১,২,৩...৬!!হিসেবমতে এখানে গুনে গুনে ১৩ টা লালবাতি জ্বলে থাকার কথা ছিল।লম্বা লোহার বেড়ীগুলোর উপর এই বাতিগুলোর সাথে আমার পরিচয় কমদিনের হলেও কম গভীর নয়।হঠাৎ করেই মনে হল এখানের বাতিগুলো দুটো লাল,পাঁচটা সবুজ আর বাকি ছয়টা হলুদ হতে পারত।কেন হয়নি তা নিয়ে আগ্রহ থাকলেও এখন ভাবতে ইচ্ছে করছেনা।মানুষ প্রাণীটা বড় অদ্ভুত,আমাদের সব কিছুর পেছনেই কারন থাকে।বাতি কেন লাল হয় আর রাস্তা কেন কালো পিচের হয় -এসবগুলোর পেছনেই ভাল কোন ব্যাখা আছে।এতটা যৌক্তিক আর কোন প্রানি হতে পেরেছে বলে মনে হয়না।
যে জায়গাটাতে বসে এসব ভাবছি জায়গাটার আভিধানিক পরিভাষা বারান্দা হলেও আমার নিজের ঠিক করা একটা নাম আছে এর-শহুরে ক্যানভাস।কেন এই নাম তা খুব ভাল বলতে পারবনা তবে এইটুকু বলতে পারি যে শহরে আগাছার মত অযত্নে দালান উঠে,তার চেয়ে বেশি অযত্নে ধুলোয় গড়াগড়ি খায় আমাদের পাললিক মন সেই শহরে শুধু এই জায়গাটা আমায় নিজের চোখের অধিকারটুকু ফিরিয়ে দেয়।এই জায়গায় দাড়িয়ে চোখ শুষে নিতে পারে দুরতম আলোকতরঙ্গের নির্যাস,ইচ্ছেমত রাঙ্গানো যায় শহরটাকে,মাইলের পর মাইল পেরিয়ে আসা পলাতক বাতাস গুলো যখন আমার গায়ে আছড়ে পড়ে আমি অবাক হয়ে ভাবতে পারি—স্বর্গ নয়তো!!
ঠিক এখন টুকটাক বৃষ্টির ছাঁট গায়ে লাগলেও সেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে না,তবে বাতাসের বেগ যথেষ্ট।কেমন যেন একটা দুর্যোগপূর্ণ ভাব চলে এসেছে চারদিকে।বোধহয় এই জন্যই লালবাতিগুলোর হিসেব ১৩ টা কর পর্যন্ত আগালোনা।পুরো শহর মোটামুটি অন্ধকার তবে অতি অবশ্যই অভিজাত আকাশচুম্বী পল্লীগুলো ছাড়া।বাইরের দুর্যোগ আমাদের জন্য,ওই পল্লীগুলো দুর্যোগের আওতার বাইরে।প্রকৃতি অনেক আগেই বিকিকিনি হয়ে গেছে কিছু ছাপানো কাগজের কাছে।
সারা শহরে ঝেঁকে বসা অন্ধকারকে আমার বড়ই কাছের মনে হয়।সবকিছুই আদি অকৃতিম আর প্রাচীন মনে হয়।মনে হয় হাজার বছর আগেও কোনএকদিন এই জনপদ এমনি অন্ধকার ছিল, আকাশ এভাবেই জল হয়ে ঝড়ে পড়ছিল আর বাতাস এমনি শীতল ছিল,আমার মনে হতে থাকে আমি ওসবের সাক্ষী ছিলাম,সেদিন এখানে ওই সবকিছুতেই আমি ছিলাম।
হঠাৎ বৃষ্টির দুএকটা ফোঁটা গায়ে লাগলে আমি ফিরে আসি।কই চলে যাচ্ছিলাম জানিনা।এই শহুরে ক্যানভাসে আমি বরাবর ই শিল্পী...