আজ ২৫ রোজা।
এই তো সেদিন রোজা শুরু হলো। দেখতে দেখতে ২৪ টা রোজা শেষ হয়ে গেলো। সময় কত দ্রুত চলে যায়! আগামী বছর কি রমজান মাস পাবো? আল্লাহপাক কি আমায় বাচিয়ে রাখবেন? আমার বেচে থাকা দরকার। আমার কন্যা ফারাজা অনেক ছোট। বাবার আদর ভালোবাসা ছাড়া কোনো পুত্র- কন্যা আনন্দ নিয়ে বড় হতে পারবে না। সন্তানের জন্য বাবা মা অনেক বড় নেয়ামত। আমার সবচেয়ে ভালো লাগে সারাদিন পর আমি বাসায় ফিরলে কন্যা চিৎকার করে বাবা বাবা বলে ছুটে আসে। বিষয়টা আমি দারুণ উপভোগ করি। পৃথিবীর সমস্ত পুত্র কন্যারা ভালো থাকুক। সুস্থ থাকুক।
এবার রমজানে খাওয়া দাওয়ায় কোনো কমতি ছিলো না।
প্রচুর খেয়েছি। সত্য কথা বলতে কি প্রয়োজনের তুলনায় বেশিই খেয়েছি। প্রতিদিন ভেবেছি, আজ খাবো না। খেলেও কম খাবো। কিন্তু ইফতার সামনে নিয়ে বসার পর সব ভুলে যাই। প্রচুর পরিমানে খাওয়ার কারনে রাতে আর খাওয়া হয় নাই। বুক জ্বালা পোড়া করেছে। গ্রীল চিকেন, চিকেন কড়াই, গরুর চাপ, সাথে শাহী পরোটা। তরমুজ তো ছিলো প্রতিদিন। দুই রকমের শরবত। আমাদের এলাকায় একলোক ঘুমনি বানায়। খুব ভালো হয়। মুড়ি মাখায় ঘুমনি দিলে স্বাদ বেড়ে যায় তিন গুন। বেশির ভাগ মানুষ ঘুমনি বানাতে পারে না। ঘুমনিটা একদম ভর্তা বানিয়ে ফেলে।
ইদে কিছু কেনার জন্য কখনো আগ্রহ বোধ করিনি। কি কিনবো?
কেন কিনবো? সবই তো আছে। তাছাড়া অপচয় আমি পছন্দ করি না। নিজের জন্য কিছু না কিনলেও কন্যার জন্য আগ্রহ নিয়ে কিনেছি। এবার কন্যাকে মার্কেটে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দিয়েছি। বলেছি, তোমার যা পছন্দ হয় নিয়ে নাও। কন্যা ঘুরে ঘুরে তার যা ভালো লেগেছে, কিনেছে। অবশ্য এজন্য আমাকে কোনো টাকা দিতে হয়নি। ফারাজা তার মামা খালা, নানা, চাচা চাচীদের কাছ থেকে প্রায় ৬০ হাজার টাকা পেয়েছে। ফারাজা শপিং করে ক্লান্ত। বলল, বাবা খুধা পেয়েছে। কিছু খাবো। সে নিজেই একটা খাবারের দোকান পছন্দ করলো। মেন্যু দেখে তার পছন্দের খাবার দেখালো। সেই খাবারের অর্ডার দিলাম। ফারাজা কখনো ছোট রেস্টুরেন্টে যেতে চায় না।
এবছর বাংলাদেশে বড়ই আর তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে।
তুলনামূলক সস্তা গেছে বলা যায়। বাজারে কোনো কিছুর অভাব নেই। গরমমসলার দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। বিদেশি ফলের দাম বেড়েছে। মাছ মাংস আর মূরগীর দাম বৃদ্ধির দিকে। জামা জুতোর দাম খুব বেশি বেড়েছে। ঢাকা হয়ে গেছে খরচের শহর। এখনো বাজারে আম আসে নাই। আম আমার অনেক পছন্দ। আগামী একমাসের মধ্যে বাজারে আম চলে আসবে। আমার পছন্দ হিমসাগর আম। গত বছর আমের ফলন অনেক কম হয়েছে। মন বলছে এবার আমের ফলন ভালো হবে। আমি কমপক্ষে এবার ২০০ কেজি আম কিনবো বলে নিয়ত করেছি। বাকিটা আল্লাহপাক ভালো জানেন।
এবছর কন্যা তার নানা বাড়িতে ইদ করবে।
আমি ৩/৪ দিন পর কন্যাকে দেখতে যাই। কন্যার জন্য দুই হাত ভরতি করে ফলটল নিয়ে যাই। মাঝে মাঝে লোক দিয়ে ফল পাঠাই। পরিবারের সদস্যদের জন্য কেনাকাটা করা বড় আনন্দের। আফসোস আব্বা বেচে নেই। করোনায় আব্বা মারা গেলো। অনেকদিন হয়ে গেলো, আব্বার কবর জিয়ারত করা হয় না। আব্বাকে মিস করি। আব্বাকে গ্রামের বাড়িতে কবর দেওয়া হয়েছে। ছেলেমেয়েদের জন্যে হলেও বাবা মায়ের অনেকদিন বেচে থাকা দরকার। বাবা মা ছাড়া ছেলেমেয়ে অসহায়। বাবা—মা হলো আস্থা ভরসার জায়গা। বিশ্বাসের জায়গা।
সেদিন গুলশানে এক অফিসে গেলাম।
সুন্দর সাজানো গোছানো অফিস। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। অফিসের লোকজন সবাই স্মার্ট। পাচ তলা অফিস। প্রায় ছয় শ মানুষ এই অফিসে কাজ করে। এই অফিসে রমজান মাসে দারুণ ইফতারির আয়োজন করে। প্রতিদিন বিকেলের মধ্যে এইচআর হোয়াটসঅ্যাপে জানিয়ে দেয়- আজ ইফতার কি দেওয়া হবে। আমি যেদিন গেলাম, সেদিন ইফতারির আয়োজন ছিলো চার রকমের ফল, কিছু ভাজা পোড়া, দুই রকমের শরবত। তিন রকমের জুস। খিচুড়ি আর গরুর মাংসের কালা ভূনা। ইফতার শেষে সেহরির জন্য খাবারও দিয়ে দেয়। আমাকে জোর করে দুই বাটি তেহারি দিয়ে দিলো। এই অফিসের প্রত্যেকের সেলারি ভালো। অনেক ভালো। এরকম একটা অফিসে কাজ করার বড় ইচ্ছে ছিলো।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:২৯