somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

প্রসঙ্গ: মৃতদেহ সৎকার এবং সঙ্গীতসৎকার....

২৭ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রসঙ্গ: মৃতদেহ সৎকার এবং সঙ্গীতসৎকার....

কথা সাহিত্যিক শরতচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বহু বছর আগে তার “শ্রীকান্ত” উপন্যাসে ইন্দ্রকে দিয়ে সর্বকালীন এবং সর্বজন গৃহীত একটি উক্তি করিয়েছিলেন, সেটি হলো,- ”মরার আবার জাত কি”!

মৃতদেহ সৎকার সব যুগে, সকল সভ্যতায় প্রতিটি জনগোষ্ঠির জন্য একটা সিরিয়াস কালচারাল ব্যাপার। আরো স্পেসিফিক্যালি বললে একটা ধর্মীয় ব্যাপার। অনেকে ধর্মকে অবশ্য কালচারের বাইরে রাখতে পছন্দ করবেন। সেই সৎকারের বিভিন্ন রিচুয়াল আছে, আছে অবশ্য পালনীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ।

বিশ্বজুড়ে মৃতদেহ সৎকারের অদ্ভুত কিছু রীতিঃ
মৃত্যুর কারণে প্রিয়জন হারানোর বেদনা কখনোই ভোলার না। সময়ের সাথে সাথে সেই অনুভূতি ঝাপসা হয় মাত্র, কিন্তু কখনোই মুছে যায় না। মৃত ব্যক্তি যত কাছেরই হোক না কেন, মৃত্যুর পরপরই তার দেহের সৎকারের ব্যবস্থা করতে তৎপর হয়ে ওঠে সবাই। প্রাচীন মিশরে মৃতদেহকে মমি করন সেটারো ঐতিহাসিক। সাপে কাটা মৃতদেহকে ভেলায় ভাসিয়ে দেওয়া একটা উপক্ষ্যান। আমাদের সমাজে আমরা মূলত মৃতদেহকে কবর দিতে কিংবা শ্মশানে চিতায় পোড়াতে দেখি। তবে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় মৃতদেহ সৎকারের এমন সব অদ্ভুত প্রথা প্রচলিত আছে বা ছিলো, যেগুলো সম্পর্কে জানলে গা ঘিনঘিন করা থেকে শুরু করে পুরো সমাজ ব্যবস্থার উপর রাগও উঠে যেতে পারে আপনার। বিচিত্র সেসব সংস্কৃতির কাহিনী দিয়েই সাজানো হয়েছে আজকের লেখাটি।

আকাশ-সমাহীতকরণঃ
নামটা দেখে যে কেউই দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে ভাবতে পারেন, “আকাশে তো মাটিও নাই, আগুনও নাই। তাইলে সেইখানে আবার মৃতদেহের সৎকার হয় কেমনে?” আসলে নামের মতো মৃতদেহ সৎকারের এ পদ্ধতিটি বেশ অদ্ভুত। এক্ষেত্রে মৃতদেহকে দুই ভাবে প্রসেসিং করা হয়। এক, কিমা কাটা করা, দুই, পুড়িয়ে ছাইভষ্ম করা। তারপর উঁচু পাহাড় কিম্বা গাছের মগডালে উঠে বাতাসে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো তারা হেলিকপ্টার, উড়োজাহাজ চার্টার করে আকাশ, সমুদ্রে ছড়িয়ে দেয়।

শকুনদের মৃতদেহ ভক্ষণঃ
এ প্রথাটির চর্চা করা হয় তিব্বতে। তিব্বতী ভাষায় এ প্রথাটির নাম ‘ঝাটর’, যার অর্থ পাখিদের খাদ্য দেয়া। সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে মৃতদেহটিকে প্রথমে পাহাড়ের উপরে দেহ সৎকারের স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে থাকা সন্নাসীরা এরপর কাপড় সরিয়ে কুড়াল দিয়ে দেহটিকে টুকরো টুকরো করে ফেলেন! তারপর সেখানে উড়ে আসে শকুনের মতো মাংশাসী পাখিরা। তারা এসে মৃতদেহটিকে সাবাড় করে দিয়ে যায়। শকুনেরা তো শুধু মাংস খেয়েই উড়ে যায়, থেকে যায় মৃতদেহের হাড়গুলো। সেগুলোকে এরপর হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুড়ো গুড়ো করে ফেলা হয়। হাড়ের চূর্ণকে এরপর ময়দার সাথে মিশিয়ে অন্যান্য ছোট পাখিদের খাওয়ানো হয়। আকাশ থেকে উড়ে আসা প্রাণীদের সাহায্যে এ সৎকারের কাজ করা হয় বলেই এর এরুপ নামকরণ। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায় যে, মৃতদেহ সৎকারের বিচিত্র এ পদ্ধতির শুরু হয়েছিলো দ্বাদশ শতকের কাছাকাছি সময়ে।

অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের প্রথাঃ
অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীরা মৃতদেহ সৎকারের বেলায় অবশ্য আমাদের জানাশোনা সবই করে থাকে। কবর দেয়া, আগুনে পোড়ানো, মমিতে পরিণত করা, এমনকি মৃতদেহ খেয়ে ফেলার প্রথাও আছে তাদের মাঝে।

দেশটির উত্তরাঞ্চলে আরেকদল আদিবাসী আছে যারা এত ঝামেলায় যেতে চায় না। প্রথমে মৃতদেহটিকে এক উঁচু, খোলা জায়গায় রেখে আসে তারা। গাছের শাখা-প্রশাখা দিয়ে ঢেকে দেয়া দেহটির মাংস পচে যেতে সময় লাগে মাসখানেক। কয়েক মাস পর তারা সেখানে গিয়ে হাড়গুলো নিয়ে আসে এবং সেগুলোকে লাল রঙ দিয়ে সাজায়। তারপর সেই লালরঙা হাড়গুলো কোনো গুহায় কিংবা গাছের ফাঁপা গুঁড়িতে রেখে আসা হয়। কখনো আবার মৃতের আত্মীয়রা সেই হাড়গুলো প্রায় এক বছর সময় ধরে নিজেদের সাথেই নিয়ে ঘুরে বেড়ান!

বসে থাকা মৃতদেহঃ
কেউ মারা গেলে, সে যত আপনজনই হোক না কেন, তার মৃতদেহ সৎকারের ব্যবস্থা করতে আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়ি। ঘন্টাখানেক পর তাই আমরা নিজেদের আবিষ্কার করি খুব একা হিসেবে। কারণ পছন্দের মানুষটি হয় তখন শুয়ে আছে মাটির নিচে কিংবা পরিণত হয়ে গেছে ভস্মে।

তবে ফিলিপাইনের ইফুগাও অঞ্চলের মানুষেরা ভুলেও এসবের ধার ধারে না। কেউ মারা গেলে তারা মৃতদেহটিকে তার বাড়ির সামনে চেয়ারে বসিয়ে রাখে! হাত-পা-মাথা বেঁধে রাখা হয় যাতে সদ্য মৃত সেই ব্যক্তি পড়ে না যান। ঠিক যেন বাড়ির উঠোনে লোকেরা কাজ করছে, আর চেয়ারে বসে থেকে কেউ সেই কাজগুলোর তদারক করছে। এভাবে দেহটি রেখে দেয়া হয় আট দিন পর্যন্ত। এই আট দিনে তার আত্মীয়-স্বজনেরা মৃতদেহকে ঘিরে নানা আচার-অনুষ্ঠানে মেতে ওঠে। শোক প্রকাশ, হাসি-ঠাট্টা, পার্টি, অ্যালকোহল পানে মেতে ওঠা- এ সবই চলে আসরের মাঝখানে সেই দেহটিকে রেখেই।

মৃতব্যক্তির স্যুপঃ
এ পদ্ধতির নাম পড়ে যে কারোরই চোখ কুঁচকে যেতে বাধ্য। অবশ্য আপনি যা ভাবছেন, অর্থাৎ মৃতদেহকে সিদ্ধ করে তারপরে তার স্যুপ খাওয়া, তেমন কিছু না ঘটলেও এর কাছাকাছি ঘটনাই ঘটিয়ে থাকে ভেনেজুয়েলার ঘন বনাঞ্চলে বাস করা ইয়ানোমামি গোত্রের লোকেরা।

কেউ মারা গেলে তার দেহটিকে গ্রাম থেকে বেশ দূরের এক জায়গায় নিয়ে যায় তারা। সেখানে নিয়ে দেহটিকে প্রথমে চিতায় পোড়ানো হয়। এরপর অবশেষ হিসেবে থেকে যাওয়া হাড়-ছাইগুলো একত্রিত করে বিশেষ কন্টেইনারে করে সেগুলো গ্রামে নিয়ে আসে তারা। এরপরই যেন শুরু হয় মৃতদেহ সৎকারের মূল আনুষ্ঠানিকতা।

