somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোয়ান্টাম কালচার এবং বিজ্ঞান ও ইসলাম ‌॥ পর্ব ৭

১২ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৯:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোয়ান্টাম কালচার এবং বিজ্ঞান ও ইসলাম ‌॥ পর্ব ১
কোয়ান্টাম কালচার এবং বিজ্ঞান ও ইসলাম ‌॥ পর্ব ২
কোয়ান্টাম কালচার এবং বিজ্ঞান ও ইসলাম ‌॥ পর্ব ৩
কোয়ান্টাম কালচার এবং বিজ্ঞান ও ইসলাম ‌॥ পর্ব ৪
কোয়ান্টাম কালচার এবং বিজ্ঞান ও ইসলাম ‌॥ পর্ব ৫
কোয়ান্টাম কালচার এবং বিজ্ঞান ও ইসলাম ‌॥ পর্ব ৬

কোয়ান্টাম মেথড ও ইসলাম

মেডিটেশন

ইসলামে মেডিটেশন বা ধ্যান করার ব্যাপারে কোন কিছু উল্লেখ করা নেই। অনেকে দাবী করেন যে, রাসূল (স) হেরা গুহায় ধ্যান করতেন। তাদের খুব স্পষ্টভাবে জেনে রাখা প্রয়োজন যে –

রাসূল (স) হেরা গুহায় ঠিক কি করতেন, যা করতেন সেটাকে ধ্যান বলে আখ্যায়িত করা যায় কিনা এ ব্যাপারে আমাদের কোন বিস্তারিত তথ্য জানা নেই।
যদি বা তর্কের খাতিরে ধরেও নেই যে, রাসূল (স) হেরা গুহায় ধ্যান করতেন, তবে তা করতেন নব্যুয়তের আগে। নব্যুয়তের আগে তাঁর করা কোন কাজ আমাদের জন্য শরীয়াতের উৎস নয়।

কোন সহীহ হাদীস নেই যেখানে বলা হয়েছে যে রাসুল (স) ধ্যান করতেন, কিংবা তাঁর সাহাবীরা ধ্যান করতেন, কিংবা রাসুল (স) তাঁর সাহাবীদের নিয়ে ধ্যান করতেন কিংবা রাসুল (স) তাঁর উম্মতদের ধ্যান করতে বলে গেছেন। এরকম কোন নজীরও নেই। রাসুল (স) এর জীবনযাপন ছিল খোলা বইয়ের পাতার মত – সবাই জানতেন তিনি কিভাবে জীবনযাপন করেন। উম্মতরা যাতে সহজেই তাঁকে অনুসরণ করতে পারেন সেজন্য তাঁর সব কথা আর কাজই হাদীস গ্রন্থে আশ্রয় পেয়েছে। তাঁর করা সকল ইবাদতই কুরআন-হাদীসের মাধ্যমে সবাই জানেন – তাহাজ্জুদ, ইশরাক প্রভৃতি সকল ইবাদত তিনি করেছেন, তাঁকে দেখে তাঁর সাহাবীরা করেছেন এবং এভাবে কালপরিক্রমায় আমরাও তা করছি। কিন্তু তিনি সবাইকে নিয়ে জামাতে ধ্যান করতেন – এরকম কোন নজীর নেই।

কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন দাবী করছে যে মেডিটেশন ব্যাপারটা ইসলামে আছে। তাদের কথানুযায়ী রাসুল (স) মেডিটেশন করতেন, কিন্তু আমাদের উপর তা চাপিয়ে দেননি।[৯৪] যদিও কোন সহীহ হাদীস এটাকে সমর্থন করেনা। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন বলছে যে কুরআনে সরাসরি বলা আছে মেডিটেশনের কথা -

