২য় পর্বে অন্যসময় অ্যালবামে প্রকাশিত গানগুলোর লিরিক দেয়া হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় এবারে অনিকেত প্রান্তর (২০০৬) অ্যালবামে প্রকাশিত গানগুলোর(১০টি) লিরিক দেয়া হল।
("তোমাকে" ব্যাতিত সবগুলো গানেরই লেখক রুম্মান আহমেদ)
১) লীন
লীন জড়তায়, নীল আকাশে
ঝড় বাঁধা পড়ে, ভাঙা মানুষে..
ভিজে সময় একা আঁধারে
ভেসে গেছে রোদের রেখা
ভেসে গেছে, রোদে ভেসে গেছে..
দূর বহুদূর থেমে থাকা আকাশে..
..লীন আকাশে;
সাদাকালো মেঘ ভেসে যায় হারিয়ে..
..নীলে হারিয়ে;
ধুলো জমা স্মৃতি উড়ে যায় বাতাসে..
..ঝড়ো বাতাসে;
ঝড় বাঁধা পড়ে ভাঙা মানুষে।
---------------------------------------
২) স্মৃতিস্মারক
তোমার ঘরে যত কথায়, যত সুরে
আমাদের এ জ্ঞানের শহর শব্দ করে;
আলো ভেঙে অন্ধকারের মাঝে ফিরে যেতে
পুরনো সেই দিনের কথায় স্বপ্নাগারে।
তোমার ভিড়ে যত আলোয়
তবুও নিভে পড়ে আছি আমরা যারা;
অতীত হয়ে তোমার ঘরে
কথায় সুরে ইচ্ছে করে ফিরতে,
পুরনো সেই দিনের কথায় স্বপ্ন হয়ে তোমায় ছুঁতে,
আমার ভেতরে অতীত ধরে হেঁটে হেঁটে ইচ্ছে করে হারাতে।
তোমাদের কাছে হাজার শব্দে ভেসে,
আমরা এসে আজ ভিড়ে মিলে মিশে;
তবুও ঝড়ের বদ্ধঘরে
শব্দ ভেঙে ভেঙে অতীত ছায়া স্পর্শ করে।
চেনা চেনা চোখে ছায়া-রং হারিয়ে যায়,
নিভিয়ে দেয় সময় কত স্মৃতি,
তবুও আমি তোমায় খুঁজে পেতে চাই
পুরনো সেই দিনের সুরে, ফেলে আসা রূপকে।
গানের আমি তুমি হারিয়ে যাব
মেঘের পরে, মেঘে স্মৃতির ঘরে
সময় ভেঙে, ভেঙে ভেঙে
অন্য রোদের অন্য সময়ে
---------------------------------
৩) ধূসর সময়
নোনা স্বপ্নে গড়া তোমার স্মৃতি;
শত রঙে রাঙ্গিয়ে মিথ্যে কোনো স্পন্দন..
আলোর নিচে যে আঁধার খেলা করে,
সে আঁধারে শরীর মেশালে..
আজ আমি ধূসর কি রঙিন সময়ে পথ হারাই তোমাতে..
জীবনের কাঁটাতারে তুমি অন্ত্যমিলের অপুর্ণতায়,
বেওয়ারিশ ঘুড়ি উড়ে যাও অনাবিল আকাশের শূন্যতায়..
তবুও আমি কি খুঁজি মানুষের বিষাদের চোখে?
কোথায় আলোর উৎসবে স্বপ্নের প্রতিবিম্ব ভাঙে?
একা একা আমি থাকি দাঁড়ায়ে,
স্মৃতির ঝড়ো বাতাসে দু'জনার শরীর মেশাই..
--------------------------------------------------
৪) পাথর বাগান
সমাধির বিশাল প্রান্তরে একা জেগে আমাদের তথাকথিত সভ্যতার যীশু।
ধার করা কবিতার শ্যাওলা মাখা স্মৃতির পাথরে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে এ মূল্যবোধ।
সাদা ক্রুশের মিছিল জুড়ে মিথ্যে অহংকার ভুল নায়কের ছদ্মবেশে নেয় নিঃশ্বাস।
সম্মোহিত মৃত প্রজন্ম ফিরে আসে,ফিরে আসে জন্মান্তরের বিবর্তনে।
আড়ালে হেসে যায় যুদ্ধের দেবতা, ধ্বংসের সুর তোলে আবারও;
পৃথিবীর বুকে আবাস গড়ে নতুন কোনো পাথর বাগান।
তোমাদের পাথর বাগানের সবুজ ঘাসে মিশে থাকে কত যুগের নষ্ট গল্প;
কত পতাকার রঙ ধুয়ে যায় অভিশাপে, আকাশের সাদা অনুভুতিতে শুধু ঘৃনা..
------------------------------------------------------------
৫) শহীদ সরণি
ভোর হোক তোমার জানালায়,
ভোর হোক ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া শহরে।
শহীদ সরণির পীচঢালা পথে
রৌদ্র আসুক আশাবাদী অক্ষর হয়ে।
বেঁচে থাকার উৎসাহে তোমার রাইফেল বিনীত হোক
মানুষের অনন্তকালের ইতিহাসের পায়ে।
তোমার স্থল-মাইন আবাদি মাটির প্রাণরসে ভিজে কান্নাসিক্ত পৃথিবী হোক..
