আজ ১৬ ডিসেম্বর। আমাদের মহান বিজয় দিবস। মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর দিন। লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা অটুট ও অক্ষুণí রাখতে আবার নতুন করে শপথ নেয়ার দিন। শোষণ ও বৈষম্যের কাছে মাথা নত না করার দিন। কালের পরিক্রমায় প্রতি বছর এ দিনটি একবার ঘুরে এলেও এবার দিনটির রয়েছে বিশেষ তাৎপর্য। বিশেষ পেক্ষাপট। দীর্ঘ দিন থেকেই বিভিন্ন মহল ও প্রান্ত থেকে আমাদের বুকের তাজা রক্তে অর্জিত প্রিয় স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে বারবার। এখন আমাদের দেখিয়ে দেয়ার সময় এসেছে লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না। নয় মাস রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র লড়াইয়ের পর ১৯৭১ সালে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে বিশ্বমানচিত্রের বুকে স্খান করে নিয়েছে যে বাংলাদেশ নামের দেশ, তা কোনো দিন আর মুছবার নয়। বাংলাদেশী জাতি হিসেবে আমাদের গর্ব ও অহঙ্কার করার মতো যে ক’টি দিন আছে তার মধ্যে সেরা এই দিন। জীবনের মায়া উপেক্ষা করে যেসব বীর সেনানি সে দিন দেশমাতৃকার টানে অস্ত্র হাতে লড়াই করে জীবন দিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ উপহার দিয়ে গেছেন, জাতি আজ তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে।
বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদ জাতীয় স্টেডিয়ামে উপস্খিত থেকে কুচকাওয়াজ উদ্বোধন ও সালাম গ্রহণ করবেন।
যে মোটা ভাত আর মোটা কাপড়ের জন্য ৩৭ বছর আগে বাংলাদেশের মুক্তিপাগল মানুষ প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিল, তা যেন আজো স্বপ্নই রয়ে গেছে।
১৯৭০ সালের নির্বাচনের জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখিয়ে তারা ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য। বঙ্গবু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভকারী আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে টালবাহানা শুরু করে শাসক গোষ্ঠী। ফলে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে এ অঞ্চল। একাত্তরের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ জনগণের স্বাধীনতার স্পৃহাকে প্রবল করে তোলে। ‘এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বঙ্গবুর এ ঘোষণা মুক্তিপাগল জাতির মনে বিদ্রোহের আগুন ধরিয়ে দেয়। জনতার উত্তাল তরঙ্গে ঢাকা যখন অগ্নিগর্ভ, তখন পাকিস্তানি শাসকচক্র আমাদের মুক্তির স্পৃহাকে সামরিক বুটের তলায় নিশ্চিহ্ন করার পথ বেছে নেয়। ২৫ মার্চের রাতে নিরস্ত্র মানুষের ওপর অকস্মাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। শুরু হয় হত্যাযজ্ঞ। ঘুমন্ত মানুষের ওপর এভাবে রাতের আঁধারে ঝাঁপিয়ে পড়ে নির্বিচারে হাজার হাজার মানুষ হত্যার ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে পড়ে গোটা বিশ্ব। পরক্ষণেই সম্বিত ফিরে আসে সময়ের সেই অমোঘ ঘোষণায় : ‘আমি মেজর জিয়া বলছি’। ২৬ মার্চ রাতে চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জিয়াউর রহমানের এ ঘোষণায় দিকনির্দেশনা খুঁজে পায় দিশেহারা জাতি। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ; বৈষম্যের শৃঙ্খল ভেদ করে বিজয় ছিনিয়ে আনার সংগ্রামের চূড়ান্ত অধ্যায়। শত্রু আর রক্ত মাড়িয়ে মুক্তিসেনারা এগিয়ে চলেন বিজয়মিনারের দিকে। দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিসংগ্রামের পর একাত্তরের এই দিনে হানাদার বাহিনী পরাজয় মেনে আত্মসমর্পণ করে। শুরু হয় স্বাধীন বাংলাদেশের পথচলা।
সূত্র: নয়াদিগন্ত, ১৬ই ডিসেম্বর, ২০০৮