somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তালিবানদের কাবুল পুনরুদ্ধার

১৬ ই আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৫:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আফগানিস্তানে তা-লি-বা-ন-রা ক্ষমতা ফিরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। আলহামদু লিল্লাহ্‌। এ বিজয় দ্বীনদারদের বিজয়। এ বিজয় ইসলামের বিজয়। এ বিজয় প্রত্যেক মুসলিমের বিজয়। তালিবুল ইলমদের হাতে গড়া এই দলটি দীর্ঘ ২০ বছর দখলদার হানাদার মার্কিনী ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে লড়েছে। নিজেদের জান-মাল সবকিছুর বিনিময়ে তারা এ বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। হতাশ হয়ে তারা পথ ছেড়ে দেয়নি। ক্লান্ত হয়ে বাতিলের অন্যায় প্রস্তাবগুলোর সাথে আপোষ করেনি। একজন মুজাহিদ মেহমানকে হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দিয়ে খেয়ানতে লিপ্ত হওয়ার বদলে তারা লড়াই করে নিজেদের বীরত্ব ও মেহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা অটুট রেখেছে। সাবাস তালেবান! সাবাস আফগান!

তালিবানের রাজনৈতিক ভাষ্যকার ড. মুহাম্মদ নাঈম এর দুটো সাক্ষাৎকার আমি শুনেছি। তিনি স্পষ্টভাষায় বলেছেন তাদের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে ইসলামী শরিয়ার ভিত্তিতে। মুসলিম হিসেবে তাদের প্রতি মৈত্রী ও ভালোবাসা প্রকাশ করার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। সাক্ষাৎকারে ড. নাঈম প্রাঞ্জল আরবী ভাষায় কথা বলেছেন। তাঁর বক্তব্য ছিল বেশ পরিপক্ক ও ভারসাম্যপূর্ণ। আমাদের দেশের আলেম শ্রেণীর মাঝে সাধারণতঃ রাজনৈতিক বক্তব্যে যে অপরিপক্কতা ও প্রান্তিকতা দেখা যায় তার সাক্ষাৎকারে সেটা ছিল না। বরং তা ছিল আরব বিশ্বের রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলেমদের মত ভারসাম্যপূর্ণ ও পরিপক্ক। সাথে সাথে তিনি উপস্থাপকের তীর্যক প্রশ্নবানে নিজেদের উপর থেকে বিশ্ব মোড়লদের অপবাদগুলো দূর করার জন্য কোন আপোষকামিতার মনোভাব ব্যক্ত করেননি। বরং সুস্পষ্টভাবে বলেছেন দখলদার মুক্ত স্বাধীনতা ও ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই তাদের লড়াই, ৯৯% এর অধিক আফগান জনগণ এটাই চায় এবং গণতন্ত্রে বিশ্বাসী আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোর উচিত জনগণের এ চাওয়াকে যথাযথ মর্যাদা দেয়া।

তালিবানরা প্রায় বিনা রক্তপাতে কাবুল দখল করেছে। প্রেসিডেন্ট ভবন দখলের লাইভ সম্প্রচারে কোন হানাহানি চোখে পড়েনি। কারো উপর ক্ষোভ ও আক্রোশ প্রয়োগ করার চিত্র দেখা যায়নি। অতিরিক্ত উৎফুল্লতা ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে উল্লাস প্রকাশ করার দৃশ্য নজরে পড়েনি। বরং প্রেসিডেন্ট ভবনের সাবেক প্রহরী কর্তৃক স্বাভাবিক ও অহিংস পরিবেশে তালিবান প্রতিনিধির কাছে চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারা কাবুল দখল করার পর কাবুল বিমান বন্দর দিয়ে আমেরিকান নাগরিকদের ও অন্যান্য বিদেশীদের আফগানিস্তান ত্যাগ করার দৃশ্য দেখা যায়। বিমান বন্দরের রানওয়েতে বাংলাদেশের বাস টার্মিনালের এর মত হৈচৈ ও ভীড়ের মধ্যে মানুষকে বিমানে চড়ার দৃশ্য দেখা যায়। সেখানে কোন গোলাগুলি ও হানাহানির দৃশ্য চোখে পড়েনি। সাবেক প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি কাউকে না জানিয়ে হেলিকপ্টারে করে পালিয়ে যান। তাকে নিরাপদে পালিয়ে যাওয়ার সে সুযোগ তালিবানরা দিয়েছে। বরং তারা ঘোষণা করেছে যারা আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যেতে চায় তারা নিরাপদে চলে যেতে পারে। এর থেকে জানা যায় তালিবানদেরকে জঙ্গলি ও সহিংস বলে মিডিয়ার উপস্থাপন অমূলক ও অসত্য।