সূরা আলে ইমরানের ১৯০-৯১ আয়াতে আল্লাহ জ্ঞানীদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে বলেছেন, ‘তারা আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি রহস্য নিয়ে গভীর ধ্যানে (তাফাক্কুর) নিমগ্ন হয়’। [৯৫]
যথার্থই আল কোরআন বলে, ‘আমি একটি বিষয়ে সতর্ক করছি, আল্লাহর সামনে দাঁড়াও একক বা যৌথভাবে এবং চিন্তা কর...’। এখানে ‘একক বা যৌথভাবে’ অর্থ হচ্ছে সামাজিক বা ব্যক্তিগত সংস্কারের প্রভাব বা চাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করে চিন্তা বা বিচার-বিশ্লেষণ করা। তিনি ইবাদতের একটি মাধ্যম হিসেবে ধ্যানের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেছেন। [৯৫]

অর্থাৎ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের চোখে ধ্যান বা মেডিটেশন হচ্ছে ইবাদত। এবার আমরা কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের ব্যবহার করা সুরা আল ইমরানের ১৯০-১৯১ আয়াত দুটো ভালো করে দেখি -

১৯০। নিশ্চয়ই আকাশমন্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিন-রাত্রির পরিবর্তনে নিদর্শনাবলী রয়েছে বোধশক্তি সম্পন্ন লোকের জন্য
১৯১। যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশমন্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে ও বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এটা নিরর্থক সৃষ্টি করনি, তুমি পবিত্র, তুমি আমাদেরকে দোজখের শাস্তি হতে রক্ষা কর। [৯৬]

অর্থাৎ আল্লাহতা'লা এখানে সেসব জ্ঞানসম্পন্ন লোকদের কথা বলেছেন যারা আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করে ভীত হয়ে তাঁর কাছে আশ্রয় চায়। এখানে ধ্যান করার কথা বলা হয়নি, বরং আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে বলা হয়েছে। এখানে “চিন্তাভাবনা” বলতে সেই চিন্তাভাবনাকে বলা হয়েছে যা সাধারণ একজন মানুষ করে থাকে, যেমনটি করেন বিজ্ঞানীরা ও গবেষকরা কোন কিছু বের করার জন্য, যেমনটি করে একজন পরীক্ষার্থী পরীক্ষার হলে বসে। গবেষকরা নিশ্চয়ই কোন সমাধানের জন্য কোয়ান্টাভঙ্গিতে বসে ধ্যান করেননা। প্রচুর বই, জার্নাল পড়ে এবং অন্যান্যদের কাছ থেকে বিভিন্ন রকম সাহায্য নিয়েই তারা তাদের সমস্যা সমাধান করেন। এবার আমরা কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের ব্যবহার করা পরের আয়াতে আসি যা সুরা সাবা'র ৪৬ নাম্বার আয়াত -

বল, “আমি তোমাদেরকে একটি বিষয়ে উপদেশ দিচ্ছি: তোমরা আল্ল্লাহর উদ্দেশ্যে দুই-দুইজন অথবা এক-একজন করে দাঁড়াও, অতঃপর তোমরা চিন্তা করে দেখ - তোমাদের সঙ্গী আদৌ উন্মাদ নয়। সে তো আসন্ন কঠিন শাস্তি সম্পর্কে তোমাদের সতর্ককারী মাত্র।” [৯৬]

এখানেও ধ্যান করার কথা বলা হয়নি। এমনকি ইবাদতের মাধ্যম হিসেবেও ধ্যানের কথা বলা হয়নি। এখানে আল্লাহর আযাব সম্পর্কে সতর্ককারী নবী-রাসুলদের যে লোকজন উন্মাদ বলে মনে করতেন, সে সম্পর্কে আল্লাহতা'লা সতর্কবাণী হিসেবে আয়াতটি নাযিল করেন। ধ্যান বা মেডিটেশনের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন বলে যে হাদীসেও ধ্যানের কথা বলা আছে -

হযরত ইবনে আববাস থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (স) বলেছেন, এক ঘণ্টার ধ্যান সারা বছরের নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম। এছাড়া হযরত আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত আছে, নবীজী (স) বলেছেন, সৃষ্টি সম্পর্কে এক ঘণ্টার ধ্যান ৭০ বছরের নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম (মেশকাত)।[৯৫]

