কাহিনীর শুরু ১৯৭৭ সালে,এক তরুণ যুবক অশোক(ইরফান খান) ট্রেনে করে দেখা করতে যাচ্ছেন দাদার সাথে।ভ্রমণের অবসরে পড়ছেন নিকোলাই গোগলের বই।যাত্রাপথে এক উচ্ছল বৃদ্ধ তাকে উপদেশ দেন যৌবনের আলোয় বিশ্ব দেখার।তখনি ঘটে ভয়াবহ ট্রেন এক্সিডেন্ট।ঘরে বসে বই পড়ে দুনিয়া ভ্রমণের মন্ত্রে বিশ্বাসী অশোকের জীবনদর্শন পালটে যায় তাতে।হয়তো কিছুটা নিরাপদ জীবনের আশায়,হয়তো পৃথিবী দেখার আশায় অশোক পাড়ি জমান বিদেশে।গল্পের পরবর্তী অংশে আমরা দেখি আমেরিকায় পিএইচডিরত অশোক বিয়ে করে নিয়ে যান অসীমা(টাবু) কে।পরিবার পরিজনহীন ঠাণ্ডায় জমাট পরিবেশে শুরু হয় নবদম্পতির ঘরকন্না।আর দশটা বাঙালি বধূর মতো চলতে থাকে অসীমার সংসার।এক পর্যায়ে জন্ম নেয় গোগল।সংগ্রামী এক প্রতিভাবানের নামে নামকরণের এই বিড়ম্বনা এবং পরবর্তীতে তার মধ্যেই প্রেরণা খুঁজার চেষ্টা নিয়েই মুভিটার নাম The Namesake.
ছবির কাহিনী এরপর এগিয়ে যায় দুই প্রজন্মের ব্যবধান এবং উপমহাদেশীয় অস্তিত্বের টানাপড়েন নিয়ে।গোগলের আরেক বোন হয়,নাম সোনিয়া।আমেরিকান পরিবেশে বড় হওয়া দুই ভাইবোন বেছে নেয় নিজ নিজ জীবনসঙ্গীকে।চিরায়ত বাঙালি পরিবারের মানসিক দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে ফুটে উঠে এরপর।আটপৌরে সনাতন পরিবেশে মানুষ হওয়া অশোক অসীমার জন্য ভিনদেশি মানুষগুলোকে আপন করে নেওয়া সহজ হয় না।আমাদের পরিবেশে যেখানে ছেলে মেয়ের হাত ধরাধরি করে হাটাও অনেকে বেয়াদবির চোখে দেখেন অনেকে সেখানে পাশ্চাত্য অবাধ মেলামেশা মেনে নেওয়া কঠিন বৈকি!!
সম্পর্কের সংঙ্গায়ন অসাধারণভাবে চিত্রায়িত হয়েছে ছবিটায়।গোগলকে দেখা যায় এক বাঙালি বংশোদ্ভূত ফ্রেঞ্চ মেয়েকে বিয়ে করতে,আবার সোনিয়া বেছে নেয় এক আমেরিকান কে।দুজনেই বাঙালি হওয়ার পরেও বেড়ে উঠার পরিবেশের ভিন্নতার দরুন গোগল তার স্ত্রীকে নিয়ে সুখী হতে পারে না আবার সোনিয়াকে দেখা যায় নিজের আশপাশ থেকে এক ভিনদেশিকে বেছে নিয়েও সুখী থাকতে।আমরা বুঝি শুধুমাত্র আঞ্চলিকতা বা জাতীয়তা নয় মানুষের সম্পর্কগুলো গড়ে উঠে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং মানসিক নৈকট্য থেকে।সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না কারো দেশ,বর্ণ,গোত্র বা বংশপরিচয়।
ছবিটা দেখে মনে হয়েছে অশোক অসীমার সংকট প্রতিটা প্রবাসী পরিবারের নৈমিত্তিক উপাখ্যান।প্রতি বছর দেশ থেকে অসংখ্য মেধাবী পাড়ি জমান বিদেশে।বৈদেশিক নিরাপদ পরিবেশ অথবা পরবর্তী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে অনেকেই আর দেশে ফিরেন না।আমরা বড় হয়েছি এই মাটিতে,হয়তো এখানকার সব সংস্কৃতি,সব আচার আধুনিকতার সাথে খাপ খায় না,তারপরেও এতেই আমাদের বেড়ে উঠা এতেই আমাদের ভালোবাসা।আমার বংশধররা যখন ভালবাসবে অন্য মাটিকে,অন্য পরিবেশকে,গড়ে তুলবে আধুনিক সব সম্পর্ক তখন হয়তো একবুক কষ্ট নিয়ে প্রহর শেষে অসীমার মতো ফিরে আসতে হবে নিজের দেশে।তাই প্রবাস জীবন নিয়ে চিন্তা করার আগে মাস্ট সি মুভি The Namesake.
পুনশ্চ: টাবুর অনবদ্য অভিনয় মনে রাখার মতো।ইরফান খানও তাঁর জায়গায় ছিলেন সাবলীল।অনেক রোমান্টিক দৃশ্যের মধ্যে ভালো লেগেছে তাজমহলের পাড়ে এই দম্পতির হাত ধরে বসে থাকার দৃশ্য,নিজেকে ঐ জায়গায় চিন্তা করার মজাই ছিলো অন্যরকম।
ডাউনলোড লিংক
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১২ রাত ৮:৪৩