‘ধারণা’ বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ইমেজ নির্ভর। ভুত দেখতে কেমন? কালো কুচকুচে আর অনেক রোগা। দৃশ্যের ভিতরে আসে কী আসে না এমন! চোর কেমন দেখতে? চোর আসলে মানুষ না। এদের কোন ঘরবাড়ি ও বাপ মা থাকেনা। দেখতে কালো কুচকুচে, ভুতের মতো। আর মুখে দাড়ি। গোসল করে না তিন সপ্তাহ। এই ধারণা দুটো হাওয়া প্রসূত। একদম একলা একলাই মনের ভিতর তৈরি হয়ে গেছে, সম্ভবতঃ সবারই এমন হয়। আর জিওগ্রাফি ও এথনেসিটি অনুযায়ী, ইমেজ কমবেশী একই রকম। বাঘ বিষয়ে আমার ধারণা ছিলো, বাঘ মানুষের মতো। ধমক ছাড়া কথাই বলে না।
বাঘ বিষয়ে আমার মাথায় যে ছবিটি, তা তৈরি হয়েছে হাশেম খানের আঁকা ছবি দিয়ে। আমার ও আমাদের ক্ষেত্রে একই ঘটনা। আমরা স্কুলে যাবার আগে হাতে পেয়েছি, প্রথমে ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রণীত বাল্যশিক্ষা ও পরে টেক্সটবুক বোর্ডের ক্লাস ওয়ানের বাংলা বই। বিভিন্ন ক্লাসের চয়নিকা। বাল্য শিক্ষার পরপরই, আমাদের দেখা সব ছবি আসলে হাশেম খানের ছবি।। “ভোর হলো দোর খোল/ খুকুমনি ওঠো রে...” শৈশবের প্রতিটি ভোরই আসলে হাশেম খানের ভোর। হাশেম খান ভোরের যে ছবিটি এঁকে দিয়েছেন সেই ভোর। বাস্তবের ভোরের সাথে প্রতিদিন মিলিয়েছি আমি ও অনেক শিশু, যে এই ভোরটি বইয়ের আঁকা ছবির মতো কী না। বাস্তবে একেকদিন একেক রকম ভোর হয়। তার ভিতর কোন একদিন এই ভোর হুবহু হাশেম খানের ভোর, বইয়ের ভোর। ঘোর।
জীবনে প্রথমবারের মতো হরিণ দেখেছি চিড়িয়াখানায়। তখন টু’তে পড়ি। তার আগে হারিণ দেখিয়েছেন হাশেম খান। বইয়ের পাতায়। চিড়িয়াখানার হরিণ দেখে হতাশ হয়েছি, এই হরিণ হাশেম খানের হরিণের মতো মায়াবতী না। বরং কিছুটা বোকাচোদা। বোধ কম। যদিও হাশেম খান বনের হরিন একেছিলেন। বনের হরিণই আসলে মনের হরিণ হয়ে যায়।
আমাদের পড়া সব গল্পই সাদাকালো। আমাদের গল্পের দৃশ্যে রৌদ্রকরোজ্জল দিন নেই। দৃশ্যগুলি, চিত্রপটগুলি মেঘলাদিনের। গল্পের প্রতিটি দিনই মেঘলা দিন। দুই একটা পাখি আকাশে ওড়ে। এরকম দিনে, গাছের ডালে মাছ লুকাতে আসেন গল্পের বুড়ো, তার বুড়িকে নিয়ে। “মৎস্য বসেন গাছে/ জলে খরগোশ নাচে/ গুপ্ত রতন খুঁজলে পাবে/ খুঁড়লে তারই পাশে”
হাশেম খানের মনন দিয়ে যে দৃশ্য আমাদের শিশুমনে এস্টাব্লিশ হয়েছিলো তা মেঘলা আর ফুরফুরে, গুমোট না আবার। কে জানে, হাশেম খান মেঘলাদিনের ছবি একেছিলেন কী না! সেই যে বেড়ালের গলায় বয়ম আটকে গেলো। বেড়াল বনে গিয়ে বাঘিনীকে ধমক দিলো। গল্পে পরিস্কার বলা আছে, বাঘিনী শাবকদের নিয়ে শীতের রোদ পোহাচ্ছিলেন। তারপরও আমার মনে হতো, দিনটি মেঘলা। যেই দিনে, অন্য গল্পের ছেলেটি অর্থাৎ আমি কিংবা অন্য কেউ, মনের দুঃখে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে আর ফিরে আসবে না।
(সংক্ষেপিত)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৩৩