২০০৮ এর ফেব্রুয়ারী। আমার ভিতরে কেমন অদ্ভুত এক অস্থিরতা কাজ করে। কোথ্ওা শান্তি পাইনা। অস্থিরতাটা এমন যে আমার সামনে এস.এস.সি-র মতো খুব গুরুত্বপূর্ন পরীক্ষা, অথচ আমার পড়া কমপ্লিট হয়নাই । এক বন্ধুর সঙ্গে শেয়ার করার পর সে বললো আমি নাকি কনসিভ করেছি। তার দৃঢ়তা দেখে অবশেষে মার্চ এর ১০ তারিখ ভোরবেলা চেক-স্ট্রিপ দিয়ে টেস্ট করে দেখি ঘটনা সত্যি।:#> কেমন অদ্ভুত এক অনুভ’তি - ভয় মিশ্রিত। তারপর একটি একটি করে দিন পার হয়। আর আমি বিশালাকার ধারণ করতে থাকি। আমার রাজকন্যা আমার ভিতর থেকেই প্রতি মুহূর্ত জানান দিতো সে আসছে। কখনো আমার পেট-টাকে সম্পূর্ন একদিকে করে ফেলতো; কখনো হাঁটু দিয়ে পেটের ঠিক মাঝখানটা উঁচু করে দিত; সারাক্ষন ব্যস্ত আমার পেটের আকৃতি চেঞ্জ নিয়ে। খুব মজা লাগতো আমার। কখনো সে হয়তো ঘুমিয়ে যেতো। তার নড়াচড়া না পেয়ে আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হলে সে জেগে বলতো ”মা আমি ভালো আছি তো।” এখন অবশ্য সে কথা বলে থার্ড পারসন দিয়ে। যেমন ”সারাহ লিখবে তো, সারাহ বাইরে যাবে” ইত্যাদি।
তারপর সেই কাঙ্খিত দিন। হাসপাতাল থেকে ডেট দিলেও আমিই তাকে পৃথিবীতে আনার দিন নির্ধারণ করলাম। ২০০৮ এর ১৩ অক্টোবর, সোমবার। আমি আলট্রাসনো করে জেনে নেইনি সে কোন সত্বা নিয়ে আর্বিভূত হবে। শুধু মনে প্রানে একটি রাজকন্যা চেয়েছি। আমার রাজকন্যার এই পৃথিবীতে আগমন বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে। ডাক্তার ওকে ওর নান্নাহ-র কোলে দেয়ার সময় বললেন ”আপনাদের মেয়ে ফোর-টুয়েন্টি” । আনন্দের বন্যা বইয়ে দিলো সে। কারণ সবাই একটি রাজকন্যা পাবার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলো। সেদিন হাসপাতালে জন্ম নেয়া সব কটি শিশু ছিলো ছেলে। আমার রাজকন্যা জন্মলগ্নেই বোধ করি বুঝিয়ে দিলো এই চরাচরে তার আধিপত্যের বিস্তার।
তার প্রথম ছবি।
প্রথম সে তার নান্নাহ-কেই চিনেছে। আজো সে প্রতি নিয়ত অস্থির হয় তাঁর জন্যেই।
বাসায় ফিরে প্রথম পোশাক ছিলো দাদুভাই-এর পুরোনো লুঙ্গি দিয়ে দিদার হাতে বানানো নেংটি। আমার মনে হয়েছিলো ও বুঝি লুঙ্গি পরেই আছে।
ক্ষিদা লাগলেই অস্থির হয়ে যেত আমার জান-বাচ্চাটা। আজো হয়। ওর কান্না ভিডিও করার জন্যে ওর ক্ষিদার সময়টাই বেছে নিয়েছিলাম। বড় হয়ে ভিড্ওিটা দেখলে আমাকে নিশ্চয়ই খুব নিষ্ঠুর ভাববে।
সারারাত জেগে থেকে দিনের বেশিরভাগ সময় ঘুমিয়ে কাটানো - এই ছিলো তার প্রথম তিন মাসের রুটিন।
বড় হতে হতে ঘুমের স্টাইল-এও এলো ভিন্নতা।
প্রথম উপুড় হ্ওয়া।
প্রথম ন্যাড়া হ্ওয়া। এই নাপিতের কাছেই সে এবার ঈদে সেকেন্ড টাইম ন্যাড়া হয়েছে। পারিবারিক নাপিত।
বাবার সাথে ছোটবেলা থেকেই খুনসুটি। তখন থেকেই বাবার কলমের দিকেই তার তীক্ষè নজর।
হাঁটতে শেখার পর এক দন্ড স্থির থাকেনা সে।
পদ্ন পুকুর, আকাশ সবকিছুই তার অতি প্রিয়। বৃষ্টির সময় মেঘের গর্জন প্রথম দিকে তার ভয়ের কারণ হলেও এখন ঠিক হয়ে গেছে। এখন মেঘ ডাকলে সে নিজেই বলবে ”মা, কোন ভয় নাই”। প্রেসার কুকার, ব্লেন্ডার এসবের শব্দগুলিতে যদি এখন্ও ধাতস্ত হয়নি।
প্রথম জন্মদিন।
তার বৈশাখ উদযাপন।
জার্নিতে সে সবসময়ই তরতাজা (মাশাআল্লাহ)।
তার ডল-গুলোকে এভাবেই আদর করে ঘুম পাড়ানো হয়। ”সারাহ ঘুমালো, পাড়া জৃড়ালো, বগ্গী এলো দেসে”। আমাক্ওে সে কপালে হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়ায়। তখন বলে ”মা ঘুমালো.. .. ..”।
আমার মডেল কন্যা।
আমার তোলা - আমার প্রিয় ছবি।
আমার প্রিয় ব্লগ বন্ধুদের দোয়া আমার রাজকন্যার চলার পথের পাথেয় হোক।