ইসলামে পাহাড়সম পাপও ক্ষমা পাওয়ার যে সব শর্টকাট অফার আছে, সেগুলোতে ব্ল্যাক হোলের মতো কিছু গভীর, বিশাল এবং ভয়ঙ্কর নোকতা যুক্ত আছে। কোনো এক অজানা, অদ্ভুত কারণে হাজার বছরের ইবাদত আর যাকে ইচ্ছা তাকে ক্ষমা করার বয়ানে এই কমন বাল্যশিক্ষার নোকতাগুলো যুক্ত করা হয় না। এই তথ্য গোপনের সাথে আছে হাজার কোটি টাকার পীরালী, কবর, মাজার, আর শিন্নির বাণিজ্য।
পরিনতিতে, আমরা ইয়া বড় সফেদ দাড়ি, লম্বা টুপি, কপালে দাগওয়ালা সুফি চোর-বদমায়েশ আর আল্লামা টাইপের টাউট-বাটপারদের দেখি। তারা একই সঙ্গে ভয়াবহ লুটপাট, চোট্টামি আর ইবাদত-বন্দেগির যুগল প্যাকেজ নিয়ে চলাফেরা করে—অহরহ।
চাচার জমি দখল করে ইতিকাফে বসছে একজন, তো আরেকজন প্রতিবেশীর মাছ চুরি করে ইশরাকের নামাজ পড়ছে। দেশের পুরো অর্থবাজার তছনছ করে গত রমজানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা কাবা শরিফের ইমামের পেছনে বসেছিলেন। পুরো রোজা সেখানে জামাতে নামাজ পড়তে। তাদের হিসাবে হলো—দখল বা চুরি করলাম ১০০, দান করব ১০ টাকা, বাকি টাকা এশরাক, তাহাজ্জুত আর হাজার বছরের ইবাদতে মাফ। না হয় আরও দশ টাকায় ওমরা ট্রাভেল। ব্যাস! ইহকাল-পরকাল দুই কালেই আরাম নিশ্চিত। আবার আছে বিভিন্ন পীর, মাজার, কবর, মোম, মানত আর শিন্নির চটকদার অফার। এরা পৃথিবীতে বেহেশতের ইমিগ্রেশন এজেন্সি চালায়। মানে, যত বড় চোর, তত বড় হাদিয়া—আর তার চেয়েও বড় মাকাম তারা বেহেশতের জন্য বুকিং দেয়।
এখানে ক্ষমা পাওয়ার সাথে বাচ্চাকালে পড়ানো নোকতাটা হলো Huqooq-ul-Ibad (حقوق العباد) - বান্দার হক। যত ধরনের ক্ষমার অফার দেওয়া আছে, সবগুলোই হলো Huqooq-ullah (حقوق الله) – Rights of Allah – আল্লাহর হকের সাথে জড়িত। মানে, নামাজ, রোজা, হজ না করা সংক্রান্ত পাপগুলো আল্লাহ ক্ষমা করতে পারেন। কিন্তু মানুষের জায়গা জমি দখল, চুরি-চোট্টামি, জুলুম, খুন—এগুলোর ক্ষমা করার ব্যাপারটা আল্লাহ নিজের হাতেই রাখেননি। আর পীর দাবি করে সে মাপ পাইয়ে দেবে, হাশরের মাঠে জমির সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মতো হাদিয়া দিয়ে।
অথচ, এ পাপগুলো ক্ষমা করতে পারবে একমাত্র ভিকটিম—যার ওপর জুলুম করা হয়েছে, সে।
না হলে এক রাতে মসজিদে ইবাদত করে জনাব চোর, চাঁদাবাজ কিংবা মাওলানা বাটপার সাহেব যে হাজার বছরের নেকি হাসিল করবেন, সবই মূলত চলে যাবে ঐ ভিকটিমের আমলনামায়। মানে, যার গাছ চুরি করে ইতিকাফে বসেছে চোর সাহেব, সওয়াব সব হবে সেই গাছ মালিকের। নোকতার রেফারেন্সগুলো নিচে দিলাম।
রেফারেন্স:
১. প্রকৃত দেউলিয়া কে?
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:
"তোমরা জানো, প্রকৃত দেউলিয়া ব্যক্তি কে?"
সাহাবিগণ বললেন, "যার কাছে কোনো টাকা-পয়সা বা সম্পদ নেই, সেই ব্যক্তি।"
তখন নবী (ﷺ) বললেন,
"আমার উম্মতের মধ্যে প্রকৃত দেউলিয়া সেই ব্যক্তি, যে কিয়ামতের দিন নামাজ, রোযা ও দান-খয়রাত নিয়ে আসবে, কিন্তু সে কাউকে গালি দিয়েছে, অন্যায়ভাবে সম্পদ নিয়েছে, কাউকে হত্যা করেছে বা অপমান করেছে। ফলে তার নেক আমল ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মাঝে বিতরণ করা হবে। যদি তার সমস্ত নেক আমল শেষ হয়ে যায়, তখন তাদের পাপ তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে এবং সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।"
২. জুলুম সম্পর্কে হুঁশিয়ারি
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:
"জুলুম থেকে সতর্ক হও! কারণ জুলুম কিয়ামতের দিন অন্ধকাররূপে পরিণত হবে।"