somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্প: আমাদের মায়াবতীর একজোড়া কাজলকালো চোখ ছিলো

২০ শে জুলাই, ২০১১ দুপুর ১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের গল্প শুরু হয় না, শেষ হয় না কখনো। কেবল বৃত্তায়িত ভাবে ঘুরপাক খায় আমাদের বিকালের পুকুরপাড়ের আড্ডায়। মফস্বল এলাকার খবর হওয়া সব ঘটনাই উঠে আসে আমাদের আড্ডায় জোরেসোরে। এর মাঝে এখন মায়াবতীর গল্প কেউ ভুলক্রমে তুলে ফেললে আমরা না শোনার ভান করে এড়িয়ে যাই। তারপরেও হয়তো চোরা চোখ চলে যায় কোন এক সবুজের দিকে। বিকালের সূর্য আটকা পড়ে তার ক্লান্ত কক্ষপথের কোন এক চোরা গলিতে। চা বিড়িতে আমাদের আড্ডা ধূমায়িত হয় সান্ধ্য আগমনের পূর্বেই। মায়াবতী জনিত অস্বস্তি পাশ ফেলে সবুজ বলে চলে নতুন স্বপ্নের কথা নতুন গল্পের কথা। মায়াবতীর গল্প এমনিভাবে হারিয়ে যেতে চায় আমাদের আড্ডায়; হয়তো সবার মনের গোপন কুঠুরিতে একটু ছাপ ফেলে। মফঃস্বল এলাকার এই চায়ের দোকানের ব্যবসা জমজমাট হয় আমাদের দীর্ঘায়িত আড্ডায়। একটু একটু করে সেই আড্ডায় নীরব উপস্থিতি ফেলে সেই মায়াবতী সবার বুকের ভেতর আটকে থাকা অব্যক্ত কথায়।

সেই মায়াবতীর কথা মনে করে আড্ডা যেনো ম্রিয়মান হয়। মায়াবতীকে মায়া ভরা দুচোখের ছায়া যেন আমরা দেখতে পাই হঠাৎ করেই। একটু একটু করে হারিয়ে যাওয়া গল্পগুলো অব্যক্ত ভাষায় ছড়িয়ে পড়ে আমাদের আড্ডার মাঝে। গল্প যখন শুরু হয় তখন হয়তো তার চোখে অনেক স্বপ্ন ছিলো। অথবা সে স্বপ্ন না দেখে জীবনের পিছে সরলভাবে ছুটে চলা কোন এক নারী ছিলো। জীবন সে দেখেছিলো স্বল্পপরিসরে অথচ গভীরভাবে। তার ছড়িয়ে পড়া নাতিদীর্ঘ কেশ মেঘের জলে ভিজেছিলো হয়তো বা। হয়তো বা কোন এক জোছনা রাতে নির্ঘুম পেঁচার মত সেও জেগেছিলো প্রচণ্ড জোছনার মায়াময়ী ভালোবাসায় সিক্ত হতে। যখন গল্পের শুরু হয় তখন হয়তো সে নারী ছিলো না --কেবলই এক মানবী ছিলো। সেই মানবীর জন্য তখন ছিলো ফুলেরা, পাখিরা, বৃষ্টিমালা অথবা জোছনাময়ী রাত। আর সময়ের এগিয়ে যাওয়া তার চোখে স্বপ্ন দিয়েছিলো। স্বপ্ন নিয়ে সে শুরু করেছিলো জীবনকে কোন এক মানবের ভালোবাসার অপেক্ষায়।

আমাদের আড্ডায় নিয়মিতভাবে তখন শাওনকে মিস করতে থাকি। হয়তো সবুজদের বাসায় গমন হেতু তার জীবনের গতিপথে নতুন ধাক্কা খায়। সবুজদের বাসায় কোন মায়াবতীর কাজলকালো চোখ তাকে আমাদের আড্ডা হতে দূরে সরিয়ে নেয়। আর তার এই আকস্মিক অন্তর্ধান আমাদের নতুন গল্পের যোগান দেয়। সবুজের সতর্ক কানের বাধা পেরিয়ে আমরা মেতে উঠি সেইসব আলোচনায়। শাওন ও কোন মানবীকে ঘিয়ে জল্পনা কল্পনা দানা বাঁধতে থাকে। কলেজ ফেরত কোন রিকশায় একজোড়া মানব মানবীর ঐকান্তিক সময় কাটানো আমাদের অনুসন্ধিৎসু করে তোলে। আমরা আনন্দ পাই সেই সব গল্প বলে চলে। আমাদের মাঝে কেউ কেউ হয়তো তাদের খুনসুটির অংশ হয়ে যায়। এমন করেই একদিন আমাদের ঈর্ষাজাত আদিরসাত্মক আড্ডা একটু একটু রূপ নেয় নিজেদের ঘরের মানুষদের যাপিত জীবন , স্বপ্ন ও ভালোবাসার গল্পে। এমনি করে না থেকেও মায়াবতী হয়ে যায় আমাদের আড্ডার সবার অতি আপনজন।