মৃতের হাড়গুলো চূর্ণ করা হয় প্রথমে। এরপর একটি পাত্রে কলা নিয়ে তা সিদ্ধ করা হয়। কলা সিদ্ধর মাঝেই এরপর মিশিয়ে দেয়া হয় সেই হাড়চূর্ণ ও ছাই। মৃতের আত্মীয়েরা এরপর সেগুলো মজা করেই সাবাড় করে দেয়! একে মৃতের প্রতি তাদের ভালোবাসা প্রকাশের উপায় হিসেবেই মনে করে তারা।

সতীদাহঃ
সতীদাহ প্রথা সম্পর্কে কম-বেশি জানা আছে আমাদের সবারই। এ প্রথার ফলে সদ্য বিধবা হওয়া স্ত্রীকেও তার স্বামীর সাথে চিতার আগুনে যেতে হতো। পার্থক্য হলো- স্বামী যেতেন মৃত্যুর পর, আর স্ত্রীকে যেতে হতো জীবিতাবস্থায়।

দুঃখজনক ব্যাপার হলো, গায়ে আগুন লাগার পর সদ্য বিধবা সেই নারী স্বাভাবিক মানব প্রবৃত্তি অনুযায়ী নিজেকে বাঁচাতে সেখান থেকে পালাতে চাইতেন। আর এটা যাতে তিনি না করতে পারেন সেজন্য সেখানে বাঁশ নিয়েও দাঁড়িয়ে থাকতেন কেউ কেউ। বিধবা সেই নারী উঠতে চাইলেই আঘাত দিয়ে তাকে আবার আগুনে ফেলে দেয়া হতো। কখনো কখনো আবার সরাসরি হাত-পা বেঁধেই আগুনে নিক্ষেপ করা হতো সেই দুর্ভাগাকে। আঠারো শতকের এক বিধবার কথা জানা যায় যিনি এসব বাধা পেরিয়ে কোনোক্রমে পাশের নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে শরীরের আগুন নিভিয়েছিলেন। এতে করে ক্ষিপ্ত জনতা তাকে ধরে এনে প্রথমেই পা দুটো ও পরে হাত দুটো ভেঙে দিয়েছিলো যাতে করে তিনি আর পালাবার দুঃসাহস করতে না পারেন। এরপর তাকে আবারো আগুনে নিক্ষেপ করা হয়।

১৮২৯ সালের ডিসেম্বর ৪-এ বৃটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সীতে সতিদাহ প্রথাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল ঘোষণা করা হয়। এসময় বেঙ্গলের গভর্ণর ছিলেন লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংক। অবশ্য এ আইনী কার্যক্রম গৃহীত হয় মূলতঃ রাজা রামমোহন রায়ের সামাজিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতেই। বিভিন্ন গোড়া সমাজে এরপরেও এটা চলতে থাকে। তাই ১৯৫৬ সালে দ্বিতীয় এবং ১৯৮১ সালে তৃতীয়বারের মতো অমানবিক এ প্রথা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ভারতীয় সরকার।

ভাইকিংদের নৃশংস প্রথাঃ মৃতদের সৎকারের যতগুলো প্রথা আলোচনা করা হলো, তার মাঝে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে জঘন্য ছিলো ভাইকিংদের প্রথাটি। ‘ছিলো’ বললাম, কারণ এখন এটি কেবলই ইতিহাস, দুঃখের এক ইতিহাস।

ভাইকিংদের কোনো গোষ্ঠীপতি মারা গেলে প্রথম পর্বে তার মৃতদেহটি দশদিনের জন্য এক অস্থায়ী কবরে রাখা হতো। এ সময়ের মাঝে তার জন্য নতুন কাপড় বানানো হতো। একইসাথে তার কোনো ক্রীতদাসীকে তার সাথে যোগ দেয়ার জন্য প্রস্তুত করা হতে থাকতো। এ সময় তাকে রাত-দিন পাহারার মাঝে রাখা হতো এবং প্রচুর পরিমাণে উত্তেজক পানীয় পান করানো হতো।

