শাইখ বিন বাযের সাথে ঈদ উৎযাপন
মাননীয় শাইখ বিন বায (রহঃ) এমন একজন ব্যক্তি যিনি দুনিয়ার উপর আখেরাতকে প্রাধান্য দিতেন সক্ষম হয়েছেন। তার গোটা জীবনটি কেটেছে অক্লান্ত পরিশ্রম, আত্মত্যাগ, অবিরাম সংগ্রাম ও সার্বক্ষণিক আমলের মধ্য দিয়ে। তাঁর নিকট অফিসিয়াল কাজের দিন অথবা বৃহষ্পতিবার, শুক্রবার, সরকারী ছুটি ও ঈদের দিনের মধ্যে কোন পার্থক্য ছিল না। বরঞ্চ এমনও ঘটত ছুটির দিনে তাঁর কাজের পরিধি ও দায়দায়িত্ব আরো কয়েকগুণ বেড়ে যেত। ঈদের দিনে তিনি অন্যান্য দিনের মত কর্মব্যস্ত থাকতেন। মানুষের সাথে সাক্ষাত দিতেন। টেলিফোনে, পত্র মারফত অথবা সরাসরি লোকদের ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক সুবিধা অসুবিধার কথা শুনতেন। ১৪০৪ হিজরীর ঈদের কথা বলছি: তিনি ঈদের রাতে ঘুমাননি। সারারাত কিয়ামুল লাইল আদায় করেছেন। যেহেতু ঈদের ঘোষণা এসেছে অনেক বিলম্বে। কিয়ামুল লাইলের পর লোকদের সাথে সাক্ষাত দিয়েছেন। ফযরের আযানের পর নামায আদায় করেছেন। এরপর বাসায় গিয়ে ঈদের প্রস্তুতি নিয়ে ঈদের নামাযে গিয়েছেন। ঈদের নামাযের পর এশা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে তিনি ব্যস্ত ছিলেন। কখনো টেলিফোনে মানুষের প্রয়োজনের কথা শুনেছেন। কখনো কোন ফতোয়া জিজ্ঞেসকারীর ফতোয়ার জবাব দিয়েছেন। কখনো ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়কারীদের সাথে সময় দিয়েছেন। কখনো মানুষের অভিযোগ, সমস্যা, দাবী দাওয়া ও সুপারিশের আবেদন শুনেছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা দেখেছি তিনি এক মূহূর্তের জন্য রাগ করেননি, বিরক্ত হননি, কাউকে ধমক দেননি। বরং হাসিমুখে, উষ্ণ অভ্যর্থনাসহ সবাইকে গ্রহণ করছেন। তাঁর কাছে আমীর, উজির, আত্মীয়, অনাত্মীয়, পরিচিত, অপরিচিত এর মধ্যে কোন পার্থক্য ছিল না। তিনি বয়োবৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও এবং ঐদিন সম্পূর্ণরূপে ঘুম না যাওয়া সত্ত্বেও এভাবে দিনটি কাটিয়েছেন। এটাই ছিল তাঁর জীবনপদ্ধতি, তাঁর আখলাক। যে ব্যক্তি নেককার, আমলদার, দুনিয়ার উপর আখেরাতকে অগ্রাধিকারদানকারী আলেমদের অনুসরণ করতে চান তিনি এই জীবনপদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন।
দ্বিতীয় উদাহরণ হচ্ছে- ১৪০৫ হিজরীর ঈদ। ফযরের আধা ঘন্টা আগে থেকে তিনি মানুষের সাথে সাক্ষাত করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। তাঁর মজলিস ছিল লোকে লোকারণ্য। এভাবে সরাসরি সাক্ষাত অথবা টেলিফোন যোগাযোগ এশা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এশার পূর্বে কুয়েতের আলেমে দ্বীন শাইখ আব্দুল্লাহ আলমুতাওয়ে এসে বললেন: শাইখ আমি কি এশার পরে আসব? শাইখ বিন বায বললেন: অবশ্যই, অবশ্যই। শাইখ আব্দুল্লাহ বললেন: হয়তো আপনি বিশ্রাম নিবেন। শাইখ বিন বায বললেন: আপনার সাথে বসতে পারার মধ্যে আমার প্রশান্তি। এশার পর তাঁরা দুইজন রাত সাড়ে এগারটা পর্যন্ত কথাবার্তা বললেন। মানুষ যদি নিজ চোখে এগুলো না দেখত তাহলে হয়তো এসব কথা বিশ্বাস করত না। অথবা বলত এসব বাস্তব চিত্রের অতিরঞ্জিত প্রচার, এ অকান্ত পরিশ্রম বিশ্বাসযোগ্য নয়। কিন্তু এটাই ছিল তাঁর প্রকৃত জীবন ও কর্ম।
সূত্র: http://www.binbaz.org.sa/mat/21254
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০২২ রাত ১:২৫