তারপরে সূর্য উঠে আমাদের ছোট শহরের খোলা মাঠের পিছে কিংবা ডুবে যায় দিগন্তরেখায় দিকচক্রবালে তার মাঝেকার স্বপ্নকে বিলিয়ে। আমরা আমাদের আড্ডা আমাদের মায়াবতী সবই পরিপক্ক হয়। তার একজোড়া কাজলকালো চোখ ছিলো। সেই চোখ টলটল করতো হয়তো আমাদের সবার পানে চেয়ে। তার চোখে আমরা শাওনকে দেখতাম তার সাথে কথা হলে প্রাসঙ্গিক কিংবা অপ্রাসঙ্গিকভাবে শাওনের কথা তুলে আনতাম। শ্যামবর্ণের সে মুখে লজ্জার লালাভ রেখা দেখা দিত। সে মায়াবতীর কাছে আমরা গল্প করতাম জীবনের, কষ্টের, হিংস্রতার , বন্যতার। সেই সময় তার চোখে গভীর বিষাদের ছায়া দেকে আমরা মুষড়ে যেতাম। হয়তো কখনো সে বলে যেত স্বপ্নের গল্প ভালোবাসার গল্প জীবনের গল্প। তার তীব্র দৃপ্ত চোখের আলোকচ্ছটায় হয়তো আমরা স্বপ্ন দেখতে শিখতাম। সবুজের একসময় হয়তো অস্বস্তি কেটে যায় ঘটনার স্বাভাবিকতায়। আমাদের মায়াবতী বেড়ে উঠে আমাদের সবার বোন অথবা বন্ধুর প্রেয়সী হিসাবে।

সেই সকল গল্পের কথাগুলো আজও আমাদের আড্ডার কারো মনে যে উঁকি দেয় না সেকথা বলা যায় না। কিন্তু তারপরেও আমরা আজ সেগুলো এড়িয়ে যাই। সবুজের দিকে চোরা চোখে তাকিয়ে তার মনের কোনে জমে থাকা বিষাদ অনুভব করতে থাকি। কখনো হয়তো বলা হয় না তারপরেও আমাদের অপরাধী মনে হয়তো মনের তীব্র বাঁধা সত্ত্বেও শাওনের ভালোবাসার প্রকাশের মানবীয় মুদ্রাগুলো উঁকি দেয়। সবুজ ও মায়াবতীর কথা ভুলে গিয়ে আমাদের ধর্ষকামী মন বিদ্রোহ করতে চায়। নিজেদের মাঝেকার এহেন পঙ্কিলতায় আমরা নিজেরাই ক্ষুব্ধ হই। কিন্তু তারপরেও প্রতিবারই নিজের মাঝেকার আরেক আমির কাছে পরাভূত হই বারবার। আমাদের চোখ কামাতুর হয়। হয়তো আমাদের কেউ চোখের অগোচরে স্বমেহনে লিপ্ত হয়। কিন্তু আবার আমরা ফিরে আসতে চাই বাস্তবে । আরেক আমির সাথে যুদ্ধ করে ঠিকে থাকতে চাই। যে শাওনের সৌভাগ্যে ঈর্ষান্বিত হতাম তার জন্য করুণা বোধ করি।

শাওনকে আর দেখা যায় না। আমাদের মাঝে আড্ডাতে আমরা তাকে দেখতে পাই না। কুমারীর কুমারীত্ব হরণকারী প্রেমহীন কামের টোপে সে বন্দি। সেই টোপ যা তাকে আমাদের কাছে ঘৃণার পাত্র করেছিলো। আমাদের আরেক আমি হয়তো জানান দিয়েছিলো শাওনের বিচক্ষণতার কথা। শাওনের জায়গায় নিজেকে বসালেই আরেক আমি আমার উপর চেপে বসে। কৌমার্যকে বিবাহ নামক জিনিসটার জন্য অপরিহার্য মনে হয়। শাওনের বুদ্ধিদীপ্ততায় আমরা তাকে হাততালি দেই যতক্ষণ না মায়াবতীর কাজলকালো চোখ আমাদের মানস পটে হানা দেয়।

সবুজের সাথে কথা বলতে সাহস করি না যেমন করিনি সেদিনও। কোন এক ধর্ষকের মাঝেকার আরেক সত্তা যেদিন ধর্ষককে গ্রাস করেছিলো। আর সেই সময়েই মায়াবতী তার সামনে পড়েছিলো ভুল সময়ে ভুল জায়গায়। আমরা মায়াবতীর কষ্টে আর্দ্র হই । প্রতিবাদ করতে না পারার ক্লীবতার জন্য নিজেরাই নিজেদের ধিক্কার দেই। তারপরে আমরা মায়াবতীকে দেখিনি অনেকদিন। একদিন হঠাৎ একটা খবরে মহল্লা প্রকম্পিত হয়। আমরা সবুজদের বাসায় ছুটে যাই। তারপরে কিছুদিন আমাদের আড্ডা এবং মহল্লা জুড়ে কানাঘুষা চলতে থাকে। একসময় হারিয়ে যায় সে। আমাদের আড্ডা আবার শুরু হয়। গল্প বদলায়। ভাষা বদলায়। কেবল শাওনের কাছে আশ্রয় খুঁজতে গিয়ে কৌমার্যের কাছে হেরে যাওয়া মায়াবতীর স্বপ্নভাঙা চোখ আমাদের মানসপটে হানা দেয় যখন তখন। মায়াবতীর সেই কাজলকালো চোখ আমাদের দিকে তাকিয়ে সেদিন টলটল করেছিল কিনা বলতে পারি না।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১১ দুপুর ১:২৪
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ট্রাম্প ভাইয়ের প্রেসিডেন্সিয়াল টিমের সদস্য এর মধ্যে এই তিন জন সদস্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লিখেছেন অতনু কুমার সেন , ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮

প্রথম জন হলো: জেডি ভান্স, উনি মেবি ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। ভদ্রলোকের বউ আবার ইন্ডিয়ান হিন্দু। ওনার নাম উষা ভান্স। পেশায় তিনি একজন অ্যাডভোকেট।

দ্বিতীয় জন হলো বিবেক রামাস্বামী। এই ভদ্রলোক আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসল 'আয়না ঘর' থাকতে রেপ্লিকা 'আয়না ঘর ' তৈরির প্রয়োজন নেই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৮


স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ৫ই আগস্ট সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে এসে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন আমলে অসংখ্য মানুষ কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×