এরপর যখন সৎকারের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হতো, তখন দুর্ভাগা সেই মেয়েটি একের পর এক গ্রামের সব তাবুতেই যেতে বাধ্য হতো। সেসব তাবুর পুরুষেরা তার সাথে মিলিত হতো আর বলতো, “তোমার মনিবকে বলো যে, এটা তার প্রতি আমার ভালোবাসা থেকেই করলাম”! সবগুলো তাবু ঘোরা শেষে মেয়েটি যেত আরেকটি তাবুতে যেখানে তার জন্য অপেক্ষা করতো ছয়জন ভাইকিং পুরুষ। তারাও তার সাথে মিলিত হতো। এরপরই দড়ি দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে দুর্ভাগা সেই মেয়েটিকে মেরে ফেলা হতো। মৃত্যু নিশ্চিত করতে সেই গোত্রেরই মহিলা প্রধান তাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করতেন।

এরপর? এরপর সেই মেয়ে আর তার মনিবের মৃতদেহ একই কাঠের নৌকায় তুলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হতো সেখানে। এটি করা হতো যাতে পরকালে গিয়ে মেয়েটি তার মনিবের ঠিকঠাক সেবা-যত্ন করে সেই ব্যাপারটি নিশ্চিত করতেই।

আব্রাহামিক রিলিজিয়নে (ইসলাম, খ্রিস্টান, ইহুদী) সৎকারের পদ্ধতি মূলত কবর দেওয়া।

হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ সহ বেশ কিছু ধর্মে বর্তমানে মৃতদেহ পুড়িয়ে সৎকার করা হয়। বৌদ্ধ ধর্মে শারীরিক দেহের তেমন গুরুত্ব নেই, এটি কেবল আত্মা ধারণের জন্য একটি পাত্র। হিন্দু ধর্মে পুনর্জন্মের যে কনসেপ্ট তাতে এই জন্মের দেহ পরের জন্মে প্রয়োজনীয় না সম্ভবত।

পার্সী বা জরথুস্ত্ররা তাঁদের মৃতদেহ একটা টাওয়ারের উপরে উঠিয়ে চিল, শকুনদের খেতে দেয়। মৃতদেহকে তাঁরা অপবিত্র গণ্য করে। একই কাজ করত প্রাচীন তিব্বতের বুদ্ধ ঋষিরা।

ছোট ছোট নৃ গোষ্ঠি সেটা এমাজন জঙ্গলে হোক বা আমাদের পার্বত্য অঞ্চলে বা ইন্দোনেশিয়ার কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বা মঙ্গোলিয়ার বিশাল সমতলের বিচ্ছিন্ন বেদুইন সম্প্রদায় প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর নিজস্ব পক্রিয়া আছে মৃতদেহ সৎকারের।

মোদ্দাকথা প্রতিটা সৎকার প্রক্রিয়ার একটা ফিলোসফিকাল ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। সেটা হাইলি কানেকটেড টু কালচার, কানেকটেড টু রিলিজিয়ন। ইভেন কানেক্টেড টু পলিটিক্স (ফারাওদের মমি এবং পিরামিড আর রাশার লেনিনের মৃতদেহ সংরক্ষণের এক্সামপলটা মনে হয় পলিটিক্সের কানেকশন হিসেবে যায়)। সব কালে, সব সভ্যতায়, আলাদা জনগোষ্ঠীর মৃতদেহ সৎকার খুব গুরুত্বপুর্ণ রিচুয়াল দ্বারা সুনির্ধারিত এবং সেটা পূর্বনির্ধারিত।

এই সৎকার প্রক্রিয়া যখন পালটায় সেটা অবশ্যই নির্দেশ করে যে সেই জনগোষ্ঠির, অঞ্চলের, সম্প্রদায়ের খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ কোনো পরিবর্তন হয়েছে। সেটা হতে পারে শাসকের পরিবর্তন, জলবায়ুগত তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন (নর্ডিক কিছু জনগোষ্ঠী পানিতে ভাসিয়ে দিত। ধরেন সেই পানিই আর আগের অবস্থায় নাই গ্লোবাল ওয়ার্মিং এ), জনগোষ্ঠীর ধর্মের পরিবর্তন (আমাদের নৃগোষ্ঠিদের সৎকারের পদ্ধতি আগে যাই হোক এখন মূলত খ্রিস্টধর্মের প্রভাবে পরিবর্তিত), মাইগ্রেশন এর কারণে হতে পারে... । কারণ যাই হোক, কারণটা খুব গুরুত্ব বহনকারী নিঃসন্দেহে।

