somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আদি বাংলার ইতিহাস (প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ৩৭

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আদি বাংলার ইতিহাস
(প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ৩৭

বাংলাদেশে এই স্থায়ী বনাঞ্চল গড়ে উঠার সময়কাল এ পর্যন্ত নির্ণীত হয়নি। অনুমান করা যায় ৪০,০০০ বৎসর পূর্বে, বরফযুগের পরে সারা পৃথিবীতেই আবহাওয়াতে স্থায়িত্ব সৃষ্টি হয়। এ সময়ে বাংলাদেশের আবহাওয়া এবং উদ্ভিদের প্রকৃতিতেও স্থায়িত্ব আসে। বাংলাদেশে গড়ে উঠে সম্ভবত স্থায়ী বনাঞ্চল। ৬৯

বর্তমানে দেশের বনাঞ্চলের কতগুলি উদ্ভিদ ও বৃক্ষ দেশীয় অর্থাৎ দেশের মাটি থেকে এদের উদ্ভব এবং কতগুলি বহিরাগত তা এযাবত নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। তবে যতগুলি বৃক্ষের আদিবাসস্থান নির্ণয় করা হয়েছে তার ভিত্তিতে অনুমান করা যায় যে, দেশের বর্তমান বৃক্ষরাজির অধিকাংশই বহিরাগত। বাংলাদেশের বর্তমান যে উদ্ভিদের সংখ্যা ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশেষ করে বন সৃষ্টি করার জন্য যত প্রকার বৃক্ষ দেশে বর্তমানে আছে, তার বৃহত্তর সংখ্যাই গত কয়েক হাজার বছরের মধ্যে বিদেশ থেকে এসেছে বলে মনে হয়। দেশে আগন্তুক মানুষের মতো এরাও নিজেদের অবস্থান এমনভাবে সুদৃঢ় করে নিয়েছে যে, এগুলি আর বহিরাগত বলে মনে হয় না। ঐতিহাসিক যুগের ঊষালগ্নে বাংলাদেশে বনানীর আকার আয়তন কেমন ছিল, বিশেষ করে, বাংলাদেশকে ফলে-ফুলে বৃক্ষরাজিতে কেমন দেখা যেত সেই চিত্র হয়তো পুরোপুরি আঁকা সম্ভব নয়, তবু বহিরাগত বাদ দিয়ে বাংলার একটি আনুমানিক চিত্র অঙ্কন করার চেষ্টা এখানে করা হলো।

বর্তমানে দেশের ১ কোটি ৪৪ লক্ষ হেক্টর জমির ৬৪ ভাগ অর্থাৎ সাড়ে ৯২ লাখ হেক্টর হলো কৃষিজমি। বন রয়েছে প্রায় ১৮ ভাগ জমিতে অর্থাৎ ২৫ লাখ হেক্টর ৬০ হাজার একরে। মীর মোহাম্মদ হোসেন লিখেছেন যে, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বনাঞ্চল তিন ধরনের মাটিতে অবস্থিত ৭০:

১. উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল;
২. কেন্দ্রীয় ও উত্তর-পশ্চিমাংশের উচ্চভূমি; এবং
৩. পূর্ব ও দক্ষিণাংশের উচ্চ পাহাড়ি অঞ্চল।

বরিশাল, চট্টগ্রাম, পটুয়াখালী ও নোয়াখালিতে কৃত্রিম বনাঞ্চলের পরিমাণ ০.১ মিলিয়ন হেক্টর এবং খুলনা, পটুয়াখালী ও চকোরিয়া সুন্দরবনাঞ্চলের পরিমাণ ৫.৮ মিলিয়ন হেক্টর। প্রধান বৃক্ষ হলো কেওড়া, সুন্দরী, গেওয়া, পশুর ও কান্ক্রা; কৃত্রিম বনাঞ্চলে লাগানো হয় কেওড়া, গেওয়া, কান্ক্রাও সুন্দরী বৃক্ষ।ভাওয়াল-মধুপুর গড়ে শালবন রয়েছে ৯৮০০০ হেক্টর ও বরেন্দ্র গড়ে ১৫০০০ হেক্টর। এখানে রয়েছে হারগাজা, গডিলা, বহেড়া, জিগা, সিধা, চাঁপালিশ, কড়ই, সোনালু ইত্যাদি বৃক্ষ; পার্বত্য বনাঞ্চলের মধ্যে ০.৫৯ মিলিয়ন হেক্টর চট্টগ্রামে, ০.২৬ মিলিয়ন হেক্টর পার্বত্য চট্টগ্রামে, ৪৪০০০ হেক্টর সিলেট ও ৭৫০ হেক্টর কুমিল্লায়।

পার্বত্য বনাঞ্চলে ৭৫০০ হেক্টর ভূমিকে টিক, জারুল, গামারি, ইউক্যালিপটাস, গর্জন, একাশিয়া ও জাম গাছের অঞ্চলে পরিণত করা হয়েছে। প্রতি বছর ১০,০০০ হেক্টর জমি গাছ চাষের আওতাভুক্ত করা হয়; পার্বত্যাঞ্চলে প্রধান প্রধান গাছ হলো- চাঁপালিশ, চুণ্ডুল, তেলশুর, নারকেল, পিতরাজ, কনক, তুন, নাগেশ্বর, জাম, উরিয়াম, সিভিট, গর্জন, তালি, কামদেব, চম্পা, রীকটান ও গামারি। পত্রঝরা গাছের মধ্যে রয়েছে শিমূল, বান্দরহোলা, কড়ই, চিকরাশি, আমড়া ও পিঠালি।

