অনেকদিন পর আজ ব্লগ লিখতে বসলাম। আসলে মাঝখানে আমার ধারনা হয়ে গিয়েছিল যে, যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই লেখালিখি তা আসলে পূরণ হয় না। যারা আগে থেকেই আমার মতো ভাবেন,তারাই আমার ভাবনাকে সমর্থন করেন, আর যারা ভিন্ন মতাদর্শের তারা ২ লাইন পড়ে আর পড়েন না অথবা পড়ার পর “হুহ...” জাতীয় অনুভূতি নিয়ে কেটে পড়েন অথবা “তাল গাছটা আমার” নীতিতে এমন এক তর্কে নামেন যা ঝগড়ার নামান্তর । যুক্তি- তর্ক যত যাই দেখানো হোক দুই পক্ষের কেউই নিজেদের অবস্থান থেকে বিন্দুমাত্র সরেন না ।
কিন্তু তারপরও আমাদের মতো সাধারণ মানুষ নিজের মনের কথাটা বলতে পারলে স্বস্তি বোধ করে । মনের ক্ষোভ , হতাশা একটু হলেও কেন যেন কমে যায় লেখার পর । (যদিও “গোঁড়া” মন্তব্যকারীদের “তর্কের” বাহার দেখে তা অনেকসময় দ্বিগুণ হয়ে যায়... ) যা হোক, আসল কথায় আসা যাক ...
আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন বিদেশের প্রতি আকর্ষণের ১ টা বড় কারণ ছিল সেখানকার মেয়েদের পোশাক আশাক , তাদের যৌনজীবন । সঠিক যৌন শিক্ষার অভাবে -বন্ধু বান্ধব, সিনেমা , টেলিভিশন ও ব্লু-ফিল্ম এর মাধ্যমে তৈরি হওয়া অসুস্থ ও নোংরা যৌন চেতনা থেকে মনে হত সেক্স এর ওপরে দুনিয়ায় আর কোন কিছু নাই...এত্ত এত্ত সেক্স করাই জীবনের সার্থকতা...বাংলাদেশেও যে কবে OPEN SEX এর দেশ হবে সেই আশায় বসে থাকতাম...
কিন্তু যখন বড় হওয়া শুরু করলাম (ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে)- বাস্তবতা ততই বুঝতে পারলাম। আমার মতো সাধারণ একটা ছেলের তীব্র আকাঙ্ক্ষার পাশ্চাত্যের “উত্তেজনাকর”, “জোস” ব্যাপারগুলোর বেশীরভাগই যে আসলে কিরকম বিকৃত তা দিন দিন বোঝা শুরু করলাম...
মানুষের লিঙ্গ ২টা – পুরুষ আর নারী । দুনিয়ায় মানুষ আগমনের শুরুতে ব্যাপারটা কেমন ছিল তা আমার জানা না থাকলেও পরবর্তীতে কোন এক কারণে নারীকে “কমজোর”,”নির্ভরশীল” মনে করা শুরু হল- ফলে মেয়েদের কাজকর্ম , চিন্তাধারা অনেকটা “কমজোর” ও “নির্ভরশীল” দের মতো হয়ে গেল...ধীরে ধীরে হাজার বছরের বিবর্তনের ধারায় এই ধারনা ছেলে- মেয়ে সবাইকে গ্রাস করল-মেয়েরা প্রকৃতপক্ষেই “কমজোর”,”নির্ভরশীল” তথা দ্বিতীয় লিঙ্গ হয়ে গেল...
কেউ যেন মনে না করে যে এটাই প্রকৃতির নিয়ম- নারীদেরকে এভাবেই পুরুষের চেয়ে “নিম্নমানের” ভাবে তৈরি করা হয়েছে । বরং সকল মানুষ ই জন্মের সময় প্রথমে মেয়ে থাকে । কয়েক সপ্তাহ পরে Y chromosome মেয়েকে ছেলে বানায় । মেয়েই আসে শুরুতে তারপর ছেলে। মেয়ে থেকেই ছেলের উৎপত্তি (*১)। আর আজকের এই দশা ক্রমান্বয়ে এসেছে ক্রমাগত বিবর্তনের এক ধারায়। বিবর্তনের বিপক্ষে প্রচুর সমর্থক আছে পৃথিবীতে – বাংলাদেশে তো ভরপুর । কিন্তু বিবর্তন আজ পরীক্ষিত সত্য। চাইলে ইন্টারনেটে মুক্ত মন নিয়ে সার্চ দিন- বুঝবেন , প্রমাণ পাবেন ।অন্যান্য বিশাল বৈজ্ঞানিক যুক্তি-প্রমাণ বাদ দিয়ে সহজ ২টা উদাহরণ দেই । (আমি বায়োলজির ছাত্র না- তাই সেগুলো ভালমতো বলতেও পারব না , তবে ব্যাপারটা যে সত্য টা আমি খুব ভালোভাবে জানি ।আর বিজ্ঞান বিশ্বাসের ব্যাপার না- জানার ব্যাপার –যুক্তি-তর্কের ব্যাপার)
উদাহরণ ১:
আমরা সবাই জানি সন্তানের জন্ম দিতে মায়েদের কি পরিমাণ কষ্ট হয়। সবচেয়ে বড় কষ্টকর ব্যাপারটা হল সন্তানের মাথা বের হওয়া । যে পথ দিয়ে সন্তান বের হয়- তা এই কাজের জন্য সঠিক মাপের নয় । বিজ্ঞানীরা দেখেছেন আদিম যুগে মানুষের মাথা ছিল ছোট ! তখন প্রসবকালে এতটা কষ্ট হত না। কিন্তু মানুষের মস্তিষ্কের উন্নতি হয়েছে দ্রুত- তাই মাথার আকার বেড়েছে – কিন্তু Vagina তো তার সাথে তাল মিলিয়ে বড় হয়নি । আর তাই দিন দিন মায়েদের প্রসবকালে যন্ত্রণা বাড়ছে। এটা কি মনো-দৈহিক বিবর্তন এর প্রমাণ না?