এই রিচুয়ালের মাঝে কি কোনো কিছু যোগ বিয়োগের স্পেইস নাই? আছে হয়তো। তবে সেক্ষেত্রে ইসলাম সম্ভবত বেশ অনমনীয় এবং দৃঢ়। মনে রাখতে হবে ইসলাম একটা রিচুয়াল সর্বস্ব ধর্ম না, এইটা একটা দ্বীন বা লাইফ কোড। এই ধর্ম এড্রেস করে নাই, মানুষের জীবনের এমন কোনো দিক নাই। ফলে এই জায়গাতে যোগ বিয়োগের জায়গা খুব সীমিত। এতদিন অব্দি সেটা অর্গান ডোনেশন, আত্মীয়রা বিদেশ থেকে আসা অব্দি ডেডবডি সংরক্ষণ, পোস্টমর্টেম এইরকম প্র্যাক্টিকাল ইস্যুতে ছিল। সেইটা ক্রমশ নতুন মাত্রা পাচ্ছে। এইখানে একটা দারুন ব্যাপার আছে। অর্গান ডোনেশন এই ইস্যু টা সমসাময়িক ইস্যু। দেড় হাজার বছরের মাঝে তেরো/সাড়ে তেরোশ বছর ধরে এইটা ইস্যু ছিল না। কিন্তু যখন এইটা ইস্যু হয়েছে তখন ওলামারা এটাকে এড্রেস করেছেন প্রিন্সিপালের বেসিসে। অর্গান ডোনেট করা যাবে শর্তসাপেক্ষে। কী শর্ত? অর্গান বিক্রি করা যাবে না, সৎকারের বিলম্ব হয় এমন হওয়া যাবে না, মৃতদেহ বিকৃত হয় এমন হওয়া যাবে না। এর এগেন্সটেও স্কুল অব থট আছে। পয়েন্ট হচ্ছে অন্তত কেউ কেউ একমত যে হ্যাঁ, শর্তসাপেক্ষে করা যায়েজ।

যাই হোক, ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদের চুড়ায় বসে থাকা এই সময়ে আমাদের দীর্ঘদিনের বিভিন্ন চর্চার কিছু এদিক ওদিক হবে তাতে সন্দেহ নাই। এমন একটা সময়ে আমরা আছি যখন সোসাইটির মোরাল কোড নিয়ে চ্যালেঞ্জ করা যাচ্ছে না যতক্ষণ না সেটা লিগাল কোড ভায়োলেট করে। ফলে এইরকম রাবিন্দ্রিক সৎকার সামনে আমরা আরো দেখব। সেটা প্রত্যাশিত হোক বা না হোক, অবধারিত বটেই।

সৌদি আরবে শেখদের টিনেজ থেকে বড়োরাও দামি গাড়ি নিয়ে হাইওয়েতে রেইস দেয়। মরুভূমিতেও রেইস ড্রিফটিং এইসবের প্রতিযোগিতা চলে। সুপারফাস্ট একটা গতিদানবের পরিণতিই খুব প্রেডিক্টেবল- এক্সিডেন্ট এবং সেটা ডেডলি এক্সিডেন্ট।
হাইওয়ে পুলিশ প্রায়ই এমন এক্সিডেন্ট দেখেন এবং পুলিশ হিসেবে নিজের রুটিন কাজ করেন। রুটিন কাজের বাইরে সে আরেকটা কাজ করেন। কোনো কোনো গাড়ির যাত্রী যদি তখনো জীবিত থাকেন তাহলে সেই পুলিশ মৃত্যুপথযাত্রীদের পানি খাওয়ান এবং কালেমা পাঠ করানোর চেষ্টা করেন। হাইওয়ে পুলিশদের অভিজ্ঞতা- অনেক গাড়ির চালক বা যাত্রী সেন্স থাকার পরেও, মুসলমান হওয়ার পরেও কালেমা পড়ে না বা পড়তে পারে না। তারা এক অদ্ভুত রিদমে ডানে-বামে বা উপরে-নিচে মাথা দোলায়। সেই রিদমটা গাড়ির মিউজিক সিস্টেমে চলতে থাকা রিদম। পুলিশের বক্তব্য হলো আল্লাহ শেষ মুহূর্তে তারা যেই সুরে এবং স্বরে মগ্ন ছিল তাতেই তাদেরকে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নেন। পবিত্র কালেমা নসীব করেন না।

