বিশ্ব পুঁজিবাদী আর্থিক মন্দার প্রভাব ও বাংলাদেশের জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধিঃ
বিশ্ব পুঁজিবাদী আর্থিক মন্দার কারণে বাংলাদেশের মানুষের আয় ও রেমিট্যান্স কমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) অর্জনে নেতিবাচকট প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। যদিও মুল্যষ্ফীতি কমার আভাস দিচ্ছে সংস্থাটি। চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৫.৬ শতাংশ বলে মনে করে এডিপি। তবে রাজস্ব আদায় আরও কমে অবকাঠামোগত উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হওয়াসহ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী সঠিকভাবে বাস্তবায়িত না হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আরও কমে যেতে পারে। 'এশিয়ান ডেভলপমেন্ট আউটলুক-০৯' প্রতিবেদনে এসব কথা তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ বিশ্ব মন্দার প্রাথমিক ধাক্কা সামলে উঠলেও এর পরবর্তী মন্দার চাপ আরও মারাত্বক হবে। এই চাপ সামলাতে সরকার উন্নয়ন কর্মকান্ডসহ অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে পারে। আইনশৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। একইসাথে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এছাড়া দীর্ঘ মেয়াদি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে দ্রুত বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকট দুর করার উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে এডিবির প্রতিবেদনে।
এডিবি'র কান্ট্রি ডিরেক্টর পল জে হেইটেনস বলেন, মন্দার কারণে সারা বিশ্বের প্রবৃদ্ধি কমে আসছে। এ প্রভাবের বাইরে বাংলাদেশ নয়। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিও কমবে। বিশ্ব আর্থিক মন্দার প্রাথমিক ধাক্কা বাংলাদেশ সামলে নিলেও দ্বিতীয় ধাক্কা আরও মারাত্বক হবে। বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়াতে অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে, একইসাথে আইন শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে বৈদিশিক বিনিয়োগ কমে আসতে পারে। এজন্য অভ্যন্তরীণ সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দেন এডিবি'র কান্টি ডিরেক্টর।
তিনি বলেন, চলতি অর্থবছর ও আগামী অর্থ বছর অর্থনৈতিক সংস্কারের ক্ষেত্রে জটিল সময় পার করবে বাংলাদেশ। এজন্য সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। মন্দার কারণে জিডিপি'র নিম্নগতি ঠেকাতে সহায়তা প্রকল্প হাতে নিতে হবে। মন্ত্রনালয়গুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়াতে হবে।
এডিবি'র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ রপ্তানি ও রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাওয়াসহ রাজস্ব আদায়ে নিম্নগতি। উদ্বিগ্ন ভোক্তারা তাদের ব্যয় কমানোর কারণে অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে যাবে। যা প্রবৃদ্ধি অর্জনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আগামী অর্থবছর(২০০৯-১০) জিডিপি প্রবৃদ্ধি আরও কমে ৫.২ শতাংশে নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয় যদি স্বাভাবিক আবহাওয়া থাকে ও কৃষকরা যথাসময়ে ব্যাংক ঋণ পায় তাহলে চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। আগামী অর্থবছরে তা একটু বেড়ে ৪.১০ শতাংশ হতে পারে। শিল্পখাতে গত অর্থবছরের (২০০৭-০৮) তুলনায় চলতি অর্থবছরে একটু কমে ৬.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। গত অর্থবছর এই হার ছিল ৬.৭ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি আরও কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। বিশ্ব মন্দায় চাহিদা কমে যাওয়ার কারণেই বিশেষকরে রপ্তানি পণ্যের উৎপাদন কমায় শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি কমবে। সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি কমবে কৃষি ও শিল্প খাতের তুলনায় বেশি। চলতি অর্থবছরে সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ শতাংশ। যা গত অর্থবছরে ছিল ৬ দশমিক ৭০ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি আরও কমে সাড়ে ৫ শতাংশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রপ্তানি, মানুষের আয় ও প্রবাসিদের আয় প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণেই সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি কমবে। এডিবি মনে করে চলতি অর্থবছরে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হবে ১৪ শতাংশ। রেমিটেন্স প্রবাহ হবে ২০ শতাংশ। যা গত অর্থবছরে ছিল ৩২.৪ শতাংশ। অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে আমদানি কমেছে ২.৩ শতাংশ।
এছাড়াও মুল্যষ্ফীতি কমবে বলে মনে করে এডিবি। জ্বালানী তেল ও খাদ্যদ্রব্যের মূল্য কমায় মুল্যষ্ফীতি কমবে। এব ছর ভাল চাষাবাদ হয়েছে ও ফসল উত্তোলনও নির্বিগ্ন হবে বলে মনে করছে সংস্থাটি। চলতি অর্থবছরে মুল্যষ্ফীতি গড়ে ৭ শতাংশ হতে পারে। আগামী অর্থবছর এই হার আরও কমে সাড়ে ৬ শতাংশ হতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমুল্য কমে আসায় সরকারের রাজস্ব আদায় কমছে। অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে রাজস্ব আদায়ে ১২.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।