উদাহরণ ২:
প্রাচীনকালে মানুষের শারীরিক কাঠামো ছিল ভিন্ন- শক্তি ছিল অনেক বেশি । ধীরে ধীরে মানুষ বাহুবলের বদলে নিজেদের প্রজ্ঞা , মেধা , বুদ্ধিকে ব্যবহার করেছে- পেশী শক্তির চেয়ে মাথার পরিশ্রম , ব্যবহার হয়েছে বেশি – ফলশ্রুতিতে আজকের মানুষ আগের দিনের মানুষের চেয়ে অনেক ভিন্ন- শারীরিক ক্ষমতা কম- কিন্তু মস্তিষ্কের ক্ষমতা অনেক বেশি... আদিম যুগের মানুষের বৈজ্ঞানিক নামটা পর্যন্ত আলাদা । বিবর্তনের মাধ্যমে দিন দিন কত নতুন ভাইরাস,ব্যাক্টেরিয়া তৈরি হচ্ছে...(এরা ক্ষুদ্র বলে বিবর্তন-মিউটেশন সহজে হয়) এর পরও যদি কেউ বিবর্তনে বিশ্বাস না করে- তাকে বোঝানোর কোন মানে নেই । মানুষ বিবর্তনের মাঝ দিয়ে এসেছে- এটা নিয়ে হয়ত ধর্মীয় কারণে তর্ক থাকতে পারে। কিন্তু মানুষ আগমনের পর থেকে যে বিবর্তিত হয়েছে- এই সত্যটা আশা করি সবাই মানবেন।
কিছু মানুষ আছে যারা বাঘ-কুকুরের উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করে যে প্রকৃতির নিয়মই হল মেয়েরা পুরুষের “আনন্দের” জন্য তৈরি । হুমায়ূন আহমেদ টাইপ কিছু লেখকও এই ধরনের চিন্তা আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেয়। কিন্তু তাদের মাথায় তখন পিঁপড়া , মৌমাছি , Betta strohi মাছের উদাহরণ মাথায় আসে না। (*৪)বাঘিনী,মেয়ে-কুকুর যেমন বাঘ-কুকুরের ছেড়ে যাওয়া সন্তানকে আগলে বড় করে, ছেলে Betta strohi ও তেমনিভাবে Betta strohi সন্তান মুখে আগলে রেখে বড় করে। এরকম মাছ আরও অনেক আছে । কিছু প্রজাতিতে পুরুষ মুখে ডিম নিয়ে তা দেয় ।এদেরকে Mouthbrooder মাছ বলা হয় ।আর কিছু প্রজাতিতে পিতা সন্তানের সাথে সাথে থাকে- বিপদে পোনারা তাদের বাবার মুখে ঢুঁকে যায়...নিশ্চয়ই টিভিতে দেখেছেন এটা। পিঁপড়া – মৌমাছিদের সমাজে নারী যে পুরুষের ঊর্ধ্বে তা তো সবাই জানে ।আসলে প্রকৃতিতে ২ টাই ঘটে । কোন প্রজাতিতে পুরুষ হয় “নায়ক”, কথাও নারী হয় “নায়ক” (“নায়িকা” না )। তাই “প্রকৃতির নিয়মে নারীরা পুরুষের চেয়ে নিচে” –এই ভাবনা যেন কারও মাঝে না থাকে ......এটা আমাদের সৃষ্টি করা নিয়ম – প্রকৃতির না । কোন এক সময় মেয়েরা পুরুষের চেয়ে “দুর্বল” হয়ে গিয়েছিল সাময়িকভাবে । পরে তারা সেই “দুর্বলতায়” অভ্যস্ত হয়ে যায় । আর হাজার বছরের পরিক্রমায় এই দুর্বলতা তাদের জিন এ গেঁথে গেছে পাকাপাকিভাবে ...
প্রাচীন ধর্ম ও সমাজব্যবস্থাগুলো ও তাই প্রমাণ করে । সেখানে নারীরাই ছিল “নায়ক” । সময়ের সাথে এক বিকৃত বিবর্তনে নারীজাতি আজকের “মেয়ে” তে পরিণত হয়েছে । আর তাই পরবর্তী সময়ে আসা ধর্ম-সমাজ সবকিছুতে “নারীরা দুর্বল” ফুটে উঠেছে ।
আমি আসলে এখনো আমার মূল বিষয়ে আসিনি । আমার লেখার বিষয়বস্তু প্রাচীনকাল বা বিবর্তন না- বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ।
আবার ছোটবেলায় ফিরে যাই-
একটু আধটু জ্ঞান হবার পর থেকে মাথায় ১টা জিনিস কাজ করত –পাশ্চাত্যের “উন্নত” দেশগুলোতে নারী-পুরুষ বৈষম্য অনেক কম । ওখানকার মেয়েরা Freely কাজকর্ম করে – রাস্তায় চলাফেরা করে । তারা ছেলেদের মতই পোশাক আশাক পরে । অযথা নিজেকে অতিরিক্ত ঢেকে ঢুঁকে রাখে না । ওখানে ছেলে মেয়ে হাজারবার সেক্স করলেও কেউ খারাপভাবে তা দেখে না। এটাই তো ন্যাচারাল- এটাই তো হওয়া উচিৎ । আর এ জন্যই ওরা আসলে এত উন্নত ।যত সমস্যা আমাদের এই কনজারভেটিভ দেশগুলোতে ।
কিন্তু ঘটনা কি আসলেই তাই?