এই হাদীসটিকে ইবন আল-জাওয়াজীসহ[৯৭] অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ জাল হাদীস বলে চিহ্নিত করেছেন।[৯৮][৯৯] অবশ্য কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন এক জায়গায় বলছে যে রাসুল (স)'র আমলে মেডিটেশন জিনিসটা ছিলনা -

এখন বলবেন, মেডিটেশন নতুন জিনিস, নবীজীর (স) যুগে তো এই মেডিটেশন ছিলো না, কোয়ান্টাম মেথড ছিলো না, মেডিটেশন করার প্রয়োজনটা কী? আসলে নবীজীর সময়ে এত টেনশন ছিলো না, এত যান্ত্রিকতা, এত প্রতিযোগিতা ছিলো না। তখন মানুষ উত্তেজিত হতো আবার ঠান্ডাও হতো। কিন্তু এখন মানুষ উত্তেজিত হয়, কিন্তু ঠান্ডা হয় না। যার ফলে সে সত্যকে অনুসরণ করতে পারে না। [১০০]

তো ব্যাপারটা কি দাঁড়ালো? উনারাই একবার বলছেন যে মেডিটেশন রাসুল (স)'র আমলে ছিলনা, আবার উনারাই কুরআনের ভুল ব্যাখ্যা ও জাল হাদীস নিয়ে প্রমান করার চেষ্টা করছেন যে আল্লাহতা'লা ও রাসুল (স) সবাইকে মেডিটেশন করতে বলেছেন। ব্যাপারটা একটু কেমন হয়ে গেল না? তাছাড়া ইসলাম ধর্মকে আল্লাহতা'লা পাঠিয়েছেন কিয়ামতের আগ পর্যন্ত সকল মুসলমানের জন্য দিকনির্দেশনা হিসেবে। রাসুল (স)'র আমলে ইসলাম যেরকম ছিল, এখনো তাই আছে, ভবিষ্যতেও একই থাকবে - কখনোই কারো জন্য ইসলাম পাল্টাবেনা। তাই রাসুল (স) এর আমলে দরকার ছিলনা দেখে ইসলামে মেডিটেশন ছিলনা, কিন্তু এখন দরকার তাই ইসলামে মেডিটেশন চলে আসছে - এই ধারণাটাই তো বিশাল একটা গোলমেলে ব্যাপার!

ধ্যান বা মেডিটেশন জিনিসটা ইসলামে আছে কি নেই সেটা নিয়ে মাথা ঘামাবার আগে মেডিটেশনের উৎপত্তিটা জানা দরকার আমাদের। ইতিহাস ঘাঁটলে আমরা দেখতে পাই যে মেডিটেশন বা ধ্যান জিনিসটা আসলে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্ম থেকে এসেছে -

Some of the earliest written records of meditation (Dhyana), come from the Hindu traditions of Vedantism around 1500 BCE. The Vedas discuss the meditative traditions of ancient India. Around the 6th to 5th centuries BCE, other forms of meditation developed in Taoist China and Buddhist India. Dhyana in early Buddhism also takes influence on Vedanta by ca. the 4th century BCE.[১০১]

ইসলামের ভেতর ধ্যান জিনিসটা আসে অনেক পরে, সুফিবাদের হাত ধরে -

Sufi view or Islamic mysticism involves meditative practices. Remembrance of God in Islam, which is known by the concept Dhikr is interpreted in different meditative techniques in Sufism or Islamic mysticism. This became one of the essential elements of Sufism as it was systematized in the 11th and 12th centuries. It is juxtaposed with fikr (thinking) which leads to knowledge. By the 12th century, the practice of Sufism included specific meditative techniques, and its followers practiced breathing controls and the repetition of holy words.[১০১]

