somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুন্যগর্ভ

০৫ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাসপাতালের বিছানায় সাদা চাদরে ঢেকে শুয়ে আছে দিতি।নীরব,নিথর।আস্তে আস্তে লাইফ সাপোর্ট মেশিনের ধাক্কায় বুকটা উচু নিচু হচ্ছে।মনিটরের একঘেয়ে শব্দ জানান দিয়ে যাচ্ছে জীবনের চিহ্ন।রাহেলা বেগম বোবা দৃষ্টিতে চেয়ে আছে মেয়ের দিকে।কেমন জানি অচেনা লাগে তার দিতির চেহারা।তার দিতি,ছোট্ট দিতি।যেদিন দিতির জন্ম হলো,রাহেলা বেগমের মনে আছ আকাশে আষাঢ় মাসের কালো মেঘ।সারা দিন ঝুম বৃষ্টি।বাড়ীতে পানি উঠে উঠে অবস্হা।মজিদ দাওয়ায় বসে বিড়িতে সুখটান দিচ্ছে।এমন সময়ে হঠাৎই তলপেটে প্রচন্ড চাপ ব্যাথা। আর কি অবস্হা কৈতরী দাইকে ডাকার আগেই মেয়ে নাড়ী ছিড়ে বের হলো। মজিদ তখন কৈতরী দাইকে নিয়ে ঘরে ঢুকলো
" আল্লা গো কি ফুটফুইট্যা মাইয়া গো হইয়াই মিটমিটাইয়া চায়। ও মজিদ মাইয়া হইসে।''
মজিদ দাত বের করে হাসে।রাহেলা বেগম মুখ ফিরিয়ে রাখে। তার আগেও তিনটা মেয়ে , লোকটার যেন কোন বিকার নেই।মেয়ের নাম রাখে দিতি। নায়িকার নামে নাম।পাগলাটে মানুষ।দিতি ছিলো পুরোপুরি বাপের ন্যাওটা।বাপ ছাড়া ভাতের একনলাও মুখে তোলেনা।বাপও সারাদিন শেষে মেয়ের জন্য বাতাসা আর মুরকী নিয়ে ফিরে। বাপে-মেয়ে দাওয়ায় বসে খায় আর গল্প করে।চরের দেশের মানুষ,মারামারির কোন হদিশ নেই,বলা নেই কওয়া নেই একদিন লাগলো লাঠালাঠি। বরাবরই মজিদের রাগ একটু বেশী।কিন্তু রামদার একটা তেড়ছা কোপ এসে মজিদের মাথায় লাগলো।অন্ধকার হয়ে গেল সব।মজিদকে নিয়ে রাহেলা বেগম ছুটলো দাকার বড় বড় হাসপাতালে।ডাক্তার রা শুকনো মুখে কথা বলে। মজিদ চোখ খুললো ২৭ দিন পর তখনই বোঝা গেল তার পাগলামী।এই পাগলকে রাহেলা বেগম সামলাতে পারেনা।তিন মেয়ে ,বাপ পাগল। রাহেলা বেগম দিশেহারা হয়ে যায়।দাওয়ায় এখনও মজিদ বসে থাকে।শূন্য দৃষ্টি।শিকলে বাধা। একদিন সকালে দেখে মজিদ নাই। কই যে গেল পাগল মানুষটা।নেই কোথাও নেই।কষ্ট লাগে রাহেলা বেগমের, তারপরও শান্তি।এই বাজারে একজন মানুষের খাওয়ার খরচ ও তো কম না।রাইস মিলেকয়েকটা টাকায় কিছুই হয়না।মেয়েগুলো বড় হচ্ছে এরই মধ্যে গ্রামের ছেলেদের বদনজর পরতে শুরু করেছে।তাই রাইস মিলের হাসু মোল্লা যখন রাহেলা বেগম কে বিয়ে করতে চায় তখন সে আপত্তি জানায় না। লতানো গাছ খুটি পেয়ে যেন দাড়াতে চেস্ঠা করে।
এরমধ্যে একদিন আজিজ ব্যাপারী আসে। আজিজ ব্যাপারী বড় ব্যাবসায়ী, ঢাকায় বাড়ী রাইস মিলের ম্যানেজার। আজিজ ব্যাপারী বলে
''হাসু তোমার ছোট মাইয়াডারে দাও, আমার বাড়ীতে থাকবে।আমার ছেলে-মেয়ে ঢাকায় থাকে পড়ালেখার জন্য,তাদের সাথে থাকবে।''
রাজী হয়না রাহেলা বেগম। আজিজ ব্যাপারী ছেলেকে চেনে সে - রইস মৃধা।চরে মারামারির সময়ে রইস মৃধাকে নিয়ে থানা পুলিশ হয়েছিলো। কিন্তু সেই সময়ে রইস মৃধাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়ে থানা-পুলিশে টাকা দিয়ে ব্যাপারটা মিমাংসা করে ব্যাপারী।পরে রাজী হয় রাহেলা বেগম। পাগল বাপের মেয়ে অন্যের বাড়ীতে থাকে।আংগরতলায় যা ঢাকায়ও তা।বড় সাধ করে মেয়েকে ঢাকায় পাঠায় রাহেলা বেগম।ব্যাপারী বার বার বুঝালো ,