আবার মন দিয়ে এখন সেই মুভিগুলো দেখা উচিৎ আমার, যেগুলো দেখে এই ধারনা তৈরি হয়েছিল । তাহলে আমি হয়ত এখন দেখতে পেতাম (যা তখন পাইনি) তা হল মুভিতে নায়কটা পুরো সিনেমাতে সাধারণ কাপড় পরে অভিনয় করেছে। দরকারে ২-১ বার হয়ত জামা খুলেছে কিন্তু এর বেশি কিছু না... আর মুভির নায়িকাটা? সে তো মোটামুটি ৫০ ভাগ দৃশেই তার স্তনের কিয়দংশ বের করে রেখেছে , হাঁটুর নিচে কাপড় যায়ই না। জামার হাতা- সেটা আবার কি????ছেলেরা শৌর্য-বীর্য , “Personality”, পেশা –এসব মানবিক(পেশা মানবিক না হলেও সেটা নিজের মন-মাথা দিয়েই বেছে নিতে হয় ।) দিক দিয়ে আকর্ষণীয় হবে (শারীরিক সৌন্দর্য তো আছেই, কিন্তু ছেলেদের ক্ষেত্রে তা এসব দিয়ে পোষায় নেয়া যায় ),বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষণ করবে । আর মেয়েরা তাদের রূপ-সৌন্দর্য আর শরীরের মতো বস্তুগত জিনিস দিয়ে তা করবে...তাহলে মেয়েদের সাথে বস্তুর কি পার্থক্য?
পাশ্চাত্যে মেয়েদের normal dressup ই হয়ে গেছে শরীর দেখানো মতো। আমাদের কারো চোখে এটা খারাপ, আবার কারও বা HOT, SEXY লাগলেও তাদের কাছে এটা স্বাভাবিক ।
“তাদের কাছে এটা স্বাভাবিক” –এই কথাটা আমরা প্রায়ই বলি এবং পুরো ব্যপারটা পাশ কাটাই Culture এর দোহাই দিয়ে । কিন্তু ১টি বার ভাবুন- ছেলেরা নিজেদের শরীর ঢেকে ঢুকে রাখবে আর মেয়েরা যথাসম্ভব তা দেখিয়ে বেড়াবে , ছেলেরা মানবিক গুন দিয়ে আকর্ষণীয় হবে আর মেয়েরা দেহ দিয়ে হবে – এটা যখন ১টা সমাজের চোখে “NORMAL” লাগে তখন সেই সমাজের আর কি বাকি থাকে?? (যেভাবে চলছে তাতে হয়ত একদিন আমাদেরও এটাই “NORMAL” লাগবে- আর খারাপ মনে হবে না...)
অনেকে নারীদেহকে “অনিন্দ্য সৌন্দর্য”, “দেখার মতো জিনিস”, “সুন্দর সৃষ্টি” ইত্যাদি উপমা দিয়ে সেটাকে “মেলে ধরার” পক্ষপাতী । কিন্তু এই “নারীদেহ” কাদের কাছে “অনিন্দ্য সৌন্দর্য”, “দেখার মতো জিনিস”, “সুন্দর সৃষ্টি” ?? অবশ্যই তা ছেলেদের কাছে ...আর মানেন আর না মানেন এর কারণ যৌনতা ছাড়া আর কিছু না । (কিছু অনবদ্য শিল্পকলায় হয়ত সত্যিকার অর্থেই Neutrally শুধুমাত্র সৌন্দর্যের sense থেকে এর বন্দনা করা হয়েছে- কিন্তু তার সংখ্যা নগণ্য । আর ওগুলো special case- ওগুলো ১ শতাব্দীতে ২-১টা সৃষ্টি হয় )
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে আমরা ধরেই নিয়েছি ছেলেদেরকে আনন্দ দেয়া, যৌন সুড়সুড়ি দেয়াই মেয়েদের কাজ !!! তাই নয় কি ??? নারীরা শো-কেসে সাজানো শো পিস এর মতো – প্রদর্শিত হওয়াই তাদের কাজ । পুতুলের প্রাণ নেই-তাই কেউ তাকে আনন্দ দেয় না । ছেলেরাও মেয়েদেরকে আনন্দ দেয়ার জন্য জননাঙ্গ অর্ধেক বের করে ঘুরে না,জননাঙ্গ চেপে ধরা-ফুলে থাকা পোশাক পরে না । কিন্তু মেয়েরা তাদের জন্য এটা করে...এবং খুব আনন্দের সাথেই করে এবং তারপর “নারী স্বাধীনতা” নিয়ে লাফালাফি করে ...... তারা নিজেরাই নিজেদেরকে ছেলেদের পণ্যে পরিনত করেছে – নিজেদেরকে শুধুই আনন্দের খোরাক বানিয়ে ফেলেছে । কি উন্নত যুগে আমরা বাস করছি!!!...আর আমাদের মনের অজান্তেই (কারণ আমরা মন বন্ধ করে রাখি-ভেবে দেখি না কিছু) এই নোংরা চিন্তাধারা আমাদের মনে গেঁথে যাচ্ছে... অসভ্য বর্বর যুগে আবার ফিরে যাচ্ছি আমরা নতুন আঙ্গিকে ...
