গল্পের শুরু পেতে সমস্যা হয় তবে গল্প শুরু হয়ে গেলে তার চলতে কোন বাঁধা নেই। প্রতিদিনকার কাজ শেষে নীড়ে ফেরা মনুষগুলোর মতোই ইতঃস্তত চলাফেরা করতে থাকে গল্পটি। তাই গল্পটির পরিসর এলোমেলোভাবে বড় হয়ে উঠে। অথবা বলা যায় গল্পটিই নিজ গুণে আপন পরিসরকে বড় করে তোলে। গল্পটার সীমা তখন আমাদের মাঝে থেমে থাকে না বরং তা সার্বজনীন রূপ নিতে থাকে। আমাদের ছেলেধরা বিষয়ক আলোচনা সন্ধ্যার বাতাসে জমে উঠে নেশার সংশ্রবে। ছেলেবেলায় স্কুলপড়ুয়া আমাদের পুরনো ছেলেধরাভীতি যেনো জেগে উঠে আমাদের মাঝে। একটু দূরের ব্যস্ত সর্পিলাকার উষ্ণ রাস্তায় মানুষের ভীড় দেখা যায় তখন। একেবারে থেমে যাওয়ার আগে রাস্তার জনসমাগম হঠাৎ করেই বেড়ে উঠে। সেদিকে বেশিরভাগই দিনই ভ্রুক্ষেপ করি না আমরা। আমাদের নতুন গজানো পাখা বিস্তার লাভ করে তীব্র ঝাঝালো গাজার ধোঁয়ায়। আর তাই উড্ডীয়মান আমাদের চোখ হয়তো এড়িয়ে যায় সৈকত অথবা দীপাদের গল্প অথবা আমরা জানতে পারি সেইসব কথা গল্পের ছুটে চলার মাঝে দিয়ে।
আমরা যখন তীব্র নেশাতে বুদ হয়ে যাই আমাদের আলোচনায় ছেলেধরার গল্প আবার চলে আসে। ছোটবেলায় স্কুলপালনো দুরন্ত ছেলেটিও যার কিংবা যাদের ভয়ে পোষ মেনেছিলো। সেই ছেলেধরার গল্পগুলো আজকে করলে জিনিসগুলোকে কেমন যেনো বেখাপ্পা মনে হয়। কারণ আমরা জানি আজকালকার ছেলেমেয়েদের ছেলেধরা অথবা মেয়েধরা নিয়ে খুব বেশি টেনশন নেই। আরও জানি তাদের সাথে তাদের মা'দের ক্রমাগত লেগে থাকার গল্প। তাদের মানসিক বিকাশ নিয়ে আমাদের যত ভাবনা তার চেয়ে ঢের বেশি ভাবনা তাদের পড়ন্ত যৌবনা মায়েদের শরীর নিয়ে। তাদের শরীরের প্রায় সব খাঁজ কিংবা প্রতিটা ভাজ আমাদের মুখস্ত হয়ে যায়, যদি বা না হয়ে যেতও কারো, আমাদের আড্ডা ভুলতে দেয় না কাউকেই। আমাদের আড্ডার আলোচনায় সেটা চলে আসে বিশ্রীভাবে। ছেলেধরা হয়ে তাদের জয় করবার উদগ্র বাসনা জেগে উঠে যেন।
ছেলেধরার গল্প যখন চলতে থাকত তখন আশেপাশের মানুষগুলোকে আমরা দেখতে পেতাম না। আর সন্ধ্যা নেমে আসা পড়ন্ত বেলায় ঠিক তখনই যে সৈকত হেঁটে যেত তার কথাও আমদের অজানা ছিলো। বাস থেকে নেমে রিকশা না নিয়ে একরাশ বিরক্তিতে সিগারেটের ধোঁয়া টেনে সৈকত হেঁটে যেত। তার হেঁটে যাওয়া কোন খবর তৈরি করত না বলেই হয়তো আমরা টের পেতাম না। কর্মকান্ত সেই শরীরটার পিছনেই যে লুকিয়ে আছে একটা গল্প সেটা তখন কে জানতো। ভুল বললাম মনে হয়। কারন আমরা আড্ডা দিতে দিতে জানতাম প্রতিটা মানুষের পিছনেই থাকে স্বপ্ন, উত্থান পতনের গল্প, জয় পরাজয়ের গল্প। আর দীপার বাবাকে আমরা অবশ্যই দেখেছি কোথাও। তবে তা নিশ্চয়ই দীপার বাবা হিসাবে নয়। দীপার বাবা পরিচয়টা তাকে এখন হয়ত সুপরিচিত করেছে কিন্তু তখন টং দোকানের সেই বুড়োকে দীপার বাবা বলে ভ্রম হবার কোন কারণ ছিলো না। এখন আমরা জানি দীপার নাম কারণ সে একজন অন্য ধর্মের ছেলের হাত ধরেছে। আমাদের সমাজের বিখ্যাত কিংবা আলোচিত হওয়ার এমন সস্তা পন্থা আমাদের মাথায় আগে আসেনি কখনও। আমাদের গাঁজার আসরে দীপার নামটি এখন আসে তার অহেতুক হিন্দু সংশ্লিষ্টতার জন্য। তার বিধর্মীপ্রীতি আমাদের ক্ষুব্ধ করে তোলে। এতগুলো ছেলে কখনোই অনুভব করতে পারি না আসল দীপাকে।ধর্মকে বর্ম করে অসহায় মেয়ের ভরা যৌবনা শরীরকেই আমরা কামনা করি। আমদের আড্ডা জমিয়ে তোলে সেইসব আলোচনায়।আমরা সেই দীপার মনকে বুঝতে চাইতাম না যেন কিংবা বুঝাটা কখনো গুরুত্বপূর্ণ ছিলো না যেনো। দীপার আকস্মিক অন্তর্ধান আমাদের আলোচনায় চলতে থাকে। আমাদের আলোচনা জুড়ে সে থাকে। তীব্রতা কমতে থাকে ক্রমাগত। তারপরে আড্ডা থেকে হারিয়েই যেতে বসেছিলো সেদিনটার আগে।