অর্থাৎ সুফি সাধকরা ইসলামে ধ্যান বা মেডিটেশনের প্রচলন করেন, রাসুল (স) এর কাছ থেকে ধ্যান বা মেডিটেশন নিয়ে কোন সুস্পষ্ট নির্দেশনা আসেনি। সুফিদের মাধ্যমে কিভাবে হিন্দু ধর্মের একটা আচার ধ্যান ইসলামে আসে তার ইতিহাস থেকে আমরা দেখি যে -

The mystic tradition began to find expression among Muslims from about 8th century CE, a century after the borders of the Islamic state had expanded to include Egypt and Syria and its major centers of monasticism. A group of Muslims who were not satisfied with what the Sharee’ah (Islamic Law) had to offer, developed a parallel system which they named the Tareeqah (the way). Just as the ultimate goal of the Hindu was unity with the world soul and of the Christian mystic union with God; the ultimate goal of this movement became Fanaa, the dissolution of the ego, and Wusool the meeting and unification of the human soul with Allaah in this life. A series of preliminary stages and states which had to be attained were defined. They were called Maqaamaat (stations) and Haalaat (states). A system of spiritual exercises was also designed for the initiate in order to bring about this “meeting.” These exercises of “Dhikr” often involved head and body movements and sometimes even dance, as in the case of whirling dervishes.[১০২]
এবার আমরা যদি কোয়ান্টাম মেথডের ধ্যানের ইতিহাস নিয়ে বসি তাহলে আমরা দেখতে পাই যে এটারও আগমন হিন্দু ধর্ম থেকে -
The science of Quantum Mechanics now concurs with the ancient wisdom of Hindu Vedanta philosophy, in the observation that the sense-bound intellect alone is simply inadequate for experiencing the ultimate condition of reality. [১০৩]
স্রষ্টা ও সৃষ্টির মিলনের যে দর্শন অর্থাৎ ইত্তিহাদের কথাই এখানে চলে এসেছে। ইসলামে ধ্যান নিয়ে কোন ধারণাই ছিলনা, এটার আগমন হয় মূলত হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্ম থেকে। অর্থাৎ ধ্যান বা মেডিটেশন এমন একটা ইবাদত যেটা রাসুল (স) এর আমলে ছিলনা এবং যা হাদীস কুরআন দিয়ে সমর্থিত নয়। তাই এটাকে নিঃসংকোচে বিদআত এর শ্রেনীতে ফেলা যায়। উপরন্তু ধ্যান জিনিসটা এসেছে অন্য ধর্ম থেকে। অন্য ধর্মকে অনুসরণ করা ইসলামে নিষিদ্ধ। অন্য ধর্মের আচার অনুসরণ করার মানে হচ্ছে, আল্লাহতা'লা ইসলাম হিসেবে আপনাকে যা দিয়েছেন তা আপনার কাছে সঠিক ও পর্যাপ্ত মনে হচ্ছেনা। আপনার মনে হচ্ছে অন্য ধর্মের কোন একটা (বা একাধিক) ব্যাপার বা ধারণা আল্লাহর মনোনীত একমাত্র দ্বীনের চেয়েও অনেক ভালো। চিন্তা করুন কত বড় ভয়ানক একটা ধারণা এটি! এ ব্যাপারে আল্লাহতা'লা বলেন -

আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন চায় তবে তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। [৪১]

তাই অন্য ধর্মের কোন কিছু বরণ করে নেয়া মানে হল আপনি কুফরি করছেন। তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়ালো? ধ্যান একটা বিদআত যা এসেছে অন্য ধর্ম থেকে অর্থাৎ এটা কুফরি। তাই ধ্যান একই সাথে বিদআত এবং কুফরি।