পরবর্তী আলোচনায় যাওয়ার আগে একটা জিনিস নিয়ে কথা বলা দরকার –বর্তমান ভারতীয় কালচার ।
ভারত এখন দুনিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশগুলোর ১টা । সম্মান করার মতো নানা দৃষ্টান্ত আছে ভারতের । কিন্তু আজ আমি তাদেরকে ঘৃণা করার ২-১ টা কারণ বলব-
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ৫ জন ধনীর ২ জন ভারতের ।আবার সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যেও প্রথম সারিতে আছে ভারত । বৈষম্যের এই তীব্রতা শুধু অর্থনৈতিক না- এটা তাদের দেশের সবখানে । জ্ঞান- বিজ্ঞান , শিক্ষা – এসব দিকে না গিয়ে আজ তাদের কালচার নিয়েই শুধু কথা বলব ।
ভারত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র , কিন্তু তাদের দেশের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সারা বিশ্বে কুখ্যাত । তাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দল নির্বাচনে দাঁড়ায়। ভারতে আইন করে সমকামিতা , Live Together সিদ্ধ করা হয়েছে । কিন্তু আজও তাদের দেশে সতীদাহের খবর পাওয়া যায় ...
ভারতের টিভি চ্যানেলগুলোর বাংলাদেশে রমরমা কদর । এসব চ্যানেলে দেখানো হয় ঝকঝকে তকতকে এক কালচার । দেখে মনে হয় ভারত আমেরিকাকেও হার মানিয়েছে । মেক-আপের সাগরে ভাসা সিরিয়ালের পাত্র-পাত্রী(অপূর্ব কাহিনী ও অসাধারণ শব্দশৈলীর কথা এখানে না-ই বললাম...), আলোয় উদ্ভাসিত ঝকঝকে তকতকে প্রাসাদতুল্য ঘরবাড়ি দেখে মাথা ঘুরে যায়। দেশের বাইরে শুটিং হওয়া অধিকাংশ সিনেমা দেখে মনে হয় ভারত আর আমেরিকা তো একই জিনিস ।
কিন্তু ভারত কি আসলে তাই??
ডিডি ন্যাশনাল টাইপের সরকারী ভারতীয় চ্যানেল-এ এখনো প্রাথমিক শিক্ষা , টিকা দান, কন্যা সন্তানকে মানুষের মর্যাদা দেয়া, বাল্যবিবাহ রোধ করা নিয়ে বিজ্ঞাপন দেখানো হয়...
ভারতের “মিডিয়া কালচার” কিন্তু পুরপুরি মিথ্যা না- এটা ভারতের মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের কালচার , যারা পাশ্চাত্যকে অনুকরণ করার ছ্যাঁচড়া পণে ব্রত । এই কালচার আসল ভারতের, ভারতবর্ষের কালচার না । এটা ১ টা বিকৃত ধারা । যে ধারা নোংরামিতে এখন ১ নাম্বার । ইংলিশ মুভিও বাবা-মা সহ দেখা যায়- হিন্দি যায় না । একেকটা হিন্দি গানের ভিডিও তো বিকৃত-মনের মানুষেরও ঘিন্না ধরায় ।আর গানের কথা?”আমার নাম শীলা,শীলার অনেক যৌবন,আমি প্রচণ্ড যৌন আবেদনময়ী-কিন্তু আমি কারও ‘হাতে’ যাই না...” প্রতিটা গানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অর্ধ-নগ্ন মেয়েদের নোংরা নাচ। Hollywood এর ভাল দিকগুলো তারা গ্রহণ করতে পারেনি।পারেনি তাদের নিজ কালচারকে ধারণ করতে । আবার Western এর মতো পুরপুরি নগ্ন ও হতে পারেনি । কিন্তু অনুকরণ তো করতেই হবে... তাই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে তাদেরকে অর্ধ-নগ্ন থাকতে হবে - নইলে তো আর “আধুনিক” হওয়া যাবে না- “স্মার্ট” হওয়া যাবে না... Western Culture এর চেয়েও ভয়াবহ নোংরা কালচার আমাদের পাশে ফণা তুলে বসে আছে আর দংশাচ্ছে পশ্চিমাদের চেয়ে অনেক অনেক বেশি ...
এতক্ষণ ভারত নিয়ে অনেক কথা বললাম- কারণ বিশাল ভারতের পাশে আমরা ছোট্ট ১টা দেশ । সবদিক দিয়ে তাদের দ্বারা আমরা প্রবলভাবে প্রভাবিত। ভারতীয় চ্যানেল , সিনেমা – সবকিছুরই অবাধ বিচরণ বাংলাদেশে । এই অবাধ বিচরণ কিন্তু থামানো যাবে না। চেষ্টা করাও হবে বোকামি । এই যুগে আমরা অবশ্যই সবকিছুর সান্নিধ্যে আসব- আসতেই হবে । কিন্তু সেই সবকিছু থেকে আমরা খারাপটাকে চিনে নিয়ে বর্জন করতে পারব না? এটা তো আমাদেরকেই করতে হবে ।এতটুকু বুদ্ধি-বিবেক-শক্তি আমাদের নেই??
আমাদের দেশের বেশীরভাগ মেয়ের(মেয়ে=মেয়ে,মহিলা সব...) প্রিয় টিভি চ্যানেল হিন্দি সিরিয়ালের চ্যানেলগুলো । সিনেমা ও সিরিয়ালের জগতই তাদের কল্পনার জগত । নাজিয়ার মতো ২-১ টা মেয়ে আছে যারা M.I.T তে গিয়ে বুঝিয়ে দেয় মেয়েরা সবদিক দিয়েই সব পারে ।কিন্তু অন্য মেয়েরা তা বুঝতে চায় না। আর তাই ম্যাথ অলিম্পিয়াডে ১০ টা ছেলের পর ১ টা নাজিয়াকে পাওয়া যায় । কিন্তু সভ্য সমাজের সব মেয়েই তো এখন পড়াশুনা করে- তাহলে সমস্যাটা কী?
