somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুরআনে ঈসা আলাইহিস সালাম

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আল্লাহ্‌ তাঁর সৃষ্ট মানবজাতির মধ্য থেকে কিছু ব্যক্তিকে তাঁর বাণী প্রচারের জন্য মনোনীত করেছেন। এরাই হচ্ছেন—নবী ও রাসূল। রাসূলগণের মর্যাদা নবীগণের উপরে। রাসূলদের মধ্য থেকে পাঁচজনকে সবিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছে। এদেরকে বলা হয়—উলুল আযম (সবরকারী)। ঈসা আলাইহিস সালাম এমন রাসূলদের একজন। কুরআনে এসেছে: "যখন আমি নবীগণের কাছ থেকে, আপনার কাছ থেকে এবং নূহ, ইব্রাহীম, মূসা ও মরিয়ম তনয় ঈসার কাছ থেকে অঙ্গীকার নিলাম। তাদের কাছ থেকে সুদৃঢ় অঙ্গীকার নিলাম।"[সূরা আহযাব, আয়াত:৭]

আল্লাহ্ আদমকে সৃষ্টি করেছেন পিতামাতা ছাড়া। হাওয়াকে সৃষ্টি করেছেন আদমের পাঁজরের হাঁড় থেকে। সকল বনী আদমকে সৃষ্টি করেন পিতামাতার মাধ্যমে। আর নবী ঈসা আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করেছেন শুধু মাতার মাধ্যমে। তাঁর মা হচ্ছেন- মারিয়াম আলাইহিস সালাম। একজন সতী-সাধ্বী ও পুত-পবিত্র নারী। কুরআনে কারীমে যাকে মুমিনদের আদর্শ হিসেবে পেশ করা হয়েছে। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: "আর উপমা পেশ করেছেন মরিয়ম বিনতে ইমরানের; যে তার লজ্জাস্থানকে হেফাযত করেছে। আমি এর মধ্যে আমার রূহ থেকে ফুঁকে দিলাম। সে ছিল তার প্রতিপালকের বানীসমূহ ও কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাসী। সে ছিল ইবাদতগুজারদের দলর্ভুক্ত।"[সূরা তাহরীম, আয়াত: ৬৬] সম্মানার্থে আল্লাহ্ তাআলা তাঁর সৃষ্টি এ রূহকে নিজের দিকে সম্বোধিত করে 'আমার রূহ' বলেছেন।

আল্লাহ্ তাঁর এ মহান নবীর জন্মদাত্রী হিসেবে এ মহীয়সী নারীকে মনোনীত করেন। পিতার মাধ্যম ব্যতীত শুধু মায়ের মাধ্যমে এ নবীকে দুনিয়াতে পাঠাতে চান। তাঁর মহান ক্ষমতা ও কুদরত দেখানোর জন্য। সে প্রসঙ্গে কুরআন বলছে: "(স্মরণ কর) যখন ফেরেশতাগণ বলল, ‘হে মারিয়াম! নিশ্চয় আল্লাহ নিজের পক্ষ থেকে তোমাকে একটি কালেমা (দ্বারা সৃষ্ট সন্তানে)র সুসংবাদ দিচ্ছেন; যার নাম হবে মসীহ, ঈসা বিন মারিয়াম। সে হবে ইহকাল ও পরকালে সম্মানিত এবং নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাদের অন্যতম। সে দোলনায় থাকা অবস্থায় ও পরিণত বয়সে মানুষের সাথে কথা বলবে এবং সে হবে পুণ্যবানদের একজন। সে বলল: 'হে আমার প্রতিপালক! কেমন করে আমার সন্তান হবে? অথচ কোন পুরুষ আমাকে স্পর্শ করেনি।' তিনি (আল্লাহ) বললেন, এভাবেই আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। তিনি যখন কিছু (সৃষ্টি) করার সিদ্ধান্ত নেন তখন বলেন: 'কুন' (হও), আর তখনই তা হয়ে যায়।"[সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৪৫-৪৭]

