বিশ্ব আবারো Bipolar World হতে চলেছে। একদিকে রাশিয়া, চীন, পাকিস্তান ও কয়েকটি পূর্ব এশীয় রাষ্ট্র অন্যদিকে আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও তার এশীয় জোট। এটি এক খুশির সংবাদ। কিন্তু যে দেশগুলো এখনো ঠিক করতে পারেনি কোন পক্ষে থাকবে তার জন্য আশঙ্কার।
বিশ্বের চলমান রাজনীতির দিকে নজর দিলেই স্পষ্ট হবে, রাশিয়া চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কে নতুন মোড় এসেছে। যা গরম যুদ্ধের মধ্যে একটি শীতল অবস্থান তৈরি করেছে।
এদিকে চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বেশ পুরনো। চীন বরাবরই পাকিস্তানের জন্য সহানুভূতিপ্রবণ। আর এই দুই দেশের জন্যই চির প্রতিদ্বন্দ্বি ভারত। এদিক থেকেও দুই দেশের মধ্যে আলাদা সম্পর্ক বিদ্যমান। বরং ইস্যুটি চীন পাকিস্তানের সম্পর্ক দৃঢ় রেখেছে। চীন তো বেশ কয়েক বছর ধরে পাকিস্তানে বাণিজ্য খাতে বিনিয়োগ করছে। আর চীনের কাছে অস্ত্র ক্রয়ের সবচেয়ে বড় ক্রেতা পাকিস্তান। চলতি সময়ে পাকিস্তান চীনের কাছে ৫২০টি ডুবো জাহাজ কেনার বিষয়ে চুক্তি সম্পন্ন করেছে। এসব মিলিয়ে রাশিয়া ও চীন পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন এক সম্পর্কে আবদ্ধ হচ্ছে।
চীন ও রাশিয়া দুই দেশের জন্যই ওয়াশিংটন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দুই দেশেই বর্তমানে ওয়াশিংটনের কুনজরে রয়েছে। আর সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া যুদ্ধের টানাপোড়েনে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে এক ধরনের নিষেধাজ্ঞা ও বিরোধিতার পর এশিয়ার বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের নজর দিয়েছে রাশিয়া।
রাশিয়ার সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক ভালো। এর আগে পাকিস্তানের ডিফেন্স এবং জ্বালানি খাতে সমন্বয়ে অবদান রেখেছে রাশিয়া। আর পাকিস্তানে বিভিন্ন সময়ে রাশিয়ার কাছে হেলিকপ্টারসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি কিনেছে। চলতি সময়ে রাশিয়ার কাছে শক্তিশালী এমআই-৩৫ কেনার ব্যাপারে আলোচনা করছে পাকিস্তান। এছাড়া রাশিয়ার একটি কোম্পানি পাকিস্তান থেকে ৬৮০ মাইল লম্বা গ্যাস পাইপ স্থান করছে। যা ২০১৭ সালে পুরোপুরি সম্পন্ন হবে। এতে রাশিয়া খরচ করছে ২-৭ বিলিয়ন ডলার।
‘শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু’। চীন ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক অতীতে ভালো ছিল না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে শত্রুসুলভ আচরণ এবং দেশটির আন্তর্জাতিক নীতির পরিবর্তন এই দুই দেশকে কাছে এনেছে। এদিকে দক্ষিণ চীন সাগরের মালিকানা দাবি নিয়ে চীনের ওপর ক্ষেপে আছে যুক্তরাষ্ট্র জোট। আর করম্বিয়ার দখল এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনাদের অবস্থানের কারণে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমাদের বিরোধ চরমে উঠেছে। স্বাভাবিকভাবেই দুটি ঘটনা চীন ও রাশিয়াকে এক কাতারে এনেছে। নতুন বিশ্বশক্তি তৈরিতে যোগাচ্ছে তাজা রসদ।
চলমান এ পরিস্থিতিতে চীন, রাশিয়া ও পাকিস্তান একে অপরের বিশ্বস্ত বন্ধু। এছাড়া রাশিয়া তাদের নতুন টেকনোলজি সাপ্লাই করছে চীন ও পাকিস্তানের কাছে। এই দুইদেশের জ্বালানি সংকট দূর করতে সহযোগিতা করছে রাশিয়া। অর্থনৈতিকভাবে চীন বেশ শক্তিশালী। পাকিস্তানের জন্যও এই দুই দেশকে অনেক জরুরি। বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে বৈরি সম্পর্কের একটা চূড়ান্ত দফারফা করতে। আর এ কথাতো এখন স্পষ্ট, কোনো একক দেশের পক্ষে পুরো বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী বছর। এর মধ্যে দুই পার্টিই চীন ও রাশিয়ার দিকে দৃষ্টি রাখবে। এখন স্বাভাবিকভাবেই যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে হবে। শক্তির পরীক্ষা দিতে হবে নতুন করে। সেদিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব আম্পায়ারিংয়ের স্বপ্ন জেগে দেখা স্বপ্নের মতোই। আর নতুন ত্রিভুজ এ শক্তি বিশ্বকে ভিন্ন দিকে মোড় দেবে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।
রোকন রাইয়ান