মেডিটেশনে কি কি হয়? আসুন দেখি -

ধ্যানাবস্থায় মন হয় ত্রিকালদর্শী, চেতনা অতিক্রম করে সকল বস্তুগত সীমা। মনের এই ধ্যানাবস্থার শক্তিকে প্রয়োগ করেই প্রাচ্যের সাধক দরবেশ ঋষিরা একদিন আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। ইচ্ছা করেছেন-ঘটনা ঘটেছে। ইচ্ছা করেছেন-মানুষ রোগমুক্ত হয়েছে। ... এই চাবিকাঠি দিয়েই দৃশ্যমান সব কিছুর পেছনে প্রকৃতির যে নেপথ্য স্পন্দন ও নিয়ম কাজ করছে তার সবটাকেই আপনি নিজের ও মানবতার কল্যাণে সক্রিয় করে তুলতে পারবেন। [ ১০৪]
মেডিটেশনের মাধ্যমেই আপনি সংযোগ সাধন করতে পারেন আপনার ‘অন্তরের আমি’র সাথে, আপনার শক্তির মূল উৎসের সাথে। [১০৫]

অর্থাৎ কোয়ান্টাম মেথডের মতে মেডিটেশনে আপনি আপনার মন কে নিয়ন্ত্রণ করে চারপাশের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন, যেভাবে করেন সাধু-ঋষিরা। আপনার মন হবে ত্রিকালদর্শী অর্থাৎ ভবিষ্যৎ জেনে নিতে পারবেন আপনি। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন মনে করে মনের শক্তি অসীম।[১০৬] এই অসীম ক্ষমতাধর মনকে নিয়ন্ত্রন করে কি কি করা সম্ভব তার একটা উদাহরণ নিচে দেয়া হল -
ট্রাফিক যখন ডানে-বামে কোনোদিকেই নড়াচড়া করছে না আমাদের অনেক গ্রাজুয়েট তখন উত্তেজিত না হয়ে এই ভঙ্গি (কোয়ান্টা ভঙ্গি) করে অপেক্ষা করেন। দেখা যায়, যাওয়ার পথ সহজ হয়ে গেছে। অথবা শীতের রাত, চারটায় হাইওয়েতে যানবাহন পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এই ভঙ্গি করে অপেক্ষা করছেন যানবাহন চলে আসছে। অথবা-সব গাড়ি উত্তর দিকে যাবে, দক্ষিণে কোনো গাড়ি যাবে না। এই ভঙ্গি করে অপেক্ষা করছেন দক্ষিণের গাড়ি চলে আসছে। অতিরিক্ত ভাড়া চাচ্ছে, এই ভঙ্গি করে অপেক্ষা করছেন, ন্যায্য ভাড়ায় যানবাহন পাওয়া যাচ্ছে। [১০৭]

অন্তরের ইবাদতসমূহের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হল “তাওয়াক্কুল” (বা ভরসা করা) – যা আল্লাহ ছাড়া আর কারও ওপর করা যাবে না। কেউ যদি আল্লাহ ছাড়া এমন কোন সত্তার ওপর এমন কোন ব্যাপারে তাওয়াক্কুল করে যা সংঘটনের ক্ষমতা তার নেই, তবে তা বড় শিরক হবে যা একজন ব্যক্তিকে ইসলামের গণ্ডীর বাইরে নিয়ে যায়। মেডিটেশন পদ্ধতিতে নিজের ওপর “তাওয়াক্কুল” ও স্বয়ংসম্পূর্ণতার শিক্ষা দেয়া হয়, বলা হয় যে আপনি চাইলেই সব করতে পারেন। এমনকি ইচ্ছা করলে প্রকৃতিকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন -

ব্যক্তিমন ও চেতনা সংযুক্ত হয় মহাচেতনা বা কসমিক কনশাসনেসের সাথে। তখন অর্জিত হয় দৃশ্যমান সবকিছুর পেছনে প্রকৃতির যে নেপথ্য স্পন্দন ও নিয়ম ক্রিয়াশীল তাকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা।[৭৪]

