আজ সন্ধ্যায় বাজারে যাচ্ছিলাম বাসে করে (বরফ থেকে আর গাড়ি বের করতে পারিনি, তাই)। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যামিলি হাউজিংএ থাকি বলে অনেক সুবিধা আছে, তার একটা হলো সন্ধ্যা বেলাতে ছোট আকারের ভ্যানে করে আশে পাশের বাজারে নিয়ে যায়। ফোন করে বললে বাসা থেকে নিয়ে আসে। এটা শুধু আমাদেরই না, নিকটবর্তী বাড়িঘরে যারা থাকে, তাদেরকেও নিয়ে থাকে।
সাধারণত মার্কিনীরা এই ছোট বাসে চড়ে না, কারণ তাদের নিজেদের প্রায় সবারই গাড়ি থাকে। কিন্তু আজকে বাসটা সরাসরি দোকানে না গিয়ে ঘুরে এক গলিতে ঢুকে এক বাড়ির সামনে থামলো। আমার কৌতুহল হলো, এখানে কে আবার বাস ডেকেছে?
বাইরে বরফ, পিছলা হয়ে আছে, তার মধ্যে দেখি আস্তে আস্তে এক মহিলা আসছেন। কাছে আসতেই দেখি গাইড ডগ (পথ প্রদর্শক কুকুর) নিয়ে এক মহিলা আসছেন। চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম দৃষ্টি শক্তি নেই তাঁর। এদেশে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য এরকম প্রশিক্ষিত কুকুর পাওয়া যায়।
যাহোক, মহিলার আস্তে আস্তে বাসে উঠে আসলেন। পেছনে আরেকজনকে আসতে দেখে ভাবলাম বোধহয় পৌছে দিতে এসেছেন মহিলাকে। কিন্তু না, তাকিয়ে দেখলাম সাদা ছড়ি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এক বৃদ্ধ আসছেন। তিনিও জন্মান্ধ।
বাসে উঠে এই দুইজন দৃষ্টি শক্তিবিহীন মানুষ পরম মমতায় পাশাপাশি বসে হাতে হাত ধরলেন। মহিলা আর তাঁর স্বামী, দুজনেই সম্পূ্র্ণভাবে দৃষ্টি শক্তিহীন। কিন্তু তা থামিয়ে রাখেনি তাঁদের পথচলা। কারো করুণায় নয়, বরং নিজেদের যতটুকু শক্তি আছে, তা নিয়েই স্বাবলম্বী হয়ে পথ চলছেন। বাসে করে যাচ্ছেন শুধু গাড়ি নিজেরা চালাতে পারবেন না বলে।
মাঝে মাঝেই তাঁরা একে অন্যের দিকে ফিরছিলেন। দেখতে পান না, কিন্তু তার পরেও ফিরে দেখা একে অন্যের দিকে, হয়তো বা মনের চোখে দেখা ...
কিছু পথ চলে এই দম্পতি তাঁদের বাড়ির সামনে এসে গেলেন। তার পর হাত ধরাধরি করে আস্তে আস্তে সেই পিছল বরফের উপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে চলে গেলেন বাড়ির ভিতরে। পথ চলার সঙ্গী কেবল সেই কুকুরটা।