বাঁশের মধ্যে প্রধান প্রজাতিগুলো হলো- মূলী, মিতিংগা, ভুলু ও ওরাহ। চাষ করা ফল গাছ হলো- জাম, কুল, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, তেঁতুল, তাল, খেজুর, নারকেল, সুপারি ইত্যাদি।৭১

উদ্ভিদের বৈচিত্র্য ও আবহাওয়ার পরিবর্তনশীলতার উপর নির্ভর করে বাংলাদেশকে নিন্মলিখিত উদ্ভিদ ভৌগোলিক অঞ্চলে
ভাগ করা হয়। যেমনঃ
১, মিশ্র চিরসবুজ বনভূমি
২, পাতাঝরা বা পত্রমোচী বনভূমি
৩, সমতল বনভূমি
৪, ম্যানগ্রোভ বনভূমি

মিশ্র চিরসবুজ বনভূমি: বাংলাদেশে যে অঞ্চলে গড় বৃষ্টিপাত ২৫৪ সেন্টিমিটার সেখানে চিরসবুজ (Evergreen forest) বৃক্ষের বন সৃষ্টি হয়। চিরসবুজ গাছপালার পুরানো পাতা সারা বছরই ঝরে পড়ে এবং নতুন পাতা গজায়। যেমন- আম, জাম, কাঁঠাল, গর্জন, চাপালিশ ইত্যাদি। যেসব গাছের পাতা বছরের একটি নির্দিষ্ট ঋতুতে ঝরে পড়ে সেসব গাছগুলোকে বলা হয় পাতাঝরা গাছ বা পত্রমোচী গাছ। এই বনাঞ্চলকে বলে পাতাঝরা বন বা পত্রমোচী বনাঞ্চল (Deciduous forest)। যেমন- শিমুল, সেগুন, শিরিষ ইত্যাদি পাতাঝরা গাছ। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট ইত্যাদি অঞ্চলকে মিশ্র চিরসবুজ বনভূমি (Mixed evergreen forest) অঞ্চল বলা হয়।

পাতাঝরা বনভূমি বা পত্রমোচী বনভূমি: ঢাকা জেলার উত্তরাঞ্চল, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, কুমিলা শহরের পশ্চিমে লালমাই পাহাড়ি অঞ্চল, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার কিছু অংশ নিয়ে সৃষ্ট হয়েছে পাতাঝরা বা পত্রমোচী বনভূমি (Deciduous) অঞ্চল। রাজশাহীর বরেন্দ্রভূমিও এই বনভূমির অন্তর্ভুক্ত। এ বনাঞ্চলে শাল, সেগুন, বান্দরলাঠি, পোড়াশাল, সিন্দুরী,
বনজাম ইত্যাদি উদ্ভিদ জন্মে থাকে। তাছাড়া অনেক গুল্ম ও আরোহী উদ্ভিদও এসব বনে যথেষ্ট পাওয়া যায়।

সমতল বনভূমি: বাংলাদেশের বুকে বিভিন্ন নদী ও তাদের শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে আছে জালের মতো। পূর্বাঞ্চলের কিছু অংশ ছাড়া সমগ্র বাংলাদেশই একটি বিস্তীর্ণ সমভূমি (Plain land)। ফলে সমভূমিগুলো পলিমাটিসমৃদ্ধ। বাংলাদেশে সমভূমির আয়তন প্রায় ১,০০,০০০ হেক্টর। সমতলভূমির উলেখযোগ্য গাছগুলো হচ্ছে তেঁতুল, বট, আকন্দ, আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, বাঁশ ইত্যাদি।

ম্যানগ্রোভ বনভূমি: বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মাটির লবণাক্ততা অত্যধিক। নদীতে জোয়ার-ভাটার কারণে মাটি সবসময় ভিজা থাকে। এজন্য একে লোনাপানির বন বা ম্যানগ্রোভ বলা হয়। সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলার দক্ষিণের বিস্তীর্ণ এলাকার সমন্বয়ে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বন সুন্দরবন (Sundarbans) সৃষ্টি হয়েছে। সুন্দরবন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন। এটি সর্বাপেক্ষা সম্পদশালী বনও বটে, সুন্দরবন বাংলাদেশের স্থলভূমি থেকে শুরু হয়ে সমুদ্রের তীর পর্যন্ত বিস্তৃত। এই বনে সুন্দরী, গেওয়া, কেওড়া, গোলপাতা ইত্যাদি গাছ জন্মে, বন ও বৃক্ষের পুরো ইতিহাস তুলে ধরতে একটি স্বতন্ত্র পুস্তকের প্রয়োজন হবে। অতি পরিচিত এবং আঙিনায় বনবাদাড়ে বিরাজমান বৃক্ষরাজির বর্তমান অবস্থা থেকে কতগুলি দেশীয় এবং কতগুলি বহিরাগত নিন্মে তা তুলে ধরা হলো।
-------------------------------------
৬৯ তপন চক্রবর্তী: বাংলাদেশের বন ও বনাঞ্চল।
৭০Mir Mohammad Hossain- Forest Soils of Bangladesh.
৭১ নওয়া জীশ আহম্মদ-বনবনানী।
ক্রমশ চলবে-------------

আদি বাংলার ইতিহাস (প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ৩৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×