somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঢাকা শহরে সিএনজিতে সুলভে চলাচলের কিছু পদ্ধতি

২৩ শে জুলাই, ২০১০ বিকাল ৩:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলা ব্যাকরণে আমি যে মহা ওস্তাদ ছিলাম তেমন দাবি করবো না কিংবা সেই জিনিসটার প্রতি আমি যে খুব দুর্বল তেমন দাবি করাটাও অমূলক হবে। তারপরেও ব্যাকরণে পড়া একটা টার্ম আমার কানে বেশ বাজে। সেটা হলো রূঢ়ি কিংবা রূঢ় শব্দ। সেটা যতটা না ব্যাকরণ কিংবা ভাষার প্রতি দরদ বোধে তারচেয়ে ঢের বেশি এক বড় ভাইয়্বের দেয়া উদাহরণে। কারণ তিনি হঠাৎ করেই আমাকে এই জাতীয় লেটেস্ট শব্দটি জানতে চান। আমি আমতা আমটা করতে থাকলে তিনি অবলীলায় যে নামটি বলেন সেটা হলো সিএনজি। শাব্দিক অর্থ অনুযায়ী ক............ ন্যাচারাল গ্যাস ( সি তে কি হয় ভুলে গেছি) হলেও সিএনজি বলতে আমরা এখন গ্যাস বুঝি না বরং একধরণের বিশেষ ত্রিচক্রযানকে বুঝি। আমার কাছে অবশ্য তখন মনে হয়েছিলো আগত প্রথম রূঢ়ি হবে সিএনজিচালক। সেটা শাব্দিক অর্থে সিনএনজি চালিত গাড়ির চালক বুঝালেও অদূর ভবিষ্যতে ' ডাকাত' এই বিশেষ অর্থে এর ব্যবহৃত হবার সম্ভাবনা প্রচুর।

যা হোক সি এনজি ওয়ালা কিংবা ডাকাতদের এই রূপ আমার কাছে সম্প্রতি আবিষ্কৃত হলেও ভুক্তভোগীরা নিশ্চয়ই অনেক আগে থেকেই সিএনজি ভাড়া বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। আজকাল সিএনজি ওয়ালা কোথাও যেতে রাজি হয়না যদি বা রাজি হয় ভাড়া হয় আড়াই থেকে তিন গুণ। সিএনজিওয়ালাদের প্রতাপে আমাদের আমজনতার অবস্থা যে কী দুর্বিষহ তা বিশদ ব্যাখ্যার দাবি রাখে না। বরং এ সমস্যা সমাধানে বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ফিয়াজুর রহমানের শরণাপন্ন হতে তিনি কিছু পদ্ধতি বাতলে দেন। ভুক্তভোগীরা ট্রাই করে দেখতে পারেন। উল্লেখ্য ফিয়াজ সাহেব খুবই প্রচারবিরোধী লোক বলে এই পদ্ধতি সফল হলে তিনি কোন ক্রেডিট নিবেন না তবে ব্যর্থ হলে তার দায় দায়িত্ব তিনি নিতে প্রস্তুত। যা হোক কথা না বাড়িয়ে পদ্ধতিগুলো বয়ান শুরু করি :

১. ইমোশনাল পদ্ধতি :

এই পদ্ধতি বেশ পুরাতন হলেও এই পদ্ধতির সফল প্রয়োগের জন্য দরকার বিশেষ কিছু গুণ।সেই গুণটি হচ্ছে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলিং কে শিল্পের পর্যায়ে উন্নীত করার গউণ। চেহারার মাঝে কাচু মাচু ভাব এনে নিজের বিপদ গ্রস্ততা ফুটিয়ে তুলে সিএনজি ওয়ালাদের কনভিন্স করার চেষ্টা করতে হবে। এতে কাজ না হতে থাকলে শেষ সময়ে ছেড়ে হবে মোক্ষম অস্ত্র " মামা আমাকে তো নিবেন না, সুন্দরী মামীরা এলে তো ঠিকই নিয়ে নিতেন।" উল্লেখ্য এ পদ্ধতিতে মুখায়বের পূর্ণ ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক প্রয়োগে সাফল্যের তীব্র সম্ভাবনা থাকলেও প্রয়োগ ভুলে যদি ব্যর্থ হন কেউ থেমে যাবেন না। কারণ গুণীজনরা বলে , "গাইতে গাইতে গায়েন"।