নীড়ে ফেরা পাখিগুলো যখন আপন ঠিকানার দিকে দৌড়ায় যখন আমাদের নেশার মাত্রা মোটামুটি চড়ে যেতে থাকে বেশ উচ্চমার্গীয় পর্যায়ে তখনই আমরা অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করি। আর আমরা তখনই জানতে পারি দীপার প্রতি সৈকতের দুর্বলতার কথা। আর তখনই হঠাৎ করে দীপার বাবাকে চিনি নতুন ভাবে। সৈকত-দীপার গল্পকে আমরা এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করি কিন্তু সৈকতের মাঝেকার কোন এক সত্ত্বা আমাদের কৌতুককর চোখগুলো থেকে নেশা কেড়ে নেয়। আমরা জানতে পারি সৈকতের পিছনের গল্পেও ছেলেধরা কিংবা মেয়েধরা আছে। জানতে পারি তার শৈশব বেলার ছেলেধরা অথবা মেয়েধরা আতঙ্ক নিয়ে। জানতে পারি সেই মানুষগুলোর নির্মমতা নিয়ে। আমরা আরো জানতে পারি সৈকতের একঘেয়ে যৌনজীবন নিয়ে যে গল্প আমাদের বেশি টানে। সৈকতের অতৃপ্ত স্ত্রীর জন্য আমরা খারাপ বোধ করতে থাকি। আমরা জানতে পারি সৈকতের অধরা ভালোলাগার গল্প যে ভালো লাগাকে সে স্বীকার করে উঠতে পারেনি কোনদিনও। আমরা জানতে পারি প্রতিদিনকার বিরক্ত সৈকতের হেঁটে যাওয়ার মাঝে দীপার বাবার টং দোকানের দিকে কিংবা আরো পরিষ্কার করে বললে দোকানের পিছনে তাদের বাড়ি হতে দীপার কন্ঠ খোঁজার নিরর্থক অথচ প্রাণান্তকর চেষ্টার কথা। সৈকতের কথাগুলো আমাদের কাছে নতুন গল্পের সন্ধান দেয়। নারী দেহের ভিতরকার মানুষটাকে খোঁজার অনুপ্রেরণা দেয়। সৈকত বলে চলে তার গল্প --- ঘোর লাগা মানুষের মতো। সৈকতের কথাগুলোই যেন জন্ম দিতে থাকে নতুন কোন গল্পের। বেরকিস নিরাসক্ত বিরক্ত ছেলেটির গল্প আমাদেরকে টানতে থাকে। তারপরে.. তারপরে আমরা আবার গ্রাস হয়ে যাই নেশা চাপা মস্তিষ্কের প্রভাবে।
আমরা আবার গাঁজায় বুদ হই । প্রতিদিনকার মতো আবার তাকাই দূরে দীপার বাবার টং দোকানটার দিকে। তারপরে অদেখা দীপার কথা মাথায় চলে আসে। সেই দীপা যার শরীরে স্তনে নিতম্বে ছেলেধরা অথবা মেয়েধরাদের আঁচড় লেগেছিলো। সেই দীপা যার প্রতি ভালো লাগা সৈকতের ছিল মাঝে দুটি প্রতিবন্ধকতার দেয়ালে আটকে। যার প্রতি ভালো লাগা থাকা শুধু করুণার জন্যই, তার পাশে দাঁড়ানোর জন্যই। আমরা সৈকতের ক্লীবতায় হাসি আর তার অতৃপ্ত স্ত্রীর শরীরকে জানার বাসনায় মেতে উঠি। দীপার শরীর ভোগ করা হিন্দু ছেলেটির প্রতি ঈর্ষা বোধ করি। রাত বাড়তে থাকে আমাদের গাঁজার আসর চড়তে থাকে। আমাদের আলোচনা নতুনভাবে জমে উঠে দীপা কিংবা সৈকতের বৌ কে নিয়ে। আর ছেলেবেলায় ছেলেধরা হবার বাসনা জেগে উঠতে থাকে উদগ্রভাবে। অতঃপর টং দোকানে বসে থাকা দীপার বাবার চিরায়ত ভঙ্গিতে দীর্ঘশ্বাস ফেলা কিংবা তার পেছনের বাড়িতে তার মায়ের কান্না আমাদের কাছে কৌতুককর মনে হতে থাকে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১০ রাত ১০:২৮