সমস্যাটা হল স্কুল-কলেজ-প্রাইভেট-Boyfriend-“JUST FRIEND” এই কয়টা জিনিস ই তাদের জগত ।(ছেলেদেরও তাই) তার সাথে আছে সিনেমা-সিরিয়াল ও তথাকথিত আবেগ এর ভার্চুয়াল জগত । এর বাইরে আর কিছু নাই। আধুনিকতা প্রকাশের জন্য বসুন্ধরা সিটিতে বান্ধবী ,Boyfriend ও “JUST FRIEND” দেরকে নিয়ে ঘোরা যায়, ভ্যালেন্টাইন্স-ডে তে কার্ড-চকলেট কেনা যায় । কিন্তু সাইন্সের স্টুডেন্ট হয়ে “কলেজ বায়োলজি” ছাড়া আর কোন আধুনিক বিজ্ঞানের(আধুনিক শব্দটি না হয় বাদ-ই দিলাম) বই কিনে পড়া হয় না।
বাংলাদেশে মোটামুটি সব মেয়ের ই “স্বপ্ন” থাকে ডাক্তার হওয়া । প্রতি বছর সরকারি মেডিকেলে অর্ধেকের মতো মেয়ে ভর্তি হয়। বের হয় কয়জন তা আমি সঠিকভাবে জানি না , তবে এই বছর বগুড়া মেডিকেল থেকে মেয়ে পাশ করে বের হয়েছে ৫ জন । (ভর্তি হয়েছিল ঠিক অর্ধেক) । পুরো মেডিকেল এর পরিসংখ্যানটাও এরকম ই হবে হয়ত । দেশে ভাল মহিলা ডাক্তার কয়জন আছে তা দেখেও বোঝা যায় যে জাস্ট ১টা রোমান্টিক তথা আবেগী চেতনা থেকে তারা মনে করে তারা “স্বপ্ন” দেখে ,কিন্তু আসলে তা সত্যিকারের স্বপ্ন নয় (অনেক মেয়ে দেখে কিন্তু সমাজের কারণে তারাও আগাতে পারে না-“ডাক্তারির এত লম্বা পড়া শেষ করার পর বুড়ি মেয়েকে বিয়ে করবে কে?”-এই মহান চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা পড়াশুনার মাঝেই মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেয় আর ভাবে “বিয়ের পরে পড়বে-সমস্যা কী?” কিন্তু তারা নিজেরাও জানে যে সেটা কত বড় সমস্যা ) সারাদিন কোচিং করে- বই মুখস্থ করে প্রশ্ন কিনে তারা মেডিকেল এ Chance পায় এবং তারপর তাদের “স্বপ্ন” পূরণ হয়ে যায় ...
হিন্দি-ইংলিশ নোংরামি দেখে আমাদের দেশের মানুষও নোংরামিটাকেই স্মার্টনেস ভাবছে । মেয়েরা ভাবছে নিজের শরীরের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলার মতো জামা কাপড় পরাটাই স্মার্টনেস ,নারীমুক্তি,আধুনিকতা আর অনেক বেশি Cool.. “প্রথম আলো”র “নকশা”এর মতো ম্যাগাজিনও তাদেরকে এটাই শিখায়।(“প্রথম আলো”র মতো ১টি পত্রিকা কিভাবে এরকম একটি কাজ করতে পারে তা আমি বুঝে পাই না... ) তাই নিজের স্তনের আকৃতি সবাইকে দেখিয়ে চাপা কামিজ, টিশার্ট , ফতুয়া পরে তারা ঘুরে বেড়ায় । জামার গলা হয় স্তনের ক্লিভেজ দেখানোর জন্য যথেষ্ট আর হাতা হয় মাইক্রোস্কপিক । আর ছেলেরাও HOT girlfriend অথবা “JUST FRIEND “ বানানোর জন্য এসব মেয়ের জন্য পাগল হয়ে থাকে । যা দেখে অন্য Normal মেয়েরা হীনমন্যতায় ভোগে ও তারাও একসময় তার বান্ধবীর মতো “HOT” হবার আপ্রাণ চেষ্টা করে । ওদিকে টিভিতে মেয়েদের কসমেটিকস এর বিজ্ঞাপনে আমাদের মেয়েদেরকে দেখানো হয় – “তুমি মেয়ে- তুমি সুন্দর, সেক্সি না হলে তোমার জীবনের কোথাও সফল হতে পারবে না ।” একটা জাতিকে অসুস্থ বানাতে এর চেয়ে বেশি আর কি লাগে? আমাদের সবার এখন ধারনা হয়ে যাচ্ছে মেয়েদের সৌন্দর্যই সব, তারা দেহ-সর্বস্ব । হুমায়ূন তার বইতে লিখছেন “হরিণ সুন্দর চোখে আর ননারী সুন্দর বুকে”!!!!
এখানে ১টা জিনিস Clear করা দরকার – টিশার্ট , ফতুয়া মেয়েরা পরতে পারবে না- আমি কিন্তু তা মনে করি না। ড্রেস ১টা পরলেই হল । কিন্তু টা যেন হয় শালীন ।আর এই শালীনতা যেমন টিশার্ট পরে রক্ষা করা যায়, তেমনি বোরকা পরেও ভঙ্গ করা যায়। Easy Feel করার জন্য, Relaxation এর জন্য টিশার্ট অবশ্যই best । কিন্তু...
এখন মেয়েরা যেসব টিশার্ট পরে সেগুলো কি নরমাল টিশার্ট ?? মেয়েদের জন্য টিশার্ট আলাদা- ওগুলোর হাতা হয় ছোট, গলা হয় বড় আর সাইজ এমন হয় যেন তা লেপটে থাকে গায়ের সাথে- যে পরে তার দিকে তাকালেই যেন তার ফিগার আমাদের চোখকে টেনে ধরে রাখে , তার হাঁটাচলার সাথে সাথে স্তনের স্পষ্ট নড়াচড়া যেন আমাদেরকে পাগল করে দেয়...শরীরের বাঁকগুলো আমাদের বুকে কাঁপন তোলে ,তাকে বিছানায় পাবার জন্য মন ছটফট করে । বন্ধুর কানে ফিসফিস করি- “দোস্ত, মাগীটারে দেখ......উফফফ......দোস্ত...লাগামু......লাগামু...”