তোমার জানালায় মৃত শিশু, পড়ে থাকে যুদ্ধাহত সময়ের বাসি রোদ
কবির মত দুস্থ উদার হোক তোমার ব্যারাকে ব্যবহৃত প্রতিটি সৈনিক হৃদয়..
তোমার বিনিদ্র প্রহরার রাত
শব্দ পাক মানুষের গরাদ ভাঙার;
ভোর হোক তোমার অন্ধ চোখে,
যুদ্ধের অহর্নিস ধ্বংসস্তূপ, ইতিহাস..
-------------------------------------
৬) ছায়ার নিনাদ
(এটি একটি ইন্সট্রুমেন্টাল ট্র্যাক)
-----------------------------------
৭) ঘুনে খাওয়া রোদ
চারটি দেয়াল ক্রমশ সরে আসে বৃত্তের ভেতরে,
কমে আসে আলো বস্তুর চারিপাশ এখন নীরব।
রঙ মূলত সাদা কালো..
অন্ধকারের ছায়া অপছায়া বোধ অথবা খয়েরী নীল আকাশ;
অনেকটা ঘুনে খাওয়া রোদ লেগে থাকে আকাশের গায়,
সময়ের রঙহীন ক্যানভাস আমার জানালায়..
স্বপ্ন এখন এগারো সাতাশ, শুন্যের ওপর দেখো,
দেখো দাঁড়ায় সম্মোহিত শহর, বাতাসের চোখে আজ..
চোখে আজ নেশার উৎকট আলো।
রঙ মূলত সাদা কালো..
অন্ধকারের ছায়া অপছায়া বোধ অথবা খয়েরী নীল আকাশ;
অনেকটা ঘুনে খাওয়া রোদ লেগে থাকে আকাশের গায়,
বিবর্ণ সময়ের জানালায় আজ ঘুনে খাওয়া রোদ..
আমার শরীর মানে আমি ও ছায়া,
ছায়া মানে মৃত রোদ আত্মাহুতি দেয় তাদের আলোর যৌবন সারাক্ষণ,
মেঘে মেঘে ঢাকা পড়ে চেনা অচেনা কত মুখ, ছায়ার শরীর;
ছায়ায় বাঁচে আলোর ভয়,
জানালায় আজ ঘুনে খাওয়া রোদ..
---------------------------------------
৮) তোমাকে
তোমাকে আলো ভেবে চোখ চেয়ে থেকেছি আঁধারে,
নীরব থেকে ডেকেছি আমার একা নির্জনে;
স্বপ্নগুলো হারিয়ে ফেলে চেয়েছি যেতে তোমার আলোতে..
তোমাকে যখনই চেয়েছি সত্তার অন্তরালে সঙ্গোপনে,
তখনই জেনেছি আলো হয়ে আছো তুমি আমার আঁধারে।
আর যখনই ভেবেছি বাঁধবো সীমা চারপাশে তোমাকে ঘিরে,
তখনই ফেলেছি হারিয়ে তোমাকে আপন আঁধারে।
যেখানে স্বর্গ ভাসে,
তোমার আমার আকাশ সেখানে অন্য রঙে আঁকা আয়নায় মৃত জলছবি,
সেই ছবিতে অন্ধ কবি আমি (এক) হাতড়ে ফিরি আলোর সিঁড়ি।
----------------------------------------------------------------------
৯) গন্তব্যহীন
আবার দেখা দেয় আলো,
অন্ধকারের আছে নিজস্ব শরীর..
আলোর স্বপ্নগুলো লেখা আছে হাজার বছরের গায়,
আলোর পৃথিবী কোথায়??
ভাবনার রুদ্ধ ঘরে একা বসে ভাবি,
অন্ধকার দূরের দিকে খুঁজি তোমাকে।
আকাশের শেষে কি থাকে?
কোথায় পড়ে আছে আমার শরীর?
অন্ধ চোখে আলো কি শরীর পায়?
এখানে আমি বিকলাঙ্গ পাথর..
তোমার সাজানো দৃশ্যে হাঁটছি গন্তব্যহীন,
সম্মোহিত সময়ে রাত্রির নক্ষত্রকে খুঁজি অসীম শূন্যতায়;
এখানে পড়ে থাকে পাথরের মত স্থবির মানুষ শেখানো বর্ণনায়..
দৃশ্যকে ভাবি পৃথিবী,
স্বপ্নকে ভাবি তুমি,
মৃত্যুকে মনে হয় গভীর ঘুম,
আঁধারকে ঈশ্বর ভাবি..
সকল আলোর প্রথম উৎস কি অনিশ্চিত আঁধারে?
তোমাকে এঁকেছি প্রতিটি দৃশ্যের রেখাবৃত্তের মাঝে,
তোমার স্বপ্নকে আমি দিয়েছি প্রাণ,
আমার স্বপ্নে তোমার করাঘাত..