ব্যাপারটা কি দাঁড়ালো তাহলে? আপনি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন। যা করা আল্লাহর এখতিয়ারে, আপনি বিশ্বাস করছেন যে আপনার অসীম শক্তিধর মন সেটা করে ফেলতে পারছে। মনের স্বাধীন শক্তির এই ধারণাটি ইসলামের শিক্ষার সাথে রীতিমত সাংঘর্ষিক। মনের এমন কোন ক্ষমতা নেই, যা প্রকৃতির নেপথ্য শক্তিকে (আল্লাহ ব্যতীত আর কোন শক্তির অস্তিত্ব কল্পনা করাই শিরক) নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। জৈবিক সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করা বা স্থান-কালের ঊর্দ্ধে যেতে পারাও সম্ভব নয় মানব আত্মার পক্ষে।

কিছুক্ষণ আগেই আমরা দেখলাম যে ধ্যান জিনিসটা বিদআত এবং কুফরের আওতায় পড়ে। এখন দেখলাম যে মনের অসীম ক্ষমতার উপর বিশ্বাস ধ্যান ব্যাপারটাকে শিরকের আওতায়ও ফেলে দিচ্ছে!

আরেকটি ব্যাপার একটু পরিস্কার হওয়া দরকার। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন বলে আসছে যে নামাযের সাথে মেডিটেশনের একটা নিগূঢ় সম্পর্ক রয়েছে -

নামাজ ঠিকভাবে পড়ার জন্যে মনোযোগ প্রয়োজন। আর মেডিটেশন মানুষের মনকে বর্তমানে নিয়ে আসে। যখন আপনি মনকে বর্তমানে নিয়ে আসতে পারবেন, মনোযোগকে একাগ্র করতে পারবেন, আল্লাহকে হাজির-নাজির হিসেবে অনুভব করতে পারবেন তখন সেই নামাজ আপনি পড়তে পারবেন-যে নামাজ মানুষকে প্রশান্ত করতে পারে। তখন আপনি বলতে পারবেন-নামাজই যথেষ্ট। কিন্তু ঐ স্তরে যেতে হলে মেডিটেশন প্রয়োজন।[১০৮]

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় তো প্রত্যেক মুসলমানের জন্যে ফরজ, যা অবশ্য পালনীয়। কোনো মুসলমান যদি তা না করে তাহলে ধর্মের একটি আবশ্যকীয় লঙ্ঘনের দোষে সে দোষী হবে। কিন্তু পাঁচবার নামাজ আদায় করলেই কি সব হয়ে গেল? ... তাছাড়া নামাজে মনোযোগ বৃদ্ধির জন্যেও মেডিটেশন করা উচিত।[১০৯]

অধিকাংশই খুব দুঃখ করে বলেছেন যে, আমরা তো বলি হুদরিল ক্বাল্ব ছাড়া নামাজ হয় না। শুধু রুকু-সেজদা দিলে, সূরা-কেরাত পড়লে নামাজ হয় না। নামাজের জন্যে প্রয়োজন হুদরিল ক্বাল্ব বা একাগ্রচিত্ততা। এই হুদরীল ক্বালব কীভাবে সৃষ্টি করতে হয় এখানে এসে শিখে গেলাম। তাই যারা ইবাদত-বন্দেগিতে একাগ্রচিত্ত হতে চান মেডিটেশন তাদেরকে চমৎকারভাবে সাহায্য করবে।[১১০]

শুধু নামাজই নয় বরং কুরআন-হাদীস চর্চায়ও মেডিটেশন জিনিসটা দরকার বলে মনে করে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন -

সঠিকভাবে আপনি যাতে কোরআন এবং হাদীস অনুধাবন করতে পারেন, অধ্যয়ন করতে পারেন, হৃদয়ঙ্গম করতে পারেন- এজন্যে মাথাটাকে ঠান্ডা রাখা প্রয়োজন। আর এ জন্যেই মেডিটেশন। ব্রেনটাকে বেশি করে ব্যবহার করতে মেডিটেশনের বিকল্প নেই।[১১১]