তাঁর অলৌকিক এ জন্মগ্রহণে যখন সমাজের লোকেরা তাঁর মায়ের প্রতি অপবাদ আরোপের উপক্রম হল তখন আল্লাহ্ নবজাতক শিশুর মুখে ভাষা ফুটিয়ে দিলেন। সে শিশু নিজ মায়ের পবিত্রতা ঘোষণা করল। এভাবে আল্লাহ্ তাআলা মোজেজার মাধ্যমে তাঁর মায়ের পবিত্রতা সাব্যস্ত করলেন। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: "হে হারূণ-ভাগিনী, তোমার পিতা অসৎ ব্যক্তি ছিলেন না এবং তোমার মাতাও ব্যভিচারিনী ছিল না। তখন সে হাত দিয়ে সন্তানের দিকে ইশারা করল। তারা বলল: আমরা কোলের শিশুর সাথে কিভাবে কথা বলব? সন্তান বললঃ আমি আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী বানিয়েছেন।"সূরা মারিয়াম, আয়াত: ২৮-৩০] এ নবজাতক শিশুর সর্বপ্রথম বক্তব্য ছিল- 'আমি আল্লাহ্র বান্দা'। এর দ্বারা আল্লাহ্র পুত্র হওয়ার দাবীকে নাকচ করে দেয়া হয়।

তদুপরি ইহুদী ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা ঈসা আলাইহিস সালামের এ ব্যাপারে মতভেদ করে। তাদের কেউ বলে: তিনি আল্লাহ্র সন্তান। কেউ বলে: তিনি তিনজনের তৃতীয় জন। কেউ বলে: তিনিই আল্লাহ্। কেউ বলে: তিনি আল্লাহ্র বান্দা ও রাসূল। তাদের শেষোক্ত অভিমতটিই সঠিক। কুরআন এটাকে সাব্যস্ত করেছে। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: "এই হল মারিয়াম তনয় ঈসা (এর বৃত্তান্ত)। (আমি বললাম) সত্য কথা; যে বিষয়ে তারা মতভেদ করছে। সন্তান গ্রহণ করা আল্লাহর জন্য সীমীচীন নয়। তিনি পবিত্র হোন। তিনি যখন কিছু সৃষ্টি করার সিদ্ধান্ত নেন তখন বলেন: 'কুন' (হও); তখন তা হয়ে যায়। নিশ্চয় আল্লাহ আমার প্রতিপালক ও তোমাদের প্রতিপালক, সুতরাং তোমরা তাঁর উপাসনা কর। এটাই হল সরল পথ। অতঃপর তাদের দলগুলো নিজেদের মধ্যে মতানৈক্য করল। সুতরাং মহাদিবস আগমনকালে কাফেরদের জন্যে রয়েছে শাস্তি।"[সূরা মারিয়াম, আয়াত: ৩৪-৩৭] আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেন: "তারা বলে: 'রহমান' সন্তান গ্রহণ করেছেন! তোমরা তো এক জঘন্য কথার অবতারণা করেছ। এ কথার কারণে আকাশমণ্ডলি যেন চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে, পৃথিবী যেন ফেটে যাবে এবং পর্বতগুলো যেন ধ্বসে পড়বে। যেহেতু তারা 'রহমান'-এর প্রতি সন্তান আরোপ করেছে। অথচ 'রহমান'-এর জন্য সন্তান গ্রহণ করা সমীচীন নয়। আকাশমন্ডলি ও পৃথিবীতে এমন কেউ নেই, যে রহমানের নিকট দাসরূপে উপস্থিত হবে না।"[সূরা মারিয়াম, আয়াত: ৮৮-৯৩]

