কথা নেই। মেয়েটার ছোট্ট পলিথিনের প্যাকেটে কয়েকটি রুটি। আমাকে রীতিমত উপেক্ষা করে পলিথিনের ভেতর থেকে রুটিগুলো বার করছে, আবার ঢোকাচ্ছে। আমি দাঁড়িয়ে দেখছি। আড়চোখে একবার দেখে নিল আমাকে।
জায়গাটা ঢাকা সদরঘাট।
দিনটি ছিল হরতাল। আমি যাবো বরিশাল।
ঘাটে সারবাঁধা লঞ্চ। চারিদিকে চিৎকার চেচামেচি। ৫নং পন্টুনের নামার পথটায় দাঁড়িয়ে আছি। কি ভেবে মেয়েটার একটু দয়া হল আমার প্রতি। একগাল হেসে অন্য একটা পলিথিনের ভেতর থেকে বার করল হলুদাভ কমলা রঙের শাড়িটা।
-এইটা আমারে দিছে। এইটা আমার ঈদের...
-কে দিল ?
-ঐ যে মার্কেটের লোক।
বলে শাড়িটা পেঁচিয়ে নিল গায়ে। হাসি আর ধরে না মুখে। ছোট্ট হলদে ফড়িঙের মত লাগছিল ওকে। কিছুক্ষণ পর আবার খুলে ফেলল। আবার পড়ল। আমি মজা করে দেখছিলাম ওর কান্ডকারখানা। আর টুকটাক কথা। মাথার ব্যান্ডেজের নিচে চোখ পড়তেই শিউড়ে উঠলাম। অর্ধেকের মত মাথায় বড় একটা ক্ষত। যদিও শুকিয়ে এসেছে ক্ষতটা। খুলি দেবে গেছে পেছন থেকে অনেকখানি। কিভাবে এটা হল, জিজ্ঞেস করতেই..
-মারছে...
বলেই ভোঁ দৌড়। চলে গেল।
কিন্তু ক্ষতটা রেখে গেল আমার ভেতরে।
আমার ভাইপো, ভাইঝি, ভাগ্না-ভাগ্নি'র কথা মনে পড়ে গেল। কত আদরে রাখি আমাদের সন্তানদের। ফুলের মত সব শিশুরা। কিন্তু পথের ধারের ফুলগুলো এই আমাদেরই অবহেলা আর নিষ্ঠুরতার শিকার হয় প্রতিনিয়ত। আমার বাচ্চাকে আদর করেই গরম খুন্তি দিয়ে ছ্যাঁকা লাগিয়ে দিলাম কাজের মেয়েটার কোমল পিঠে। হা হা হা।
যাই হোক, এগুলো কথা না। এসব কথা আমরা পড়েও পড়ি না। গায়েও মাখি না।
আমার কথা হচ্ছে- এত বিরুদ্ধতার বিরুদ্ধেও ফুল ফুটছে। ভোর হচ্ছে।
মেয়েটির ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি আর ঐটুকু ছোট্ট হলুদ কাপড়ের আনন্দ আমি দেখেছি। এই আন্ন্দটুক নিয়েই বাড়ির পথ ধরেছি।

ওরা তখন পানির কিনারে আবর্জনার স্তুপের উপর ঘর বানিয়ে খেলায় মেতেছে....

বাবা-ছেলের এই ভালবাসা...আহ্....

একটু দুরে জলকেলিতে মেতেছে দূরন্ত কিশোর....

জাল ফেলেছে শহুরে জেলে.....

সূর্য নামলো নগরের কিনারে....

আমার ডিঙ্গা ভাসলো চন্দ্রদ্বীপে'র উদ্দেশ্যে....

গন্তব্য সবুজ শহর বরিশাল।