দ্বিতীয় পর্ব শুরু করার আগে প্রথম পর্বের কিছু ফাক ফোকরের (ভুলে যাওয়া) কথা জানিয়ে দেই।
সিনেমা দেখার শুরু আমার বড় ফুপুর বাসায়। সেখানেই এক দুপুরে একটি ভিসিপির আগমন ঘটে। প্রথম যে সিনেমাটি দেখা হয়, তার নাম ছিল 'সত্যমেভ জয়তে' বিনোদ খান্না, মিনাক্ষি শেষাদ্রি, অনিতা রাজ, মাধবী, শক্তি কাপুর ও অনুমপ খের ছিলেন সে সিনেমার অভিনয় শিল্পী। এক বসায় টানা তিনটি সিনেমা দেখা হয়। দ্বিতীয়টি ছিল সুনিল দত্ত ও নতুনের 'খান্দান'। তৃতীয়টি সম্ভবত একটি বাংলা সিনেমা ছিল নাম মনে পরছে না। তারপর 'শো' চলে রাতের বেলা।
ভিডিও ভিনটেজের কথা উল্লেখ করেছি। সেখানে এলাকার কয়েকজন বড় ভাইকে পেয়েছিলাম। মঞ্জু ভাই, দুর্দান্ত ফুটবল খেলতেন তিনি। ঢাকার মাঠ কাপানো সাব্বির, মনু এরা সব এক সঙ্গে প্র্যাকটিস করতেন। তবে লেথাপড়াও সমান ভাবে চালানো কারণেই হয়তো পেশাদার ফুটবল কখনো খেলেননি। ঢাবি থেকে একাউন্টিংয়ে এম এ করছেন। অবসর সময়ে ভিনটেজে বসতেন। আমি থাকতাম ১৭ নম্বরে আর মঞ্জু ভাই থাকতেন ১৯ এ। ১৮ তে থাকতেন টিপু-শিপু দুই ভাই। এনারাও ভিনটেজে বসতেন। শেখ সাহেব বাজারের পরভেজ ভাই ছিলেন মঞ্জু ভাইয়ের স্কুল বন্ধু। আমার সিনেমা দেখার গুরু এরাই।
কিচুদিন পরে ভিনটেজে যুক্ত হন তৌফিক ভাই। ইনি তখন এমবিএ ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র। থাকতেন কলোনিতেই, সম্ভবত ৬৭ নম্বরে। তৌফিক ভাইয়ের দুই ব্যচ সিনিয়র সাব্বু ভাইয়ের সঙ্গেও পরিচয় ভিনটেজেই। বলতেই হবে, আমার মধ্যে ইংরেজি সিনেমার, ভাল সিনেমার ভুতটা অনেকটা ইনেজেক্ট করে ঢোকান তৌফিক ভাই ও সাব্বু ভাই। দুজনেই প্রচুর মুভি দেখতেন আর আমাকে দেখার উৎসাহ দিতেন।
প্রথম দেখা ইংরেজি সিনেমা সম্ভবত 'ওয়ার বাস'। ভিয়েতনাম ওয়ার নিয়ে প্রপাগান্ডা টাইপ একটা মুভি। এটা বেছে নেওয়ার কারণ হলো, কিছুদিন আগে এক বন্ধুর বাসায় 'ক্যাসেট'টি দেখেছিলাম, কিন্তু মুভিটি দেখার সুযোগ পাইনাই। যখন ফুপাতো ভাই ইংরেজি সিনেমার কথা বলেছিল, প্রথম নামটা সেটাই এসেছিল মাথায়। তবে এক কথায় ফালতু সিরনমা। তবে তখন খুব মজা পেয়েছিলাম।
যাই হোক রাত দিন সিনেমা দেখি। হিন্দ, ইংরেজি, বাংলা.. সমান তালে সবই চলে। বড় ফুপুর বড় ছেলে, ফিল্ম ফেয়ার থেকে মেম্বার হলেন। তখনো ফিল্ম ফেয়ারের ধানমস্ডি শাখা হয়নি। সোবহানবাগেই তাদের একমাত্র শাখাটি। সেই ফিল্ম ফেয়ারের গা ঘেষেই ছিল আরেকটি লাইব্রেরি, সেখানেই বসতেন এলাকার আরেক ছেলে নাম গুড্ডু। বয়সে অমার চাইতে বড় হলেও এক সঙ্গে খেলার সুবাদে নাম ধরেই ডাকতাম। পরে াবশ্য লাইব্রেরিটি লালমাটিয়ায় স্থানান্তরীত হয়।
ফুপাতো ভাই (বড়জন) ঢাকা কলেজে পরেন। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের অলোকিত মানুষ হওয়ার দলেও যোগ দিয়েছেন। গড ফাদারও সে সময়েই দেখা। সে সময়েই তার কাছ থেকেই ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা, জর্জ লুকাস, স্টিফেন স্পিলবার্গ, উডি অ্যালেনের সঙ্গে পরিচয়। সে সময়েই অন্য ভাষার মুভিও টুকটাক দেখা শুরু হয়ে গেছে। বলা বহুল্য, তারকোভস্কি, ত্রুফো আর গদারের নামের সঙ্গে পরিচয় হয়ে গেছে একই সঙ্গে। একই ভাবে প্রচুর হিন্দি সিনেমাও দেখা চলছে। আগেই বলেছি, সিনেমার সঙ্গে আমার সখ্যতা অনেক পুরোনো দিনের। বাসায় চিত্রালি, পূর্বানি দুটোই রাখা হতো। সেখানেও মাঝে মধ্যে বলিউডি তারকাদের ছবিও থাকতো। সেগুলো পড়ে পড়ে 'জ্ঞ্যান' অর্জনই ছিল আমার লক্ষ্য।
ভিনটেজ থেকে যেমন জ্বালাকার রাখ কার দু্ঙ্গা, জ্বিনে নেহি দু্ঙ্গা, ম্রায় বলবান হু ধরনের মুভি দেখেছি, একই সময়ে অর্থ, মাণ্ডি, ভবনি ভবায়ী, অর্ধসত্যও দেখেছি। মোট কথা, প্রতিদিন সিনেমা দেখতে হবে, সেটা কি দেখছি সেটা আমাদের দুই ভাইয়ের কাছে মুখ্য ছিল না। একটি বা দুটি সিনেমার টাকা দিতেন ফুপা। ফুফুও মাঝে মধ্যে টাকা দিতেন। ফুপাতো ভাই হাত খরচ পেতো। আর হাতে টাকা না থাকলে দাদির কাছে তো হাত পাতাই যায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৪৭