গুজব রটানো কত সহজ দেখেন! ফেসবুক থেকে নেয়া একসাথে সংযুক্ত এই ৩টি ভিডিও দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে কীভাবে গুজব রটিয়ে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানো হয়। এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যা, তা বিশ্লেষণ করা যাক:
১ম ভিডিওতে দেখতে পাচ্ছেন রাস্তায় নামাজরত এক মুসল্লিকে 'পুলিশ'-এর পোশাক পরিহিত একজন লাথি দিচ্ছে, লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে। তবুও ধার্মিক বান্দাটি নামাজ পড়েই যাচ্ছে! স্পষ্টতই ভিডিওটা ভারতের।
এখন একটু ভালো করে খেয়াল করুন:
ভারতের পুলিশের ড্রেস কি এমন হয়? ড্রেসের কাঁধের দিকে স্টার বা পদ্ম ইত্যাদি বসানো নেই কেন? তথাকথিত পুলিশের পায়ে বিশেষ বুটের জুতা নাই কেন? কারণ এটা পুলিশের পোশাক না। এটা নকল পোশাক। আর পুলিশটাও আসল না। আসলে এটা একটা টিকটক ভিডিও, যা প্রচার করে মানুষের অন্ধবিশ্বাস ও ভারতবিদ্বেষকে পুঁজি করে ভিউ বাড়িয়ে ডলার আয় করা হচ্ছে আবার ধার্মিকদের রক্ত গরম করিয়ে দিয়ে দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টাও করা হচ্ছে। এটা যদি নাটক না হতো, তাহলে মাঝরাত্রিতে এটা শ্যুটিং করা হতো না। দেখেই বুঝা যাচ্ছে এটা মাঝরাতে ধারণ করা, যখন রাস্তায় একটা গাড়িও দেখা যাচ্ছে না। এটা নামাজের ওয়াক্তও নয়। তো, এত রাতে এখানে রাস্তায় নামাজ পড়লে যানজট হচ্ছে না যখন, তখন কেন পুলিশ এখানে পেটাবে? পুলিশের আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই? ক্যামেরাম্যান যেভাবে ভিডিও করছে, তাতেও স্পষ্ট যে এটা নাটক। কারণ আসল হলে পুলিশ এভাবে এত কাছ থেকে ভিডিও করতে দিতো না। আর এই ভিডিও দেখে আসল পুলিশ ধরে ফেলবে বা এটা যে নাটক তা প্রকাশ হয়ে যাবে বলেই ভিডিওর ফেইক পুলিশ মাস্ক দিয়ে মুখ ঢেকে নিজের পরিচয় লুকাচ্ছে।
২য় ভিডিওতে দেখুন, ভারতে গতকাল ঈদের দিন কীভাবে হিন্দু সাধু নামাজরত মুসল্লিদের উপর পুষ্পবৃষ্টি করছেন! এই মুসল্লিরা আসলেই রাস্তার মাঝখানে নামাজ পড়ছেন, যেখানে কোনো গাড়ি চলতে পারছে না। অনেক মরণাপন্ন রোগী রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্সে আটকা পড়ে মারা যেতে পারে, অনেকের গুরুত্বপূর্ণ মিটিং বা পরীক্ষা থাকলে তা মিস হয়ে যেতে পারে৷ তবুও গোটা রাস্তা দখল নিয়ে ঈদের নামাজ হচ্ছে আর তাতে কিন্তু সংখ্যাগুরু হিন্দুরা বাধা দিচ্ছে না, বরং ফুল ছিটিয়ে তাদেরকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। যারা বলে কেউ মরলে বা বিয়ে-জন্মদিনে ফুল দিতে নাই, এটা নাকি হিন্দুয়ানী, তারা এটা দেখে কী বলবেন, হিন্দু সাধুরা কি মুসলিমদের ফুল দিয়ে পূজা দিচ্ছেন?
৩য় ভিডিওতে দেখুন, শুধু সাধুরাই না, আরও অনেক হিন্দু ফুল ছিটিয়ে তাদের মুসলিম ভাইদেরকে এই ঈদের বিশেষ দিনে বরণ করে নিচ্ছেন। বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে হলে অনেকে ফতোয়া দিতে পারতো এই ফুল ছিটানোয় নামাজে ব্যাঘাত ঘটছে কিংবা বলতে পারতো ধর্ম অবমাননা হচ্ছে। কিন্তু ওখানে এমন কথা কেউ বলছে না। বরং ধর্ম-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে সবাই মিলেমিশে ঈদ উদযাপন করছে।
২য় ও ৩য় ভিডিওর এই অসাম্প্রদায়িক আবহই আমরা চাই সর্বত্র। ১ম ভিডিওর মতো নাটক সাজিয়ে যারা নির্যাতনের গুজব রটায়, তাদেরকে আমরা বুদ্ধি-বিবেচনা দিয়ে যাচাই করে এড়িয়ে চলবো, প্রয়োজনে প্রতিহত করবো। দেব দুলাল গুহ।
গুজব এড়াতে ভিডিওটি শেয়ার করুন।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৫:৪৩