অর্থাৎ আপনি নামাজ পড়ুন বা কুরআন-হাদীস পড়ুন, মনোযোগ বা একাগ্রচিত্তের জন্য আপনাকে মেডিটেশন করতে হবে। তার মানে হল ইবাদতে একাগ্রচিত্ততা আনার অপরিহার্য এক অংশ হচ্ছে মেডিটেশন। ছোট্ট একটা সমস্যা রয়ে গেছে এখানে - কুরআন বা হাদীসে কোথাও মেডিটেশনকে ইবাদত কিংবা ইবাদতের অপরিহার্য কিছু বলে উল্লেখই করা হয়নি। নামাজে মনোযোগ বৃদ্ধির জন্য রাসুল (স), তাঁর চার খলিফা কিংবা তাঁর সাহাবীগণ – কাউকেই নামাজের আগে কিংবা কুরআন পাঠের আগে মেডিটেশন করতে দেখা যায়নি। তাই নামাযের পূর্বশর্ত হিসেবে মেডিটেশন দরকার – কথাটা কেমন যেন গোলমেলে। তাছাড়া রাসুলের সুন্নতে যেহেতু মেডিটেশন করার কোন উল্লেখ নেই তাই বলা যায় যে ইসলামের সাথে এর কোনই সম্পৃক্ততা নেই। উপরন্তু এটি এসেছে অন্য ধর্মের উপাসনা/তপস্যা থেকে। তাই এটা ইসলাম পরিপন্থী। এটা যে অন্য ধর্ম হতে আগত সেটা আগেও মেডিটেশনের ইতিহাস থেকে দেখেছি। তারপরও আমরা কোয়ান্টাম মেথডে ব্যবহৃত কিছু শব্দ দেখব, যেগুলো মূলত অন্য ধর্মের উপাসনায় ব্যবহৃত হয় এবং এগুলোর উৎপত্তিও ঐসব ধর্ম থেকে। এর একটি হচ্ছে “নির্বাণ” যাকে শিথিলায়নের চেয়ে ধ্যানের একটি উচ্চস্তর হিসেবে বলা হয়েছে [১১২] আর অন্যটি হচ্ছে “কুন্ডলিনী”, যা কোয়ান্টাম মেথড রিয়েলাইজেশন কোর্স এ শিক্ষা দেয়া হয় [১১৩]। নির্বাণ সম্পর্কে বলতে হলে বলতে হয়-

Nirvāṇa (Sanskrit: निर्वाण; Pali: निब्बान nibbāna ; Prakrit: णिव्वाण) is an ancient Sanskrit term used in Indian religions to describe the profound peace of mind that is acquired with moksha (liberation). In shramanic thought, it is the state of being free from suffering. In Hindu philosophy, it is union with the Brahman (Supreme Being). The word literally means "blown out" (as in a candle) and refers, in the Buddhist context, to the imperturbable stillness of mind after the fires of desire, aversion, and delusion have been finally extinguished. [১১৪]
কুন্ডলিনী সম্পর্কে -

Kundalini (kuṇḍalinī, Tamil: குண்டலினி/வாலை, Sanskrit: कुण्डलिनी, Thai: กุณฺฑลิน) literally means coiled. In yoga, a "corporeal energy" - an unconscious, instinctive or libidinal force or Shakti, lies coiled at the base of the spine. It is envisioned either as a goddess or else as a sleeping serpent, hence a number of English renderings of the term such as "serpent power". It is reported that kundalini awakening results in deep meditation, enlightenment and bliss. In practical terms, one of the most commonly reported Kundalini experiences is the feeling of an electric current running along the spine. [১১৫]
ঘুরেফিরে সবকিছুই সেই হিন্দু অথবা বৌদ্ধ ধর্ম থেকেই আসছে। তাহলে ইসলামের কি থাকল এখানে? না জেনে শুনে কোয়ান্টাম মেডিটেশন করে আসলেই কি আমরা ইসলামকে জলাঞ্জলী দিচ্ছি?

চলবে...