এরকম ড্রেস কি Easy Feel করার জন্য, Relaxation এর জন্য পরা হয়?নাকি নিজের দিকে বিপরীত লিঙ্গের কামাতুর দৃষ্টিকে উপভোগ করার জন্য পরা হয়?? যে মানুষ নিজের প্রতি অন্যের এরকম মনোভাব তৈরি করাতে চায়-পছন্দ করে সে কতটা FREAK ?? তাদের যখন এসব এতই মজা লাগে তখন তারা গলায় ১টা “Open For SEX” লেখা signboard ঝুলায় রাস্তায় ঘুরলেই পারে- তারপর রাস্তার সব মানুষের “উত্তপ্ত ভালবাসা” দিয়ে নিজের দেহ-মন ভরিয়ে তারা বাসায় ফেরত যাবে....
যদি তারা ওপরের কাজটাও করত এবং দেহ-মন শান্ত হবার পর নরমাল লাইফ কাটাত – আমার মতে সমাজের এখনকার চেয়ে কম ক্ষতি হত। ১টা অপূর্ণ সহজাত প্রবৃত্তিকে বিকৃতভাবে উস্কে দেয়া হত না...বন্ধুর কানে ফিসফিস করা সেই ছেলেটির অতৃপ্ত, উস্কে যাওয়া যৌনাকাঙ্ক্ষার শিকার অন্য কোন অবলা মেয়ে হত না... সারাদিন যৌন সুড়সুড়িতে থেকে অসুস্থ মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠত না যুব-সমাজ। যে ক্ষুধা তৈরি করত মেয়েটি-তা আবার সে মিটিয়ে দিত ।
বাংলাদেশে ইভ টিজিং , ধর্ষণ বৃদ্ধির এগুলো ও কি কারণ না?? একদিকে বিবেকহীনতার কারণে, মানুষের মূল্যবোধ এমনিতেই কমে গেছে বহুগুণে । ছোট থেকে সেক্স বিষয়ে সঠিক জ্ঞান না থাকায় বিকৃত জিনিসকেই আমরা সঠিক ভাবছি । আবার ১টি দল আছে যাদের মাঝে ধর্ম-মূল্যবোধের কিছুটা অবশিষ্ট থেকে সেটার সাথে - সাথে নোংরামি মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে ... সেই দলটি পুরপুরি অভদ্রও হতে পারছে না-ভদ্র ও থাকতে পারছে না। সেক্স করছে না ধর্ম ও সতীত্বের ভয়ে– কিন্তু সেক্স এর সুড়সুড়ি দিচ্ছে সব মানুষকে। ২ এর মাঝখানে থেকে আরেক বিকৃত রুচির পাগল মানুষ হয়ে গেছে তারা । ১জন মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিকে যদি সুড়সুড়ি দিতে থাকা হয়- সে তো খুব সহজেই বিকৃত কাজে ঝাঁপিয়ে পড়বে...মনোবিজ্ঞান তো তাই বলে...আর তাই নারী-পুরুষের স্বর্গীয় আকর্ষণ, অনুভূতি প্রকাশ পাচ্ছে ইভ টিজিং- ধর্ষণ দিয়ে। এরকম দুঃখ আর কি হতে পারে?
বউ পেটানো,নারী নির্যাতন আগে ছিল অশিক্ষিতের কাজ- এখন তা ভদ্র সমাজে ঢুঁকে গেছে। বুয়েটে পড়া ছেলে তার ৭ বছর প্রেম করে বিয়ে করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা স্ত্রীর ওপর নির্যাতন চালায়- এর মতো হতাশা আর কয়টা আছে??আর এর পেছনে কারণ?? কারণ মেয়েরা আছে দোটানায়। কর্মক্ষেত্রে , বিদ্যাপীঠে মেয়েরা এখন সামাজিকভাবে অনেক সম্মানিত। কিন্তু মেয়েদের ১টা দল তাদের নিজেদের আত্মসম্মান,মনুষ্যত্ব বিসর্জন দিয়ে বিপরীত লিঙ্গের কাছে দিনদিন সেক্স টয় তে রূপান্তরিত হচ্ছে।আর তারাই বোধকরি দিনদিন দলে ভারি হচ্ছে...Western country গুলতে এখন যেকোনো কিছুর “সৌন্দর্য বর্ধনের” জন্য নারী ব্যবহৃত হয় । খেলার উত্তেজনা বাড়াতে, দর্শকদেরকে তুষ্ট করতে তাদেরকে নাচানো হয়...যদি ছেলে মেয়ে সবাই নাচত – একই রকম জামা কাপড় পরে তাহলে না হয় সেটাকে স্বাভাবিকভাবে নেয়ার চেষ্টা করা যেত । কিন্তু তা তো হয় না। Cheerleader হয় মেয়েরা ।অনেক সময় দলে কিছু ছেলেও থাকে, কিন্তু তারা “প্রধান আকর্ষণ” না। তাদের ড্রেস আপ ও থাকে স্বাভাবিক । দিন দিন আমরা যে আদিম যুগে ফিরে যাচ্ছি এটা কি তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ না?
