দেশের দুই সেরা স্কুল তখন আইডিয়াল আর গভঃ ল্যাব। দুই জায়গায় ভর্তি পরীক্ষা। ক্লাস ওয়ান ভর্তি পরীক্ষার সাথে পৃথিবীর কোন ভর্তি পরীক্ষার তুলনা চলেনা। আরবি ১২ মাসের নাম ঐ বয়সে পারতাম এখন পারিনা। “ক” দিয়ে ৫ টা ফলের নাম, নানা দেশের পাখির নাম আরো কত হাবিজাবি ব্যাপার। ওই প্রিপারেশন দিয়ে মোটামুটি চাইলে বিসিএস দিয়ে দেওয়া যায়। এরপরেও আইডিয়াল ভর্তি পরীক্ষায় ঝামেলা লাগল। “SWAN” শব্দের অর্থ কি জানতে চাইল। ৬-৭ বছরের বাচ্চা এইটার মানে কিভাবে জানবে!! পরীক্ষা হলের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা কে বুড়া আঙ্গুল দেখানোর টাইম সে প্রথম। খুবি অবাক করিয়া দেখিলাম পাশের বড়ই মায়াবতি কন্যা ঐ শব্দের মানে লিখেছে রাজহাস (ব্লগের রাজসোহান না)। একটা মেয়ে পেরে ফেলসে আমি পারিনা এই জিনিসটা খুব বিচলিত করলেও কাজের কাজটা করলাম। লিখলাম রাজহাস।
পরীক্ষা দিয়ে বের হওয়ার পর সবাই যখন জানল যে রাজহাস এর ইংরেজি আমাকে জানানো হয়নায় তারপরেও আমি পেরে ফেলসি সবার বুঝতে বাকি থাকে এ এক নতুন জিনিয়াস এর আগমন। তবে সেই জিনিয়াস ডাউন খাইতেও সময় লাগল না। গভ ল্যাব ভর্তি পরীক্ষায় এলোমেলোগেলো শব্দ সাজিয়ে লিখ নামক একটা জিনিস আসত। ম, ক, লা এটাকে গুছিয়ে লিখতে হবে কমলা। আমিও সেরকম একটা প্রশ্ন পেলাম। না, স, হা, না, হে এইটা যে কি জিনিস বুঝিয়া উঠতে বড়ই বেগ পাহিতে হল। অনেক চিন্তা করিয়া নিজের সব উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগাইয়া লিখিলাম নানাহাসেনা। পরীক্ষা হল থেকে বের হয়ে আম্মাকে বললাম যে আম্মা একটা প্রশ্ন যে একটু অন্যরকম। তা আম্মার আব্বা মানে আমার নানা যে হাসেন না সেটা আর আম্মা ভাল ভাবে নিবে কিভাবে!! গাধা কোথাকার ঐটা কি লিখসিস? ঐটা তো হাসনাহেনা।
গভঃ ল্যাব এ ক্লাস ওয়ান-এ প্রথম ক্লাস করতে গিয়ে প্রথম দিন স্যার বলল চার লাইনের একটা জানা কবিতা সবাই লিখ। আমি চার লাইনে যে ২-৪-৫ টা কবিতা জানতাম তার মধ্যে সব থেকে ইল-লজিকাল কবিতাটা লেখা শুরু করলাম।
আতা গাছে তোতা পাখি,
ডালিম গাছে মৌ
আতা গাছটাই বা কই আর ঐ হারামজাদা তোতা পাখি ঐখানে কি করতেসে সেটার ব্যাপারে আমার নলেজ খুব ই কম। মৌ তখনও জাহিদ হাসান কে বিয়ে করেনায় তাই হয়ত রুপকথার রাজপুত্র ডালিম কুমারের অপেক্ষায় সে ডালিম গাছে আছে। তারপর আমি আবার সেইয়া আমার উদ্ভাবনী শক্তি খরচ করলাম। যেহেতু পরের দুই লাইন ভুলে গেছি কবিতাতে লিখলাম,
আমি এত কথা বলি
তুমি কেন বলোনা বউ
(মোটামুটি মৌ কে আমার বৌ বানায় ফেললাম।)
নিয়ে স্যার এর কাছে গেলাম। যেহেতু আমার বিরল প্রতিভা কেউ কখনও মুল্যায়ন করেনা স্যার ও করল না। বলল এইসব কি লিখেছিস? এত অল্প বয়সে পাকনামি!!
স্কুল থেকে ৭ বছর বয়সে একবার নিজে হেটে হেটে পথ চিনে বাসাই ফিরলাম (এই কাজটা দুইবার করসিলাম)। ধানমন্ডি থেকে বেইলি রোড। এই বিরল প্রতিভাটার ও মুল্যায়ন হয় নায়। বাসায় পৌছানোর পর ব্যাপক উত্তম-মধ্যম-অধম-সর্বোত্তম চলতে লাগল। পাশের বাসার রিপা আপা এসে উদ্ধার করল। রিপা আপার ভাইয়ের কাছে নিয়ে গেল। রিপা আপার ভাইকে বলল, এই ছেলে ধানমন্ডি থেকে একা একা বেইলিরোড চলে আসছে।
রিপা আপার ভাই তখন আর্মি তে। আর্মি তে থাকার কারনে রিপা আপার ভাই এর তখন একটা বন্দুক ছিল । এরপর থেকে বিরল প্রতিভা দেখাইতে গেলেই আম্মা আব্বা সবাই ঐ বন্দুকের ভয় দেখাইত। ওই বন্দুকের মালিকও অবশ্য বিরাট প্রতিভা। বাংলাদেশ এর সবাই তাকে চিনে। হাসান মাসুদ ওরফে হাসান ভাই।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০১০ রাত ১:৪২