ইতিহাস সম্পর্কে একেবারে অজ্ঞ না হলে, এটা যে কারো জানার কথা যে, আমাদের প্রিয় মাতৃভাষাকে স্বীকৃতি দানের জন্য, আমাদেরই পুর্বসুরি ভাইয়েরা রাজপথে জীবন দান করেছিলেন। যখন মনে হচ্ছিল, তাদের আত্মদান বৃথা যেতে বসেছে, তখনই আমাদেরই দেশি এক বোন এবং তার বিদেশি বংশোদ্ভুত স্বামির একান্ত চেস্টায়, ব্লগিস্ফেয়ারে বাংলা ভাষাভাষিদের জন্য এই সামওয়্যার ইন ব্লগের সফল পথ চলা শুরু হয়। এজন্য তারা দুজনই বিশেষভাবে ধন্যবাদ পাবার যোগ্য।
মুলত এই দুজনের সাথে আরো নাম না জানা (কিংবা নেপথ্যে থাকা) দেশপ্রেমিক কিছু ভাই ও বোনের আন্তরিক চেস্টা এবং উৎসাহি অসংখ্য লেখক পাঠকের অংশগ্রহনে, এই ব্লগটি দেশ ও বিদেশে অবস্থান রত হাজার হাজার বাংলা পিপাসু মানুষের আত্মার আত্মিয় হয়ে গিয়েছে। তারই ধাবাহিকতায় যখন বাংলা ব্লগ দিবস গঠনের প্রস্তাব আসলো, তখন সরব সম্মতি ধবনিত হলো সমগ্র অন্তর্জালেই।
গতকাল ব্লগ দিবস পালন উপলক্ষ্যে সামুর অফিসে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। উপস্থিত কিছু সদস্যের সৌজন্যে, তার সচিত্র বর্ণনা দেখার সৌভাগ্য হয়েছে সবারই।
শুনলাম, অনুষ্ঠানে উপস্থিত ব্লগার পাঠকদের কাছে এই ব্লগ নিয়ে কিছু প্রস্তাবনা উপস্থাপনের অনুরোধ করা হয়েছিল। বেশ কিছু প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। "খালি খালি ব্যান খাই" ভাইয়ের পোস্টটা থেকে বেশ কিছু প্রস্তাবের কথা জানতে পেরে, এ নিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি।
ব্লগের লেখক পাঠক এমন কিন্তু কেউ নেই যিনি, কোনদিন মারামারি করেননি বা গালাগালি করেননি। কিন্তু সব যায়গায় সবকিছু যেমন শোভনীয় নয়, তেমনি ব্লগেও সেটার উপস্থাপন যুক্তিযুক্ত নয়। ঠিক এই কারণেই ব্লগিয় নীতিমালায় গালিযুক্ত মন্তব্য কিংবা পোস্ট মুছে ফেলা হয়, কিংবা ড্রাফট করে ফেলা হয়। তা সত্ত্বেও নতুন করে ব্লগে গালাগালি বন্ধে কেন দাবি তোলা হলো, সেটা নিয়ে কর্তৃপক্ষ ভাবতে পারেন।
গত দুই বছরে আমার পর্যবেক্ষণে যা পেয়েছি, সেটা হলো, কর্তৃপক্ষ্য কিংবা মডারেশনের সাথে ব্যাক্তিগত ঘনিস্টতার সুযোগ নিচ্ছেন কিছু ব্লগার। যাদের কল্যাণে এই ব্লগ সমন্ধে নেতিবাচক ধারনার সৃস্টি হওয়াই স্বাভাবিক। যা সামুর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথে বিশাল অন্তরায়। কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখতে পারেন, কোনটিকে তারা বেছে নিতে পছন্দ করবেন।
জাতি হিসাবে আমরা অতি আবেগপ্রবণ, সেটা নিয়ে সন্দেহ নেই। ধর্ম, ভাষা এবং রাজনীতি,এই তিনটি বিষয়ে আমরা অত্যন্ত আবেগপ্রবন হয়ে পড়ি। অথচ দেখা যাচ্ছে, মুক্তবুদ্ধির চর্চার অজুহাতে ধর্মবিদ্বেষি লেখাগুলি দিব্যি প্রথম পাতায় স্থান পাচ্ছে। শুধু ধর্মবিদ্বেষ হলেও কথা ছিল। চুড়ান্ত অশ্লিল কথাবার্তা আর তথ্যসুত্র বিহীন কয়েকজনের লেখাগুলির বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে, প্রায় সময়েই কর্তৃপক্ষকে বেশ কাল ক্ষেপন করতে দেখা যায়। যার কারনে সামুর মত নিরপেক্ষ এবং বিশাল ব্লগের বিরুদ্ধে ধর্মবিদ্বেষিদের একক প্লাটফর্ম হিসেবে অপবাদ আসতে পারে।