Western ও Indian (Indian টা আসলে Western এরই অপভ্রংশ )এই দুই দিকের সাপের ছোবলে আমাদের দেশও নীল হয়ে যাচ্ছে । গতকাল ফেসবুক থেকে লিঙ্ক পেয়ে বাংলাদেশের ১ ফ্যাশন হাউজের ওয়েবসাইটে গেলাম । সেখানে কিছু বাঙালি মডেল শাড়ী পরে এমন পোজ দিয়েছে যে বিশ্বাস করতে অনেকক্ষণ লাগে যে এটা আসলেই বাংলাদেশি ওয়েবসাইট আর মডেলরা বাঙালি ..... এরপর নেটে সার্চ দিয়ে বাংলাদেশের অনেকগুলো ফ্যাশন হাউজ ও তাদের ফ্যাশন শো এর ছবি দেখলাম ...আমি এই ব্যাপারগুলো সম্পর্কে একদম অজ্ঞ ছিলাম। “নকশা”য় কিছু ছবি দেখে ভাবতাম এটাই বর্তমান “ফ্যাশন” পরিস্থিতি এবং সেটাতেই আমার তীব্র আপত্তি ছিল । কাল হতভম্ব হয়ে গেলাম ।( আমি আর এগুলোর লিঙ্ক দেয়ার দরকার মনে করছি না- আপনারা একটু সার্চ দিয়ে দেখে নিয়েন । ) এখন ১টা জিনিস আবার বলতে চাই; যদিও আগেও তা কয়েকবার বলেছি –এসব সাইটে কিন্তু ১০ টা মেয়ের অর্ধ নগ্ন ছবির পর ১ টা ছেলের ছবি পাওয়া যায় এবং সেই ছেলে কিন্তু অর্ধ-নগ্ন না ... যারা এসব ফ্যাশন শো তে অংশ নেয়, ফ্যাশন হাউজের মডেল হয় তারা কি দেখছে না যে তারা নিজেদেরকে অন্যের উপভোগের “বস্তু” বানিয়ে ফেলেছে ?? পতিতারা আমাদের সমাজে ঘৃণ্য (যদিও শখ করে কেউ পতিতা হয়না) । তারা অন্যের কাছে নিজেকে “সামগ্রী” বানিয়ে ভোক্তাকে তুষ্ট করে দেয় । ভোক্তার বিকৃত যৌনাকাঙ্ক্ষাকে পূরণ করে দেয় । কিন্তু আমাদের সমাজের “লেবেল-হীনা পতিতা”রা তো সেই বিকৃত যৌনাকাঙ্ক্ষা তৈরি করে দিচ্ছে ...আর তার জন্য ভুগছে আমাদের পুরো সমাজ । যৌনতা ব্যাধি হয়ে গ্রাস করে রেখেছে অধিকাংশ মানুষকে । সেক্সকেই জীবনের ১ নাম্বারে নিয়ে এসেছে সবাই ।নতুন প্রজন্ম (ছেলে-মেয়ে সবাই)নিজেকে বিপরীত লিঙ্গের কাছে সুন্দর, আকর্ষণীয় ,সেক্সি করার জন্য নিজেদের সময় পার করে দিচ্ছে । চুলের কাটিংটা কেমন হবে সেটা নিয়ে যতটা চিন্তা করি আমরা, চুল কাটার কাঁচিটা কিভাবে বানানো হয়- সেটা নিয়ে তার এক সহস্রাংশ সময়ও ভাবি না। সেক্স আমাদের জীবনের ১টা পার্ট – হ্যাঁ , খুব মজাদার ১টা পার্ট । কিন্তু তাতে নোংরামি কেন থাকবে? আর এর বাইরে তো আরও অনেক পার্ট আছে- অনেক সুন্দর , আরও বেশি মজাদার, গুরুত্বপূর্ণ ।কিন্তু সেগুলো নিয়ে আমরা ভাবি না।আমাদেরকে ভাবতে দেয়া হয় না। আমাদের মিডিয়া সারাদিন শখ-শারিকার নাচ দেখায়, বুয়েটের জীবন পোদ্দার স্যার এর গবেষণা দেখায় না, বাংলাদেশি ছাত্রের ৪ Frequencyর অ্যান্টেনা আবিষ্কারের খবর তারা দেখায় না। (দেখালে ১ মিনিট দেখায়) তাই সেটার খবর কেউ রাখে না ...
