এই পোস্টটি লেখা হয়েছে দিনমজুরের এই পোস্টের জবাবে। উত্তর বড় হয়ে যাওয়ায় ট্র্যাডিশন অনুযায়ী আলাদা পোস্ট হিসেবে দিয়ে দিলাম

দিনমজুরের পোস্টের বক্তব্যের সাথে কিছুটা একমত। তবে তার গল্পটি বাংলাদেশের স্টক মার্কেট জালিয়াতির ঘটনাটির সাথে খাটে, কিন্তু ফেনি মে কিংবা এআইজি শেয়ার মূল্যের পতনের সাথে ঠিক সেভাবে খাটে না।
বাংলাদেশের স্টক মার্কেটে তখন শুরুর দিকের অবস্হা ছিল। শেয়ারের প্রকৃত মূল্যের তুলনায় অর্থের জোগান কিছুটা বেশী ছিল (এর মূল কারন একটু পর বলছি)। তাই শেয়ারের দাম বাড়ছিল। একই সাথে শেয়ারে বিনিয়োগ লাভজনক দেখে আরও বেশী বিনিয়োগকারী এসেছে, শেয়ারের দাম আরও বেড়েছে... এভাবেই চলেছে। এই সাজানো নাটকটি শুরু করেছিল একটি বিত্তবানদের সিন্ডিকেট কিছু বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সাথে নিয়ে (দিনমজুরের বানরের গল্পের মতো)। আবার সময়মতো শেয়ার মূল্যের সর্বোচ্চ অবস্হানের সময় সাধারন মানুষের সর্বোচ্চ ক্ষতি করে সেই সিন্ডিকেট সব শেয়ার বিক্রি করে কেটে পড়ে। ফলাফল আপনারা সবাই জানেন। যাহোক, এরপর থেকে বিভিন্ন ধরনের অবজারভেশনের ব্যবস্হা করা হয়েছে (যদিও ফুলপ্রুফ নয়)। বিদেশী বিনিয়োগ নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে তুলে নেয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এরপরও অনেক রিস্ক এখনও রয়েছে।
পুঁজিবাদি বিশ্বের বর্তমান ফিন্যান্সিয়াল মার্কেটের ধ্বসের কারন ভিন্ন যদিও কাছাকাছি একটি প্যাটার্ন আছে। অধিক মুনাফার আশায় খুব অল্প সিকিউরিটির বিপরীতে বিভিন্ন ব্যংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান লোন দিয়েছে। এখানে লোন ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা কম কিন্তু ইন্টারেস্ট রেট অনেক বেশী, অর্থাৎ আদায় করতে পারলে মুনাফাও বেশী। যার ফলে বিভিন্ন প্রপার্টির মূল্য তার প্রকৃত মূল্যের চাইতে অনেক বেড়ে যায়, কারন মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়ে গিয়েছে। এভাবেই চলছিল সবকিছু।
এখন কথা হচ্ছে হঠাৎ ধ্বসের কারন কি? খাদ্যদ্রব্যের মূল্য, এবং জ্বালানী তেলের হঠাত অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি, সেই সাথে উন্নত বিশ্বের বেকারত্বের হার বৃদ্ধি - এ সবকিছু মিলে হঠাৎ করেই মানুষের ক্রয় ক্ষমতা অনেক কমে যায়। ফলাফল অনেকেই তাদের ঋণ পরিশোধে অপারগ হয়ে পড়ে। একই সাথে মর্টগেজের উপকরন যেমন বাড়ি ও জমির দামও কমতে থাকে। ফলে ঋণ প্রদানকারী এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে লাভ তো দুরে থাক, সেসব বাড়ি, জমি বিক্রি করে ঋণের মূল পরিমানই উসুল করা সম্ভব হয়ে উঠে না। আবার অনেকে ইচ্ছা করেই ঋণে কেনা বাড়ি ছেড়ে দেয়, কারণ অপরিশোধিত ঋণের পরিমান বাড়ির মূল্যের চাইতে এখন বেশী। একটা চেইন রিঅ্যকশন শুরু হয়। ব্যংকগুলোর ক্ষতির অংক বাড়তে থাকে। তাদের ঋণ দেয়ার ক্ষমতাও কমে যায়। এই ঋণের উপর ভর করা ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতাও কমে যায় (অথচ, একসময় এমন পরিস্হিতি ছিল যে এক ডলারের সিকিউরিটির বিপরীতে ব্যাংক ৯৭ ডলার পর্যন্ত ঋণ দিয়েছে)। ফলাফল? এ প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি... দেখা যাক কি হয়।
বাংলাদেশের শেয়ার বাজারেও এরকম একটি ভঙ্গুর অবস্হা বিরাজ করছে। একটি কোম্পানির মূল্য যদি একমাসেই সাত/আট গুন বৃদ্ধি পায় (যেটি প্রাইমারি শেয়ার ছাড়ার পর ঘটে) তাহলে তা অবশ্যই অস্বাভাবিক। অর্থাৎ পন্যের তুলনায় অর্থের যোগান বেশী। কোন কোম্পানির শেয়ারের মূল্য নির্ধারিত হওয়ার কথা সেই কোম্পানির বর্তমান অবস্হা ও ভবিষ্যত সম্ভাবনার উপর। তখন আপনার শেয়ার কেনা-বেচা না করলেও চলবে। কোম্পানির মালিকানার অংশিদারিত্বের সুবাদে আপনি লভ্যাংশ পাবেন।
বাংলাদেশের শেয়ার বাজারের বর্তমান এ অবস্হা কতদিন চলবে তা বলা যাচ্ছে না। কারন এখনও প্রতিদিন অনেক নতুন ক্রেতা শেয়ার বাজারে প্রবেশ করছে। চীনের বাজারও অনেকটা এ অবস্হা চলছে। এখন যদি এসব মার্কেটে যদি কোন কারনে কেউ বড় বিনিয়োগ তুলে নেয়, সাথে সাথে কিছু শেয়ারের মূল্যপতন ঘটবে। কিছু ক্রেতা প্যানিকড হয়েও শেয়ার ছেড়ে দিয়ে হয়ত আরও মাত্রা যোগ করবে। ফলে আরও মূল্যপতন ঘটবে। ফলাফল, শেয়ার বাজার আবার বিনিয়োগকারীদের আস্হা হারাবে এবং আরও একটি ধ্বস নামবে। যেটি হয়ত শেয়ারগুলো তাদের যৌক্তিক মূল্যে কেনাবেচা হলে ঘটত না।
দেখা যাক কি ঘটে...
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০০৮ সকাল ১১:৫৩