নিজেকে হয়না চেনা আজও,
শুধু নেমেছি অতলে; এখানে একা বসে কতকাল?
মৃত রাত্রিকে ডেকে দেয় বীভৎস আমার মুখ;
অশরীর আমি, নিজেকে আজও ভয়।
-----------------------------------------
১০) অনিকেত প্রান্তর
তবুও এই দেয়ালের শরীরে
যত ছেঁড়া রঙ, ধুয়ে যাওয়া মানুষ, পেশাদার প্রতিহিংসা,
তোমার চেতনার যত উদ্ভাসিত আলো;
রঙ আকাশের মতন অকস্মাৎ নীল,
নীলে ডুবে থাকা তোমার প্রিয় কোন মুখ,
তার চোখের কাছাকাছি এসে কেন পথ ভেঙে..
দুটো মানচিত্র এঁকে দুটো দেশের মাঝে,
বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ..
তবুও এইখানে আছে অবলীল হাওয়া
জানালা বদ্ধ ঘরে আসে যায়,
দেয়াল ধরে বেঁড়ে ওঠে মধ্যরাত,
তোমার ছায়ায় জমে এসে ভয়।
আলোকে চিনে নেয় আমার অবাধ্য সাহস,
ভেতরে এখন কি নেই কাপুরুষ অন্ধকার একা?
তোমাকে ঘিরে পথগুলো সব সরে যায়,
রাত্রির এই একা ঘর ঝুলে আছে শূন্যের কাঁটাতারে..
দুটো মানচিত্র এঁকে দুটো দেশের মাঝে,
মিশে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ..
তবুও এই দুটি কাঁটাতার এ শহরের মত করে ভিড়ে ভরে গেছে,
ঘুম আমার অচেতন কখন বেওয়ারিশ মাটির কাছে এসে
সময় কে এপিটাফ ভেবে হাঁটু গেঁড়ে বসে..
তবুও এখানে বাতাস আসে দুরত্বের উৎসাহে,
শরৎ জমে আছে ঠাণ্ডা ঘাসে;
তোমার চোখের মাঝে দূরের একা পথ
এখানে ভাঙে না দুটো দেশে।
মেঘের দূরপথ ভেঙে,
বুকের গভীর অন্ধকারে আলোর নির্বাসন
স্মৃতির মতন অবিকল স্বপ্নঘর বাঁধা স্মৃতির অন্ধ নির্জনে
সময় থেমে থাকে অনাগত যুদ্ধের বিপরীতে।
এখানে সরণির লেখা নেই নাম কোন শহীদ স্মারকে,
তোমার জন্য জমা থাকে শুধু স্বপ্নঘর।
জানালায় ঝুলে থাকে না শূন্যতার অবচেতন,
তোমার ঘরের অন্ধ আলোয় অদেখা এখানের নির্জন অনিকেত প্রান্তর..
তবুও তোমার ভাঙা স্মৃতি, ছেঁড়া স্বপ্ন, দোমড়ানো খেলাঘর;
ছেঁড়া আকাশ, ভাঙা কাঁচে আলো আর অন্ধকার তোমার।
তোমার দেয়ালে কত লেখা,
মানুষের দেয়ালে দেয়ালে বেঁড়ে ওঠে কাঁটাতার,
এখানে এ মহান মানচিত্রের ভাগাড়।
তোমার শূন্যঘরে ভরা স্মৃতি,
জড় পাথরে লেখা নাম- শহীদ সরণি।
জানালার বাইরে ভেসে গেছে দূরের আকাশ,
বিঁধে আছি সময়ের কাঁটাতারে,
বিঁধে আছো ছেঁড়া আকাশের মত তুমি..
তোমার স্বপ্নের দলা পাকানো বাসি কবিতা নষ্ট করে
তোমার জানালার বাইরে শূন্য আকাশ তবুও অনিকেত এই প্রান্তরে..
এখানে এখনও শরতের প্রচুর বাতাসে,
সবুজের ঘ্রানে ভরে আছে অন্ধকার এ ঘর;
তোমার দেয়ালে এখন শুধু মৃত্যুর মৃত রেখাপাত..
তোমাকে কড়া নাড়ে স্মৃতিরা, ভাঙা স্বপ্ন,
ঘুমের মত নেশাময় কত কত শিশু।
কত আলোর মশাল নিভে গেছে,
নিভে গেছে কত অচেনা ভয়;
তোমাকে এখন অপরিণত এক অচেনা স্মৃতি মনে হয়।
তোমার জানালার বাইরে শূন্যে দূরের স্বপ্নঘর
ঝুলে আছি নির্জনতায়,
মৃত্যু কি অনিকেত প্রান্তর?
---------------------------------------
১ম পর্ব
২য় পর্ব
[শেষ পর্বের অপেক্ষায় থাকুন। শীঘ্রই প্রকাশিত হচ্ছে।
কেউ কোন তথ্য দিয়ে সহায়তা করলে কৃতজ্ঞ থাকব।]
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:৩১