আল্লাহ্ তাআলা ঈসা আলাইহিস সালামের উপর ইঞ্জিল কিতাব নাযিল করেছেন। তাঁকে অনন্য কিছু মোজেজা দান করেছেন। তিনি মাটি দিয়ে পাখির আকৃতি বানিয়ে সেটাতে ফুঁ দিলে পাখি হয়ে যেত। তিনি জন্মান্ধকে সুস্থ করতে পারতেন। কুষ্ঠ রোগীকে ভাল করতে পারতেন। মৃত মানুষকে আল্লাহ্র ইচ্ছায় জীবিত করতে পারতেন। কেউ তার ঘরে কী খেয়েছে এবং পরে খাওয়ার জন্য কী সংরক্ষিত রেখেছে সে সম্পর্কে অবহিত করতে পারতেন। এ সম্পর্কে সূরা আলে ইমরানে বিস্তারিত বর্ণনা এসেছে।

এ মোজেজাগুলো দিয়ে তিনি মানুষকে এক আল্লাহ্র ইবাদতের দিকে আহ্বান করেছেন। আল্লাহ্র সাথে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করা থেকে বারণ করেছেন। তিনি তার উম্মতকে নিজের উপাসনা করা কিংবা তার মা মারিয়াম আলাইহিমুস সালামের উপাসনার দিকে আহ্বান করেননি। সে প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তাআলা বলেন: "যখন আল্লাহ বললেন: হে ঈসা ইবনে মরিয়ম! তুমি কি লোকদেরকে বলেছ যে, আল্লাহকে ছেড়ে আমাকে ও আমার মাতাকে উপাস্যরূপে গ্রহণ কর? ঈসা বলবেন; আপনি পবিত্র হোন! যা বলার কোন অধিকার আমার নেই তা আমি কিভাবে বলি? যদি আমি বলতাম, তবে তো আপনি অবশ্যই সেটা জানতেন। আমার মনে কী আছে তা আপনি জানেন, আপনার মনে কী আছে তা আমি জানি না। নিশ্চয় আপনিই গায়েবী বিষয়ে জ্ঞানবান।"[সূরা মায়িদা, আয়াত: ১১৬]

তার উম্মতের একদল পথভ্রষ্ট তাঁকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিলে আল্লাহ্ তাঁকে তাদের থেকে আড়াল করে আসমানে উঠিয়ে নিয়ে যান। কেউ তাকে শুলে চড়াতে সক্ষম হয়নি। কিয়ামতের আগে তিনি শেষ নবীর উম্মত হিসেবে বায়তুল মোকাদ্দাসে নাযিল হবেন।

তিনি তাঁর পূর্ববতী নবীগণ ও কিতাবসমূহকে সত্যায়ন করেছেন এবং শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমনের সুসংবাদ বার্তা দিয়ে গেছেন। সে সম্পর্কে কুরআন বলে: "স্মরণ করুন, যখন মরিয়ম-তনয় ঈসা বলল: হে বনী ইসরাইল! আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর প্রেরিত রাসূল, আমার পূর্ববর্তী তওরাতের সত্যায়নকারী এবং আমি এমন একজন রাসূলের সুসংবাদদাতা, যিনি আমার পরে আগমন করবেন। তাঁর নাম আহমদ। অতঃপর যখন তিনি সুস্পষ্ট প্রমাণাদি নিয়ে আগমন করলেন, তখন তারা বলল: এ তো এক প্রকাশ্য যাদু।"[সূরা সফ্ফ, আয়াত: ৬] তাই ইঞ্জিলের অনুসারীদের উচিত তাদের নবীর এ সুসংবাদকে বিশ্বাস করে আখেরী নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপরও ঈমান আনা ও তাঁর শরিয়তকে মেনে চলা। যেমনিভাবে মুসলমানগণ সকল নবীর প্রতি ঈমান আনে। মুসলমানদের ঈমানের অপরিহার্য রুকন বা স্তম্ভ হচ্ছে- সকল রাসূলের প্রতি সমানভাবে ঈমান আনা। আল্লাহ্‌ই তাওফিকদাতা।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১:১০
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×