তালিবানদের এই মহানুভবতাকে যদি আফগানিস্তানে আক্রমণের সময় হানাদার আমেরিকানরা যে বর্বরতা চালিয়েছে সেটার তুলনা করা হয় কিংবা গুয়ান্তনামো জেলখানায় আমেরিকানরা নিরপরাধ বেসামরিক আরব সাংবাদিক ও চ্যারিটি ব্যক্তিত্বদের উপর যে বর্বরতা চালিয়েছে সেটার সাথে তুলনা করা হয় তাহলে দেখা যাবে একদিকে মানবতাবাদী মহানুভব ও দরদী মুসলিম চরিত্র। অপরদিকে পাশবিক, নিষ্ঠুর ও অমানবিক কাফেরদের চরিত্র। আমেরিকান সেই বর্বরতার কিছু বর্ণনা উঠে এসেছে কুয়েতের দানশীল ফায়েয আল-কান্দারির ভিডিও সাক্ষাৎকারগুলোতে এবং তার লিখিত “আল-বালা আশ-শাদীদ ওয়াল মিলাদ আল-জাদীদ” নামক বই-এ। যিনি কূপ খনন করতে আফগানিস্তান গিয়ে যুদ্ধের মধ্যে পড়ে যান। এরপর আমেরিকানদের হাতে আটক হয়ে ১৪ বছর গুয়ান্তনামোতে মানব ইতিহাসের নিকৃষ্টতম নির্যাতনের শিকার হন। এবং আল-জাজিরার ফটোগ্রাফার সামি আল-হাজ্জের ভিডিও সাক্ষাৎকারেও উঠে এসেছে সে সব বর্বরতা। যুদ্ধের শুরুতেই সংবাদ ব্রডকাস্ট করতে গিয়ে যিনি আটক হন। ৬ বছর গুয়ান্তনামোতে বন্দি জীবন কাটান। তাদের সাক্ষাৎকার ও লেখায় তাদের উপর মার্কিন নর ও নারী সেনা সদস্য কর্তৃক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং কল্পনাতীত আধ্যাত্মিক ও যৌন নির্যাতনের বিবরণ রয়েছে।

আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন তালিবানদেরকে পুরোপুরি ইসলামী শরিয়া মোতাবেক শাসন প্রতিষ্ঠা করার তাওফিক দিন। ভারসাম্যপূর্ণ শাসননীতি গ্রহণ করার তাওফিক দিন। আফগানিস্তানে বিদ্যমান সব ধারার আলেম, দাঈ ও মুসলিমদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার তাওফিক দিন। যাবতীয় অনিষ্ট থেকে আফগানিস্তানকে হেফাযত করুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৫:১৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা যদি পুড়ি, তবে তোমরাও আমাদের সঙ্গে পুড়বে !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৮ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৫:০১


২২ বছর ধরে একচ্ছত্র ক্ষমতা, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দখল, বিরোধীদের দমন—এরদোয়ানের শাসনযন্ত্র এতদিন অপ্রতিরোধ্য মনে হতো। কিন্তু এবার রাজপথের তরুণরা সেই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। তুরস্ক এখন বিদ্রোহের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। ইস্তাম্বুলের জনপ্রিয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

চেংগিস খান: ব্লগের এক আত্মম্ভরী, অহংকারী জঞ্জাল

লিখেছেন আমিই সাইফুল, ২৮ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:৪৪

ব্লগ জগতে অনেক ধরনের মানুষের দেখা মেলে—কেউ লেখে আনন্দের জন্য, কেউ লেখে ভাবনা শেয়ার করতে, আর কেউ লেখে শুধু নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে। কিন্তু তারপর আছে চেংগিস খানের মতো একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাকিস্তান প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া নষ্ট প্রজন্ম

লিখেছেন Sujon Mahmud, ২৮ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১১:৩৬

৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর ধর্ষিতা বাঙালি নারীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত অস্ট্রেলীয় ডাক্তার জেফ্রি ডেভিস গণধর্ষণের ভয়াবহ মাত্রা দেখে হতবাক হয়ে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে আটক পাক অফিসারকে জেরা করেছিলেন যে, তারা কীভাবে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে যৌন মিলনকে ধর্ষণ বলা হবে, না প্রতারণা বলা হবে?

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১:৪১

আমাদের দেশে এবং ভারতের আইনে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে যৌন মিলনকে ধর্ষণ হিসাবে গণ্য করা হয়। পৃথিবীর অন্য কোন দেশে এই ধরণের বিধান আছে বলে আমার মনে হয় না।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ, চীন ও ভারত: বিনিয়োগ, কূটনীতি ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৫:১০


প্রতিকী ছবি

বাংলাদেশের বর্তমান আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সমীকরণ নতুন মাত্রা পেয়েছে। চীন সফরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ ও আর্থিক প্রতিশ্রুতি নিয়ে ফিরছেন, যা দেশের অর্থনীতির জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×