কাহিনির শুরু হয় মূলত সিরিয়াল কিলিং দিয়ে।শহরের রাস্তায় বেশ কয়েকটি খুন হতে থাকে একের পর এক।কিন্তু পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এর কোন হদিশ করতে পারেনা।তবে অদ্ভুত ভাবে খুনগুলোর মধ্যে একটা কমন লাইনআপ খুজে পাওয়া যায়- সবগুলো খুনের পাশেই বাংলা সাহিত্যের কিছু জনপ্রিয় কবিতার লাইন খুজে পাওয়া যায়।অবশেষে সিরিয়াল খুনের রহস্য সমাধান করতে পুলিশ ডিপার্টমেন্ট তাদের সাসপেন্ড হওয়া পুরনো এক জাঁদরেল পুলিশ অফিসার প্রবীরকে ডেকে আনে...এরপর পুলিশ অফিসার অভি আর প্রবীরের সিরিয়াল কিলিং এর বিভিন্ন ক্লু ধরে ধরে আগানো—মোটামুটি এটিই মুভির প্লট।
এখন একটু ভিন্নভাবে মুভিটিকে দেখি-
বাংলা মুভিতে টুইস্ট অথবা সাসপেন্স গুলো কখনই ঠিক তেমন জমেনা অথবা কাহিনী আগে থেকেই বেশ প্রেডিকটেবল বলে মনে হয়।তবে এই মুভিটার ক্ষেত্রে টুইস্ট ভালোই লেগেছে,বেশ আনপ্রেডিক্টেবলও ছিল।
গানগুলো ভাল লেগেছে,লিরিক্স গুলোতেও বেশ যত্নের ছাপ ছিল,তবে “একবার বল নেই তোর কেউ নেই” গানটির চিত্রায়ন আসলেই সুন্দর ছিল।বিশেষ করে ঘরের
মধ্যখানে সোফার উপর বৃষ্টি পড়ার দৃশ্যটা আমার অনেক মনে ধরেছে।
সবচেয়ে মুভিটাকে যে জিনিসটার জন্য এগিয়ে রাখব সেটি হচ্ছে এটিই বোধহয় প্রথম মুভি যেখানে বাংলা সাহিত্যে ঘটে যাওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু চাপা পড়ে যাওয়া একটি অধ্যায়- Hungryalist movement কে তুলে ধরা হয়।সাথে প্রচলিত ধারার অর্থলব্ধির সাহিত্যকে আঘাত করা হয়,যেগুলোতে জীবনবোধ আর সমাজের অবদমিত আর শোষিত মানুষের কথা নেই,অথচ hungry generetion এর কবিসাহিত্যিকরা এই কথাগুলো বলতে গিয়ে একসময় সমাজের আটদশজনের কাছে বেশ নিন্দিত হয়েছিলেন ।(যারা এই movement সম্পর্কে পড়ালেখা করতে চান এই লিঙ্ক দেখতে পারেন )ইনফ্যাক্ট আমার কাছে মনে হয়েছে পরিচালক এখানে কবির চরিত্রে যিনি ছিলেন তাকে hungry generation একজন soldier হিসেবেই উপস্থাপন করতে চেয়েছিলেনএবং সেখানে পরিচালক অনেকটাই সফল ছিলেন।এই কবির চরিত্রে যিনি ছিলেন তার অভিনয় আমার অনবদ্য লেগেছে।একটি ইনফো শেয়ার না করলেই নয় এই চরিত্রটিতে যিনি অভিনয় করেছেন তিনি আমাদের সবার অনেক পছন্দের একজন পরিচালক গৌতম ঘোষ,সম্প্রতি যিনি “মনের মানুষ” মুভিটি করে বেশ প্রশংশিত হয়েছেন।
তবে মুভির কিছু জিনিস মেনে নিতে বেশ কষ্ট হয়েছে আমার।কয়েকটা বলি-
১। প্রথমেই আসি পুলিশ ইন্সপেক্টর অভির কথায়।মুভির প্রথম দিকটাতে তার সম্পর্কে আমার মুল্যায়ন আর শেষের দিকটাতে তার সম্পর্কে মুল্যায়ন ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।কেননা প্রথম দিকটাতে তাকে দেখানো হয়েছে বেশ রাফ & টাফ একটা মানুষ হিসেবে,অথচ মুভির মাঝ থেকেই আমি তাকে প্রথম সিনগুলোর সাথে মেলাতে পারছিলাম না।পুরো মুভিতে তার ভুমিকা ছিল প্রথম দিকের তুলনায় ঠিক উল্টো,যে প্রেমিকার সাথে ঝগড়ার পর কাঁদে,হুইস্কি খেতে ভয় পায়,খালি পেটে মদ খেলে পেট উগড়ে বমি করে….এককথায় রাফ ও টাফ তো নয়ই,বরং বেশ লুতুপুতু একটা ক্যারেক্টার হয়ে গেছে শেষ দিকে এসে।
২। মুভির সাউন্ড ইফেক্ট মাঝেমধ্যে মনে হয়েছে কাহিনির সাথে যাচ্ছেনা।বাংলা কোথায় বলতে গেলে মুভির ফিলটা মাঝে মধ্যে সাউন্ডইফেক্টের কারনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল বলে মনে হয়েছে আমার।
৩। প্রবীর অর্থাৎ প্রসেঞ্জিতের ক্যারেক্টারটা নিয়ে তেমন কিছু বলার নেই,তবে আরও ভাল হতে পারত তার অভিনয়,বিশেষ করে সে আর অভি মিলে যখন কবির মৃত্যুর আগে কবিকে পেছন থেকে ফলো করছিল ওইখানে ফলো করার দৃশ্যগুলো সাধারনচোখে বেশ খেলো লাগে।ওই জায়গা গুলো আরো যত্ন করে শুট করা যেত।
৪।থ্রিলার হিসবে মুভির কাহিনী অতটা packed না। যদিও সিরিয়াল কিলিং দিয়ে মুভিটি শুরু হয় মাঝখানে কাহিনীর ফ্লো বেশ থিতিয়ে গেছে মনে হল।নায়িকার সাথে নায়িকার বন্ধুর অনেক অপ্রয়োজনীয় দৃশ্য ছিল যেগুলোর মেইনস্ট্রিমের কাহিনির সাথে কোন লিংকআপ মুভিতে করা হয়নি।
ডাউনলোড লিংক
তবে সব মিলিয়ে মুভিটি আমার ভালই লেগেছে।বাংলা মুভি atleast বৌ শাশুড়ির যুদ্ধ আর সৎ পুলিশ অফিসারের হিরোগিরি দেখানো থেকে বের হয়ে আসছে এটাই অনেক খুশীর খবর।