স্কুল বা কলেজ পড়ার সময় কোন একদিন ক্লান্ত হয়ে কলোনীর বাসায় ফিরছি। বাসার কাছে এসে বুঝলাম আমাদের বাসা থেকে একটা গানের সুর ভেসে আসছে। সামান্য সময়ের জন্য হলেও আমার মন থেকে শরীর থেকে যেন সব ক্লান্তি চলে গেলো। আমি ইংলিশ গান তখন বেশী শুনিনি। বাসায় এসে বড় বোনের কাছ থেকে শুনলাম কারপেন্টার্স হলো এ গানের শিল্পী। জানলাম গানটা হলো জামবালায়া।
Click This Link
কারেন নামের এক মহিলা আর তার ভাই রিচার্ড এর এই ব্যান্ড আমার মাথা খারাপ করে দিলো। কি মায়াবী কন্ঠ এ মহিলার। কি দারুণ পরিমিতিবোধ রিচার্ড নামের সুরকার/সংগীত পরিচালকের। তারপর মুগধ হয়ে শুনলাম টপ অফ দ্য ওয়ার্ল্ড (Click This Link ), প্লিজ মিসটার পোসটম্যান, সিং, সুইট সুইট স্মাইল, দেয়ারস এ কাইন্ড অফ হাশ, বিচউড ৪৫৭৮৯, রিজন টু বিলিভ কত নাম বলবো। শুধু শুনলাম বলা ঠিক না । এখনো শুনি। একসময় শুনলাম ১৯৮৩ সালে মারা গেছেন কারেন কারপেন্টার। তবে কারপেনটার্স এর যে গানটা বোধ হয় সব মানুষ জানে সেটা হোল ইয়েসটারডে ওয়ান্স মোর। ( Click This Link ) মনে পড়ে জীবন বীমার এ্যাড?- বুড়োবুড়ি হেঁটে যায়। ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজে গানটা। এ মহিলার আয়ু কেন মাত্র ৩৩ বছর হলো-উপরওয়ালার এ বড় অবিচার।
আমি আরেক ভক্ত হলাম জন ডেনভারের। ঠিক টিপিক্যাল কান্ট্রি /ফোক বলা যায় না। পশ্চিমা জগতের লোক হয়েও আমরা ৩য় বিশ্বে বড় হওয়া মানুষগুলোর বিরহ-বেদনার প্রকাশে চলে এসেছেন কতবার। শুধু তার গান শুনেই কল্পনা করেছি আমেরকার প্রকৃতির। মনটানার বিশাল আকাশ, কলোরাডোর রুক্ষ পাহাড়, শেনানডোয়া নদী। মানবতার ডাকে বারবার সাড়া দেয়া এই লোক ১৯৯৭ সালে এক প্লেন দূরঘটনায় মারা যান। বয়স বোধ হয় তখন ৫০ তার। তাঁর মারা যাবার খবর শুনে খুব কাছের মানুষ হারানোর ব্যথা পেয়েছিলাম। এ্যানিস সং, কান্ট্রি রোড টেক মি হোম, থ্যাংক গড আয়ম আ কান্ট্রি বয় ( http://www.youtube.com/watch?v=kzldLJcorbo ), রকি মাউন্টেইন হাই ( Click This Link ) , ওয়াইল্ড মন্টানা স্কাইস ( http://www.youtube.com/watch?v=fqeDLFYzN2Y ) , ক্যালিপ্সো, ড্রিমল্যান্ড এক্সপ্রেস- সবগুলোই এখনো মন টানে।
আরেক ভাল লাগা ব্যন্ড বিটলস। ইয়েসটার্ডে, লেট ইট বি, হেই জুড, ওব্ লাডি ওব লাডা, হেয়ার কামস দ্য সান, হোয়েন আয়ম সিক্সটি ফোর - কত অসংখ্য গান যে তাদের ভালো লাগে। লেনন-হ্যারিসনের মত ২ জন কালজয়ী শিল্পী যে ব্যান্ডে আছে তাঁদের ভালো না লেগে উপায় কি বলুন?
বাংলাদেশে খুন জনপ্রিয় না হলেও আমার খব পছন্দের শিলপী ডন ম্যাকলিন। ভিনসেন্ট ( http://www.youtube.com/watch?v=dipFMJckZOM )এ্যামেরিকান পাই, ক্যাসলস ইন দি এয়ার, লাভ ইন মাই হার্ট- সবগুলৈ কথা-সুর-গায়কীতে দুর্দান্ত।
ভালো লাগে ক্যাট স্টিভেনস। ভীষণ। ফারস্ট কাট ইজ দ্য ডিপেস্ট - কি যে ভালো লাগা একটা গান। যখন মেইনে থাকতাম লং ড্রাইভে ক্যাসেটে ক্যাটস্ স্টিভেন্স ছাড়া কেমন অপু্র্ণ লাগতো। (ডিসক্লেইমার: তার ধর্ম বদলের সাথে তার গান ভালো লাগার কোন সম্পর্ক নাই) মুনশ্যাডোও খুব ভালো লাগে।
শুধু এ পাঁচজনের কথা বলেকি শেষ করা যাবে? জ্যামাইকা ফেয়ারওয়েল ( http://www.youtube.com/watch?v=o4r5C6MUqO4 ) মেলাদিন আমার জাতীয় সংগীত ছিলো। ব্রেড, স্টিং, ব্রায়ান এ্যাডামস, ইগলস, ফ্রেডি আগুইলার, সাইমন এন্ড গারফানকেল, পিটার-পল-মেরী, এয়ার সাপলাই, রড স্টুয়ার্ট, বনিএম, এ্যাবা, ক্লিফ রিচার্ড, ডন উইলিয়ামস, ডায়ার স্ট্রেইট, উইলি নেলসন, বব মারলি, ক্রিসডিবার্গ, আহা- কতজন-কত ব্যান্ডের কথা বলবো। এমনিতে বেশী ভালো না লাগলেও এরিক ক্ল্যাপটনের টিয়ারস ইন হেভেন গানটা বুঝলাম নিজের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু যখন ঘাতকের গুলিতে হারিয়ে গেলো ।
ইংলিশ গান আমার জীবনে খুব বড় একটা অংশ জুড়ে ছিলো। হ্য়ত প্রবাস জীবনে কম শুনি ইংলিশ গান, তবু আমার ইমোশনের-এক্সপ্রেশনের একটা বড় অংশ গড়ে তুলেছে এইসব গায়ক-গায়িকারা। সুরকার-গীতিকাররা। শিল্প যখন সত্যই আমাদের আশা-আনন্দ- দুঃখ-বেদনার কথা বলে তখন ভিন্ন ভাষা হলেও নিজের কথা বলেই মনে হয়, হয় না?
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০১০ রাত ১২:০৩