আমরা জীবনে আমেরিকার মুভি দেখি ছোট থেকে , কিন্তু আমেরিকার রেপ এর হার জানি বড় হয়ে । (অনেকে তা জানি-ই না...)আর তাই ওদের সমাজ সম্পর্কে ১টা ভুল ধারনা আমাদের মনে তৈরি হয় ।আমরা মনে করি ওদের ওপেন সেক্স লাইফ ,নগ্নতাই ওদের সমাজের সাথে আমাদের পার্থক্য।আর ওদের এত উন্নতির কারণ ওদের সমাজের সাথে আমাদের সমাজের এইসব পার্থক্য। কিন্তু সত্য হল এই যে এসব নগ্নতা , অশালীনতা, নারীকে পণ্যে রূপান্তর – এসবের জন্য তাদের উন্নতি বরং কমে গেছে । পুঁজিবাদের চরম স্বার্থপরতা, বস্তু-কেন্দ্রিক ও অর্থ-কেন্দ্রিক চেতনা তাদের আমজনতাকে ঘিরে রেখেছে । আমরা তাদের যে উন্নতি দেখি তা তাদের সমাজের খুব ক্ষুদ্র ১টা অংশের সৃষ্টি, অভিবাসীদের সৃষ্টি । বাকিদের অবস্থা পুরা উল্টা ।তাদের জ্ঞান আমাদের চেয়েও কম। পৃথিবীতে যুদ্ধ শুরু হলেও তার খবর তারা রাখে না। গতবার ইসরাইলের ফিলিস্তিন আক্রমণের পর এটা নিয়ে আমেরিকার জনমত নেয়ার চেষ্টা চালান হয় ১ টা টিভি চ্যানেল থেকে। বেশীরভাগের উত্তর ছিল – “তাই??হামলা চালিয়েছে? এ সম্পর্কে তো আমি কিছু জানি না...” তাদের দেশে যারা মানবাধিকার নিয়ে ফাল পারে তাদের সংখ্যা হাজার জনে ১ জন ।এর কারণ??? কারণ ওই সমাজব্যবস্থা । তাদের চিন্তার জগত । ওটা যদি সুন্দর হত , তারা আর বেশি উন্নত হত। তাদের কম উন্নতির কারণকেই আমরা উন্নতির কারণ মনে করে ভুল করি , আর উন্নতির কারণ ; তথা গবেষণা , কর্মঠ চেতনার চর্চা করি না।
পরিশেষে অল্প কিছু কথা বলব । আমাদের চেনা দুনিয়া ৩ টা । পাশ্চাত্য , মধ্যপ্রাচ্য আর প্রাচ্য । ল্যাটিন আমেরিকা, চীন-জাপান এদের খবর আমরা বেশি পাই না। তাই ওদের সমাজের অবস্থা আমরা ঠিকমত বলতে পারি না।এই ৩ দুনিয়ার মাঝে পাশ্চাত্যের যৌন বৈষম্য, নোংরা যৌনতা নিয়ে এতক্ষণ কথা বললাম । মধ্যপ্রাচ্যে মেয়েদের মৌলিক অধিকার পর্যন্ত নাই । শেখরা ৫-৬ টা বিয়ে করে, টাকা উড়ায়, জন্মদিনে ইউরোপের গায়িকার সাথে নাচে । ওখানকার সবচেয়ে উন্নত দেশ ইরানে মেয়েরা ভোট দিতে পারে না। বাকি দেশ গুলোর কথা বাদ-ই দিলাম ।প্রাচ্যের পাকিস্তান তো কোন দেশই না। সেখানে এখনো নিয়মিত ফতোয়া দিয়ে দোররা মারা হয় মেয়েদেরকে। ভারতও পুরাই রসাতলে গেছে । একদিকে সতীদাহ, বাল্যবিবাহ হয় , অন্যদিকে মেয়েদেরকে চিয়ার-লিডিং এ নামানো হয় , “শীলা কি জাওয়ানি” গাইয়ে নাচানো হয় । বাদ থাকে বাংলাদেশ । ৫ বছর আগে হলেও হয়ত বলতাম নারীর ক্ষমতা , মূল্যায়ন , স্বাধীনতা কম থাকলেও বাংলাদেশের মেয়েদেরকে বাজারে পাওয়া যায় না ।কিন্তু আজ বাংলাদেশের মেয়েদেরকে শুধু বাজারে না, রাস্তা ঘাটে পাওয়া যায় ।
তার মানে আজ পৃথিবীর যেদিকে তাকাই , সেক্স ১টা অনেক বড় সমস্যা । সেক্স এর কারণে আমরা কলুষিত । সমাজ অবক্ষয়ের সবচেয়ে বড় কারণগুলোর ১টা এই সেক্স । ১টা সমাজকে কিভাবে ধ্বংস করে দেয়া যায়-এর উত্তরে লেনিন প্রথমেই বলেছিলেন যুব-সমাজকে যৌন-চিন্তায় আক্রান্ত করে দাও ...আজ সবখানেই এই দশা । সাম্য , সুন্দর যে সমাজের কল্পনা আমরা করি তা কি কখনই আনা যাবে না? আগে স্বপ্ন দেখলেও এখন Doubt হয় । হয়ত যদি মানুষের কোন লিঙ্গ না থাকত , অর্থাৎ সবাই এক লিঙ্গের হত – সেটাই হত পারফেক্ট ... সাম্প্রতিক সময়ে বিজ্ঞানীরা মানুষের হাড়ের কোষ থেকে শুক্রাণু তৈরি করে তা দিয়ে ডিম্বাণু নিষিক্ত করে সন্তান জন্ম দেয়ার পদ্ধতি উদ্ভাবক করেছেন।(*২, *৩) ২ লিঙ্গের প্রয়োজন আর নেই...শুধু নারীরাই পারবে সন্তান জন্ম দিতে । হয়ত সমাজের এত ঝামেলা বৈষম্য কমাতে পরে এরকম লিঙ্গ বিহীন কোন পৃথিবীতেই বাস করবে মানুষ !!!! পারফেক্ট পৃথিবী হবে সেটাই ... কেউ আর নিজের দেহের দিকে নজর দিবে না- নজর দিবে সুন্দর কাজে , সৃজনশীলতায় ,জ্ঞান-বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিতে , মানবতায়।
যত তথ্য প্রযুক্তি , যোগাযোগের উন্নতি ঘটবে ততই কালচারাল মিশ্রণ ঘটবে । এটাকে থামানোর কোন রাস্তা নেই । হয়ত একসময় পুরো পৃথিবীর কালচার এক হয়ে যাবে । কিন্তু সেই কালচার যে অপ-কালচার-ই হবে সেটা তো না। আমরা নিজের বিবেক আর চেতনাকে জাগ্রত করে, চিন্তার সাথে সব কাজ করে চাইলেই সব নোংরামি বাদ দিয়ে সব কালচার এর সৌন্দর্য ধারণ করে এমন এক বিশ্ব তৈরি করতে পারব যেখানে আমাদের লিঙ্গ, জাতি , ধর্ম এসবের নিরিখে কোন পরিচয় থাকবে না – থাকবে শুধু ১টি পরিচয়-আমরা মানুষ ।
লিঙ্কঃ
*১ . Click This Link
*২ . Click This Link
*৩. Click This Link
*৪. Click This Link