২. তাবলীগী পদ্ধতি :
এই পদ্ধতির নাম দেখে অনেকে ভ্রু কুচকাতে পারেন। পারত পক্ষে এটা খুবই নিরীহ পদ্ধতি। এ পদ্ধতির সফল এক্সিকিউশনের জন্য কেউ তিনদিনের জন্য তাবলীগ ঘুরেও আসতে পারেন। বেশি দরকার হচ্ছে নকল করার ভঙ্গি। তারপর, হিসাব সোজা, সিএনজিতে উঠার পরেই তাবলীগ ওয়ালাদের টোনে সিএনজি ওয়ালার হেদায়েত শুরু করতে থাকেন । হেদায়েতের আলোচনায় হালাল রুজিকে গুরুত্ব দিন আর সিএনিজি থেকে নামার সময় মিটারের ভাড়া পরিশোধ করুন আর সিএনজিওয়ালাকে এক টাকাও বেশি না দিয়ে তার রুজিকে হালাল করে আপনি যে টার দীন দুনিয়া আখিরাতের কী কল্যান সাধন করলেন বয়ান করতে থাকুন। স্কিল বর্ধনে ওয়াজের ক্যাসেট শোনা যেতে পারে।
সতর্কতা :তবে লক্ষ্য রাখুন আপনার ওয়াজ যাতে বেশি হৃদয়গ্রাহী না হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে সিএনজিওয়ালা ওয়াজে বুদ হয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে পারে।

৩. মাস্তান পদ্ধতি :
একাধিক লোক মিলে সিএনজিতে উঠার সময় এ পদ্ধতি বেশ কার্যকর। এই পদ্ধতির জন্য ষণ্ডামার্কা চেহারার একজন বা দুজনও দলে থাকা আবশ্যক। তবে সেই বিশেষ দুইজনের কোন কথা বলা যাবে না। বরং মুখ ভঙ্গিতেই তারা মাৎ করে দিবেন। তার পরেও যদি সিএনজিওয়ালা রাজি না হয় তবে কঠিন ভঙ্গিতে তার নাম গাড়ি নাম্বার গ্যারেজ নাম মোবাইলে টোকার অভিনয় করুণ। তারপরে তার দিকে কঠিন দৃষ্টি হেনে উল্টা হাটতে থাকুন...। কাজ হবার সম্ভাবনাই বেশি।
সতর্কতা :সতর্ক থাকুন নিজেদের এক্সপ্রেশন বেশি করে কিংবা হাতাহাতি করার ব্যাপারে। সেক্ষেত্রে সাদা পুলিশের হাতে প্যাদানির সম্ভাবনা থাকে।

৪. বয়রা পদ্ধতি :
এই পদ্ধতিতে আপনি সিএনজিওয়ালা যা ভাড়া চাইবে তাতেই উঠে পড়ুন এবং পুরো রাস্তায় অন্যমনস্ক থাকার ভান করুণ। এবং ভুলেও সিএনজিওয়ার কোন কথার উত্তর দিবেন না। তারপর সিএনজি থেকে নেমে আপনি যত দিতে চান তত দিন এবং তার সকল কথার উত্তরে উল্টা পাল্টা উত্তর দিয়ে নিজেকে বয়রা বলে প্রতিপন্ন করুন।
সতর্কতা : এ পদ্ধতি প্রয়োগের সময় খেয়াল রাখতে হবে লোকজন যেন বেশি জমে না যায়। কারণ সেক্ষেত্রে কিছু সময় পরে নিজেকে আবিষ্কার করতে পারেন নাক কান গলার কোন হাসপাতালে।

৫. ফাঁপড় পদ্ধতি :
এই পদ্ধতিতে চাপা ও চোপার জোড় থাকাটা জরুরী। তাৎক্ষণিক চাপা মারার ক্ষমতা। সিএনজিতে দুজন মিলে উঠুন আর তারপরে দুজন মিলে ফৌজি আলাপ কিংবা র‌্যাবের আলাপ করতে থাকুন। র‌্যাব বা ফৌজের আপনার কোন বন্ধুর কাল্পনিক দুর্ধর্ষ ঘটনা গল্প করতে পারেন সিএনজি ওয়ালাকে শুনিয়ে তারপরে সত্যি কিংবা মিথ্যা করে ফৌজি ফ্রেন্ডকে ফোন দিন এবং তার বাসায় যাচ্ছেন এমন কিছু বলেন। তারপর সিএনজি নামার সময় দেখুন কার্যকারিতা।
সতর্কতা : এই পদ্ধতি এখন বহুল ব্যবহৃত বলে চাপা মারার সময় সতর্ক থাকুন।

