বর্তমানে বাংলাদেশে একক পরিবার বেশি। আগের যুগে যৌথ পরিবারে শিশুরা বয়োজৈষ্ঠ্যদের কাছে অনেক কিছু শিখত, নিরাপত্তা পেত। এখন সে সুযোগ অনেকটাই কম। কিন্তু পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, ৫ বছরের শিশুও নিরাপত্তা পায় না।
কেউ কেউ চিপ্সের প্যাকেট বা চকলেটের লোভ দেখিয়ে নির্জন স্থানে নিয়ে বাচ্চা গুলোর উপর নির্যাতন চালায়। সচেতন অভিভাবক হিসেবে যদি আমরা আমাদের ৩ বছর থেকে ঊর্দ্ধে ১২ বছরের বাচ্চাদের গুড টাচ বাড টাচ নিয়ে ধারনা দেই, হয়ত অনেক বাচ্চাই এই অনাকাঙ্খিত নির্যাতন আর দুুর্ঘটনা থেকে রেহায় পাবে। সে লক্ষ্যে সামান্য কিছু তথ্য বা টিপস তুলে ধরলাম।
১. শরীরের অঙ্গ প্রত্যাঙ্গের নাম শেখান: প্রথমেই পরিচিত করা দরকার মানব শরীরের কোন অঙ্গের নাম কি? মানে হাত, কান, নাক, বুক পিঠ, নিতম্ব ইত্যাদি। যারা জানে তাদের তো আর শেখানোর দরকার নেই। অঙ্গের বা অংশের নাম না জানলে সর্তকবার্তা দিতে পারবেনা। বোঝাতে পারবেন না, কোন গুলো স্পর্শ করা যায়, কোন গুলা প্রাইভেট বডি পার্টস বা একান্ত ব্যক্তিগত অঙ্গ বা অংশ।
২. বাচ্চাদের শেখান বডি প্রাইভেসি কি? : এটা অবশ্যই চালেন্জিং কাজ। অনেক শিশুরা নানা উদ্ভট প্রশ্ন করবে। আপনি শুধু চেষ্টা করবেন, এই এই অংশ বা অঙ্গগুলো একান্তই তার প্রাইভেট এরিয়া। এটার ছবি তোলা, স্পর্শ করা বা কাউকে দেখানো নিষেধ, খুবই খারাপ কাজ। তবে শুধু মা বাবা বা প্রয়োজনে ডাক্তার হসপিটালে মা বাবা অনুমতি নিয়ে দেখতে পারে চিকিৎসার জন্যে।
যদি ছোট বাচ্চারা তার প্রাইভেট বডি পার্টস নিয়ে সংশয়ে থাকে বা ভুলে যায়, সেক্ষেত্রে বোঝাতে পারেন, সুইমিং স্যুট রুল দিয়ে। মানে যে যে অংশ সুইমিং স্যুট পড়লে ঢাকা থাকে, সেটাই প্রাইভেট বডি পার্টস। সেক্ষেত্রে নেট থেকে কিছু ছবি দেখাতে পারেন।
৩. সম্পর্কের গ্যাপ কমিয়ে ফেলুন: মা বাবা হিসেবে শিশুটির সাথে আপনার রিলেশন গ্যাপ কমিয়ে ফেলুন। সে যেন আপনাকে বিশ্বস্ত বন্ধু ভাবে। আপনার সাথে সে যেন সব শেয়ার করে। লজ্জার কথা গুলো বলতে যদি হেজিটেট করে, আপনি ইনডাইরেক্টলি টপিকসটা নিয়ে কথা শুরু করুন। যাতে শিশুটি মনে করে যে, ব্যাপারটা আপনাকে বলা যায়।
৪. শিশুকে শেখান কারা বিপজ্জনক: দেশের ৯০% শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয় কাছের বা পরিচিত মানুষদের দ্বারা। সেটা পাশের ফ্লাটের আঙ্কেল, দাদু নানু বা বাসার দাড়ওয়ান বা কাজের লোক, আত্মীয় স্বজন ইত্যাদি...
আপনি শেখান কারও কাছ থেকে গিফট (চকলেট আইক্রিম এসব) নিতে আম্মু আব্বুর অনুমতি লাগবে। বাচ্চারা যদি অজা্ন্তে নিয়েও থাকে, কথায় কথায় জেনে নিন কোন কোন ব্যক্তি গিফট দিচ্ছে, সেটা দেবার পর তারা বাচ্চার সাথে কি কি করে। কোলে নেয়, আদর করে , নাকি চুমু খায় নাকি প্রাইভেট বডি পার্টসে টাচ করে ইত্যাদি।
শিশুটিকে শেখান, অপরিচিত লোককে পাত্তা না দিতে। কোন কথা না বলতে বা কোন গিফট না নিতে, যদিও সে ব্যক্তি যদি বলে আমি তোমার বাবার ফ্রেন্ড বা কলিগ বা আম্মুর বান্ধবী ইত্যাদি...
৫. বিপদে পড়লে কি করতে হবে? : শিশুটিকে বোঝাতে হবে, কোনটা তার জন্যে খারাপ বা বিপদের। মানে তাকে কেউ ডিস্টার্ব করছে, তার সাথে কোন কিছু নিয়ে জোর করছে, তার সাথে বেশি দুষ্টমি করছে, বা বেড়াতে নিয়ে যেতে চাচ্ছে বা প্রাইভেট বডি পার্টস নিয়ে কথা বলছে বা টাচ করছে ইত্যাদি।
শিশুটিকে এটাও শেখান, এমন বিপদে সে কি কি করতে পারে। যেমন, চিৎকার করতে পারে, আব্বু আম্মুকে বলতে পারে, বা তারা যদি বাসায় না থাকে তাহলে যে দাদু নানু বা আন্টিদের ভাল মনে হয়, তাদের কাছে সাহায্য চাইতে পারে। যদি যথেষ্ট সুয়োগ থাকে, তাকে ৯৯৯ কল করে বাসার ঠিকানা বলা শেখানো যেতে পারে।
দেখুন শুধু বাসায় নয়, অনেক আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছেলেরাও বলাৎকারের শিকার হয়। তাই নিজে সচেতন হবেন, বাচ্চাদের সচেতন করবেন। একটা দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না।
### ভাই তোমরা যারা একটা শিশুকে নির্যাতন করো, সেই পাপ কাজটা করার আগে একবার ভেবো, তোমার সন্তানের সাথে বা ভাই বোনের সাথে যদি একই কাজ করা হয়, তাহলে কি হবে? পাপ কিন্তু বাপকেও ছাড়ে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:৩৫