-জীবনান্দ দাস
বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ
খুঁজিতে যাই না আর : অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে
চেয়ে দেখি ছাতার মতো ব্ড় পাতাটির নিচে বসে আছে
ভোরের দয়েলপাখি - চারিদিকে চেয়ে দেখি পল্লবের স্তূপ
জাম-বট-কাঁঠালের-হিজলের-অশথের করে আছে চুপ;
ফণীমনসার ঝোপে শটিবনে তাহাদের ছায়া পড়িয়াছে;
মধুকর ডিঙা থেকে না জানি সে কবে চাঁদ চম্পার কাছে
এমনই হিজল-বট-তমালের নীল ছায়া বাংলার অপরূপ রূপ
দেখেছিল; বেহুলাও একদিন গাঙুড়ের জলে ভেলা নিয়ে -
কৃষ্ণা-দ্বাদশীর জোৎস্না যখন মরিয়া গেছে নদীর চড়ায় -
সোনালি ধানের পাশে অসংখ্য অশ্বত্থ বট দেখেছিল, হায়,
শ্যামার নরম গান শুনেছিল - একদিন অমরায় গিয়ে
ছিন্ন খঞ্জনার মতো যখন সে নেচেছিল ইন্দ্রের সভায়
বাংলার নদ-নদী-ভাঁটফুল ঘুঙুরের মতো তার কেঁদেছিল পায়।
সাদা কাঁশ ফুল।
নীল আকাশের নিচে দুটি বৃক্ষ, যেনো নিবিড় আলিঙ্গন।
ছবির মতো আঁকা বাংলার সবুজ বৃক্ষ
তালগাছ একপায়ে দাড়িয়ে।
সবুজ গাছের আড়ালে দিয়ে সূর্যাস্ত
হিজল ফুল দোলে মেঘের মতো আঁকা-বাঁকা
দূর গ্রামে সন্ধ্যার আঁধার
বর্ষার পানিতে শেওলা পাশে কলা বাগান
মাছের খাড়ি (ঝুড়ি)
বর্ষাকালে পালের নাও
জেলেরা মাছধরার জন্য নদীতে গাছের ডালপালা ফেলছে।
মোষের গাড়ি
মাছ ধরার একটি দৃশ্য।
জীবনান্দ দাস-
জন্ম ১৭ ফেব্রুয়ারী ১৮৯৯, মৃত্যু ২২ অক্টোবর ১৯৫৪। পিতা সত্যানন্দ এবং মাতা কবি কুসুমকুমারী। কবি এতই অন্যমনস্ক থাকতো যে কলকাতার এক মন্থরগতি ট্রামের ধাক্কায় আহত হয়ে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
কবিতা ও তথ্য সংগৃহিত লিংক:
Click This Link