একটা ডেডবডি আসলে দুনিয়ার সকল আইনের উর্ধ্বে। সে কিছু করতেছেনা। আমরা দুনিয়াদারিতে ব্যস্ত লোকজন তাঁকে নিয়ে কিছু করতেছি। সে তাঁর প্রাপ্য নিয়ে যথাস্থানে পৌঁছে যাচ্ছে। এই দুনিয়াদারিতে যারা রিলিজিয়াস কালচারকে আর্ট অ্যান্ড কালচারে রূপ দিতে চাচ্ছেন। হ্যাঁ, সাথে এই নিয়েও আমি কনসার্ন যে এই বেঙ্গল ডেল্টার জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের যাপিত জীবনের যে কালচার বা সংস্কৃতি আমাদের আর্ট অ্যান্ড কালচারের কুতুবেরা নিজেদের আরোপিত কালচারের নাম দিয়ে একটা প্রায় যুদ্ধে নেমেছে। এই যুদ্ধটা অপ্রয়োজনীয়। একেবারেই অপ্রয়োজনীয় এবং উপেক্ষার যোগ্য।

রবি ঠাকুরের কিম্বা বাংলাদেশের লিগাল ফ্রেমওয়ার্কে কারো সাংগীতিক সৎকারে আমার কোনো আপত্তির জায়গা আছে বলে আমি মনে করিনা। আমি কি করব, বা আমরা কী করব সেইটা একটা সচেতন চয়েস। আপনারা ইল্লিগাল কিছু করেন নাই। তবে এই ডোমেইনে সেক্যুলারদের যেই লিগ্যাল কারেক্টনেস, তাতে আমি থোড়াই কেয়ার করি।

আমাদেরকে সঠিক পথ, সরল পথ বেছে নেওয়ার এবং সেই পথে থাকার তৌফিক দিন। সেই পথ যা অনুগ্রহপ্রাপ্তদের, সেই পথ নয় যা অভিশপ্তদের।

(অনেক দিন আগে দ্যা আর্থ চ্যানেলে একটা দীর্ঘ ডকুমেন্টারি সিরিজ দেখেছিলাম, তার উপর ভিত্তি করে সংক্ষিপ্ত লেখা)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:৪৯
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুলাইয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে শ্লোগান কোলাজঃ

লিখেছেন জুল ভার্ন, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৩৬

জুলাইয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে শ্লোগান কোলাজঃ

* ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার’
* ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর।’
* ‘নাটক কম করো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসসালামু আলাইকুম। ইদ মোবারক।

লিখেছেন রাজীব নুর, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:১৯



ঈদ এখন এক নিরানন্দময় উপলক্ষ্য।
কিতাবে আছে ধনী-গরীব অবিভাজনের কথা বরং এদিন আরো প্রকটতা নিয়ে প্রস্ফুটিত হয় বিভেদরেখা কেননা আমরা আমাদের রাষ্ট্র- সমাজব্যবস্থা ও জনগণকে সেভাবে দিয়েছি ঘিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঈদের শুভেচ্ছা: দূর থেকে হৃদয়ের কাছ

লিখেছেন আমিই সাইফুল, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:০৩

আসসালামু আলাইকুম,
আজ ঈদের দিন। চারদিকে উৎসবের আমেজ, হাসি-খুশি, নতুন জামা আর মিষ্টি মুখের আদান-প্রদান। আমি ইউরোপে আমার পরিবারের সাথে এই আনন্দের মুহূর্ত কাটাচ্ছি। কিন্তু আমার হৃদয়ের একটা কোণে একটা ফাঁকা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ও মোর রমজানেরও রোজার শেষে......

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪০


বাংলা গানের ভাণ্ডারে কাজী নজরুল ইসলাম এক অনন্য নাম। তিনি বাংলা সাহিত্যে ইসলামী সংগীতের এক শক্তিশালী ধারা তৈরি করেছেন। তারই লেখা কালজয়ী গজল "ও মোর রমজানেরও রোজার শেষে এলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেই যে আমার নানা রঙের ঈদগুলি ......

লিখেছেন অপ্‌সরা, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৪২


পেছনে ফিরে তাকালে আমি সবার প্রথমে যে ঈদটার কথা স্মরন করতে পারি সেই ঈদটায় আমি পরেছিলাম আমব্রেলা কাট নীলচে বলবল রং একটা জামা এবং জামাটা বানিয়ে দিয়েছিলেন আমার মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×