''এখানে খাইতে পারোনা,মাইয়া গুলারে বিয়া দিতে হইবোনা, আমার পোলা মাইয়ার সাথে থাকবে,সভ্য ভব্য হইবো। আমরা দেইখ্যা তোমার মাইয়ারে গার্মেন্টসে চাকরী লইয়া দিবো। মাইয়া তোমার ঢাকায় থাকবো।''
মন শক্ত করে রাহেলা বেগম দিতিকে তুলে দেয় ব্যাপারীর হাতে।মাস যায়,মাস গেলেব্যাপারী রাহেলা বেগমের হাতে ১৫০০ টাকা তুলে দেয়।লও তোমার মাইয়ার টাকা।খুব ইচছা হয় রাহেলা বেগমের মেয়ের সাথে একটু কথা বলতে । রাতে হাসু বাড়ী আসলে রাহেলা বেগম কয়-মাইয়্যাডারে দ্যাখবার মন চায়।হাসু বলে-হ , আমারো মন পুরে লও দেহি মোবাইল ডি মাইয়াডারে ফোন দেই।হাসু ফোন দেয় ব্যাপারীরে কিনতু ব্যাপারী ফোন ধরে না। পরের দিন দুপুরে দিতি নিজেই ফোন দেয়,রাহেলা বেগম আনন্দে কেদে দেয়-মাগো কেমুন আসুইন?ভালা নি? মাগো মা রে আমারে লইয়া যাও হ্যারা আমারে মারে , আমারে খাইতে দ্যায় না।মাগো-কান্নায় জড়িয়ে আসে দিতির কন্ঠ। সেই কান্না। মায়ের বুকটা মুচড়ে ওঠে।রাতে মজিদ বাসায় আসতেই রাহেলা কান্নায় ভেন্গে পরে।মজিদ ফাপড়ে পরে। মাইয়া মানুষ অবসর পাইলেই কান্দে... এরও দেড় মাস পরে ব্যাপারী আসে ,রাহেলা বেগমের হাতে ১৫০০ টাকা তুলে দেয়।মেয়ের কান্না ভেজা টাকা নিতে বাধো-বাধো ঠেকে মায়ের কাছে।
'' আমরা মাইয়া আইন্যা দাও আমার ট্যাকা লাগতো না" ব্যাপারী বলে
'' আহ হারে বাচ্চারা খেলতে খেলতে কি করসে আর তোমার মাইয়া কাইন্দ্যা ভাসাইসে। শোনো আমার মাইয়ার পরীক্ষা শেষ হউক তারপর তোমার মাইয়ারে বাড়ী পাঠাইয়া দিমু নে।''
মায়ের বুক আশায় বাসা বাধে। ২ মাস হয়ে যায় ব্যাপারীর কোনোখবর নাই। তারপরে কৃষ্ণপক্ষের রাতে ব্যাপারী ফোন দেয় মজিদকে
''মজিদ তোমার বউ রে নিয়ে লও। তোমার মাইয়ার অসুখ। আমরা হাসপাতালে নিসি , আইসা পরো।''
মজিদ আর রাহেলা বেগম ঢাকায় আসার পরপরই ব্যাপারী তাকে থানায় নিয়ে যায়।
'' তোমার মেয়ে বটিতে পইরা মাথা ফাটাইসে হের কারনে আমার পোলারে জেলে নিসে। দ্যাখো মামলা হইসে,তুমি মামলা চালাইতে পারবা? তোমার দিতির চিকিৎসা আমরা করাইতাসি, আরও লাখখানেক ট্যাকা দিমু নে ,মামলা তুইল্যা লও।তোমার বোকা মাইয়্যা কিচ্ছু জানে না, বটির উপর পরসে।''
রাহেলা বেগম গুটিগুটি পায়ে হাসপাতালের আই সি ইউ তে ঢুকে।ডাক্তারদের দিকে বোবা দৃষ্টিতে চায়।ডাক্তাররা বলে মেয়েকে দেয়ালে মাথা ঠুকে দেয়ায় মাথার ভিতরে রক্তক্ষরণে রোগী অচেতন।বাচার আশা নেই।সে শূন্যদৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকায়। তার দিতি। ''মা , মাগো, আমারে নিয়া যাও'' বুকের ভিতরটা কেপে উঠে রাহেলা বেগমের।নিয়ে যাবো সোনা মা আমার তোকে এবার নিয়েই যাবো। বাহিরে আষাঢ়ের বর্ষন।কাছেই কোথাও বাজ পড়লো।

পুনশ্চ

পরের দিন দিতি মারা যায়।পুলিশ লাশ নিয়ে যায় । ব্যাপারী উকিল রেডি রাখছিলো,মামলা না নেয়ার জন্য।কিন্তু পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। রাহেলা বেগমের শক্ত বাধার পরও দিতির পোস্টমর্টেম হয়।রইস মৃধা এখন ৩০২ নং ধারায় হত্যা মামলার আসামী।










সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:০৩
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×