিবারিক মত বিরোধ দূর, সফল অস্ত্রোপচার, যন্ত্রের যান্ত্রিক ত্রুটি বা তথ্য বের করার জন্যে কিংবা ঘরে বসে বহুদূরে কারো উপর নজরদারী - প্রভৃতি কাজ করে ফেলা সম্ভব! কমান্ডসেন্টারে বসে তারা যা কখনো দেখেননি তা সম্পর্কেও নির্ভুল তথ্য দিতে পারেন-

যাকে তাঁরা জীবনে দেখেন নি, যার কথা তাঁরা জীবনে শোনেন নি, শুধু তার নাম, বয়স ও ঠিকানা বলার সাথে সাথে তার এমন হুবহু বর্ণনা দিতে থাকেন যে, প্রশ্নকর্তা নিজেই হতবাক হয়ে যান।[৮১]

অন্তর্গুরু

কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মতে -

আধ্যাত্মিকতার পথে অগ্রসর হতে হলে একজন আলোকিত গুরু, মুর্শিদ বা গাইডের কাছে বায়াত বা দীক্ষা গ্রহণ প্রয়োজন। বায়াত বা দীক্ষা গ্রহণ ছাড়া নিজে নিজে আধ্যাত্মিক সাধনা এক পিচ্ছিল পথ। যে কোন সময়ই পা পিছলে পাহাড় থেকে একেবারে গিরিখাতে পড়ে যেতে পারেন। [৮০]

এই অন্তর্গুরুর দেখা পেতে হলে ধ্যানের বিশেষ স্তরে যেতে হয়-

কমান্ড সেন্টার নির্মাণ করে সবকিছু ঠিক মত সাজানোর পর ধ্যানের বিশেষ স্তরে অন্তর্গুরুর আগমন ঘটে। অন্তর্গুরু প্রথমে সকল অশুভ প্রভাব থেকে মুক্তির জন্য ‘সাইকিক বর্ম প্রদান করেন যা অতীতের সকল অশুভ প্রভাব নিষ্ক্রিয় করে দেয় এবং ভবিষ্যতের এ ধরণের প্রভাব থেকে নিরাপদ রাখে।[৮২]

দেখা যাচ্ছে যে সকল অশুভ প্রভাব থেকে শিষ্যকে বাঁচিয়ে রাখার এক বিশেষ ক্ষমতা আছে অন্তর্গুরুর। যে কারণে অন্তর্গুরু নির্বাচনের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। এ ব্যাপারে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন বলে-

আপনি যাকে মনে করেন যে, তিনি আপনাকে জীবনের পথে সঠিক দিক-নির্দেশনা দিতে পারবেন, তাকেই আপনি অন্তর্গুরু হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন। তবে যে ধ্যান বা মেডিটেশন পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া আপনি অনুসরণ করবেন, সে প্রক্রিয়ার উদ্ভাবক বা প্রশিক্ষককে অন্তর্গুরু হিসেবে গ্রহণ করা সবসময়ই বেশি কার্যকরী। [৮২]

অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে উপরের পদ্ধতি অনুযায়ী কোয়ান্টাম মেথডের প্রবক্তা মহাজাতক সাহেবকে অন্তর্গুরু হিসেবে গ্রহন করতে হবে। অন্তর্গুরু'র ব্যাপারটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ, তবে সবসময় যে গুরুকে পাওয়া যাবে সে ব্যাপারে আবার কোন নিশ্চয়তা নেই। তিন বছর নিয়মিত মেডিটেশন করার পর গুরুর দর্শন লাভ হয়েছে - এমন নজিরও আছে।[৮২]

চলবে...

