যে সময় টার কথা বলছি, তখন সম্ভবত ক্লাস এইটে পড়ি।
কি এক অস্বস্তিতে মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ট্রাউজার এবং উরুসন্ধির সাথে ভেজা আর আঠালো কিছু লেগে আছে। প্রথমে ভেবেছিলাম ঘুমের মধ্যে প্রস্রাবের বেগ সামলাতে না পেরে হয়ত বিছানা ভিজিয়েছি। কিছুক্ষণ পর কি ঘটেছে বুঝতে পারার সাথে সাথে অস্বস্তির সাথে প্রচন্ড লজ্জা এবং অপরাধবোধে কুকড়ে গেলাম।
সেবারই প্রথম ওয়েট ড্রিম এর সাথে পরিচয়। যেটাকে আমরা বাংলাতে 'স্বপ্নদোষ' বলে থাকি। ডাক্তারী ভাষায় এই অভিজ্ঞতা কে 'নকচার্নাল এমিশন' (Nocturnal emission) বলে অভিহিত করা হয়। পিউবার্টি ফেজ এ এসে প্রায় ৯৮% ছেলের ই এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের ও ওয়েট ড্রিম দেখার অভিজ্ঞতা হয়, তবে রেশিও টা ছেলেদের তুলনায় অনেক কম।
এবার আসুন ওয়েট ড্রিম কি এবং কেন হয় জানার চেষ্টা করি।
পিউবার্টি ফেজ অর্থাৎ বয়ঃসন্ধিকালের প্রাথমিক সময় গুলোতে ছেলেদের শরীরে নানা ধরণের পরিবর্তন আসে। মুখে এবং শরীরের অন্যান্য অংশে লোম গজায়। এ সময় শরীরের বিভিন্ন পৌরুষতন্ত্রের সঠিকভাবে বৃদ্ধি এবং নিউট্রিশন ব্যালান্সের জন্য ছেলেদের শরীর বেশি-বেশি পরিমাণে টেস্টোস্টেরন হরমোন তৈরি করতে থাকে যা মাঝেমাঝে ঘুমের মধ্যে র্যাপিড আই মুভমেন্ট স্টেজে এসে ছেলেদের ইরেকশন ঘটায়। এই ইরেকশনের কারনে ছেলেরা ঘুমের মধ্যে বিপরীত লিঙ্গের কারো সাথে সেক্সুয়াল ইন্টিমেসির স্বপ্ন দেখে এবং এক পর্যায়ে পুরুষাঙ্গ দিয়ে সিমেন (যা বাংলায় 'বীর্য' বলে পরিচিত) রিলিজ হয়। অনেক সময় ইরেকশন ছাড়াও স্বপ্নদোষ হতে পারে। শুধু যে টিনএজ বয়সের ছেলেরা-ই ওয়েট ড্রিম দেখে তা নয়, প্রাপ্তবয়স্ক যেকোনো পুরুষেরই এই অভিজ্ঞতা হতে পারে।
ওয়েট ড্রিমের কারনে ট্রাউজার কিংবা বিছানার চাদর ভেজানোর পর অনেকের নাও মনে থাকতে পারে। কারো কারো স্বপ্নের মধ্যে স্পার্ম রিলিজ হবার সময় ঘুম ভেঙ্গে যায়, আবার কারো ঘুম নাও ভাঙ্গতে পারে।
ওয়েট ড্রিমের অভিজ্ঞতা একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে। কেউ সপ্তাহে দুই তিনবার দেখতে পারে, কেউ মাসে একবার দেখতে পারে, আবার কেউ বছরে চার/পাচবার এই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে পারে। অবিবাহিত পুরুষদের তুলনায় বিবাহিত পুরুষরা ওয়েট ড্রিম খুব একটা দেখেনা বললেই চলে। কারন টা আর কিছু নয়, বিবাহিত পুরুষদের প্রায় নিয়মিতই সিমেন রিলিজ হয় ফলে টেস্টোস্টেরনের ব্যালান্স ঠিক থাকে। যে সকল পুরুষেরা রেগুলার মাস্টারবেট করে, তাদের ক্ষেত্রেও সেইম ব্যাপার টি ঘটে।
ওয়েট ড্রিম বা স্বপ্নদোষ সম্পুর্ন স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক একটি বিষয় যা ছেলেদের শরীরের প্রজননতন্ত্রের হরমোন গুলো ব্যালান্স করে। ওয়েট ড্রিম দেখার পর অনেক ছেলের মনে অপরাধবোধ এবং লজ্জা কাজ করে। কিন্তু যে জিনিসের উপর আপনার হাত নেই, সেটা নিয়ে অপরাধবোধে ভোগার কিছু নেই।
ইসলামিক দৃষ্টিতে ওয়েট ড্রিম দেখার পর যদি স্পার্ম রিলিজ হয়, সেক্ষেত্রে গোসল করা ফরজ হয়ে যায়।
ওয়েট ড্রিম দেখার সাথে ব্রণ ওঠা কিংবা ভঙ্গুর স্বাস্থ্যের কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের দেশের ফুটপাথে বসা হাতুড়ে গোপন রোগ বিশেষজ্ঞ ক্যানভাসারদের কারনে অনেকের মনে ওয়েট ড্রিম নিয়ে নানা ধরণের ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। এ ধরণের কিছু ভুল ধারণা ভাঙ্গার প্রয়াস হিসাবেই এই লেখার অবতারণা। আপনাদের জানার আগ্রহ এবং সাপোর্ট থাকলে সেক্স এডুকেশন নিয়ে পোস্ট কন্টিন্যু করব।
ওয়েট ড্রিম সম্পর্কে আরো কিছু জানার থাকলে, এ সম্পর্কিত কোনো প্রশ্ন থাকলে কোনো লজ্জা না করে মন্তব্য করতে পারেন। উত্তর দেবার চেষ্টা করব।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১৫ রাত ৯:১৫