আমি তখন ছোট, স্কুলে পড়ি।
আমাদের একটা ছাগলের বাচ্চা ছিল, ছাগলটার গায়ের রং সোনালি কালারের মত ছিল, আমরা গ্রাম্য ভাষায় বলতাম হন্নে ছাগল। আমাদের সবার সাথেই ছাগলটার দারুণ ভাব ছিল, আস্তে আস্তে বড় হয়ে উঠলো, লাফালাফি করতো, আমাদের গায়ের সাথে গা ঘেঁষতো, শরীরের মধ্যে মুখ ভরে দিত, আমাদের হাত থেকে খাবার খেত, আমাদের পিছনে পিছনে ঘুরে বেড়াতো। সত্যি কথা ছাগলটি আমাদের চোখের আড়াল হলেই আমরা হয়তো একসাথেই বলে উঠতাম হন্নে গেল কই? তাকে আবার খুঁজে পাওয়া যেত। কাছে এসেই মনে হয় যেন বলতো "না আমি বেশি দূরে যাইনি"। আমার মা তো একদিন বলেই ফেললো ছাগল তো নয় ও যেন আমাদের পরিবারেই এক সদস্য। আমার আব্বা ওকে গোষল করিয়ে দিত। নিজে হাতে করে খাওয়াতো। এমনকি অনেক সময় নিজের প্লেটের ভাতও ২/১ মুঠো ছাগলটার জন্য বরাদ্ধ হতো। শীতের সময়, ও আমাদের লেপের মধ্যে ঘুমিয়েও যেত।
অবশেষে, ঐ হন্নেকেই কোরবানির দেওয়া হবে বলে নিয়ত করা হলো। যথারীতি কোরবানি হলো। সবার মন খুব খারাপ হয়েছিল। আমার মা-বাবা সহ আমাদের বাড়ীর কয়েকজন সদস্য হন্নের মাংস খেতে পেরেছিল না। সেদিন আমার চোখে তো বটেই, মা-বাবার চোখেও হন্নের জন্য চোখে জল দেখেছিলাম।
কোরবানির বেশ কয়েকদিন পরে, একা ঘরে বসে আমার মা ঐ হন্নের জন্য হাউ-মাউ করে কেঁদেই ফেলেছিল!
আজও হন্নে আমার স্মৃতিতে জেগে ওঠে। এটা কি শ্রেফ পশু কোরবানি, নাকি প্রকৃতপক্ষেই সেক্রিফাইস?
কালের বিবর্তনে আজ হয়তো কিছু কিছু ক্ষেত্রে পশু কোরবানি না হয়ে পশু হত্যাই হচ্ছে। কিন্ত কোরবানির আসল উদ্দেশ্য কিন্ত প্রিয় জিনিষকেই সেক্রিফাইস করা।
তাই কোরবানিকে যারা শ্রেফ পশুহত্যা বলে চালিয়ে দিতে চান, আমি তাদের সাথে একমত নই।