৬. দরবেশ পদ্ধতি :
খুব ভালো অভিনয় করতে পারেন যারা তাদের জন্য এ পদ্ধতি। অভিনয় মুখায়বব এর সাথে সাথে এই পদ্ধতির জন্য যেটা জরুরি সেটা হলো বেশ ভূষা। মোটামুটি এলোমেলো বড় চুল আর খোঁচা খোঁচা দাড়ি নিয়ে চলাফেরা করুণ। আচার আচরণে একটু অপ্রকৃতিস্থ ভাব ফুটিয়ে তুলুন । তারপর সিএনজি ওয়ার সাথেও সেভাবেই কথা বনলটে থাকুন এবং দামাদামি করুন। রাজি না হলে ছুড়ে দিন ডায়লগ, " আচ্ছা ভাই আপনার গাড়িতে যাব না। তবে আমিও আপনাকে চিনি না আপনিও আমাকে চেনেন না , তবে আজকে সারাটা দিন আপনে একটু সাবধানে থাইকেন, পথের বিপদের কথা বলা যায় না। " আপানার দরবেশীয় ইমপ্যাক্টের উপর নির্ভর করবে সিএনজি ওয়ালার ভয় পাবার সম্ভাবনা তথা যাবার সম্ভাবনা।
সতর্কতা :এই পদ্ধতির প্রয়োগ বেশি ঘটতে থাকলে আপনার মুরীদ ভক্ত জুটে যাবার সম্ভাবনা থাকবে।

আরো দুইটা পদ্ধতি পাওয়া গেছে ব্লগার কাঙাল মামার সৌজন্যে। উনার নামে কপিরাইট দিয়া ঢুকায়া দিলাম।

কাঙাল মামা পদ্ধতি:
সবচেয়ে ভালো উপায় হলো, সিনজির নামবার টুকে, সিনজির পিছে যে পুলিশ কন্ট্রোল রুমের নাম্বার থাকে সেটায় ফোন দিবেন। অভিনয় করে ফোন দিতে পারেন, আবার সত্যই ফোন দিতে পারেন। এতে ড্রাইভার গুলা ভড়কে যায় নো ডাউট। তখন কাজ হতে পারে।


আরেকটা উপায় > ধরেন আপনি খিলগাও থেকে বাড্ডা যাবেন। কিন্তু এত কাছে কেউ যাবে না, তখন আপনি মিটার থেকে ১০/২০ টাকা বাড়িয়ে উত্তরা ঠিক করবেন(দূরে হইলে সাধারনত যায়)। এরপর মাঝপথে, বাড্ডা যখন এসে পড়বে তার একটু আগে ফোন বের করে কথা বলবেন, "ওহ শিট!! বস আসবে না আজকে? তাইলে আর অফিসে গিয়া ফয়দা কি?"...তারপর সিনজিওয়ালাকে বলবেন, ভাই গাড়ি থামান। উত্তরা যাইয়া লাভ নাই। এরপর নাইমা বসরে গালি দিয়া মিটার থেকে ২০টাকা বাড়িয়ে উল্টাদিলে হাটার ভান করবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১০ রাত ১:৫৫
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ট্রাম্প ভাইয়ের প্রেসিডেন্সিয়াল টিমের সদস্য এর মধ্যে এই তিন জন সদস্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লিখেছেন অতনু কুমার সেন , ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮

প্রথম জন হলো: জেডি ভান্স, উনি মেবি ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। ভদ্রলোকের বউ আবার ইন্ডিয়ান হিন্দু। ওনার নাম উষা ভান্স। পেশায় তিনি একজন অ্যাডভোকেট।

দ্বিতীয় জন হলো বিবেক রামাস্বামী। এই ভদ্রলোক আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসল 'আয়না ঘর' থাকতে রেপ্লিকা 'আয়না ঘর ' তৈরির প্রয়োজন নেই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৮


স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ৫ই আগস্ট সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে এসে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন আমলে অসংখ্য মানুষ কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×