কিছুদিন আগে, স্বাধীনতার উপর ভিত্তি করে লেখা একটি স্টিকি পোস্টে, ধর্মানুলম্বি লেখক পাঠকরা প্রচুর মাইনাস দিয়ে, পোস্টটি সরাতে পেরেছিলেন। সেখানেও দেখলাম, মাইনাসদাতাদের ( সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন যারা) তাদের বিরুদ্ধে চিহ্নিত কিছু ব্লগার প্রচুর আপত্তিকর কথা বলেছিলেন। খুবই দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, এদের মধ্যে তিনিও ছিলেন, যার সুযোগ্য নেতৃত্বে সামুর পথ চলা শুরু হয়েছিল। এই সব দেখে, মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক যে, যদি নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তিদের অবস্থানই ঘৃণাবাদের পক্ষ্যে হয়, তাহলে এ ব্যাপারে নিরপেক্ষদের কি হবে? আর প্লাস মাইনাস দানের বিধান তো সামুরই করা। তাহলে তার প্রয়োগে এইভাবে উস্মা প্রকাশের কারন কি?
সরকারিভাবেই বাংলাদেশে দুটি ভাষাকে স্বীকৃতি দান করা হয়েছে। বাংলা ও ইংরেজি। কিন্তু এর পরেও সংখ্যগরিষ্ঠ বাংলাভাষি ব্লগাররা, ইংরেজিতে লেখা পোস্টগুলিকে নিরুৎসাহিত করেন। যা প্রকান্তরে বাংলা ভাষাকেই প্রমোট করে। অথচ দেখা যায় উড়ে এসে বাংলাদেশে জুড়ে বসা পাশের দেশের চলচিত্রের নায়ক নায়িকার অশ্লিল ছবি সম্বিলিত সিনেমার প্রচারধর্মি লেখাগুলি দিব্যি প্রথম পাতায় স্থান পেয়ে যায়। এই ধরণের পোস্ট প্রথম পাতায় আসার যোগ্য কিনা, সেটাও কর্তৃপক্ষকে ভেবে দেখবার অনুরোধ করছি।
রাজনীতি আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। তাই লেখকদের লেখনিতে রাজনৈতিক পক্ষালম্বন কিংবা বিরোধিমতের বিরুদ্ধে লেখা/সমালোচনা আসতেই পারে। সেই লেখাগুলির সবগুলিই যে নিখাদ নিখুত এমনও না। অথচ রাজনৈতিক ভিন্নামতালম্বিদের টার্গেট করে, নিরন্তন অপপ্রচার, অশ্লিল শব্দচয়নে তার কন্ঠকে রোধ কিংবা দলবদ্ধভাবে তাকে হেয় করার জন্য নোংরা খেলা, অন্তত সামুকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে না। এই দলবদ্ধ চক্রটি আবার বাস্তব জীবনের ঘটনা কিংবা সামুর বাইরে অন্তর্জালে ঘটে যাওয়া কোন ইস্যু, সামুতে টেনে এনে, অসুস্থ পরিবেশের সৃস্টি করে। অথচ এই গোষ্ঠির বেশ কিছু সদস্যকে সামুর কর্তৃপক্ষ্যের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করতে দেখলে মনে হয়, এরা কৌশলে সামুকে একটি বিশেষ রাজনৈতিক মতবাদের প্লাটফর্ম হিসাবে ব্যাবহার করতে চাইছে।
যা লিখলাম, সেটা আমার ব্যাক্তিগত পর্যবেক্ষনপ্রসুত মতামত। কর্তৃপক্ষ পড়বেন কিনা , পড়লেও গ্রাহ্য করবেন কিনা, সেটা তাদের বিবেক বুদ্ধি কিংবা মর্জির উপর নির্ভর করে। সামুকে ভালোবাসি বলেই দুকথা লিখতে হলো। ধন্যবাদ সবাইকে।