রেফারেন্সসমূহঃ
৫৩। সাফল্যের চাবিকাঠি কোয়ান্টাম মেথড - মহাজাতক; পরিবর্ধিত নতুন সংস্করণ - জানুয়ারী, ২০০০। পৃষ্ঠা - ৫ থেকে ৭।
৫৪। সাফল্যের চাবিকাঠি কোয়ান্টাম মেথড - মহাজাতক; পরিবর্ধিত নতুন সংস্করণ - জানুয়ারী, ২০০০। পৃষ্ঠা - ৫৪।
৫৫। সাফল্যের চাবিকাঠি কোয়ান্টাম মেথড - মহাজাতক; পরিবর্ধিত নতুন সংস্করণ - জানুয়ারী, ২০০০। পৃষ্ঠা - ৫৮।
৫৬। সাফল্যের চাবিকাঠি কোয়ান্টাম মেথড - মহাজাতক; পরিবর্ধিত নতুন সংস্করণ - জানুয়ারী, ২০০০। পৃষ্ঠা - ১০।
৫৭। সাফল্যের চাবিকাঠি কোয়ান্টাম মেথড - মহাজাতক; পরিবর্ধিত নতুন সংস্করণ - জানুয়ারী, ২০০০। পৃষ্ঠা - ১১৫।
৫৮। সাফল্যের চাবিকাঠি কোয়ান্টাম মেথড - মহাজাতক; পরিবর্ধিত নতুন সংস্করণ - জানুয়ারী, ২০০০। পৃষ্ঠা - ১১৬ থেকে ১১৭।
৫৯। সাফল্যের চাবিকাঠি কোয়ান্টাম মেথড - মহাজাতক; পরিবর্ধিত নতুন সংস্করণ - জানুয়ারী, ২০০০। পৃষ্ঠা - ১২১।
৬০। সাফল্যের চাবিকাঠি কোয়ান্টাম মেথড - মহাজাতক; পরিবর্ধিত নতুন সংস্করণ - জানুয়ারী, ২০০০। পৃষ্ঠা - ১৭৫ থেকে ১৭৬।
৬১। কোয়ান্টাম হাজারো প্রশ্নের জবাব - পর্ব ১ ।। মেডিটেশন - মহাজাতক; প্রথম প্রকাশ - ১৫ জুন, ২০১২। পৃষ্ঠা - ২৮১।
৬২। Click This Link
৬৩। সাফল্যের চাবিকাঠি কোয়ান্টাম মেথড - মহাজাতক; পরিবর্ধিত নতুন সংস্করণ - জানুয়ারী, ২০০০। পৃষ্ঠা - ১৮৫।
৬৪। সাফল্যের চাবিকাঠি কোয়ান্টাম মেথড - মহাজাতক; পরিবর্ধিত নতুন সংস্করণ - জানুয়ারী, ২০০০। পৃষ্ঠা - ১৯৪।
৬৫। সাফল্যের চাবিকাঠি কোয়ান্টাম মেথড - মহাজাতক; পরিবর্ধিত নতুন সংস্করণ - জানুয়ারী, ২০০০। পৃষ্ঠা - ১৯০।
৬৬। Click This Link
৬৭। Click This Link
৬৮। http://quantummethod.org.bd/charity-bank
৬৯। Click This Link
৭০। Click This Link
৭১। Click This Link
৭২। Click This Link
৭৩। Click This Link
৭৪। সাফল্যের চাবিকাঠি কোয়ান্টাম মেথড - মহাজাতক; পরিবর্ধিত নতুন সংস্করণ - জানুয়ারী, ২০০০। পৃষ্ঠা - ১৬১।
৭৫। সাফল্যের চাবিকাঠি কোয়ান্টাম মেথড - মহাজাতক; পরিবর্ধিত নতুন সংস্করণ - জানুয়ারী, ২০০০। পৃষ্ঠা - ১৬৪।
৭৬। সাফল্যের চাবিকাঠি কোয়ান্টাম মেথড - মহাজাতক; পরিবর্ধিত নতুন সংস্করণ - জানুয়ারী, ২০০০। পৃষ্ঠা - ১৬৩।
৭৭। সাফল্যের চাবিকাঠি কোয়ান্টাম মেথড - মহাজাতক; পরিবর্ধিত নতুন সংস্করণ - জানুয়ারী, ২০০০। পৃষ্ঠা - ২৩৩।
৭৮। সাফল্যের চাবিকাঠি কোয়ান্টাম মেথড - মহাজাতক; পরিবর্ধিত নতুন সংস্করণ - জানুয়ারী, ২০০০। পৃষ্ঠা - ২৩৪।
৭৯। সাফল্যের চাবিকাঠি কোয়ান্টাম মেথড - মহাজাতক; পরিবর্ধিত নতুন সংস্করণ - জানুয়ারী, ২০০০। পৃষ্ঠা - ২৩৮।
৮০। সাফল্যের চাবিকাঠি কোয়ান্টাম মেথড - মহাজাতক; পরিবর্ধিত নতুন সংস্করণ - জানুয়ারী, ২০০০। পৃষ্ঠা - ২৪১।
৮১। সাফল্যের চাবিকাঠি কোয়ান্টাম মেথড - মহাজাতক; পরিবর্ধিত নতুন সংস্করণ - জানুয়ারী, ২০০০। পৃষ্ঠা - ২৪২।
৮২। সাফল্যের চাবিকাঠি কোয়ান্টাম মেথড - মহাজাতক; পরিবর্ধিত নতুন সংস্করণ - জানুয়ারী, ২০০০। পৃষ্ঠা - ২৪৭।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১৩ সকাল ১০:২২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×