ভালো মানুষদের দেশে বলার কারণ একটাই ভুটানের মানুষরা এতো বেশী হেল্পফুল ওদেরকে ভালোমানুষ উপাধী না দিলে রীতিমতো অন্যায় হবে । ইন্ডিয়ার কাছে ট্রানজিট ভিসা নিয়াছিলাম, একবার ইন্ডিয়ার উপর দিয়া ভুটানে প্রবেশ করবো আরেকবার বের হয়ে বাংলাদেশে ফিরবো । কিন্তু ফেরার পথে বিমানে চলে আসায় আর ইন্ডিয়াতে দ্বিতীয়বার প্রবেশ করা হয়নি । আমার এই পোষ্ট মূলত ফটোব্লগ তাই ছবির মাধ্যমেই আমি যতটুকু সম্ভব তুলে ধরার চেষ্টা করবো, বিস্তারিত বিশ্লেষণে আমি যাবো না ।
ভুটানের আরো কিছু নাম আছে, স্থানীয় নাম ড্রুক গিয়ালখাপ, সংক্ষেপে ড্রুক ইয়ুল। এছাড়া বজ্র ড্রাগনের দেশ নামেও পরিচিত। ঐতিহাসিক ভাবে এই দেশটি লো মন (দক্ষিণের অন্ধকারাচ্ছন্ন দেশ), লো সেনডেঞ্জং (দক্ষিণের চন্দন কাঠের দেশ), বা লো মেন জং (দক্ষিণের ঔষধি হার্ব-এর দেশ) ইত্যাদি নামে ও পরিচিত ।।
এটা থিম্পুর বাসষ্টেশন, দুই রাত থিম্পুতে থেকে এখান থেকেই ট্যাক্সি নিয়ে আমরা রওয়ানা হলাম পুনাখা'র উদ্দেশ্যে । থিম্পু ও পারোর পরে ভুটানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর পুনাখা ভুটানের পূর্বতন রাজধানী। পুনাখা-ভ্রমণের মূল আকর্ষণ হল পুনাখার প্রাকৃতিক দৃশ্য ও সুবিশাল ঐতিহ্যশালী অসাধারণ সুন্দর পুনাখা-জং ।
কিন্তু ওখানে এসে পেয়ে গেলাম ভুটানের একটা নতুন খাবার, নাম থুপ্পা । এটা লাল চাউলের গুড়োর সাথে গরুর মাংসের মিশ্রনে তৈরী অনেকটা বলতে পারেন হালিমের মতো, গ্লাসে পরিবেশন করে চায়ের মতো খাওয়া যায় । বেশ সুস্বাদু ।
এটা থিম্পু ষ্টাডিয়ামের প্রধান গেইট ।
ট্যাক্সিতে বসে ক্যামেরার কিছু কাজ.......
প্রায় ১০হাজার ফুটের ও অধিক উচ্চতার এই গিরিপথ দিয়েই থিম্পু থেকে পুনাখা যেতে হয়, দোচু-লায় নামক স্থান থেকে আবার আস্তে আসতে রাস্তা ক্রমশঃ নীচের দিকে নেমে গেছে । দোচু-লার পরে পথ আবার নিম্নমুখী। আর উচ্চতা হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গেই খাদের ও পারের পাহাড়ে জেগে উঠছে ছোট ছোট সুন্দর উপত্যকা আর ধাপচাষের নয়নাভিরাম শোভা। পথের পাশে বহু দূরে দূরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দু-চারখানা গ্রাম্য কুঁড়ে, আর বাড়ির উঠোনের মতো সংলগ্ন কিছুটা জমিতে বিবিধ শাকসব্জির চাষ। নজর কাড়ে এ পথে গ্রাম্য ভুটানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
আমরা এখন অনেক নীচে নেমে গেছি, এখানে পাহাড়ি ধাপে বেশ কিছু কৃষি জমি দেখা যাচ্ছে ।
সামনেই পুনাখা শহর,......
