আমাদের জাতীয় নেতাদের বংশধরেরা বড়ই অদ্ভুত জীবন যাপন করছেন। তাদের বাপ চাচাদের মধ্যে মত-বিরোধ থাকিলেও একে অপর কে জনসম্মুখে অপমান করেন নাই। এক্ষেত্রে নেতাদের প্রজন্ম পূর্বপুরুষ দের ট্রাডিশন ধরে রাখতে পারেন নাই। তারা একে অপরকে সুযোগ পেলেই অপমান করেন। জাতীয় নেতাদের মধ্যে তাজউদ্দীন ও শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের কাইজ্যা খুবই টক অব দ্যি টাউন। তাজউদ্দীনের স্ত্রী, কন্যা ও পুত্র আম্লিক থেকে এমপি হয়েছিলেন। সোহেল তাজ ২০০৯ সালে আম্লিকের কামব্যাক করার সময়ে এমপি হয়েছিলেন। তার বোন সবশেষ আমি-ডামির নির্বাচনে এমপি হয়েছিলেন। জুলাই অভ্যুত্থানের পর সোহেল তাজ শেখ পরিবার ও আওয়ামী লীগ নিয়ে বিস্ফোরক সব মন্তব্য করে যাচ্ছেন। উনার অভিযোগ শেখ মুজিবুর রহমানের কারণে তাজউদ্দীনের কৃতিত্ব ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। সোহেল সাহেবের বোন শারমিন দাবী করেছেন, শেখ মুজিবুর রহমান নাকি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন নাই। মুক্তিযুদ্ধের সময় যা করেছে উনার বাবা করেছেন !
সোহেল তাজ নতুন নতুন বিয়ে করেছেন। স্বাভাবিক ভাবে উনার মন আনন্দে ভরপুর থাকার কথা। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন তিনি ভালো নেই। কারণ উনার আব্বা সহ আরো চারশত রাজনীতিবিদ দের মুক্তিযোদ্ধা খেতাব বাদ হতে যাচ্ছে। নতুন সংশোধনীতে তাদের ' মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী' হিসাবে গন্য করা হবে। শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম সহ যারা ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন, ৭২ সালে গণপরিষদের সদস্য ছিলেন তারা সবাই মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী। সোহেল তাজ পূর্বে শেখ মুজিবুর রহমান কে নিয়ে যেসব আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন এখন সে সব ভুলে দাবী করছেন শেখ মুজিবের নামেই নাকি মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো ! তার বাবা তাজউদ্দীন ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সংগঠক। তিনি মুজিবনগর সরকারের মধ্যে যারা ছিলেন তাদের কে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী মানতে নারাজ। তার দাবী মাঠে যারা যুদ্ধ করেছে শুধু তারা নন যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠক ছিলেন তারাও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। চিপায় পড়ে সোহেল তাজ সাহেব জিয়াউর রহমানের প্রসঙ্গ টেনেছেন। বিগত আম্লিকের সময় জিয়ার বীর উত্তম উপাধি কেড়ে নিয়ে লাভ হয় নি বলে তিনি মনে করেন। ইতিহাসে যার যা ভূমিকা তা স্বীকার করতে হবে। এই সরকারের মুক্তিযুদ্ধ ইতিহাস নিয়ে কেন টানাটানি তা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন ভদ্রলোক !
ইন্টেরিম সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের খুজে বের করার দায়িত্ব রয়েছে । কিন্তু কে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা এবং কে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী এসব সেগমেন্ট করে অনির্বাচিত সরকারে কি লাভ ? তাজউদ্দীন আহমেদ কি ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’! রাজনৈতিক চার শতাধিক নেতাও তাই? মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল কোন প্রক্রিয়ায় ? কারা তার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ? যেহেতু এই সরকার এসব সন্ধানে মাঠে নেমেছে তাদের উচিত এসব প্রশ্নের সঠিক জবাব জাতির সামনে উপস্থাপন করা । বাংলাদেশে সরকার পালা বদলের সাথে সাথে ইতিহাস বদলে যায়। যারা বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে যুক্ত আছেন তাদের পড়তে হয় বিড়ম্বনায়।
শেষ করছি আজকের দিনের দুইটি ঘটনা নিয়ে। একজন সিভিল সার্জন ২৬শে মার্চের এক অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই অভ্যুত্থান কে জনযুদ্ধ বলায় মুক্তিযোদ্ধাদের তোপের মুখে পড়েছেন। একজন এসিল্যান্ড উনার ফেইসবুকে শেখ মুজিবুর রহমান কে স্বাধীনতার ঘোষক উল্লেখ করায় জনরোষের মুখে তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সরকারের এই ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। যদি শেখ হাসিনার পাশাপাশি শেখ মুজিবুর রহমান কে বাকশালের জন্য ফ্যাসিস্ট বলে মনে করে তবে পাঠ্যবই থেকে শেখ মুজিবুর রহমান কে বাদ দেয়া হোক। একদিকে বইতে লেখা থাকবে মুজিবের অবদানের কথা কিন্তু বাস্তবে মুজিবুর রহমানের ছবিতে জুতা মারা হবে তাহলে বাচ্চা-কাচ্চারা কনফিউসড হয়ে যাবে। সিভিল সার্জন ও এসিল্যান্ডের মতো তাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হবে। আমাদের প্রধান উপদেষ্টা উনার ভাষণে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রসঙ্গে একটিবারের জন্যও জিয়াউর রহমানের নাম বলেন নাই। অর্থাৎ সরকার জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক মানে না। সরকারের নিশ্চয়ই জানা আছে কে প্রকৃত স্বাধীনতার ঘোষক ?
আজকে সারাদিন নিউজ ফিডে ৭১ ও ২৪ নিয়ে প্রবীণ ও নবীনদের বাকবিতন্ডা দেখলাম। মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস দাবী করছেন, দেশে স্বাধীনতা একবারই এসেছে সেটা ১৯৭১ সালে। সমন্বয়ক আসিফ ও নাহিদ বলেছেন, জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ পূর্ণতা পেয়েছে । তাদের অভিযোগ বুড়ারা ২৪ কে ৭১ এর বিপরীতে দাড় করানোর চক্রান্ত করছে। এভাবেই কেটে গেল এবারের স্বাধীনতা দিবস !
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:৩৮