রেফারেন্সসমূহঃ

৯৪। কোয়ান্টাম হাজারো প্রশ্নের জবাব - পর্ব ১ ।। মেডিটেশন - মহাজাতক; প্রথম প্রকাশ - ১৫ জুন, ২০১২। পৃষ্ঠা - ৫২।
৯৫। কোয়ান্টাম হাজারো প্রশ্নের জবাব - পর্ব ১ ।। মেডিটেশন - মহাজাতক; প্রথম প্রকাশ - ১৫ জুন, ২০১২। পৃষ্ঠা - ৫৪।
৯৬। http://www.quran.gov.bd/
৯৭। Click This Link
৯৮। 100 Fabricated Hadith – Sheikh Faisal, page - 49
৯৯। হাদীসের নামে জালিয়াতি - প্রোফেসর খোন্দকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর। চতুর্থ সংস্করণ – সেপ্টেম্বর ২০১০। পৃষ্ঠা ১৬৩।
১০০। কোয়ান্টাম হাজারো প্রশ্নের জবাব - পর্ব ১ ।। মেডিটেশন - মহাজাতক; প্রথম প্রকাশ - ১৫ জুন, ২০১২। পৃষ্ঠা - ৪৯।
১০১। Click This Link
১০২। Fundamental of Tawheed by Dr Abu Aminah Bilal Philips: page -182.
১০৩। Quantum Meditation: A Novel Scientific Method forDeveloping Inner Balance and Harmony, Tushar K. Ray, Ph. D. http://www.centralyoga.org/quantum.htm
১০৪। সাফল্যের চাবিকাঠি কোয়ান্টাম মেথড - মহাজাতক; পরিবর্ধিত নতুন সংস্করণ - জানুয়ারী, ২০০০। পৃষ্ঠা - ১০।
১০৫। সাফল্যের চাবিকাঠি কোয়ান্টাম মেথড - মহাজাতক; পরিবর্ধিত নতুন সংস্করণ - জানুয়ারী, ২০০০। পৃষ্ঠা - ৭।
১০৬। সাফল্যের চাবিকাঠি কোয়ান্টাম মেথড - মহাজাতক; পরিবর্ধিত নতুন সংস্করণ - জানুয়ারী, ২০০০। পৃষ্ঠা - ১৯।
১০৭। কোয়ান্টাম হাজারো প্রশ্নের জবাব - পর্ব ১ ।। মেডিটেশন - মহাজাতক; প্রথম প্রকাশ - ১৫ জুন, ২০১২। পৃষ্ঠা - ১৫৯।
১০৮। কোয়ান্টাম হাজারো প্রশ্নের জবাব - পর্ব ১ ।। মেডিটেশন - মহাজাতক; প্রথম প্রকাশ - ১৫ জুন, ২০১২। পৃষ্ঠা - ৫২।
১০৯। কোয়ান্টাম হাজারো প্রশ্নের জবাব - পর্ব ১ ।। মেডিটেশন - মহাজাতক; প্রথম প্রকাশ - ১৫ জুন, ২০১২। পৃষ্ঠা - ৫০।
১১০। কোয়ান্টাম হাজারো প্রশ্নের জবাব - পর্ব ১ ।। মেডিটেশন - মহাজাতক; প্রথম প্রকাশ - ১৫ জুন, ২০১২। পৃষ্ঠা - ৪৮।
১১১। কোয়ান্টাম হাজারো প্রশ্নের জবাব - পর্ব ১ ।। মেডিটেশন - মহাজাতক; প্রথম প্রকাশ - ১৫ জুন, ২০১২। পৃষ্ঠা - ৪৯।
১১২। সাফল্যের চাবিকাঠি কোয়ান্টাম মেথড - মহাজাতক; পরিবর্ধিত নতুন সংস্করণ - জানুয়ারী, ২০০০। পৃষ্ঠা - ১৯০।
১১৩। Click This Link
১১৪। http://en.wikipedia.org/wiki/Nirvana
১১৫। http://en.wikipedia.org/wiki/Kundalini
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×