পুনাখার উচ্চতা চার হাজার চারশো তিরিশ ফুট, দশ হাজার ফুট থেকে সারে চার হাজার ফুটে নেমে এলে যা হওয়ার তাই হলো । কানে প্রচন্ড ব্যাথা অনেক সময় বিমান থেকে নামলে যেমন হয়, পরে অবশ্য আস্তে আস্তে শরীর উচ্চতার তারতম্য মেনে নিয়েছে ।
পুনাখাতে লাঞ্চ সেরে বেড়িয়ে পড়লাম, পুনাখা জং দেখতে । জং অর্থাৎ বিভাগের প্রধান সরকারী এবং ধর্মীয় কার্যালয় । আরও ২/৩ কিলোমিটারখানেক পরে পথের ডান দিকেই দু’টি নদীর সঙ্গমস্থল। পুনাখা-জংয়ের পাশ দিয়ে বয়ে আসা নদী পুনামোচু ও জংয়ের পিছন দিক থেকে বয়ে আসা নদী পুনাফোচু (সংক্ষেপে মোচু ও ফোচু)-র মিলিত ধারাই পুনাচু নামে প্রবাহিত হয়েছে ওয়াংদির দিকে । চোখ ধাঁধাঁনো সৌন্দর্য ।
প্রায় দোতলা সমান উঁচু সিমেন্ট আর কাঠের সিঁড়ি চড়েই জংয়ে প্রবেশে করলাম । শুরুতেই অনেকখানি উন্মুক্ত ও সুপরিচ্ছন্ন আঙিনা, সেখানে বড় একটি চোর্তেন ও ধর্মীয় তাৎপর্যবাহী একটি অশ্বত্থগাছ। আরও ভিতরে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য বিরাট হলঘর। সব শেষে সুসজ্জিত এক বুদ্ধমন্দির। মন্দিরের প্রবেশদ্বারের ডান পাশের দেওয়ালে রয়েছে ভুটানি লোকগাথায় ‘জীবনচক্র’-র ছবি। আর ভিতরে বুদ্ধদেবের বিশাল স্বর্ণমূর্তি ও অসীম নীরবতা।
আয়তন, নির্মাণশৈলী ও কাঠের নকশার নিরিখে পুনাখা-জং যেমন এক কথায় অনন্য ও যথেষ্ট সুপরিকল্পিত, তেমনই যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণও বটে। ঐতিহাসিক ভাবেই ভুটানরাজের রাজ্যাভিষেকও হয় এই জংয়েই অবস্থিত প্রধান লামার দফতরে।
ক্যামেরা অটোতে দিয়ে চারবন্ধু জংয়ের ভেতর একটা পোজ ।
জংয়ের পেছনের অংশ ।
ভুটানী কাঠ ঠোকরা ।
জং থেকে একটু সামনে এগিয়ে জংয়ের পেছনের নদী পুনাফোচুর উপর দিটে লোহার এই ঝুলন্ত ব্রিজ ।
অতঃপর আমাদের গন্তব্য ওয়াংদির বাজু নিউ টাউন ।
বাজু নিউ টাওনে এই হোটেলে রাত্রী যাপন করি ।
পুনাচু নদীর পাশে ওয়াংদি জং টা ও দেখতে খুবই চমৎকার ।
ওয়াংদি জং টাকে নতুন করে সংস্কার করা হচ্ছে,,,,,,,,
ওয়াংদি জং এর ওপর থেকে তোলা নীচের ছবি ।
জং এর পিছন দিকে দিোয়ে পাহাড় থেকে নামার সিড়ি ।
নীচের দিকে নামার পথের দুইপাশে শুধুই ক্যকটাসের ছড়াছড়ি ।
ক্যাকটাসের এমন ফুলগুলো আগে আমি কোথাও দেখিনি ।
ক্যাকটাসের এই ফলগুলো ও কিন্তু ভালোই নজর কাড়ে ।
চলবে..............
ভালো মানুষদের দেশে ( ভুটান ভ্রমণ ) -- ১
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১২ দুপুর ১:৪৮